www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সোনার বাংলাদেশের মায়ায় লুসির( ৫৬ বছর) মত রয়েছে হাজার হাজার লুসি।

বাংলাদেশের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর। আমার জন্মও এই দিনে। কাকতালীয় হলেও বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়। হয়তো এটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার জীবনের একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন লুসি হল্ট।
পুরো নাম লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট। জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে। ৫৬ বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করছেন তিনি। তাঁর কর্মক্ষেত্রের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় লুসি কাজ করতেন যশোর ক্যাথলিক গির্জায়। সেখানে স্কুলে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন। যুদ্ধ শুরু হলে গির্জা বন্ধ হয়ে যায়। মিশনের সবাই নিরাপদে আশ্রয় নিতে চলে যান খুলনায়। কিন্তু তিনি যাননি। নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও ছুটে গিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী ফাতেমা হাসপাতালে। সেখানে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেন নিজেকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের কয়েক দিন আগে তিনি চলে যান খুলনায়।
১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন লুসি হল্ট। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতেন। এরপর আর দেশে ফেরেননি। ৫৬ বছর ধরে ঘুরেফিরে তিনি কাজ করেছেন যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে। সর্বশেষ তিনি ২০০৪ সালে অবসর নিয়ে আবার চলে আসেন তাঁর প্রিয় বরিশালে।
লুসির বয়স এখন ৮৬ বছর। কিন্তু লুসি বার্ধক্যকে একেবারেই পাত্তা দেন না। এই বয়সেও দুস্থ শিশুদের মানসিক বিকাশ ও ইংরেজি শিক্ষা দেন। পাশাপাশি এই শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। তাঁর হৃদয়জুড়ে এখন শুধুই বাংলাদেশ। এ দেশের প্রকৃতি, মাটি, মানুষ আর গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। মৃত্যুর পর এই দেশের মাটিতেই ঘুমাতে চান তিনি।
৮ ডিসেম্বর বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের গ্রন্থাগারে বসে কথা হয় লুসি হল্টের সঙ্গে। লুসি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার পর সবাই দেশে ফিরে যান। কিন্তু এই দেশকে এত ভালোবেসে ফেলেছি, এর মায়া ছেড়ে আর দেশে যেতে মন সায় দেয়নি। তাই জীবনের সেরা সময়গুলো কাটাতে বরিশালে ফিরে এসেছি।’
.
.
বেশ কয়েকবার এ দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন লুসি। ‘কিন্তু বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই প্রতিবছর টাকা দিয়ে আমার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হয়। গত বছর এতে ৩৮ হাজার টাকা লেগেছে।’ এখন লুসি যে অবসর ভাতা পান, তা বেশ কমই। সেই সামান্য অর্থ থেকে বাঁচিয়ে ভিসা ফি দেন।
বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন প্রাঙ্গণে টিনের ছোট্ট একটা ঘর। পুরোনো জরাজীর্ণ। বারান্দার এক অংশে লুসির থাকার ব্যবস্থা। সেখানে আসবাব বলতে ছোট একটি কাঠের চৌকি, কাঠের ছোট দুটি টেবিল—পড়ার ও খাবার। পাশে একটা তাকে কিছু বই ও পুরোনো ডায়েরি সাজিয়ে রাখা।
মিশনের পরিচর্যাকারী ঊষা দাস লুসির ছাত্রী। ঊষা বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথম সিস্টার লুসিকে দেখি। তিনি আমাদের স্কুলে পড়াতেন। তিনি আগের মতোই শান্ত আর পরোপকারী এবং দরদি মানুষ।’
কথা হলো অক্সফোর্ড মিশনের ব্যবস্থাপক বেনিডিক্ট বিমল ব্যাপারীর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘লুসির সঞ্চয় বলতে কেবলই এ দেশের ভালোবাসা। তিনি সব ধর্ম-শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান করেন, ভালোবাসেন।’
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭১৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast