ঝরে যাওয়া ফুল
(মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে লেখা)
তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। হাসি-খুশি প্রাণবন্ত একটা ভাব যেন লেগেই থাকত। হৈ-হোল্লড়, আড্ডা, চিৎকার চেঁচামেচি সব মিলিয়ে অপ্রতিদ্বন্দী ছিল সে। ছেলাটা ছিল দারুন মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম দশে স্থান ছিল তার। মফস্বলের একটি কলেজে পড়লেও সে ছিল তোখড় ছাত্র।
মা-বাবার একমাত্র সন্তান তাই আদর যত্ন একটু বেশীই পেয়েছে সে। বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সারাটা জীবন সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করে গেছেন। ফলে আত্ম মর্যাদাবোধটা ছিল টনটনে। ছেলেকে সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল।
ওর স্বপ্নটা ছিল আট-দশটা মধ্য বিত্ত ঘরের সন্তানদের মতই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে একটি ভালো চাকরী, মা-বাবার মূখে হাসি ফুটানো, ব্যাস। কথাচ্ছলে একদিন আমাকে বলেছিল,“মাহমুদ কবে যে এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা শেষ হবে , কবে যে ভালো একটা চাকরী করব। মা-বাবার এই বয়সে কষ্ট আর ভালো লাগেনা। আমি হেসে বলেছিলাম, “মাত্র তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে পা রেখেছিস, এর মধ্যেই এত চিন্তা করলে পড়ালেখা করবি কখন”?
মেয়েদের প্রতি ও সবসময়ই ছিল উদাসীন। চিৎকার চেঁচামেচি সব চলত ছেলেদের সাথে, মেয়েরা কাছে এলেই চুপসে যেত। হাসতে হাসতে আমায় প্রায়ই বলত, “ মাহমুদ এই বয়সে ওদের কাছ থেকে যত দূরে থাকতে পারো, ততই মঙ্গল”।
একদিনের ঘটনা- আমাদের কিছু ক্লাস ফ্রেন্ড মিলে ওকে একটা টিউশনী ঠিক করে দিল। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ ও টকার অংকটাকে সে এড়িয়ে যেতে পারেনি। পড়াতে হবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের একটি মেয়েকে। হিসাব বিজ্ঞান সহ অন্যান্য সব বিষয়ই ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বিধি বাম। প্রথম দিন ই সে জড়তায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। তার উপর একটি কঠিন চ্যাপ্টার পড়াতে গিয়ে অনভ্যস্তার কারনে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। যা-ই হোক শহুরে মেয়েটি স্যারের এই বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। ফলে যা হবার তাই হলো, পরের দিন পড়াতে যাওয়ার দশ মিনিট আগে ওপাশ থেকে ফোন এল, “আপনার আর পড়াতে আসার দরকার নেই”। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বহুদিন হেসেছি। শুভ্র বলেছিল,“ভালোই হল, আল্লাহ যা মনে করেন তাই হয়”।
শুভ্র নামটির সাথে একটি শুভ্র শুভ্র ভাব ছিল। নামের সাথে ওর চরিত্রটা যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল। সবাইকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারত সে। ক্যাম্পাসে প্রায় ই তাকে অনাথ বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দেখা যেত। “দোস্ত ওদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম” বলেই চোখ দুটি ছল ছল করে উঠত ওর।
