ধর্ষণের সমাজ ও দোষারোপ
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থায় নারী এবং বৈশ্বম্য শব্দ দুটি যেন সমার্থক শব্দ। আবার আমরা যারা নারীদের এই বৈশ্বম্যটা মেনেনিতে পারছিনা তারাও দৃষ্টিভঙ্গির যায়গাটিতে মারাত্নক ভূল করে আসছি। যেমন গণপরিবহনের কথাটিই বিবেচনা করা যাক! বাসে উঠলেই দেখবেন নারীদের জন্য ৬ টি সিট সংরক্ষিত আছে। একই ভাবে চাকরিতে প্রবেশ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন পর্যন্ত সম-অধিকারের নামে যা হচ্ছে তা কেবলই আই ওয়াশ মাত্র। এভাবে নারীদের সম-অধিকার কায়েম করা সম্ভবনা। নারীর সম-অধিকারের জন্য দরকার পুরুষ এবং নারীর সমযোগ্যতা। আর এই সমযোগ্যতার জন্য সবার আগে পিতা, ভাই, দাদা, নানা, চাচা, মামাদের সমদৃষ্টিভঙ্গী দরকার। আমি নিজেই দেখেছি একই পরিবারের ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য পরিবারের যতটা আগ্রহ দেখা যায়, মেয়েকে শিক্ষিত করার জন্য ততটা আগ্রহ দেখা যায়না। বৈশ্বম্যটা এখান থেকেই শুরু।
আরেকটি বিষয় সত্যিই সেলুকাস। সমাজের প্রচুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার নেগেটিভ শব্দগুলো যেন নারীদের জন্য সংরক্ষিত অধিকার। যেমনঃ কুলবধু পরকীয়া করলে তাকে কুলটা বলা হয় কিন্তু কুলস্বামী পরকীয়ায় জড়ালে তাকে কি বলা হয় তা কেও জানেনা!! দেহব্যবসায়ী নারীদের পতিতা বলা হলে পতিতালয়গামী পুরুষদের কি বলা হয় তা কেউ বলতে পারবেন? দোষজনক নামগুলো একদম নিত্যস্ত্রীলিঙ্গ শব্দ। যার পুংলিঙ্গবাচক শব্দ নাই ! নারী কি পতিতা/কুলটা একা একাই হয়? এই নামপ্রাপ্তির পিছে যারা আছেন তাদের কর্মগুলো আমরা অবদান হিসেবেই বরং মনে রাখছি, কেন? সমাজের সমস্ত ঘৃণিত কাজে কি শুধুমাত্র নারীরাই জড়িত? বাকিরা অবদানকারী, মহৎ জনগোষ্ঠী? নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ যেমন পতিতা, কুলটা,বিমাতা, বিধবা, বন্ধ্যা, ডাইনী ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো নারীরা যেন এগুলো নিয়তি হিসেবেই মেনেনিয়েছে। নারী জাগরনের প্রধানতম বাধার মধ্যে নারীদের সবকিছু সহজে মেনে নেওয়ার অভ্যাসটি পরিত্যাগ করতে হবে।
আবার আমাদের দেশে প্রায়ই নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার জন্য নারীকেই দায়ী করা হয়। এক শ্রেনীর ইতর প্রজাতীর মানুষ মূলত নিজেদের করা অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়ার অস্র হিসেবে এটিকে ব্যাবহার করে আসছে অনেকদিন ধরে। যেমনঃ খুব সম্ভবত ২০০১ সালের প্রথম প্রহরে ঢাকায় এক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বাঁধন নামের এক তরুণীর ওপর নৃশংস হামলা হয়েছিল। প্রকাশ্য রাজপথে, হাজার হাজার মানুষের সামনে ওকে বিবস্ত্র করে নিপীড়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন একশ্রেণির মানুষ এ ঘটনার জন্য বাঁধনের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন, বলেছিলেন, ওই রাত-বিরাতে সে কেন ওখানে গেল? যেন গিয়েছে বলেই ওকে ধর্ষণ করা বা ধর্ষণের চেষ্টা করা ‘বৈধ’ হয়ে গেল। ঐ ইতরদের উদ্যেশে আমেরিকার আদালতের একটি রায়ের উদাহরণ আমি টেনে আনতে চাই। মুষ্টিযোদ্ধা মাইক টাইসন যখন পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি লাভ করেন, তখন এক তরুণী জোর করে তার হোটেলের রুমে প্রবশ করেন এবং সেখানে মেয়েটি তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করলে