স্বপ্নিল গোধূলি
গত সপ্তাহে রিমির বিয়ে হয়েছে।নতুন জীবন,নতুন সংসার। শ্বশুরবাড়ির সবাই বেশ ভালো।প্রথম প্রথম সবাই বেশ ভালোই থাকে।সময় গড়লেই উন্মোচিত হয় সবার আসল চেহারা।বাড়ির মানুষ গুলো কখনোই বাড়ির বউ কে বাড়ির মেয়ে জ্ঞান করে না।এখনকার মেয়েগুলো ও তাই যৌথ পরিবার গঠনে নিরুৎসাহী।
বিয়ের মাস খানিক আগে,রিমি তার তালেব ভাইয়ের বউ এর সাথে গল্প প্রসঙ্গে শ্বশুর বাড়ির প্রশংসা করছিলো।তখন রিমিকে বেশ কটু কথা শুনতে হয়েছে।সেদিন পুরোটা দিন কেটে ছিলো বিষন্নতায়। কোন কাজেই মন বসাতে পারি নি।
কিন্তু এখন রিমি বুঝেছে,স্বার্থের জন্য প্রিয় মানুষ ও বেঈমানী করার সামর্থ্য রাখে।রিমি যেবার মাধ্যমিক পাস করে, সেবার লোকমান উচ্চমাধ্যমিক পাস করে।পাশাপাশি গ্রামের মানুষ হলেও আগে কখনই তাদের মধ্য কোন কথা হয় নি।দুজনেই কেবল মাত্র ফেসবুক চালানো শিখেছে।বন্যা দুর্গতদের জন্য তহবিল গঠন’গ্রুপের আহ্বায়ক ছিলো লোকমান।আর রিমি স্বেচ্ছাসেবী।তাই এক সাথে কাজ করার সুবাধেই তাদের চেনা জানা।তার রেশ ধরেই ফেসবুকে পরিচয়।দুজনের অজান্তেই এক সময় তারা একে ওপরের প্রেমে পড়ে যায়।দুজনের পরিবারই বেশ সম্ভ্রান্ত,তাই পাড়া প্রতিবেশীরা কখনোই তাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কিছু রটাতে পারে নি।ছোট বড় সবাই তাদের প্রেমের সম্পর্ক জানতো।যে লোকমানের চোখে চোখ রাখলে রিমি নিজেকে আর খুজিয়ে পেতো না,যার সান্নিধ্য আসলে পুরো পৃথিবীকে তুচ্ছ মনে করতো সেই লোকমান ই কিনা তার অমর্যাদা করলো!ভালবাসার মানুষের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধভক্তি ও নেই?
রিমি অবশ্য আর মন খারাপ করে না। ভালবাসার মানুষ কষ্ট দিলেও তার মুখের দিকে তাকালেই সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়।তবুও রিমির মাথায় সবসময় একটা বিষয় ঘুরপাক খায়।লোকমানের এত সম্পদ থাকা স্বত্বে ও রিমিকে বিয়ে করার জন্য কেনো ২ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করলো?বিয়েটা তো ঘরোয়া ভাবে হয়েছে।দুপক্ষের ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনেরাই শুধু অংশ গ্রহন করেছিলো।বিয়েতে টাকা দরকার এই অজুহাতেও তো টাকা নেওয়া যায় না।তবে কি লোকমান ও বাকি আট দশটা ছেলের মতো লোভী?বাসর রাতে রিমি চুপচাপ বসেছিলো।লোকমান রিমির চিবুক ধরে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বলেছিলো,”সময়ই বলে দিবে টাকাটা কেন নিয়েছি”।
-------------
সবুজ রিমির বড় ভাই।তবে দুজন একমায়ের সন্তান নয়।সবুজের যখন তিন বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়।বাবা আজিজ মিয়া আবার বিয়ে করেন।দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের দুবছরের মাথায় একটা কন্যা সন্তান জন্ম দেন।কাগজ কলমে তাই রিমি আর সবুজ সৎ ভাই বোন।তবে দুজনের চলাফেরায় বোঝার উপায় নেই যে, দুজন দু মায়ের গর্ভের।
ভাই এ ভাই এ যেমন ভালবাসা থাকে, বোন আর ভাই এ তার চেয়ে বেশি ভালবাসা থাকে।তাই রিমি আর সবুজ দুজনই যদি মেয়ে হতো বা দুজনই যদি ছেলে হতো তাহলে ভালবাসাটা এত মধুর হতো না।রিমি তখনও বুঝতে শেখেনি সৎ ভাই বোন কি,তখন থেকেই আজিজ মিয়া মেয়ে কে বুঝিয়েছেন সবুজ কষ্ট পাবে এমন কোন আচরণ করা যাবে না।খুব ছোট বয়স থেকে বাবার মুখে কথাটি এত বেশি শুনেছে যে,কথাটা অমান্য করা মনস্তাত্ত্বিক ভাবেই নিষিদ্ধ মনে হয় রিমির।সবুজের প্রতি রিমির ভ্রাতৃত্ববোধে রিমির মা রাহেলা বেগম মোটেও খুশি না।বহুবার হুশিয়ার করেছে মেয়েকে।কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আজিজ মিয়ার কষ্টটা সবচেয়ে বেশি।মুখ বুজে সহ্য করে ছেলের প্রতি হওয়া সব দুর্ব্যবহার।দারুন মেধাবী ছিলো সবুজ।কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য ছেলেকে পড়াতে পারেন নি।নিজের জমিজমা দেখাশোনা,বাড়ির গরুগুলোর লালন পালনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছে সবুজের যখন মাধ্যমিকে পড়ার কথা ছিলো।
সবুজের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর গরু বেড়েছে,ধানের সময় বস্তা বস্তা ধান ঘরে উঠেছে,পাটের সময় ভালো পয়সা পেয়েছে আজিজ মিয়া।কিন্তু এতে সবুজের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটে নি।যদিও আজিজ মিয়া বউয়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দু চারটে নোট ধরিয়ে দিতো।কখনো যদি রাহেলা বেগম ব্যাপার টা আন্দাজ করতে পারতো তাহলে সংসারে লঙ্কা কান্ড বাধিয়ে দিতো।
যে ছেলে হাতখরচের জন্য সামান্য টাকাটুকু ও পায় না পরিবার থেকে।সে কিনা স্বপ্ন দেখে নিজের পায়ে দাড়ানোর।এইতো সেদিন বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা আবদার করেছিলে।আজিজ মিয়া মিয়া মুখের উপর সরাসরি প্রতাখ্যান পারেন নি।আবার আশ্বশ্ত ও করতে পারেন নি।সবুজ বাবার নিরবতা দেখেই বুঝতে পেরেছে বাবা অপারগ।কথাটা রাহেলা বেগমের কান অবধি পৌছতে সময় লাগেনি।তাই আর সবুজের মুখে টাকার কথা শোনা যায় নি।
লোকমুখে কথাটি লোকমান ও জানতে পারলো।তবুও সে কিভাবে নির্লজ্জের মতো যৌতুক দাবি করলো?যেখানে সবুজের কতদিনের আশা ছিলো দেড় দুই লাখ টাকা দিয়ে একটা স্টুডিও দিবে।কম্পিউটার কিনবে,ক্যামেরা কিনবে, ইলেকট্রনিক্সের সরঞ্জামাদি কিনবে।ব্যবসাটা ভালোই চলতো।এতবড় একটা গ্রাম কারো পার্সপোট আকার ছবি তোলা লাগলে ইউনিয়ন পরিষদের সাইফুলের দোকানে যেতে হয়।যে পরিবারের টাকা দিয়ে সবুজের স্বপ্ন পূরন হয় নি,সে পরিবার থেকে উল্টো যৌতুক দাবি???
তাও আবার মানুষটা বহু দিনের পরিচিত,হৃদয়ের খুব কাছের লোকমান।সবুজের এতে কোন মন খারাপ হয়নি।সবুজ যৌতুক নিলেই কি আর না নিলেই বা কি? সে কি কখনো টাকা পেতো?