শুভ্র একদিন আমাকে তার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব করেছিল। আমি ওর প্রস্তাবে এক পায়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। অন্য আট-দশটা মধ্যবিত্তদের মতই ছিল শুভ্রদের গ্রামের বাড়ি। খুব বেশি প্রাচ‚র্যের ঘনঘটা না থাকলেও ওদের বাড়ির প্রতিটি জিনিস ছিল সাজানো গোছানো। শুভ্রর বাবা ছিল খুবই রুচিশীল। আমার সাথে চুটিয়ে গল্প করে ছিল লোকটা। শুভ্রকে নিয়ে বলেছিল তার স্বপ্নের কথা। শুভ্রর মা‘টা ছিল আরও চমৎকার। পৃথিবীতে মানুষ যে এত ভালো হয়, তাকে না দেখলে বুঝতাম না। তাকে দেখে বুঝেছিলাম শুভ্র কেন এত ভালো। আসার সময় বলেছিল“ পাগল ছেলে আমার, তুমি একটু দেখে রেখ বাবা” বলেই বিদায়রত সন্তানকে দোয়া করতে করতে কেঁদে ফেলেছিল শুভ্রর মা।
ক্লাসে বরাবরই শুভ্র ভালো ছিল। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় ও সে তার স্বাক্ষর রেখেছিল। আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষক তাকে বলেছিল,“ক্ননগ্রাচুলেশন ইয়াংম্যান তোমার মত একটি ছেলে এ ক্যাম্পাসে খুব দরকার”। লজ্জায় শুভ্রর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল সেদিন। শুভ্র ছিল ভাবুক। সে ভাবত এই দেশ নিয়ে,দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে। প্রায়ই আমাকে বলত,“মাহমুদ আমাদের দেশের সমস্যার কোন শেষ নেই, যত ভাবি তত বের হয় কিন্তু সমাধান খুজে পাইনা”।
অনেক দিন হয় শুভ্রর সাথে দেখা হয়না। ইদানিং আমাকে একটু এড়িয়েই চলে সে। নতুন অনেক বন্ধু হয়েছে তার ফলে সময়টা সেভাবে আর শেয়ার করতে পারেনা সে। কিন্তু তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যে শুভ্র আমার এত আপন ছিল সে কেন হঠাৎ কেন আমাকে এড়িয়ে চলছে বুঝতে পারছিলামনা। একদিন শুভ্রর সাথে দেখা। কিরে! তুই থাকিস কোথায় ইদানিং? একদম পাত্তাই পাওয়া যায়না। নারে দোস্ত তোকে কি ভুলা যায় হাসতে হাসতে বলেছিল সে।
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হত শুভ্র অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। সেই আগের প্রাণবন্ত শুব্র আর সেই শুভ্র নেই। সেই কথা,সেই গান, উচ্ছ¡লতা সবই যেন লোপ পাচ্ছে। সেই স্বপ্ন, মনের গহিনে অংকিত আল্পনা সবই যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে। আমার কেন যেন মনে হত, শুভ্র কোন রঙিন দুনিয়ায় সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে অপরাধী ভাবতাম। ছিঃ! এমন ফুলের মত ছেলেটির সম্পর্কে কি ভাবছি। কিন্তু কি, কি তাহলে? ওফ বুঝতে পারছিনা।
সেদিন কলা ভবনের সামনে শুভ্রর সাথে দেখা। আম চমকে উঠেছিলাম। শুভ্র! একি চেহেরা হয়েছে তোর! এবড়ো-থেবড়ো চুল,চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে, জামা কাপড় ও একদম নোংরা, কি ব্যাপার বলত তো? কোন উত্তর দেয়নি সে, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট সিগেরেটর গন্ধ পাচ্ছিলাম আমি।
তবে কি আমার ধারণাই ঠিক? কিন্তু কেন এ পথে পা বাড়াল শুভ্র? কে সর্বনাশ করল এমন ফুলের মত জীবনটার? আমি আর ভাবতে পারছিলামনা।
অনেক দিন পর শুভ্র এসছিল আমার রুমে। কিরে,তোর রেজাল্টের খবর কি? ফেল করেছি। নির্বকারভাবে উত্তর দিয়েছিল সে। শুভ্র তুই কি আমার সাথে ঠাট্টা করছিস? যা সত্যি, তাই বলছি।সেদিন কোন কথা বলতে পারিনি।
প্রায় শুভ্রকে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত কিছু বাজে ছেলেদের সাথে সময় কাটাতে যাদের যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ সব স্থানে। মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম এছেলেটির কেন এ পরিবর্তন? কে তাকে এমন ভাবে ভুলিয়ে দিল? এমন সম্ভাবনাময় প্রতিভা যা অংকুরিত হওয়ার আগেই ঝরিয়ে দিল।
অনেকদিন কারন নির্ণয় করার চেষ্টা করেছি। অনেক কষ্ট হলেও কিছু সত্য হয়ত উপলব্দী করতে পেরেছিলাম। আসলে আমি এ জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দায়ী করব। বৃটিশদের নিকট থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে আমরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছি আজ ¯^াধীনতার এত বছর পরেও তার বিন্দু মাত্র পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে আমরা সক্ষম হয়নি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সামান্য যে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় তা বৃটিশদের মূল সূত্রের আধুনিকায়ন ব্যতিত আর কিছুই নয়। এ শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ত টাকা কামানোর রাস্তা দেখায় কিন্তু নৈতিকতা শেখায় না। ফলে আমরা দূর্ণীতিতে আজ একের পর এক বিশ্বকাপ জিতে চলেছি। আজ আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তার একেক জন শিক্ষক এ জাতির ও শিক্ষক। কিন্তু যখন শুনতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নারী কেলেংকারীর সাথে জড়িত, যখন পত্রিকার পাতায় বড় বড় হেডিং এ দেখি ‘যৌন কেলেংকারির দায়ে শিক্ষক অভিযুক্ত’ তখন বুঝতে পারি এ জাতীর ছাত্রদের অবস্থা তাহলে কি? কিন্তু, যাই হোক আমার মত সাধারন নাগরীকের এত বেশি সত্য বলা ঠিক নয়।
শুভ্রর অবস্থা এতদিনে চরমে উঠেছে। তার কোমল হৃদয় আজ পঙ্কিলতায় পূর্ণ। নৈতিকতাহীন একটি জীবে পরিণত হয়েছে শুভ্র। এত দিনে সিগেরেটের স্তর পার হয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছে সে।
সেদিন শুভ্রর সাথে ঢাকার বাইরে কোথাও যাচ্ছিলাম। প্রথমে তাকে স্বাভাবিক মনে হলেও ঘন্টা দুয়েক পরে তার মধ্যে অস্থির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। পনের মিনিটের যাত্রা বিরতিতে শুভ্র বল্ল,‘তুই বস আমি আসছি’। কিন্তু আমি তার পিছু নিলাম। সে একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে বল্ল, ‘ভাই কলম আছে’? আমি অবাক হলাম কিন্তু কিছু বুঝতে পারলামনা। দোকানী তার কথায় কর্ণপাত করলনা। ফলে দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে সে কিছু অশোভন উক্তি করল। এবার সে আরেকটি দোকানে গিয়ে বল্ল,‘ প্লিজ ভাইয়া আমাকে একটা কলম দেন নইলে বিপদে পড়ে যাব’ তার কথায় বিণয়ের সুর ঝরে পড়ছিল। কলমের মানে এতক্ষণ বুঝিনি, এবার বুঝলাম। শুভ্র ড্রাগ নেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ নিচ্ছে। আমি বাধা দিলাম। সেকেদেঁ বলেছিল,‘দোস্ত ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই’। আমি বোবার মত তাঁকিয়েছিলাম।
ইদানিং পেশাদার নেশাখোর হয়ে গেছে শুভ্র। প্রায়ই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত মাদক স্পট গুলোতে দেখা যায়। অনেক বুঝিয়েছি, বারন করেছি। কিন্তু শুভ্র আর শুভ্র হলনা। আসলে মানুষের প্রবৃত্তি বড়ই অদ্ভুত। একদিন হাত ধরে বলেছিলাম,‘শুভ্র তুই কি আর ফিরে আসবিনা’? শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁকিয়েছিল সে।
অনেকদিন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা একদম বন্ধই করে দিয়েছে শুভ্র। এতদিনে শহরের অন্যান্য মাদক সেবীদের সাথেও সখ্য গড়ে উঠেছে তার। ইদানিং রক্ত বিক্রি করে ড্রাগ নেয় শুভ্র!
