কোহেকাফ নগরে তপু (1)
একটা কুকুর পুরো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই মেজাজ সপ্তমে উঠল। ব্যাটা পিট পিট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দাঁত বের করে হাই তোলছে। ইচ্ছে করছে কেলিয়ে ব্যাটার দাঁত তোলে দেই। কিন্তু কথায় আছে - কুকুরে কামড়ালেও কুকুরকে কামড়ানো যায়না। কিছু দিন যাবত এলাকায় পাগলা কুকুরের আনাগোনা বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ানোর সংবাদ শোনা যাচ্ছে। আমি ইশারায় কুকুরটিকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলাম। নো নড়ন নো চড়ন। কোন সাড়া শব্দ নেই। সে লেজ উচিয়ে বীরদর্পে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা আমার প্রেস্টিজে আঘাত হানল।
- এই ব্যাটা হতচ্ছারা সর এখান থেকে নইলে কেলিয়ে তোর বারটা বাজাব।
- আমি এই এলাকার পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমার লগে ঝারি, তর নসিব ভালো দেখতাছিনা। কামড়াই তরে এক রাইতের ভিতরে জলাতঙ্ক বানাই ফালামু। ইনজেকশনে কাম অইব না।
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। যোখানে নরমাল পাগলা কুকুরের ভয়ে থাকি সেখানে স্বয়ং পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমার সামনে! আমারতো ভয়ে ভীরমি খাবার যোগাড়! ভয়ে চিকুনগুনিয়া বাঁধার উপক্রম।
- না আসলে কুকুর মশাই, আপনি পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি, বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
- প্রতথম বার দেইখা তরে মাফ কইরা দিলাম। তয় ভুলেও আর কোন কুত্তার লগে বেইনসাফি কতা কবিনা কইলাম
- (আমি বিগলিত হেসে) না না সে আর হবেনা
- তরেতো এই এলাকায় আগে দেখি নাই, নতুন আদমি মনে হইতাছে?
- ঠিক ধরেছেন কুকুর মশায় আমি এলাকায় নতুন, সামনের মেসে ভাড়া থাকি
- সমস্যা নাই, আমার লগে যহন পরিচয় হইসে এলাকায় সিনা টান কইরা হাটবি, কেউ কিছু কইলে আমারে জানাবি।
- সেকি আর বলতে হয়
- আমাগো বিশেষ বাহিনী দিয়া তর সম্পর্কে একটা তদন্ত করন লাগব। তুই এই এলাকায় আইছস, তর স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে একটা রিপোর্ট লইতে হইব।
- বিশেষ বাহিনী মানে?
- গাধা কোথাকার! র্যাব, কোবরাসহ সব খানে আমাগো যে ডগ স্কোয়াড আছে তাগো সম্পর্কে তর ধারণা নাই?
- না না তাতো জানি
- অগো দিয়াই তর ব্যাপারে একটা তদন্ত করুম
- দেখেন মশাই আমি একজন নিরীহ বেকার আদমি। আমার ব্যাপারে তদন্ত কি না করলেই নয়?
- তুই নিরীহ কিনা সেইটা তদন্তের পরই বলা যাইব, এখন না
- তো আমি এখন যাই, একটু সাইড দেন প্লিজ
- যা
পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহোদয় অনুগ্রহ করে সরে দাঁড়ালেন। আমি ভক্তিতে গদ গদ হয়ে তার পাশ দিয়ে চলে আসলাম।
2
মেসে এসে মেজাজ সপ্তম থেকে অষ্টমে উপনীত হল। মেসে কোন রান্না বান্না হয় নাই। সারাদিন পেটে দানা পানি পড়েনাই, খিদেয় পেটের কলকব্জা অচল হয়ে গেছে, ব্রেনের সট সার্কিটে কোন কাজ করছেনা। মেস ম্যানাজার জয়নাল বারান্দায় তা দেয়া মুরগীর মত ঝিমুচ্ছে। বুয়া সুযোগ বুঝাে চম্মট দিয়েছে।
- জয়নাল
- জ্বে তপু ভাই
- মেসে কেয়ামতের আলামত কেন?
- কি করবেন ভাই, কলিকাল চলতাছে। মাসের ৫ তারিখ। কেউ টাকা দেয় নাই। তাই মেস বন্ধ
- টাকা নাই, বাকি আনবে। এইতো জগতের নিয়ম।
- গেছিলাম। দোকানদার কইল - বাকী চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, শেষে নিজেই শরম পাইয়া চইলা আইলাম।
- মেসের অন্যান্য বর্ডার রা কি বলে?
- মেসে তো বিচিত্র ধরণের বর্ডার তাদের বিচিত্র কথাবার্তা
- কি রকম?
- বাদ দেন সব টাকা না দেয়ার ধান্দা
- তো, টাকা না দিলে মেস চলবে কিভাবে?
