www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সজলের অভিমান 1ম পর্ব

সন্ধ্যা হয়ে এলো। পাখিদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ক্লান্তিময় ব্যস্ততা! ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওড়ে যাচ্ছে। হরেক রকম পাখি। সাদা বক গুলো লাইন ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সে এক চমত্কার দৃশ্য। যেন সাজানো গোছানো একটি মুক্তোর মালা। সন্ধ্যার আকাশে ওড়ে যাচ্ছে কোন এক অজানা দেশে। শালিক পাখি গুলো অনেক নিচ দিয়ে ওড়ে যাচ্ছে। দস্যি ছেলেগুলো পাখিদের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারছে। দূর আকাশে একটি বেগুনী রঙের ঘুড়ি ওড়তে দেখা যাচ্ছে। এই সন্ধ্যায় একাকি ঘুড়িটা যেন নিরব সন্ধ্যার অপূর্ব উমপা হয়ে আকাশের রক্তিম আভার সাথে মিশে যেতে চাচ্ছে। নদীর পাড় গাঁয়ের ছেলেদের লাফিয়ে পড়ার ঝুঁপঝাপ আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ওরা সারা বিকেল ধূলি মেখে নদীর পাড় ফুটবল খেলেছ কেউবা দাড়িয়া বান্দা কিংবা হাডুডু এখন নদীর শীতল জলে গোসল করে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সন্ধ্যারাণী ধীরে ধীরে তার চোখে কাজল মেখে নিচ্ছে। তার কাজল কালো চোখ পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে আঁধারের সৃষ্টি করছে। গাঁয়ের ঘরে ঘরে আলো জ্বলে উঠছে। সবাই ঘরে ফিরে গেছে কিন্তু সজল এখনো যায়নি সে নদীর তীরে বসে আছে। বাড়িতে সে মা বাবার সাথে রাগ করেছে। ঠিক করেছে আর কখনো বাড়ি ফিরে যাবেনা। কোথায় যাবে সেটাও ঠিক করতে পারছেনা। মাগরিবের আযান হল। সন্ধ্যা বেয়ে ধীরে ধীরে রাতের আঁধার নামছে।
চারদিক ক্রমেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। হঠাত্ এক ঝটকা গরম বাতাস বয়ে গেল। বাতাসের ঝটকায় সজল কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে। সজল তার দাদির কাছে শোনেছে কালী সন্ধ্যায় খারাপ জ্বীন ভূত কোন জায়গা দিয়ে গেলে সেখান দিয়ে গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। কথাটা মনে হতেই ভয়ে সজলের শরীরটা কেঁপে উঠে। একবার কোন এক সন্ধ্যায় সজল তার দাদি ও চাচির সাথে কোথাও যাচ্ছিল। তারা দু জন গল্প করতে করতে হাটছিল অন্যদিকে সজল একটু জোরে তাদের আগে আগে হাটছিল। হঠাত্ রাস্তার মাঝে এক জায়গায় সজল স্থির দাঁড়িয়ে যায়। তার মনে হচ্ছিল গাছ সমান উঁচু দুটি পা নিয়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে ধীরে ধীরে উপর দিকে তাকায়। উপরে তাকিয়ে তার হৃতপিন্ড ঠান্ডা হয়ে যায়। তার মনে হচ্ছে একটি বিশাল মানুষ আকৃতির ভয়ংকর দর্শন মূখ দু পাটি দাঁত বের করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে তার দাদি ও চাচি তাকে ডাকছে কিন্তু তার কোন সাড়া শব্দ নেই। হঠাত্ প্রচন্ড চিত্কারে পড়ে যায় সে। তার চিত্কারে রাস্তার পাশের বাড়ি থেকে হ্যারিকেন নিয়ে আসে একটি লোক। ততক্ষণে অনেক লোক জমে গেছে। সজল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় এবং সেদিকে ইশার করে ভূত ভূত বলে চিত্কার করতে থাকে কিন্তু সেখানে কয়েকটি কলা গাছ ও বড় বড় কলার থোর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা!