তিনি তাকে ধর্ষণ করেন। তরুণীটি পরে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলে বিচারক এ্ মর্মে টাইসনকে দুষী সাব্যস্ত করেন। আদালত এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন যে, ‘কোনো নারী বিবসনা হলেই তাকে ধর্ষণ করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। মেয়েটি তার হোটেল রুমে জোর করে প্রবেশ করেছিল বা তাকে উত্ত্যক্ত করেছিল বলে সে-ও অপরাধী। এজন্য কোর্ট তাকে সাজা দেবে, কিন্তু টাইসন তাকে এজন্য ধর্ষণ করতে পারেন না।’ কাজেই ধর্ষণের জন্য নারীদের পোষাক বা অবাদে চলাফেরা দায়ী নয়, দায়ী কেবলই ধর্ষক, ধর্ষক এবং ধর্ষক।
আমাদের দেশে ধর্ষণের জন্য দোষারোপের আরও একটি রুপ আছে। হ্যা একশ্রেণীর অন্ধ বা ভূয়া সেকুলার গোষ্ঠীর কথাই বলছি। যারা অকারনেই ইসলাম ধর্মকে ধর্ষণের জন্য দ্বায় দিয়ে আসছে। তারা ইসলামিক সমাজ ব্যাবস্থ্যার ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে বরাবরই । তাদের কাছে আমার প্রশ্ন , ইসলাম কি ধর্ষণকে উৎসাহিত করেছিল কখনো? নাকি ইসলাম ধর্মে নারীকে যথাযথ সন্মান বা মর্যাদা প্রদর্শন করেনি? আমি যতদূর জানি কোন ধর্মেই কন্যা সন্তানদের অবমূল্যায়ন করেনি। আমি বরং তাদের কাছে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবী করছি।
সবশেষে আমি বলব ধর্ষণের কারন খুঁজতে গিয়ে এমন কোন উদ্ভট ইস্যুকে সামনে আনা উচিত হবেনা যাতে ধর্ষণ আরও উৎসাহিত হয়। আসুন আমরা ধর্ষণের দ্বায় কেবল ধর্ষকের মগজকেই দিই। এদেশের নারী জাগরনের বুকে শতফুল ফুটুক। জগত বিখ্যাত যে মসলিন –তাত সূতা কেটেছে নারী তার সুক্ষ আঙুল দিয়ে, আর সেই তাঁত বুনেছে পুরুষ তার শক্তি দিয়ে । এভাবেই নারীর মমতা আর পুরুষের সাহস দিয়ে সভ্যতা এগিয়ে যাক তার নিজস্ব গতিতে । গৃহকর্মী থেকে রাষ্ট্রপ্রধান সব পদেই নারী অধিষ্ঠিত হোক আপন মর্যাদায়, নিজ কর্মে নারী উজ্জ্বল হউক পরিবারে , সমাজে , বৃহত্তর পরিসরে । অভিজাত বেগুনী রঙের আলোয় উদ্ভাসিত হউক নারীর মমতা, ভালোবাসা, সাহস , সততা আর কর্ম দক্ষতায়।
আরেকটি বিষয় সত্যিই সেলুকাস। সমাজের প্রচুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার নেগেটিভ শব্দগুলো যেন নারীদের জন্য সংরক্ষিত অধিকার। যেমনঃ কুলবধু পরকীয়া করলে তাকে কুলটা বলা হয় কিন্তু কুলস্বামী পরকীয়ায় জড়ালে তাকে কি বলা হয় তা কেও জানেনা!! দেহব্যবসায়ী নারীদের পতিতা বলা হলে পতিতালয়গামী পুরুষদের কি বলা হয় তা কেউ বলতে পারবেন? দোষজনক নামগুলো একদম নিত্যস্ত্রীলিঙ্গ শব্দ। যার পুংলিঙ্গবাচক শব্দ নাই ! নারী কি পতিতা/কুলটা একা একাই হয়? এই নামপ্রাপ্তির পিছে যারা আছেন তাদের কর্মগুলো আমরা অবদান হিসেবেই বরং মনে রাখছি, কেন? সমাজের সমস্ত ঘৃণিত কাজে কি শুধুমাত্র নারীরাই জড়িত? বাকিরা অবদানকারী, মহৎ জনগোষ্ঠী? নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ যেমন পতিতা, কুলটা,বিমাতা, বিধবা, বন্ধ্যা, ডাইনী ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো নারীরা যেন এগুলো নিয়তি হিসেবেই মেনেনিয়েছে। নারী জাগরনের প্রধানতম বাধার মধ্যে নারীদের সবকিছু সহজে মেনে নেওয়ার অভ্যাসটি পরিত্যাগ করতে হবে।
আবার আমাদের দেশে প্রায়ই নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার জন্য নারীকেই দায়ী করা হয়। এক শ্রেনীর ইতর প্রজাতীর মানুষ মূলত নিজেদের করা অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়ার অস্র হিসেবে এটিকে ব্যাবহার করে আসছে অনেকদিন ধরে। যেমনঃ খুব সম্ভবত ২০০১ সালের প্রথম প্রহরে ঢাকায় এক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বাঁধন নামের এক তরুণীর ওপর নৃশংস হামলা হয়েছিল। প্রকাশ্য রাজপথে, হাজার হাজার মানুষের সামনে ওকে বিবস্ত্র করে নিপীড়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন একশ্রেণির মানুষ এ ঘটনার জন্য বাঁধনের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন, বলেছিলেন, ওই রাত-বিরাতে সে কেন ওখানে গেল? যেন গিয়েছে বলেই ওকে ধর্ষণ করা বা ধর্ষণের চেষ্টা করা ‘বৈধ’ হয়ে গেল। ঐ ইতরদের উদ্যেশে আমেরিকার আদালতের একটি রায়ের উদাহরণ আমি টেনে আনতে চাই। মুষ্টিযোদ্ধা মাইক টাইসন যখন পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি লাভ করেন, তখন এক তরুণী জোর করে তার হোটেলের রুমে প্রবশ করেন এবং সেখানে মেয়েটি তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করলে তিনি তাকে ধর্ষণ করেন। তরুণীটি পরে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলে বিচারক এ্ মর্মে টাইসনকে দুষী সাব্যস্ত করেন। আদালত এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন যে, ‘কোনো নারী বিবসনা হলেই তাকে ধর্ষণ করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। মেয়েটি তার হোটেল রুমে জোর করে প্রবেশ করেছিল বা তাকে উত্ত্যক্ত করেছিল বলে সে-ও অপরাধী। এজন্য কোর্ট তাকে সাজা দেবে, কিন্তু টাইসন তাকে এজন্য ধর্ষণ করতে পারেন না।’ কাজেই ধর্ষণের জন্য নারীদের পোষাক বা অবাদে চলাফেরা দায়ী নয়, দায়ী কেবলই ধর্ষক, ধর্ষক এবং ধর্ষক।
আমাদের দেশে ধর্ষণের জন্য দোষারোপের আরও একটি রুপ আছে। হ্যা একশ্রেণীর অন্ধ বা ভূয়া সেকুলার গোষ্ঠীর কথাই বলছি। যারা অকারনেই ইসলাম ধর্মকে ধর্ষণের জন্য দ্বায় দিয়ে আসছে। তারা ইসলামিক সমাজ ব্যাবস্থ্যার ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে বরাবরই । তাদের কাছে আমার প্রশ্ন , ইসলাম কি ধর্ষণকে উৎসাহিত করেছিল কখনো? নাকি ইসলাম ধর্মে নারীকে যথাযথ সন্মান বা মর্যাদা প্রদর্শন করেনি? আমি যতদূর জানি কোন ধর্মেই কন্যা সন্তানদের অবমূল্যায়ন করেনি। আমি বরং তাদের কাছে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবী করছি।
সবশেষে আমি বলব ধর্ষণের কারন খুঁজতে গিয়ে এমন কোন উদ্ভট ইস্যুকে সামনে আনা উচিত হবেনা যাতে ধর্ষণ আরও উৎসাহিত হয়। আসুন আমরা ধর্ষণের দ্বায় কেবল ধর্ষকের মগজকেই দিই। এদেশের নারী জাগরনের বুকে শতফুল ফুটুক। জগত বিখ্যাত যে মসলিন –তাত সূতা কেটেছে নারী তার সুক্ষ আঙুল দিয়ে, আর সেই তাঁত বুনেছে পুরুষ তার শক্তি দিয়ে । এভাবেই নারীর মমতা আর পুরুষের সাহস দিয়ে সভ্যতা এগিয়ে যাক তার নিজস্ব গতিতে । গৃহকর্মী থেকে রাষ্ট্রপ্রধান সব পদেই নারী অধিষ্ঠিত হোক আপন মর্যাদায়, নিজ কর্মে নারী উজ্জ্বল হউক পরিবারে , সমাজে , বৃহত্তর পরিসরে । অভিজাত বেগুনী রঙের আলোয় উদ্ভাসিত হউক নারীর মমতা, ভালোবাসা, সাহস , সততা আর কর্ম দক্ষতায়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৫/১১/২০২০হক কথা
-
দীপঙ্কর বেরা ০৫/১১/২০২০ঠিক কথা
-
শ.ম. শহীদ ০৩/১১/২০২০ঠিক বলেছেন সম্মানিত। শুভেচ্ছাসহ আপনার সার্বিৃক কল্যাণ কামনা করি।
-
ফয়জুল মহী ০২/১১/২০২০Right
-
কবীর হুমায়ূন ০২/১১/২০২০যথার্থ বলেছেন। ভালো থাকুন।