একদিনের ঘটনা। কোন একটা কাজে সোহওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কাজ শেস করে আসার সময় দেখলাম শুভ্র একটি গাছের নিচে মূমুর্ষূ অবস্থায় পড়ে আছে। আমি তড়িঘড়ি করে ধরতেই অজ্ঞান হয়ে গেল সে।
বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই ওর বাড়ি চিনতাম। অসুস্থ শুভ্রকে নিয়ে যখন ওর বাড়ি পৌছুলাম তখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল। একটা কথা বলে রাখি এত কিছু হয়ে গেছে শুভ্রর মা-বাবা বিষয়টা জানতনা। কিন্তু জেনেই কি লাভ হল, শুভ্রর বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারলনা বিষয়টি। প্রচন্ড মুষড়ে পরলেন তিনি। আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত অনেকক্ষণ কাঁদলেন। শোকের মাতম চলছিল যেন তার বাড়িতে।শুভ্র মারা গেলেও হয়ত কিউ এত কষ্ট পেতনা। ঘটনার আকস্মিকতায় শুভ্রর বাবা হার্ট অ্যাটাক করল সেদিন। চির বিদায় নিল সে।
অনেক দিন হয়- শুভ্রকে একদম ভুলতেই বসেছি আমি। মাঝে মাঝে কিছু খোঁজ খবর নিতাম কিন্তু এখন আর সেভাবে সময় হয়ে উঠেনা। একদিন শুনেছিলাম, শুভ্র মাদকের টাকার জন্য তার মাকে প্রায়ই মারধর করে। ভাবছিলাম কি পাপ করেছিল শুভ্রর মা। মনে মনে বলেছিলাম- না শুভ্রর মা কোন পাপ করেনি। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এর জন্য দায়ী। যে সমাজে মায়ের কোলে শিশু নিরাপদ নয়, স্বামীর কাছে স্ত্রী নিরাপদ নয়, অনৈতিকতা, বিদেশী সংস্কৃতির চর্চায় যে দেশ ছেয়ে গেছে সে দেশের অবস্থা এর চেয়ে ভালো আর কি হবে।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে একটা চাকরী করছি। প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতে হয়। জীবনের ব্যস্ততায় অনেক কিছুই আগের মত ভাবতে পারিনা। গৎ বাধা রুটিন মাফিক কাজ করেই দিন চলে যায়। আসলে মানুষের জীবনটাই এমন।
সেদিনের কথা আমি কোনদিন আমি কোনদিন ভুলতে পারবনা। সমস্ত হৃদয় দিয়ে, সমস্ত অনুভ‚তি জড়ো করে তা মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। নিজেকে বার বার প্রবোধ দিয়েছি না এ সত্যি নয়। কিন্তু সত্য তো সত্যই তা যত তিক্তই হোক, এ অভিজ্ঞতা এতদিনে বোধহয় খানিকটা অর্জন করতে পেরেছিলাম।
ভিজিটিংয়ের কাজে সেদিন শুভ্রদের এলাকায় গিয়েছিলাম। গাড়িতে যেতে যেতে একটি জুয়েলারী দোকানের সামনে এসে চোখ আটকে গেল। দেখলাম, শুভ্রর মা খুব ব্যস্তভাবে দোকানে প্রবেশ করছে। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করে তার মূখোমুখি হলাম। কি হাল হয়েছে এ মহিলার! কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, যার ঘরে একটি মাদকসেবী সন্তান আছে সেই বুঝে এর জ্বালা কত। এইতো সেদিন পত্রিকায় পড়লাম, “ মাদকসেবী সন্তানের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে এক হতভাগ্য মা”। সত্যি অবিশ্বাস্য!
আমাকে চিনতে পেড়ে অনেক কেঁদেছির শুভ্রর মা। ইচ্ছে করছিল তার সমস্ত দুঃখ অবসান করে দেই। কিন্তু সে সাধ্য কার আছে! কম্পিত কন্ঠে বলেছিলাম,“ কাকিমা কেন এসছেন এখানে? শুভ্রর মা ঝট-পট উত্তর দিয়েছিল কিন্তু শুনে রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল আমার। বলেছিল,“ বাবা ছেলেকে তো বাঁচাতে হবে তাই ড্রাগের টাকা সংগ্রহের জন্য শেষ সম্বল বালা দুটোকেই বিক্রি করতে আসলাম”!
তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। হাসি-খুশি প্রাণবন্ত একটা ভাব যেন লেগেই থাকত। হৈ-হোল্লড়, আড্ডা, চিৎকার চেঁচামেচি সব মিলিয়ে অপ্রতিদ্বন্দী ছিল সে। ছেলাটা ছিল দারুন মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম দশে স্থান ছিল তার। মফস্বলের একটি কলেজে পড়লেও সে ছিল তোখড় ছাত্র।
মা-বাবার একমাত্র সন্তান তাই আদর যত্ন একটু বেশীই পেয়েছে সে। বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সারাটা জীবন সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করে গেছেন। ফলে আত্ম মর্যাদাবোধটা ছিল টনটনে। ছেলেকে সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল।
ওর স্বপ্নটা ছিল আট-দশটা মধ্য বিত্ত ঘরের সন্তানদের মতই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে একটি ভালো চাকরী, মা-বাবার মূখে হাসি ফুটানো, ব্যাস। কথাচ্ছলে একদিন আমাকে বলেছিল,“মাহমুদ কবে যে এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা শেষ হবে , কবে যে ভালো একটা চাকরী করব। মা-বাবার এই বয়সে কষ্ট আর ভালো লাগেনা। আমি হেসে বলেছিলাম, “মাত্র তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে পা রেখেছিস, এর মধ্যেই এত চিন্তা করলে পড়ালেখা করবি কখন”?
মেয়েদের প্রতি ও সবসময়ই ছিল উদাসীন। চিৎকার চেঁচামেচি সব চলত ছেলেদের সাথে, মেয়েরা কাছে এলেই চুপসে যেত। হাসতে হাসতে আমায় প্রায়ই বলত, “ মাহমুদ এই বয়সে ওদের কাছ থেকে যত দূরে থাকতে পারো, ততই মঙ্গল”।
একদিনের ঘটনা- আমাদের কিছু ক্লাস ফ্রেন্ড মিলে ওকে একটা টিউশনী ঠিক করে দিল। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ ও টকার অংকটাকে সে এড়িয়ে যেতে পারেনি। পড়াতে হবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের একটি মেয়েকে। হিসাব বিজ্ঞান সহ অন্যান্য সব বিষয়ই ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বিধি বাম। প্রথম দিন ই সে জড়তায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। তার উপর একটি কঠিন চ্যাপ্টার পড়াতে গিয়ে অনভ্যস্তার কারনে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। যা-ই হোক শহুরে মেয়েটি স্যারের এই বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। ফলে যা হবার তাই হলো, পরের দিন পড়াতে যাওয়ার দশ মিনিট আগে ওপাশ থেকে ফোন এল, “আপনার আর পড়াতে আসার দরকার নেই”। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বহুদিন হেসেছি। শুভ্র বলেছিল,“ভালোই হল, আল্লাহ যা মনে করেন তাই হয়”।
শুভ্র নামটির সাথে একটি শুভ্র শুভ্র ভাব ছিল। নামের সাথে ওর চরিত্রটা যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল। সবাইকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারত সে। ক্যাম্পাসে প্রায় ই তাকে অনাথ বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দেখা যেত। “দোস্ত ওদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম” বলেই চোখ দুটি ছল ছল করে উঠত ওর।
শুভ্র একদিন আমাকে তার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব করেছিল। আমি ওর প্রস্তাবে এক পায়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। অন্য আট-দশটা মধ্যবিত্তদের মতই ছিল শুভ্রদের গ্রামের বাড়ি। খুব বেশি প্রাচ‚র্যের ঘনঘটা না থাকলেও ওদের বাড়ির প্রতিটি জিনিস ছিল সাজানো গোছানো। শুভ্রর বাবা ছিল খুবই রুচিশীল। আমার সাথে চুটিয়ে গল্প করে ছিল লোকটা। শুভ্রকে নিয়ে বলেছিল তার স্বপ্নের কথা। শুভ্রর মা‘টা ছিল আরও চমৎকার। পৃথিবীতে মানুষ যে এত ভালো হয়, তাকে না দেখলে বুঝতাম না। তাকে দেখে বুঝেছিলাম শুভ্র কেন এত ভালো। আসার সময় বলেছিল“ পাগল ছেলে আমার, তুমি একটু দেখে রেখ বাবা” বলেই বিদায়রত সন্তানকে দোয়া করতে করতে কেঁদে ফেলেছিল শুভ্রর মা।
ক্লাসে বরাবরই শুভ্র ভালো ছিল। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় ও সে তার স্বাক্ষর রেখেছিল। আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষক তাকে বলেছিল,“ক্ননগ্রাচুলেশন ইয়াংম্যান তোমার মত একটি ছেলে এ ক্যাম্পাসে খুব দরকার”। লজ্জায় শুভ্রর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল সেদিন। শুভ্র ছিল ভাবুক। সে ভাবত এই দেশ নিয়ে,দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে। প্রায়ই আমাকে বলত,“মাহমুদ আমাদের দেশের সমস্যার কোন শেষ নেই, যত ভাবি তত বের হয় কিন্তু সমাধান খুজে পাইনা”।
অনেক দিন হয় শুভ্রর সাথে দেখা হয়না। ইদানিং আমাকে একটু এড়িয়েই চলে সে। নতুন অনেক বন্ধু হয়েছে তার ফলে সময়টা সেভাবে আর শেয়ার করতে পারেনা সে। কিন্তু তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যে শুভ্র আমার এত আপন ছিল সে কেন হঠাৎ কেন আমাকে এড়িয়ে চলছে বুঝতে পারছিলামনা। একদিন শুভ্রর সাথে দেখা। কিরে! তুই থাকিস কোথায় ইদানিং? একদম পাত্তাই পাওয়া যায়না। নারে দোস্ত তোকে কি ভুলা যায় হাসতে হাসতে বলেছিল সে।
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হত শুভ্র অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। সেই আগের প্রাণবন্ত শুব্র আর সেই শুভ্র নেই। সেই কথা,সেই গান, উচ্ছ¡লতা সবই যেন লোপ পাচ্ছে। সেই স্বপ্ন, মনের গহিনে অংকিত আল্পনা সবই যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে। আমার কেন যেন মনে হত, শুভ্র কোন রঙিন দুনিয়ায় সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে অপরাধী ভাবতাম। ছিঃ! এমন ফুলের মত ছেলেটির সম্পর্কে কি ভাবছি। কিন্তু কি, কি তাহলে? ওফ বুঝতে পারছিনা।
সেদিন কলা ভবনের সামনে শুভ্রর সাথে দেখা। আম চমকে উঠেছিলাম। শুভ্র! একি চেহেরা হয়েছে তোর! এবড়ো-থেবড়ো চুল,চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে, জামা কাপড় ও একদম নোংরা, কি ব্যাপার বলত তো? কোন উত্তর দেয়নি সে, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট সিগেরেটর গন্ধ পাচ্ছিলাম আমি।
তবে কি আমার ধারণাই ঠিক? কিন্তু কেন এ পথে পা বাড়াল শুভ্র? কে সর্বনাশ করল এমন ফুলের মত জীবনটার? আমি আর ভাবতে পারছিলামনা।
অনেক দিন পর শুভ্র এসছিল আমার রুমে। কিরে,তোর রেজাল্টের খবর কি? ফেল করেছি। নির্বকারভাবে উত্তর দিয়েছিল সে। শুভ্র তুই কি আমার সাথে ঠাট্টা করছিস? যা সত্যি, তাই বলছি।সেদিন কোন কথা বলতে পারিনি।
প্রায় শুভ্রকে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত কিছু বাজে ছেলেদের সাথে সময় কাটাতে যাদের যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ সব স্থানে। মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম এছেলেটির কেন এ পরিবর্তন? কে তাকে এমন ভাবে ভুলিয়ে দিল? এমন সম্ভাবনাময় প্রতিভা যা অংকুরিত হওয়ার আগেই ঝরিয়ে দিল।