সজল আজো বুঝে উঠতে পারেনা ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন। সে কথা মনে হলে তার মনের মাঝে একটা অজানা ভয় উঁকি দেয়। বিশাল নদী তীরে এখন সে একা। ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এত রাতে সে একা বসে আছে ভাবতেই মনের মাঝে একটা শিহরণ বয়ে যায়। নদীর মাঝে ডিঙি নৌকায় মিটি মিটি আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নদীর মাঝে আকাশের তারা গুলো এসে ছোটাছোটি করছে। সজল ডিঙি নৌকার গুলোর দিকে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। রাতের আঁধারের মাঝে যে এত সুন্দর দৃশ্য দেখা যাবে তা ভাবতে পারেনি সে। আসলে প্রতিটি মুহূর্তের ই একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। হাজারো ব্যস্ততার ভিরে অনেকের ই সে দৃশ্যগুলো দেখার সুযোগ হয়না। বাড়ি থেকে রাগ করে বের না হলে সজল ও হয়ত এ দৃশ্যগুলো দেখার সুযোগ পেতনা। ভাবনার মাঝেই সজল লক্ষ্য করে কিছু জোনাকি পোকা তার চারপাশে এসে ভীর করছে। সজল অবাক হয়ে জোনাকি পোকাদের দিকে তাকায়। তার মনে হচ্ছে এরা জোনাকি পোকা নয় বরং তাজমহল থেকে খসে আসা কিছু হীরা চুনি পান্না! ধীরে ধীরে জোনাকি পোকার সংখ্যা বাড়ছে। একটা সময় হাজার হাজার জোনাকি পোকার একটি দল সজলের চারপাশে ঘুরতে লাগল। রাতের আঁধারের মাঝে মূর্হূতেই জেগে উঠল এক মায়াবী জগত। জোনাকিরা যেন সজলের একাকিত্ব ঘুঁচাতেই এখানে এসেছে। সজলের এখন আর ভয় করছেনা। জোনাকি রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট হয়ে সেও জোনাকি পোকাদের এক জন হয়ে গেছে!
সজল এতদিন একটা কারাগারের মধ্যে ছিল। ঘুম থেকে উঠেই টাইট শিডিউল। খুব ভোরে যেতে হত কোচিং ক্লাসে। কোচিং শেষ না হতেই সারাদিন স্কুলের ব্যস্ততা। স্কুল শেষ করার পর বিকেলে আরবী শিক্ষক। সন্ধ্যা পার হতেই আবার বাড়িতে আরেক জন টিচার। এসব করতে করতেই রাত ৯ টা বেজে যেত তারপর সে ক্লান্ত হয়ে বিছনায় গাঁ এলিয়ে দিত। এতসব পড়ার মাঝে নিজে পড়ার কোন সময় ছিলনা ফলে এত ব্যস্ততার ফলাফল ছিল বড়সড় একটা ঘোড়ার ডিম! প্রতি পরীক্ষার পর ই দেখা যেত রেজাল্ট কার্ডের তথৈবথৈ অবস্থা। পরীক্ষার রেজাল্টের নিয়ম মত কিছু কুইনাইন কিংবা চিরতার পানি যুক্ত কথা তাকে হজম করতে হত। রুটিন অনুযায়ী কিছু মার ও তার কপালে জোটত। সজল অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে এত কোচিং কিংবা টিচারের তার দরকার নেই তত ই তার আম্মা আরো বেশি করে তাকে কোচিং ক্লাসের আলৌকিক মহিমা সর্ম্পকে জ্ঞানদান করেছে। সজলের বন্ধুরা যখন বিকেলে খেলতে যেত সজল তখনো পড়ার টেবিলে, যখন টিভিতে বন্ধুরা ভালো ভালো প্রোগ্রাম দেখত তখনো সে টেবিলে অথচ তার ক্লাসে সে ছিল নিচের সারির ছাত্র। আসলে মনের উপর প্রচন্ড চাপের কারণে সে কোন পড়া মনে রাখতে পারত না। তার বন্ধুরা প্রায় টিপ্পনী কেটে তাকে আদু ভাই নামে অভিহিত করত। সজল তখন সবার চোখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত। সারাদিন রুটিনের মাঝে থাকায় সে ভালোভাবে কারো সাথে মিশতে পারতনা তাই অনেকে ই তাকে অসামাজিক জীব হিসেবে অভিহিত করত। সব মিলিয়ে সে যেন হুমায়ুন আহমেদের শঙ্খনীল কারাগারে বন্দি ছিল।(চলবে)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/১২/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast