কবি ও নবি
সাহিত্য মানে কল্পলোকের স্বপ্নজাল বুনা নয়।এটি মানুষের শুভবুদ্ধির উজ্জীবনী শক্তি।
পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও সংস্কৃতিবান মানুষই জীবনে সফল। হযরত ঈসা (আ.)কে মহান আল্লাহ পাক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় মানব জাতি এক অপসংস্কৃতির গহব্বরে নিমজ্জিত ছিল। অতঃপর এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনে পৃথিবী হয় আলোকিত।
নবুওয়ত প্রাপ্তির আগে প্রকৃতিই ছিল নবীজির শিক্ষক, তাই তাঁকে জাগতিক কোনো পাঠ গ্রহণ করতে হয়নি। নবুওয়ত লাভের পর স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাইতো পৃথিবী নামক অগ্নিকুণ্ডের কোনো কালিমা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি বলতেন, ‘আমি শুদ্ধতম আরব, কেননা কোরাইশদের ভেতর আমার জন্ম। কিন্তু আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি সাদ বিন বকর গোত্রে।"
রাসূলের আগমনের যুগ ছিল কবিতার ছন্দ-উপমা, শব্দ-উৎপ্রেক্ষা ও বাণী-রূপকল্পে প্লাবিত। আরবদের জীবন ও জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা, আশা ও আনন্দ, শত্রুতা ও মিত্রতার বাহন ছিল কবিতা। কবিতা ছিল তাদের ইতিহাস, তাদের বিজ্ঞান, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের সভ্যতা। এক কথায় তৎকালীন আরবে কবি ও কবিতা বহুল প্রচলিত ও চর্চিত একটি বিষয় ছিল।
সেই কাব্যপ্লাবী সমাজের একজন প্রাগ্রসর ও শুদ্ধভাষী মানুষ হয়েও রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়তের আগে কোনো কবিতার আসরে যোগ দেননি। অথচ নবুওয়ত প্রাপ্তির পর শত্রুপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হলো ‘কবি’ এবং তাঁর ওপর নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআনকে বলা হলো ‘কবিতা। ’
আল কোরআনই এর প্রতিবাদে সোচ্চার হলো। বলা হলো, ‘আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কোরআন। ’ -সূরা ইয়াসিন : ৬৯
এরপরও ইসলামের সৌন্দর্য ও মহিমা প্রচারে অনেক কিছুর মতোই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাফের-মুশরিকরা কবি ও কবিতাকে ব্যবহার শুরু করল। আবু সুফিয়ান ইবনুল হারিছ, আবদুল্লাহ ইবনুয-যিবারা, দিরার ইবনুল খাত্তাব, আমর ইবনুল আস, আবু আয্যা আল জুমাহি, আল হারিছ ইবন হিশাম, হুবায়রা ইবন ওয়াহাব আল-মাখযুমি, মুসাফি ইবন আবদ মানাফ, আবু উসামা মুয়াবিয়া ইবন যুহায়র, কাব ইবন আশরাফ প্রমুখ কবি যখন ইসলামের বিরোধিতায় কবিতা নিয়ে সর্বশক্তিতে নিয়োজিত, তখন কবি ও কবিতা সম্পর্কে ইসলামের নীতি-নির্ধারণী দিকনির্দেশনা জারি হলো।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বলা হলো, ‘আর কবিরা, তাদের অনুসরণ করে তো বিভ্রান্তরা। আপনি কি লক্ষ্য করেন না তাদের প্রতি যে, তারা প্রত্যেক প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়? আর তারা তো বলে তা, যা তারা করে না। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে এবং স্মরণ করেছে আল্লাহকে বারবার আর প্রতিকার করেছে অত্যাচারিত হওয়ার পর শিগগিরই জানবে যারা জুলুম করেছে, কোন জায়গায় তারা ফিরে যাবে। ’ –সূরা শোয়ারা : ২২৪-২২৭
কোরআনে কারিমের এ আয়াতে কবি ও কবিতা তথা সাহিত্য সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোরআনের বাচনভঙ্গি, ভাষাশৈলী ও উপস্থাপনা পদ্ধতির কারণে নবদীক্ষিত মুসলিম কবিদের কাছে হঠাৎ ম্লান হয়ে যাওয়া কবিতা আবার নবজীবন লাভ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাসূলুল্লাহর (সা.) উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তার লালন ও পরিশোধন, তার মমত্ব ও ভালোবাসা, তার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। নবুওয়তি দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহাবি-কবিদের কবিতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের কবিতা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তাদের কবিতার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখতেন। তাদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কৃত করতেন।
সমসাময়িক কবিদের কবিতা সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মন্তব্য করতেন। মহানবী (সা.)-এর এসব কথার সারমর্ম ছিল শিল্পকলা তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য এবং জীবনের সৌন্দর্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
এভাবে ইসলামের গৃহাঙ্গনে কবি ও কবিতা স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য প্রচার, কাফের-মুশরিকদের সমুচিত জবাব দেওয়া, নও-মুসলিমদের আত্মত্যাগ ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করার ক্ষেত্রে সাহাবি- কবিদের কবিতা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও সংস্কৃতিবান মানুষই জীবনে সফল। হযরত ঈসা (আ.)কে মহান আল্লাহ পাক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় মানব জাতি এক অপসংস্কৃতির গহব্বরে নিমজ্জিত ছিল। অতঃপর এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনে পৃথিবী হয় আলোকিত।
নবুওয়ত প্রাপ্তির আগে প্রকৃতিই ছিল নবীজির শিক্ষক, তাই তাঁকে জাগতিক কোনো পাঠ গ্রহণ করতে হয়নি। নবুওয়ত লাভের পর স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাইতো পৃথিবী নামক অগ্নিকুণ্ডের কোনো কালিমা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি বলতেন, ‘আমি শুদ্ধতম আরব, কেননা কোরাইশদের ভেতর আমার জন্ম। কিন্তু আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি সাদ বিন বকর গোত্রে।"
রাসূলের আগমনের যুগ ছিল কবিতার ছন্দ-উপমা, শব্দ-উৎপ্রেক্ষা ও বাণী-রূপকল্পে প্লাবিত। আরবদের জীবন ও জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা, আশা ও আনন্দ, শত্রুতা ও মিত্রতার বাহন ছিল কবিতা। কবিতা ছিল তাদের ইতিহাস, তাদের বিজ্ঞান, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের সভ্যতা। এক কথায় তৎকালীন আরবে কবি ও কবিতা বহুল প্রচলিত ও চর্চিত একটি বিষয় ছিল।
সেই কাব্যপ্লাবী সমাজের একজন প্রাগ্রসর ও শুদ্ধভাষী মানুষ হয়েও রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়তের আগে কোনো কবিতার আসরে যোগ দেননি। অথচ নবুওয়ত প্রাপ্তির পর শত্রুপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হলো ‘কবি’ এবং তাঁর ওপর নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআনকে বলা হলো ‘কবিতা। ’
আল কোরআনই এর প্রতিবাদে সোচ্চার হলো। বলা হলো, ‘আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কোরআন। ’ -সূরা ইয়াসিন : ৬৯
এরপরও ইসলামের সৌন্দর্য ও মহিমা প্রচারে অনেক কিছুর মতোই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাফের-মুশরিকরা কবি ও কবিতাকে ব্যবহার শুরু করল। আবু সুফিয়ান ইবনুল হারিছ, আবদুল্লাহ ইবনুয-যিবারা, দিরার ইবনুল খাত্তাব, আমর ইবনুল আস, আবু আয্যা আল জুমাহি, আল হারিছ ইবন হিশাম, হুবায়রা ইবন ওয়াহাব আল-মাখযুমি, মুসাফি ইবন আবদ মানাফ, আবু উসামা মুয়াবিয়া ইবন যুহায়র, কাব ইবন আশরাফ প্রমুখ কবি যখন ইসলামের বিরোধিতায় কবিতা নিয়ে সর্বশক্তিতে নিয়োজিত, তখন কবি ও কবিতা সম্পর্কে ইসলামের নীতি-নির্ধারণী দিকনির্দেশনা জারি হলো।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বলা হলো, ‘আর কবিরা, তাদের অনুসরণ করে তো বিভ্রান্তরা। আপনি কি লক্ষ্য করেন না তাদের প্রতি যে, তারা প্রত্যেক প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়? আর তারা তো বলে তা, যা তারা করে না। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে এবং স্মরণ করেছে আল্লাহকে বারবার আর প্রতিকার করেছে অত্যাচারিত হওয়ার পর শিগগিরই জানবে যারা জুলুম করেছে, কোন জায়গায় তারা ফিরে যাবে। ’ –সূরা শোয়ারা : ২২৪-২২৭
কোরআনে কারিমের এ আয়াতে কবি ও কবিতা তথা সাহিত্য সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোরআনের বাচনভঙ্গি, ভাষাশৈলী ও উপস্থাপনা পদ্ধতির কারণে নবদীক্ষিত মুসলিম কবিদের কাছে হঠাৎ ম্লান হয়ে যাওয়া কবিতা আবার নবজীবন লাভ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাসূলুল্লাহর (সা.) উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তার লালন ও পরিশোধন, তার মমত্ব ও ভালোবাসা, তার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। নবুওয়তি দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহাবি-কবিদের কবিতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের কবিতা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তাদের কবিতার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখতেন। তাদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কৃত করতেন।
সমসাময়িক কবিদের কবিতা সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মন্তব্য করতেন। মহানবী (সা.)-এর এসব কথার সারমর্ম ছিল শিল্পকলা তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য এবং জীবনের সৌন্দর্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
এভাবে ইসলামের গৃহাঙ্গনে কবি ও কবিতা স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য প্রচার, কাফের-মুশরিকদের সমুচিত জবাব দেওয়া, নও-মুসলিমদের আত্মত্যাগ ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করার ক্ষেত্রে সাহাবি- কবিদের কবিতা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ড. সুলতান আশরাফী ২৪/১১/২০২১দুর্দান্ত লাগলো
-
জামাল উদ্দিন জীবন ২১/০৮/২০২১দারুন বলেছেন।
-
মাহতাব বাঙ্গালী ১৩/০৬/২০২১সুন্দর লিখেছেন।আরবি সাহিত্য অথবা বিশ্ব সাহিত্য আর ধর্মগ্রন্থগুলো অনেক পার্থক্য। যদিও দেখতে অবিকল তবু ঢের আসমান জমিন পার্থক্য। কারণ, ধর্মগ্রন্থগুলো বিশ্বাসের আরাধ্য জায়গায় থেকে ধ্যানী বানায় আপন আপন সত্তার দিকে আর বিশ্ব সাহিত্যগুলো আপন চৈতন্যে যদিও ভ্রমণ করায় তবুও ধর্মগ্রন্থগুলোর মতো স্থায়ী নয় বা ধরে রাখতে পারেনা।
-
ফয়জুল মহী ১২/০৬/২০২১দারুণ অনুভূতির
-
আলমগীর সরকার লিটন ১২/০৬/২০২১সুন্দর