- পেটে দুএকদিন দানা পানি না পরলে দেখবেন সুড়সুড় কিরা টাকা দিয়া দিব। কড়া ডোজ দিছি।
- বুয়ার কি খবর?
- তার কথা আর বইলেন না। হেথে বুয়া কল্যাণ সমিতির সভানেত্রি। বিরাট কারবার। আমারে ম্যানাজার বইলা গইণ্যই করেনা। আপনের কারণে আমার চাকরিডা আছে তপু ভাই। নাইলে এই বুয়া আমারে কবেই দৌড়াইয়া দিত।
- হুম
- তপু ভাই
- বল
- নতুন বর্ডার শামসু ভাইয়ের ভাবগতিক ভালো দেখতাছিনা
- কেন, কি করেছে সে
- আমি নিশ্চিত সে ঢাকা শহরের অজ্ঞান পার্টির নেতা
- বল কি?
- হ তপু ভাই
- তবেতো চিন্তার বিষয়
- কিছু একটা করেন তপু ভাই
- ঠিক আছে, দেখি কি করা য়ায়।
পকেটের মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠল। ছালেহা ফুফুর ফোন। বড় অস্থির মহিলা।
- হ্যালো, ছালেহা ফুফু
- তপুরে তুই কই
- আমি কই তাতো নিজেই জানিনা, পেটে ক্ষুধা। ক্ষুধার কারণে চারপাশের সব অন্ধকার দেখছি। পূর্লিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হচ্ছে।
- এইসব হাবিজাবি কথা বাদ দে। মাত্র বিকাল তুই অন্ধকার পাইলি কই। চাঁদ আরও পরের কথা।
- ফুফু পেটে বিষম দাপাদাপি। শটসার্কিটে কাজ করছেনা। তোমার ওখানে খাবার আছে।
- মুরগীর ঝোল আর আলু আছে। সব তো খাওয়া শেষ।
- ওতেই চলবে।
- তপুরে
- বল
- তোর ফুফুায় বাড়ির কাজের বুয়ারে বিয়ে করতে চায়। সারাদিন তার সাথে লটরপটর, কটরমটর আমার এখন কি এখন কি হবে।
- তুমি কোন চিন্তা করনা ফুফু। ফুফাকে ফু দিয়ে সব ঠিক করে দেব।
- তুই তাড়াতাড়ি আয়
- আমি আসছি
- এই ব্যাটা হতচ্ছারা সর এখান থেকে নইলে কেলিয়ে তোর বারটা বাজাব।
- আমি এই এলাকার পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমার লগে ঝারি, তর নসিব ভালো দেখতাছিনা। কামড়াই তরে এক রাইতের ভিতরে জলাতঙ্ক বানাই ফালামু। ইনজেকশনে কাম অইব না।
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। যোখানে নরমাল পাগলা কুকুরের ভয়ে থাকি সেখানে স্বয়ং পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমার সামনে! আমারতো ভয়ে ভীরমি খাবার যোগাড়! ভয়ে চিকুনগুনিয়া বাঁধার উপক্রম।
- না আসলে কুকুর মশাই, আপনি পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি, বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
- প্রতথম বার দেইখা তরে মাফ কইরা দিলাম। তয় ভুলেও আর কোন কুত্তার লগে বেইনসাফি কতা কবিনা কইলাম
- (আমি বিগলিত হেসে) না না সে আর হবেনা
- তরেতো এই এলাকায় আগে দেখি নাই, নতুন আদমি মনে হইতাছে?
- ঠিক ধরেছেন কুকুর মশায় আমি এলাকায় নতুন, সামনের মেসে ভাড়া থাকি
- সমস্যা নাই, আমার লগে যহন পরিচয় হইসে এলাকায় সিনা টান কইরা হাটবি, কেউ কিছু কইলে আমারে জানাবি।
- সেকি আর বলতে হয়
- আমাগো বিশেষ বাহিনী দিয়া তর সম্পর্কে একটা তদন্ত করন লাগব। তুই এই এলাকায় আইছস, তর স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে একটা রিপোর্ট লইতে হইব।
- বিশেষ বাহিনী মানে?
- গাধা কোথাকার! র্যাব, কোবরাসহ সব খানে আমাগো যে ডগ স্কোয়াড আছে তাগো সম্পর্কে তর ধারণা নাই?
- না না তাতো জানি
- অগো দিয়াই তর ব্যাপারে একটা তদন্ত করুম
- দেখেন মশাই আমি একজন নিরীহ বেকার আদমি। আমার ব্যাপারে তদন্ত কি না করলেই নয়?
- তুই নিরীহ কিনা সেইটা তদন্তের পরই বলা যাইব, এখন না
- তো আমি এখন যাই, একটু সাইড দেন প্লিজ
- যা
পাগলা কুত্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহোদয় অনুগ্রহ করে সরে দাঁড়ালেন। আমি ভক্তিতে গদ গদ হয়ে তার পাশ দিয়ে চলে আসলাম।
2
মেসে এসে মেজাজ সপ্তম থেকে অষ্টমে উপনীত হল। মেসে কোন রান্না বান্না হয় নাই। সারাদিন পেটে দানা পানি পড়েনাই, খিদেয় পেটের কলকব্জা অচল হয়ে গেছে, ব্রেনের সট সার্কিটে কোন কাজ করছেনা। মেস ম্যানাজার জয়নাল বারান্দায় তা দেয়া মুরগীর মত ঝিমুচ্ছে। বুয়া সুযোগ বুঝাে চম্মট দিয়েছে।
- জয়নাল
- জ্বে তপু ভাই
- মেসে কেয়ামতের আলামত কেন?
- কি করবেন ভাই, কলিকাল চলতাছে। মাসের ৫ তারিখ। কেউ টাকা দেয় নাই। তাই মেস বন্ধ
- টাকা নাই, বাকি আনবে। এইতো জগতের নিয়ম।
- গেছিলাম। দোকানদার কইল - বাকী চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, শেষে নিজেই শরম পাইয়া চইলা আইলাম।
- মেসের অন্যান্য বর্ডার রা কি বলে?
- মেসে তো বিচিত্র ধরণের বর্ডার তাদের বিচিত্র কথাবার্তা
- কি রকম?
- বাদ দেন সব টাকা না দেয়ার ধান্দা
- তো, টাকা না দিলে মেস চলবে কিভাবে?
- পেটে দুএকদিন দানা পানি না পরলে দেখবেন সুড়সুড় কিরা টাকা দিয়া দিব। কড়া ডোজ দিছি।
- বুয়ার কি খবর?
- তার কথা আর বইলেন না। হেথে বুয়া কল্যাণ সমিতির সভানেত্রি। বিরাট কারবার। আমারে ম্যানাজার বইলা গইণ্যই করেনা। আপনের কারণে আমার চাকরিডা আছে তপু ভাই। নাইলে এই বুয়া আমারে কবেই দৌড়াইয়া দিত।
- হুম
- তপু ভাই
- বল
- নতুন বর্ডার শামসু ভাইয়ের ভাবগতিক ভালো দেখতাছিনা
- কেন, কি করেছে সে
- আমি নিশ্চিত সে ঢাকা শহরের অজ্ঞান পার্টির নেতা
- বল কি?
- হ তপু ভাই
- তবেতো চিন্তার বিষয়
- কিছু একটা করেন তপু ভাই
- ঠিক আছে, দেখি কি করা য়ায়।
পকেটের মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠল। ছালেহা ফুফুর ফোন। বড় অস্থির মহিলা।
- হ্যালো, ছালেহা ফুফু
- তপুরে তুই কই
- আমি কই তাতো নিজেই জানিনা, পেটে ক্ষুধা। ক্ষুধার কারণে চারপাশের সব অন্ধকার দেখছি। পূর্লিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হচ্ছে।
- এইসব হাবিজাবি কথা বাদ দে। মাত্র বিকাল তুই অন্ধকার পাইলি কই। চাঁদ আরও পরের কথা।
- ফুফু পেটে বিষম দাপাদাপি। শটসার্কিটে কাজ করছেনা। তোমার ওখানে খাবার আছে।
- মুরগীর ঝোল আর আলু আছে। সব তো খাওয়া শেষ।
- ওতেই চলবে।
- তপুরে
- বল
- তোর ফুফুায় বাড়ির কাজের বুয়ারে বিয়ে করতে চায়। সারাদিন তার সাথে লটরপটর, কটরমটর আমার এখন কি এখন কি হবে।
- তুমি কোন চিন্তা করনা ফুফু। ফুফাকে ফু দিয়ে সব ঠিক করে দেব।
- তুই তাড়াতাড়ি আয়
- আমি আসছি
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/০১/২০১৯
-
এনামুল হক পাইলট ১৪/১১/২০১৮সুন্দর
-
প্রশান্ত কুমার ঘোষ ১১/১১/২০১৮অনেক ভালো লাগা রেখে গেলাম।
-
Michael ১০/১১/২০১৮ভালো হয়েছে
-
এনামুল হক পাইলট ১০/১১/২০১৮ভাল লাগল
চালিয়ে যান বন্ধু। শুভ কামনা -
বাংলা কবিতার প্রকাশনী সংস্থা অর্ক প্রকাশনীর নতুন উদ্যোগ - 'আলোর মিছিল'
এর সফল অগ্রযাত্রায় শরিক হোন। ৪র্থ সংখ্যাটিও (মাতৃভাষা দিবস সংখ্যা) প্রকাশের পথে। আপনার লেখাটি দিন।
https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/matryvasa-dibos/?s=published
গল্প প্রবন্ধ কবিতা যা ইচ্ছা দিতে পারেন। ধন্যবাদ।