www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তরুণদের প্রতি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদের 'ক' ধারায় বলা হয়েছে -
"রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।"
কিন্তু আজ সংবিধান প্রণয়নের প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পরও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে আমাদের যে আকাঙ্খা তা পূরণ হয়নি । বরং তার ঠিক উল্টো পথে পরিচালিত হচ্ছে আমাদের দেশ ।

শত বছর আগে রুশ বিপ্লবের মহানায়ক ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন শিক্ষা সম্পর্কে শাসক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গী কিরূপ তা নিয়ে দারুণ একটি মন্তব্য করেছিলেন -
"মন্ত্রী মহোদয় শ্রমিক শ্রেণিকে মনে করেন বারুদের স্তুপ এবং জ্ঞান ও শিক্ষা তাদের কাছে অগ্নি-স্ফুলিঙ্গের সামিল । তিনি খুব ভালো ভাবেই বোঝেন যে, ঐ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যদি বারুদের স্তুপের উপর পড়ে, তা হলে যে বিস্ফোরণটা ঘটবে, তা সকলের আগে সরকারের বিরুদ্ধেই নিক্ষিপ্ত হবে ।"
সেজন্য পুঁজিবাদী সরকার কখনোই সকলের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ করে দিবে না । তার জন্য সে এমন এক শিক্ষা-নীতি প্রণয়ন করবে, যেখানে, যার টাকা আছে, সেই একমাত্র শিক্ষা পাবে । যা আমরা সর্বশেষ শিক্ষানীতি এবং এবারের বাজেট ২০২০-২১ এ দেখতে পাই । যেখানে শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র ২% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন । এটা স্পষ্ট, সরকার মূলত বেসরকারি ও বাণিজ্যিক লক্ষ্যে পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে । যা আমাদের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার পরিপন্থী ।

অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা সকল মানুষের মৌলিক অধিকার । এ অধিকার বাস্তবায়ন এবং একটি শোষণ-মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সুদীর্ঘকাল থেকে লড়াই করেছি । বৃটিশ বিদায় নিয়েছে । দেশ স্বাধীন হয়েছে । বহুবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে । কিন্তু এখনো আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি । মনুষ্যত্বের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা আসে নি । বরং যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের জনজীবনে সংকট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে । অভাব অনটন বেকারত্ব সামাজিক অনাচার ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় মানুষ এখন দিশেহারা । প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ছে । কিন্তু শিক্ষার বিস্তারে সরকারের যথেষ্ট উদ্যোগ নাই । রাষ্ট্রীয় বাজেটে সামরিক খাতসহ অনুৎপাদনশীল খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রতিবছর বাড়ছে । অপচয় বাড়ছে । অথচ শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না । পর্যাপ্ত নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না । অবস্থিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তহীন সংকটে জর্জরিত । আমি যে বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করি, সেখানে এখনও মাত্র ২ জন শিক্ষক শিক্ষা দান করেন । শূন্য পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না । সাথে শিক্ষা উপকরণের দাম, ছাত্র বেতন ক্রমশ বাড়ছে । অন্যদিকে ধনীর সন্তানদের জন্য কিন্ডারগার্টেন, প্রিপারেটরী স্কুল, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, ক্যাডেট কলেজ, প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । 'টাকা যার, শিক্ষা তার' এই নীতির ভিত্তিতে শিক্ষাকে পরিণত করা হয়েছে বিলাসী পণ্যে । শাসক শ্রেণী চায় না মানুষ শিক্ষিত হোক । তারা জনগণকে অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারে বন্দী করে রাখতে চায় ।
'জনগণের অজ্ঞতা-ই সরকারের শক্তির উৎস । সরকারও এটা জানে বলেই সে সর্বদাই যথার্থ শিক্ষা বিস্তারের বিরোধিতা করে । আজ এই সত্যটা বুঝতে হবে । সরকার অজ্ঞতার অন্ধকার সৃষ্টি করবে, আবার একইসাথে জনগণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে সচেষ্ট এমন ভাব দেখাবে - এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ।'