রিমি এত সব বুঝে না।সে এত দিনে লোকমান কে চিনেছে।বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু লোকমান কে না।
--------
লোকমান সকাল থেকে বাড়ি নেই।স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।কোথায় গেছে?কেনো গেছে?কিছুই জানেনা রিমি।
রিমি বিকেলে বারান্দায় বসে বাড়ির ছোটদের সাথে গল্প করছিলো।এমন সময় লোকমানের ফোন বেজে উঠলো।রিমি ফোন রিসিভ করলো।
-হ্যালো,”রিমি, বাড়ির সামনে একটু আসো”
-আচ্ছা, যাচ্ছি।
মাথার উপর ঘোমটা টেনে রিমি বারান্দা থেকে নামলো।
রাস্তায় গিয়ে রিমি পুরো অবাক।দক্ষিন পাড়ার সলিম চাচার ভ্যানে বড় দুইটা বক্স।বাইরে থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছে মনিটর বা কম্পিউটার জাতীয় কোন কিছু আছে।পুরো ভ্যান ভর্তি ছোট বড় অনেক বক্স।লোকমানের হাতে একটা ক্যামেরা, যেটা দিয়ে সে রিমির দৃষ্টি আর্কষণ করছে। লোকমানের সাথে দাড়িয়ে আছে তার বড় ভাই সবুজ।ততক্ষণে বোঝার বাকি রইলো না, কেন লোকমান আজ স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।
মনটা খুশিতে ভরে গেলো রিমির।অবশেষে তাহলে মায়ের মন গলেছে।পূরণ হতে চলেছে সবুজের স্বপ্ন।রিমি বহুদিন ভেবেছে তার মা সারাজীবনই পাষান থাকবে না।একদিন ঠিকই বাবাকে বলবে, সবুজের স্টুডিওর দোকানের জন্য টাকাটা দিলেই তো হয়।ওই তো আমাদেরই ছেলে।তারপর হয়তো বলতো বাড়িতে সানাই বাজানোর ব্যবস্থা করো।ঘড়ে একটা লক্ষী আনো।
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এমন জাতীয় ঘটনা মানুষকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। ভাষা হারিয়ে ফেলো মানুষ।চোখ দিয়ে আনন্দঅশ্রু বেরুোয়।ঠিক তেমনটিই হলো রিমির বেলাতেও।বাবার উপর প্রচন্ড অভিমান হলো রিমির।সবুজকে এতো গুলো টাকা দিলো, অথচ একবারের জন্যও তাকে জানালো না।এটা তো ভারি অন্যায়।মোবাইলের ডায়াল অপশনে গিয়ে কল দিলো বাবা আজিজ মিয়াকে।আজিজ মিয়া হ্যালো বলার আগেই ভালবাসা মিশ্রিত রাগান্বিত কন্ঠে রিমি বললো,”এতগুলো টাকা যে তুমি সবুজ ভাইকে দিলে,একবারের জন্যও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?বিয়ে দিয়েছো বলে কি পর হয়ে গেছি?
মোবাইলের অন্য প্রান্তে হতভম্ব আজিজ মিয়।কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।কিসের টাকা দিবো?আমিও সবুজকে কোন টাকা দেয়নি।
এমন উত্তর আশা করেনি রিমি।সে আবার বললো,”মিথ্যা বলো না, টাকা দেওয়ার কথা কি মাকে বলছো?
আজিজ মিয়া জবাব দেয় তুই জানিস না তোর মাকে?আমি যদি আজিজ কে টাকা দেই।তোর মা কি আমায় আস্ত রাখবে?
কথা বলেই চলেছে আজিজ মিয়া…………….
শোনার ভ্রুক্ষেপ নেই রিমির।লোকমানের দিকে তাকালো সে।
বিকেল পেরিয়ে গেছে। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পরেছে।সূর্যের চার দিকে লাল আর হলুদাভের মিশ্রণ লুকোচুরি করছে।
এদিকে লোকমানের ঠোঁটে তৃপ্তততার হাসি ঝরছে।যে হাসি পশ্চিম আকাশে অস্তমান সূর্যে মিশে যাচ্ছে।
বিয়ের মাস খানিক আগে,রিমি তার তালেব ভাইয়ের বউ এর সাথে গল্প প্রসঙ্গে শ্বশুর বাড়ির প্রশংসা করছিলো।তখন রিমিকে বেশ কটু কথা শুনতে হয়েছে।সেদিন পুরোটা দিন কেটে ছিলো বিষন্নতায়। কোন কাজেই মন বসাতে পারি নি।
কিন্তু এখন রিমি বুঝেছে,স্বার্থের জন্য প্রিয় মানুষ ও বেঈমানী করার সামর্থ্য রাখে।রিমি যেবার মাধ্যমিক পাস করে, সেবার লোকমান উচ্চমাধ্যমিক পাস করে।পাশাপাশি গ্রামের মানুষ হলেও আগে কখনই তাদের মধ্য কোন কথা হয় নি।দুজনেই কেবল মাত্র ফেসবুক চালানো শিখেছে।বন্যা দুর্গতদের জন্য তহবিল গঠন’গ্রুপের আহ্বায়ক ছিলো লোকমান।আর রিমি স্বেচ্ছাসেবী।তাই এক সাথে কাজ করার সুবাধেই তাদের চেনা জানা।তার রেশ ধরেই ফেসবুকে পরিচয়।দুজনের অজান্তেই এক সময় তারা একে ওপরের প্রেমে পড়ে যায়।দুজনের পরিবারই বেশ সম্ভ্রান্ত,তাই পাড়া প্রতিবেশীরা কখনোই তাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কিছু রটাতে পারে নি।ছোট বড় সবাই তাদের প্রেমের সম্পর্ক জানতো।যে লোকমানের চোখে চোখ রাখলে রিমি নিজেকে আর খুজিয়ে পেতো না,যার সান্নিধ্য আসলে পুরো পৃথিবীকে তুচ্ছ মনে করতো সেই লোকমান ই কিনা তার অমর্যাদা করলো!ভালবাসার মানুষের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধভক্তি ও নেই?
রিমি অবশ্য আর মন খারাপ করে না। ভালবাসার মানুষ কষ্ট দিলেও তার মুখের দিকে তাকালেই সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়।তবুও রিমির মাথায় সবসময় একটা বিষয় ঘুরপাক খায়।লোকমানের এত সম্পদ থাকা স্বত্বে ও রিমিকে বিয়ে করার জন্য কেনো ২ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করলো?বিয়েটা তো ঘরোয়া ভাবে হয়েছে।দুপক্ষের ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনেরাই শুধু অংশ গ্রহন করেছিলো।বিয়েতে টাকা দরকার এই অজুহাতেও তো টাকা নেওয়া যায় না।তবে কি লোকমান ও বাকি আট দশটা ছেলের মতো লোভী?বাসর রাতে রিমি চুপচাপ বসেছিলো।লোকমান রিমির চিবুক ধরে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বলেছিলো,”সময়ই বলে দিবে টাকাটা কেন নিয়েছি”।
-------------
সবুজ রিমির বড় ভাই।তবে দুজন একমায়ের সন্তান নয়।সবুজের যখন তিন বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়।বাবা আজিজ মিয়া আবার বিয়ে করেন।দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের দুবছরের মাথায় একটা কন্যা সন্তান জন্ম দেন।কাগজ কলমে তাই রিমি আর সবুজ সৎ ভাই বোন।তবে দুজনের চলাফেরায় বোঝার উপায় নেই যে, দুজন দু মায়ের গর্ভের।
ভাই এ ভাই এ যেমন ভালবাসা থাকে, বোন আর ভাই এ তার চেয়ে বেশি ভালবাসা থাকে।তাই রিমি আর সবুজ দুজনই যদি মেয়ে হতো বা দুজনই যদি ছেলে হতো তাহলে ভালবাসাটা এত মধুর হতো না।রিমি তখনও বুঝতে শেখেনি সৎ ভাই বোন কি,তখন থেকেই আজিজ মিয়া মেয়ে কে বুঝিয়েছেন সবুজ কষ্ট পাবে এমন কোন আচরণ করা যাবে না।খুব ছোট বয়স থেকে বাবার মুখে কথাটি এত বেশি শুনেছে যে,কথাটা অমান্য করা মনস্তাত্ত্বিক ভাবেই নিষিদ্ধ মনে হয় রিমির।সবুজের প্রতি রিমির ভ্রাতৃত্ববোধে রিমির মা রাহেলা বেগম মোটেও খুশি না।বহুবার হুশিয়ার করেছে মেয়েকে।কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আজিজ মিয়ার কষ্টটা সবচেয়ে বেশি।মুখ বুজে সহ্য করে ছেলের প্রতি হওয়া সব দুর্ব্যবহার।দারুন মেধাবী ছিলো সবুজ।কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য ছেলেকে পড়াতে পারেন নি।নিজের জমিজমা দেখাশোনা,বাড়ির গরুগুলোর লালন পালনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছে সবুজের যখন মাধ্যমিকে পড়ার কথা ছিলো।
সবুজের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর গরু বেড়েছে,ধানের সময় বস্তা বস্তা ধান ঘরে উঠেছে,পাটের সময় ভালো পয়সা পেয়েছে আজিজ মিয়া।কিন্তু এতে সবুজের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটে নি।যদিও আজিজ মিয়া বউয়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দু চারটে নোট ধরিয়ে দিতো।কখনো যদি রাহেলা বেগম ব্যাপার টা আন্দাজ করতে পারতো তাহলে সংসারে লঙ্কা কান্ড বাধিয়ে দিতো।
যে ছেলে হাতখরচের জন্য সামান্য টাকাটুকু ও পায় না পরিবার থেকে।সে কিনা স্বপ্ন দেখে নিজের পায়ে দাড়ানোর।এইতো সেদিন বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা আবদার করেছিলে।আজিজ মিয়া মিয়া মুখের উপর সরাসরি প্রতাখ্যান পারেন নি।আবার আশ্বশ্ত ও করতে পারেন নি।সবুজ বাবার নিরবতা দেখেই বুঝতে পেরেছে বাবা অপারগ।কথাটা রাহেলা বেগমের কান অবধি পৌছতে সময় লাগেনি।তাই আর সবুজের মুখে টাকার কথা শোনা যায় নি।
লোকমুখে কথাটি লোকমান ও জানতে পারলো।তবুও সে কিভাবে নির্লজ্জের মতো যৌতুক দাবি করলো?যেখানে সবুজের কতদিনের আশা ছিলো দেড় দুই লাখ টাকা দিয়ে একটা স্টুডিও দিবে।কম্পিউটার কিনবে,ক্যামেরা কিনবে, ইলেকট্রনিক্সের সরঞ্জামাদি কিনবে।ব্যবসাটা ভালোই চলতো।এতবড় একটা গ্রাম কারো পার্সপোট আকার ছবি তোলা লাগলে ইউনিয়ন পরিষদের সাইফুলের দোকানে যেতে হয়।যে পরিবারের টাকা দিয়ে সবুজের স্বপ্ন পূরন হয় নি,সে পরিবার থেকে উল্টো যৌতুক দাবি???
তাও আবার মানুষটা বহু দিনের পরিচিত,হৃদয়ের খুব কাছের লোকমান।সবুজের এতে কোন মন খারাপ হয়নি।সবুজ যৌতুক নিলেই কি আর না নিলেই বা কি? সে কি কখনো টাকা পেতো?
রিমি এত সব বুঝে না।সে এত দিনে লোকমান কে চিনেছে।বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু লোকমান কে না।
--------
লোকমান সকাল থেকে বাড়ি নেই।স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।কোথায় গেছে?কেনো গেছে?কিছুই জানেনা রিমি।
রিমি বিকেলে বারান্দায় বসে বাড়ির ছোটদের সাথে গল্প করছিলো।এমন সময় লোকমানের ফোন বেজে উঠলো।রিমি ফোন রিসিভ করলো।
-হ্যালো,”রিমি, বাড়ির সামনে একটু আসো”
-আচ্ছা, যাচ্ছি।
মাথার উপর ঘোমটা টেনে রিমি বারান্দা থেকে নামলো।
রাস্তায় গিয়ে রিমি পুরো অবাক।দক্ষিন পাড়ার সলিম চাচার ভ্যানে বড় দুইটা বক্স।বাইরে থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছে মনিটর বা কম্পিউটার জাতীয় কোন কিছু আছে।পুরো ভ্যান ভর্তি ছোট বড় অনেক বক্স।লোকমানের হাতে একটা ক্যামেরা, যেটা দিয়ে সে রিমির দৃষ্টি আর্কষণ করছে। লোকমানের সাথে দাড়িয়ে আছে তার বড় ভাই সবুজ।ততক্ষণে বোঝার বাকি রইলো না, কেন লোকমান আজ স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।
মনটা খুশিতে ভরে গেলো রিমির।অবশেষে তাহলে মায়ের মন গলেছে।পূরণ হতে চলেছে সবুজের স্বপ্ন।রিমি বহুদিন ভেবেছে তার মা সারাজীবনই পাষান থাকবে না।একদিন ঠিকই বাবাকে বলবে, সবুজের স্টুডিওর দোকানের জন্য টাকাটা দিলেই তো হয়।ওই তো আমাদেরই ছেলে।তারপর হয়তো বলতো বাড়িতে সানাই বাজানোর ব্যবস্থা করো।ঘড়ে একটা লক্ষী আনো।
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এমন জাতীয় ঘটনা মানুষকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। ভাষা হারিয়ে ফেলো মানুষ।চোখ দিয়ে আনন্দঅশ্রু বেরুোয়।ঠিক তেমনটিই হলো রিমির বেলাতেও।বাবার উপর প্রচন্ড অভিমান হলো রিমির।সবুজকে এতো গুলো টাকা দিলো, অথচ একবারের জন্যও তাকে জানালো না।এটা তো ভারি অন্যায়।মোবাইলের ডায়াল অপশনে গিয়ে কল দিলো বাবা আজিজ মিয়াকে।আজিজ মিয়া হ্যালো বলার আগেই ভালবাসা মিশ্রিত রাগান্বিত কন্ঠে রিমি বললো,”এতগুলো টাকা যে তুমি সবুজ ভাইকে দিলে,একবারের জন্যও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?বিয়ে দিয়েছো বলে কি পর হয়ে গেছি?
মোবাইলের অন্য প্রান্তে হতভম্ব আজিজ মিয়।কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।কিসের টাকা দিবো?আমিও সবুজকে কোন টাকা দেয়নি।
এমন উত্তর আশা করেনি রিমি।সে আবার বললো,”মিথ্যা বলো না, টাকা দেওয়ার কথা কি মাকে বলছো?
আজিজ মিয়া জবাব দেয় তুই জানিস না তোর মাকে?আমি যদি আজিজ কে টাকা দেই।তোর মা কি আমায় আস্ত রাখবে?
কথা বলেই চলেছে আজিজ মিয়া…………….
শোনার ভ্রুক্ষেপ নেই রিমির।লোকমানের দিকে তাকালো সে।
বিকেল পেরিয়ে গেছে। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পরেছে।সূর্যের চার দিকে লাল আর হলুদাভের মিশ্রণ লুকোচুরি করছে।
এদিকে লোকমানের ঠোঁটে তৃপ্তততার হাসি ঝরছে।যে হাসি পশ্চিম আকাশে অস্তমান সূর্যে মিশে যাচ্ছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জহির রহমান ২২/০৭/২০১৮চোখ বুলালাম। সময় নিয়ে পড়বো