অনেকদিন কারন নির্ণয় করার চেষ্টা করেছি। অনেক কষ্ট হলেও কিছু সত্য হয়ত উপলব্দী করতে পেরেছিলাম। আসলে আমি এ জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দায়ী করব। বৃটিশদের নিকট থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে আমরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছি আজ ¯^াধীনতার এত বছর পরেও তার বিন্দু মাত্র পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে আমরা সক্ষম হয়নি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সামান্য যে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় তা বৃটিশদের মূল সূত্রের আধুনিকায়ন ব্যতিত আর কিছুই নয়। এ শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ত টাকা কামানোর রাস্তা দেখায় কিন্তু নৈতিকতা শেখায় না। ফলে আমরা দূর্ণীতিতে আজ একের পর এক বিশ্বকাপ জিতে চলেছি। আজ আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তার একেক জন শিক্ষক এ জাতির ও শিক্ষক। কিন্তু যখন শুনতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নারী কেলেংকারীর সাথে জড়িত, যখন পত্রিকার পাতায় বড় বড় হেডিং এ দেখি ‘যৌন কেলেংকারির দায়ে শিক্ষক অভিযুক্ত’ তখন বুঝতে পারি এ জাতীর ছাত্রদের অবস্থা তাহলে কি? কিন্তু, যাই হোক আমার মত সাধারন নাগরীকের এত বেশি সত্য বলা ঠিক নয়।
শুভ্রর অবস্থা এতদিনে চরমে উঠেছে। তার কোমল হৃদয় আজ পঙ্কিলতায় পূর্ণ। নৈতিকতাহীন একটি জীবে পরিণত হয়েছে শুভ্র। এত দিনে সিগেরেটের স্তর পার হয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছে সে।
সেদিন শুভ্রর সাথে ঢাকার বাইরে কোথাও যাচ্ছিলাম। প্রথমে তাকে স্বাভাবিক মনে হলেও ঘন্টা দুয়েক পরে তার মধ্যে অস্থির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। পনের মিনিটের যাত্রা বিরতিতে শুভ্র বল্ল,‘তুই বস আমি আসছি’। কিন্তু আমি তার পিছু নিলাম। সে একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে বল্ল, ‘ভাই কলম আছে’? আমি অবাক হলাম কিন্তু কিছু বুঝতে পারলামনা। দোকানী তার কথায় কর্ণপাত করলনা। ফলে দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে সে কিছু অশোভন উক্তি করল। এবার সে আরেকটি দোকানে গিয়ে বল্ল,‘ প্লিজ ভাইয়া আমাকে একটা কলম দেন নইলে বিপদে পড়ে যাব’ তার কথায় বিণয়ের সুর ঝরে পড়ছিল। কলমের মানে এতক্ষণ বুঝিনি, এবার বুঝলাম। শুভ্র ড্রাগ নেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ নিচ্ছে। আমি বাধা দিলাম। সেকেদেঁ বলেছিল,‘দোস্ত ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই’। আমি বোবার মত তাঁকিয়েছিলাম।
ইদানিং পেশাদার নেশাখোর হয়ে গেছে শুভ্র। প্রায়ই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত মাদক স্পট গুলোতে দেখা যায়। অনেক বুঝিয়েছি, বারন করেছি। কিন্তু শুভ্র আর শুভ্র হলনা। আসলে মানুষের প্রবৃত্তি বড়ই অদ্ভুত। একদিন হাত ধরে বলেছিলাম,‘শুভ্র তুই কি আর ফিরে আসবিনা’? শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁকিয়েছিল সে।
অনেকদিন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা একদম বন্ধই করে দিয়েছে শুভ্র। এতদিনে শহরের অন্যান্য মাদক সেবীদের সাথেও সখ্য গড়ে উঠেছে তার। ইদানিং রক্ত বিক্রি করে ড্রাগ নেয় শুভ্র!
