হুক্কাহুয়া
(স্থান, কাল ও ঘটনা সবই কাল্পনিক।)
কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা এক জনপদের নাম চামচামবাড়ি। এক সময় এখানে মানুষ ছিলো কম সুখ ছিলো বেশি। গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পাশের সাঈদ্রা নদীতে টেংরা বোয়ালের লাফালাফি।
প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় দেশীয় ফলের গাছ আর সর্বত্রই ছিলো আইক্কা ওয়ালা বরাক বাঁশ। ঝোপঝাড় ছিলো টোলা, শিয়াল, বানরের দখলে। রাতে বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, পেঁচার চোখ রাঙানিও ছিলো বেশ। শকুনের দল, চিলের ছু সবই ছিলো। মাঝি মাল্লার গলায় সুর ছিলো, নদীর তীর ছিলো। বন্যা ফি বছর কৃষকের ফসলের বারোটা বাজিয়ে দিলেও মানুষের মনে সুখ ছিলো। শিয়াল ও কুমিরের গল্প ছিলো। সে গল্প থেকে কিছু লোক শিয়ালের দীক্ষা নিলো।
একবার ঘটলো এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জনপদে এলো নাগরিক সংসদ নির্বাচন। প্রধান হবেন মেয়র। সময়ের অপেক্ষায় থাকা শিয়ালের দীক্ষা নেওয়া লোকগুলো করলো সকল আয়োজন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এ শ্লোগানের ধোঁয়া তুলে শহরের জনতাকে কমজাত, মাইজম জাত ও অভিজাত তিনটি দলে ভাগ করে দিলো। হুক্কাহুয়া মন্ত্রের অলৌকিকত্বে
নির্বাচনে মাইজমজাত ও অভিজাত-কে হারিয়ে মেয়র হলো কমজাত। নির্বাচনে হারলেও মাইজমজাত ও অভিজাত দলের কারো মনে কোনো, হিংসা, ক্ষোভ হতাশা ছিলোনা। সময় মতো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে নাগরিক সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো।
শিয়াল পন্ডিতেরা নাগরিক সংসদের কেউ হলেন গভর্নর, সচিব; কেউ কাউন্সিলর, নগরবিদ; কেউ জজ, এটর্নি জেনারেল; কেউ উকিল, কেউ ভাইস চ্যান্সেলর, প্রিন্সিপাল; কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পুলিশ সুপার। কেউ ফরেস্টার আবার কেউবা এসি ল্যান্ড! নিজ-প্রতিপক্ষ-তৃতীয় পক্ষের ধূম্রজালে হুক্কাহুয়া মন্ত্র দিয়ে শহরের নাগরিকদের অন্ধ বানিয়ে দেওয়া হল।। তবে স্বস্ব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় কমজাতরা পরামর্শের জন্য রাতের আঁধারে আভিজাত ও মাইজম জাতের শরণাপন্ন হতো। কস্মিনকালেও
দিনে কেউ তা স্বীকার করতোনা! এমন করে করে
দিন যায় রাত আসে। তারপর এরপর একসময়...
অতঃপর উন্নয়নের নামে কৃষক, শ্রমিকের উপর করারোপ করা হলো। উত্তেজিত হলো কৃষক-শ্রমিক।
নগরায়ণের নামে কৃষি জমি ও নদী ভরাট করা হলো। সুপেয় পানি ও খাদ্যাভাব দেখা দিলো।
মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার নামে জঙ্গল কেটে সাফ করা হলো। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলো। নেমে এলো এক পরিবেশ বিপর্যয়। আধুনিকায়নের নামে তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস। বন্ধ হলো পাঠাগারের দরোজা, ক্ষুধামন্দা ও মুর্খতা জেঁকে বসলো। শিয়াল পন্ডিতের দল সবই দেখে অন্যের চোখে, নিজে দেখেনা! সবই শুনে অন্যের কানে, নিজে শোনেনা! সবই বুঝে, কী বুঝে শুধু সেটাই বোঝেনা!
চরম বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও মনগড়া অনুশাসনের কারণে অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য হারিয়ে একসময় পরিবেশ বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষের নগরীতে পরিনত হয় চামচামবাড়ি। বন জঙ্গল কেটে উজাড় করে দেওয়ায় আশ্রয়হীন খেক শিয়াল ও বানরের দল চিড়িয়াখানায় বসে নিশ্চিতে কলা খায় আর নাগরিক সংসদের হুক্কাহুয়া শিয়াল পন্ডিতদের জীবন অনিশ্চয়তার দিকে ধায়!
লেখক: আন্তর্জাতিক কবি ও গবেষক।
কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা এক জনপদের নাম চামচামবাড়ি। এক সময় এখানে মানুষ ছিলো কম সুখ ছিলো বেশি। গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পাশের সাঈদ্রা নদীতে টেংরা বোয়ালের লাফালাফি।
প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় দেশীয় ফলের গাছ আর সর্বত্রই ছিলো আইক্কা ওয়ালা বরাক বাঁশ। ঝোপঝাড় ছিলো টোলা, শিয়াল, বানরের দখলে। রাতে বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, পেঁচার চোখ রাঙানিও ছিলো বেশ। শকুনের দল, চিলের ছু সবই ছিলো। মাঝি মাল্লার গলায় সুর ছিলো, নদীর তীর ছিলো। বন্যা ফি বছর কৃষকের ফসলের বারোটা বাজিয়ে দিলেও মানুষের মনে সুখ ছিলো। শিয়াল ও কুমিরের গল্প ছিলো। সে গল্প থেকে কিছু লোক শিয়ালের দীক্ষা নিলো।
একবার ঘটলো এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জনপদে এলো নাগরিক সংসদ নির্বাচন। প্রধান হবেন মেয়র। সময়ের অপেক্ষায় থাকা শিয়ালের দীক্ষা নেওয়া লোকগুলো করলো সকল আয়োজন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এ শ্লোগানের ধোঁয়া তুলে শহরের জনতাকে কমজাত, মাইজম জাত ও অভিজাত তিনটি দলে ভাগ করে দিলো। হুক্কাহুয়া মন্ত্রের অলৌকিকত্বে
নির্বাচনে মাইজমজাত ও অভিজাত-কে হারিয়ে মেয়র হলো কমজাত। নির্বাচনে হারলেও মাইজমজাত ও অভিজাত দলের কারো মনে কোনো, হিংসা, ক্ষোভ হতাশা ছিলোনা। সময় মতো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে নাগরিক সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো।
শিয়াল পন্ডিতেরা নাগরিক সংসদের কেউ হলেন গভর্নর, সচিব; কেউ কাউন্সিলর, নগরবিদ; কেউ জজ, এটর্নি জেনারেল; কেউ উকিল, কেউ ভাইস চ্যান্সেলর, প্রিন্সিপাল; কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পুলিশ সুপার। কেউ ফরেস্টার আবার কেউবা এসি ল্যান্ড! নিজ-প্রতিপক্ষ-তৃতীয় পক্ষের ধূম্রজালে হুক্কাহুয়া মন্ত্র দিয়ে শহরের নাগরিকদের অন্ধ বানিয়ে দেওয়া হল।। তবে স্বস্ব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় কমজাতরা পরামর্শের জন্য রাতের আঁধারে আভিজাত ও মাইজম জাতের শরণাপন্ন হতো। কস্মিনকালেও
দিনে কেউ তা স্বীকার করতোনা! এমন করে করে
দিন যায় রাত আসে। তারপর এরপর একসময়...
অতঃপর উন্নয়নের নামে কৃষক, শ্রমিকের উপর করারোপ করা হলো। উত্তেজিত হলো কৃষক-শ্রমিক।
নগরায়ণের নামে কৃষি জমি ও নদী ভরাট করা হলো। সুপেয় পানি ও খাদ্যাভাব দেখা দিলো।
মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার নামে জঙ্গল কেটে সাফ করা হলো। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলো। নেমে এলো এক পরিবেশ বিপর্যয়। আধুনিকায়নের নামে তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস। বন্ধ হলো পাঠাগারের দরোজা, ক্ষুধামন্দা ও মুর্খতা জেঁকে বসলো। শিয়াল পন্ডিতের দল সবই দেখে অন্যের চোখে, নিজে দেখেনা! সবই শুনে অন্যের কানে, নিজে শোনেনা! সবই বুঝে, কী বুঝে শুধু সেটাই বোঝেনা!
চরম বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও মনগড়া অনুশাসনের কারণে অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য হারিয়ে একসময় পরিবেশ বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষের নগরীতে পরিনত হয় চামচামবাড়ি। বন জঙ্গল কেটে উজাড় করে দেওয়ায় আশ্রয়হীন খেক শিয়াল ও বানরের দল চিড়িয়াখানায় বসে নিশ্চিতে কলা খায় আর নাগরিক সংসদের হুক্কাহুয়া শিয়াল পন্ডিতদের জীবন অনিশ্চয়তার দিকে ধায়!
লেখক: আন্তর্জাতিক কবি ও গবেষক।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ আবিদ হাসান রাজন ১৪/০৬/২০২৪সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ১৩/০৬/২০২৪অসাধারণ লিখেছেন প্রিয়
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৩/০৬/২০২৪বিউটিফুল