শত বছর আগে বলা লেনিনের সেই কথাগুলো আজকের বর্তমান সময়েও কতটা প্রাসঙ্গিক, বাজেট এবং বর্তমান শিক্ষা কাঠামোর দিকে তাকালে তা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে । আজ আমাদের সামনে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নাই । আজকের তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার । আমরা তরুণরাই জাতিকে নেতৃত্ব দিবো, পরিচালিত করব । তাই আমাদের উপরই অধিক দায়িত্ব বর্তায়, শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তাকে সমাজ বদলের সংগ্রামে যুক্ত করা ।

তরুণদের প্রতি সময়ের আহবান - শিক্ষার সকল সংকট দূর করে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, সেক্যুলার, বিজ্ঞানভিত্তিক, একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, সর্বোপরি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদ ও বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বৈপ্লবিক সমাজ বিকাশের পরিপূরক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলুন ।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬১৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Md. Rayhan Kazi ০৯/১২/২০২১
    সত্যিই মনোমুগ্ধকর
  • Md. Rayhan Kazi ৩০/০৬/২০২০
    যথার্থ বলেছেন
  • Md. Rayhan Kazi ২৩/০৬/২০২০
    মূল্যবান কিছু
    • সঞ্জয় শর্মা ৩০/০৬/২০২০
      মন্তব্যে সত্যিই অনুপ্রাণিত হলাম
      অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন ।

      করোনাকালে নিরাপদে থাকবেন
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
      শুভ কামনা রইলো ।
  • রেদোয়ান আহমেদ ২১/০৬/২০২০
    যথার্থ মূলনায়ন।
    • সঞ্জয় শর্মা ৩০/০৬/২০২০
      অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ
      মন্তব্যে অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম ।

      শুভ কামনা রইলো
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।
  • বাজেটের মূল্যবান মূল্যায়ণ।
    • সঞ্জয় শর্মা ২২/০৬/২০২০
      মন্তব্যে অনেক অনুপ্রাণিত হলাম,
      অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন ।

      শুভ কামনা রইলো
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
      সবাইকে নিয়ে সবসময় ।
  • যথাযথা ভাবনা।
    মানবতাবোধে অনন্য আহ্বাণ।
    • সঞ্জয় শর্মা ২০/০৬/২০২০
      অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ
      মন্তব্যে অনেক অনুপ্রাণিত হলাম ।
      প্রত্যাশা রইলো
      এভাবেই অনুপ্রাণিত করবেন সবসময় ।

      করোনাকালে নিরাপদে থাকবেন
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
      সবাইকে নিয়ে সবসময়
      শুভ কামনা রইলো ।
  • আসলে কবি সব ঠিক আছে , তবে দেশের তরুণ সমাজ আগামীর দেশ পরিচালক এই কথা টা সঠিক নয় । কেননা যারা দেশ চালাই তাদের ছেলে পুলেরাই পরর্বীতে দেশ পরিচালনা করবে । সাধারণ জনগণ কখন ‍সেই কাতারে যেতে পারবে না । তবে হ্যা, আমাদের নিজেদের সার্থের জন্যেই আমাদের মাঠে নামতে হবে ।
    • সঞ্জয় শর্মা ১৯/০৬/২০২০
      পুরাতন প্রথাকে বিদায় দিতে হবে ।

      আজ রাজার ছেলে রাজা হবে না
      রাজা সেই হবে, যে তার যোগ্য ।

      প্রথা পাল্টানোর আন্দোলনে
      সমাজ বদলের সংগ্রামে
      তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে
      নিজেদের স্বার্থে ।

      মন্তব্যে সত্যিই অনেক অনুপ্রাণিত হলাম
      ধন্যবাদ প্রিয় কবি
      এমন অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য ।
      শুভ কামনা রইলো
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।
  • ফয়জুল মহী ১৮/০৬/২০২০
    Good post
  • রাইট
    • সঞ্জয় শর্মা ১৮/০৬/২০২০
      ধন্যবাদ,
      মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম ।

      শুভ কামনা রইলো
      ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ,
      এবং সাথে থাকবেন...
 
Quantcast