একদিনের ঘটনা। কোন একটা কাজে সোহওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কাজ শেস করে আসার সময় দেখলাম শুভ্র একটি গাছের নিচে মূমুর্ষূ অবস্থায় পড়ে আছে। আমি তড়িঘড়ি করে ধরতেই অজ্ঞান হয়ে গেল সে।
বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই ওর বাড়ি চিনতাম। অসুস্থ শুভ্রকে নিয়ে যখন ওর বাড়ি পৌছুলাম তখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল। একটা কথা বলে রাখি এত কিছু হয়ে গেছে শুভ্রর মা-বাবা বিষয়টা জানতনা। কিন্তু জেনেই কি লাভ হল, শুভ্রর বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারলনা বিষয়টি। প্রচন্ড মুষড়ে পরলেন তিনি। আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত অনেকক্ষণ কাঁদলেন। শোকের মাতম চলছিল যেন তার বাড়িতে।শুভ্র মারা গেলেও হয়ত কিউ এত কষ্ট পেতনা। ঘটনার আকস্মিকতায় শুভ্রর বাবা হার্ট অ্যাটাক করল সেদিন। চির বিদায় নিল সে।
অনেক দিন হয়- শুভ্রকে একদম ভুলতেই বসেছি আমি। মাঝে মাঝে কিছু খোঁজ খবর নিতাম কিন্তু এখন আর সেভাবে সময় হয়ে উঠেনা। একদিন শুনেছিলাম, শুভ্র মাদকের টাকার জন্য তার মাকে প্রায়ই মারধর করে। ভাবছিলাম কি পাপ করেছিল শুভ্রর মা। মনে মনে বলেছিলাম- না শুভ্রর মা কোন পাপ করেনি। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এর জন্য দায়ী। যে সমাজে মায়ের কোলে শিশু নিরাপদ নয়, স্বামীর কাছে স্ত্রী নিরাপদ নয়, অনৈতিকতা, বিদেশী সংস্কৃতির চর্চায় যে দেশ ছেয়ে গেছে সে দেশের অবস্থা এর চেয়ে ভালো আর কি হবে।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে একটা চাকরী করছি। প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতে হয়। জীবনের ব্যস্ততায় অনেক কিছুই আগের মত ভাবতে পারিনা। গৎ বাধা রুটিন মাফিক কাজ করেই দিন চলে যায়। আসলে মানুষের জীবনটাই এমন।
সেদিনের কথা আমি কোনদিন আমি কোনদিন ভুলতে পারবনা। সমস্ত হৃদয় দিয়ে, সমস্ত অনুভ‚তি জড়ো করে তা মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। নিজেকে বার বার প্রবোধ দিয়েছি না এ সত্যি নয়। কিন্তু সত্য তো সত্যই তা যত তিক্তই হোক, এ অভিজ্ঞতা এতদিনে বোধহয় খানিকটা অর্জন করতে পেরেছিলাম।
ভিজিটিংয়ের কাজে সেদিন শুভ্রদের এলাকায় গিয়েছিলাম। গাড়িতে যেতে যেতে একটি জুয়েলারী দোকানের সামনে এসে চোখ আটকে গেল। দেখলাম, শুভ্রর মা খুব ব্যস্তভাবে দোকানে প্রবেশ করছে। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করে তার মূখোমুখি হলাম। কি হাল হয়েছে এ মহিলার! কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, যার ঘরে একটি মাদকসেবী সন্তান আছে সেই বুঝে এর জ্বালা কত। এইতো সেদিন পত্রিকায় পড়লাম, “ মাদকসেবী সন্তানের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে এক হতভাগ্য মা”। সত্যি অবিশ্বাস্য!
আমাকে চিনতে পেড়ে অনেক কেঁদেছির শুভ্রর মা। ইচ্ছে করছিল তার সমস্ত দুঃখ অবসান করে দেই। কিন্তু সে সাধ্য কার আছে! কম্পিত কন্ঠে বলেছিলাম,“ কাকিমা কেন এসছেন এখানে? শুভ্রর মা ঝট-পট উত্তর দিয়েছিল কিন্তু শুনে রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল আমার। বলেছিল,“ বাবা ছেলেকে তো বাঁচাতে হবে তাই ড্রাগের টাকা সংগ্রহের জন্য শেষ সম্বল বালা দুটোকেই বিক্রি করতে আসলাম”!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সুদীপ্তবিশ্বাস ০৭/১২/২০১৪সুন্দর
-
ইসমাত ইয়াসমিন ০৭/১২/২০১৪Montobbo korar Vasa Hariea felechi...
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০৭/১২/২০১৪অবাক পৃথিবি অবাক করলে তুমি.....................?