www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চার আনা

- অণু গল্প

সে অনেক কাল আগের কথা। তখন বড় লাটদের যুগ। বঙ্গদেশ তখন পরাধীন। সে কথা না হয় বড়দের বুঝানো যায় কিন্তু পাড়ার পুচকে ছোরাদের তা কে বুঝাবে। তারা স্বাধীনতার আনন্দে পদ্মা পাড়ে তিড়িংবিড়িং লাফ মারে। তাদের দলনেতা ছোটন বিভিন্ন শয়তানি কাজ উদ্ভাবন করে নিত্য ই নেতৃত্বের যোগ্যতা জাহির করে যাচ্ছে। দৈয়ের হাড়িতে ঢিল মারা, কাবলিওয়ালার ঝোলা খালি করা, বরশির মাছ খালি করে দেয়া নিত্যকার ঘটনা। তাদের যন্ত্রণায় অনেকেই এ পথ মাড়ায় না। সেদিন হাতুরে ডাঃ শম্ভুনাথ বাবু কোন আক্কেলে এ পথে পা বাড়াল কে জানে। তাকে নিয়ে এমনিতেই নানা রকম মূখরোচক জনশ্রুতি প্রচলিত। পাড়ার ছোরাদের কাছে সে নিতান্তই হাসির খোরাক। লোকমূখে প্রচলিত আছে এক জ্যোস্না রাতে একদল ছোকরা ক্ষেত থেকে সাদা মূলা উঠিয়ে ছুরির মত তার সামনে ধরে বলেছিল- যা আছে বের কর। সে তখন মূলারূপি ছুরির ভয়ে তার শ্বশুর বাড়ি হতে প্রদত্ত হাতের শোভাবর্ধনকারী ছিকু ফাইভ ঘড়িটা দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছিল। সে ঘটনা ছোটনদের ও অজানা নয়।
তাই ডাঃ শম্ভুনাথকে দেখা মাত্র তাদের শয়তানির সব দরজা হেঁচকা টানে খোলে গেল। শুরু হল অবিরাম ঢিল বর্ষণ আরা সাথে সাদা মূলা স্লোগান। ডাঃ শম্ভুনাথ ঢিল ছোরার মধ্য দিয়ে নির্বিকার চিত্তে ছোকরাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বল্ল- আমাকে ঢিল ছোরার পুরুষ্কার হিসেবে তোমরা প্রত্যেকে চার আনা করে বখশিস পাবে। ছোকরারাতো অবাক। বলে কি লোকটা? ঢিল ছুরলে পয়সা! এই নাও সবাই। তিনি ছোকরাদের প্রত্যেককে চার আনা করে দিলেন। তবে আমি তো মাত্র চার আনা দিলাম কিন্তু ঐ যে খাকি পোষাকে হাফপ্যান্ট পড়া যে লোকটা রোজ এদিকে আসে তাকে ঢিল মারলে এক টাকা করে পাবে। তাই নাকি? সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল ছোকরাদের দলটি। হুম, তবে আর বলছি কি? ঢিল মেরে দেখোই না!

ঘটনাটা সেদিন বিকেলেই ঘটল। ঢিল মারলেই যেখানে টাকার হিসেব সেখানে তো ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। বহুক্ষণ ধরেই ছোকরাদের দলটি খাঁকি পোষাকধারী লোকটির অপেক্ষায় ছিল। অপেক্ষার প্রহর যে সবসময় ই লম্বা হয় সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল ওরা। সকল জল্পনা কল্পনার বারোটা বাজিয়ে একসময় খাঁকি পোষাকধারী লোকটির দেখা মিলে। হাফ প্যান্ট, ইয়া বড় গোঁফ, হোদল কুত্‍ কুত্‍ পেট, হাতে রাম লাঠি। লোকটির ঘাড়ে মাংসের পরিমাণ কিঞ্চিত্‍ বেশি তাই গন্ডারের মত ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে হয়। তিনি বৃটিশ সরকারের পুলিশ বিভাগে চাকুরী করে। এলাকার আইন শৃংখলা রক্ষা করাই তার কাজ। তিনি এসেছিলেন নদী তীরে কিছুটা হাওয়া খেতে। কিন্তু নদি তীরের শীতল হাওয়ার পরিবর্তে তার উপর অবিরাম উষ্ণ ঢিল বর্ষিত হতে লাগল। ঘটনার আকস্কিতায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন তিনি। কোন ক্ষুদিরাম কিংবা তিতুর চ্যালাট্যালা নয়ত! ভূল ভাঙতে সময় লাগল না। তিনি আগুন দিয়ে চোখ লাল করে ঢিল ছোড়তে থাকা ছোকরাদের দিকে তাকালেন। ছোকরাও কাছাকাছি ই ছিল। তাদের ধারণা ঢিল মারার কল্যাণে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের উপর টাকা বর্ষিত হবে। ওদিকে হঠাত্‍ তাদের উপর পড়তে লাগল রাম লাঠির রাম প্যাদানি। কয়েকটাকে ধরে শূণ্যে তুলে ধরে চালান করা হল নদি বক্ষে। হারামির দল আজ বুঝবি কত ধানে কত আটা। দলনেতা ছোটনের অবস্থা যায় যায়। তার পাছায় শপাং শপাং বিরাশি মণ ওজনের বাড়ি পড়ছে। ব্যাটার যতক্ষণ দম ছিল ততক্ষণ ছোকরাদের পিটিয়ে গেল। যেন কিয়ামতের আযাব নেমে এসেছে। এর পর বহুদিন এ দলটাকে নদী তীরে দেখা যায়নি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast