www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভালোবাসার মানদণ্ড

আঠারো নম্বর সীমটা ওপেন করল নাতাশা। এবার সে এয়ারটেল সীম কিনেছে। তার ধারণা এয়ারটেল সীমের মাধ্যমে প্রেমের বন্ধন মজবুত হয়। এর অবশ্য গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে অতিরিক্ত হিন্দি ছবি দেখে নাতাশার মনে এ বিশ্বাস হয়েছে। তার ধারণা শাহরুখ, জন আব্রাহামরা অবশ্যই এয়ারটেল এর মাধ্যমে প্রেম করে। এইতো কিছুদিন যাবত শাহরুখ-গৌড়ির সংসারে নতুন যে সাপটি ঢুকেছে তার নাম প্রিয়াংকা চোপড়া। নাতাশার ধারণা অবশ্যই এয়ারটেল সীম দিয়ে দু’জনে কথা বলছে। নাতাশার অবশ্য বিষয় গুলো ভালই লাগে। সাইফ-কারিনার প্রেমতো অবিসংবাদিত। তারা নিশ্চয়ই এয়ারটেল সীম ব্যবহার করে। ওদিকে বেচারা সালমান, কি সীম ব্যবহার করছে কে জানে! সেতো সব জায়গায়ই মার খাচ্ছে। যাই হোক, এয়ারটেল সীমের কল্যানে নাতাশার এবারের প্রেম সফল হবেই। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই তাকে এ প্রেম থেকে ফেরাতে পারে। অবশ্য পূর্বের সতেরো জন প্রেমিকের অভিশাপ কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তবে এ জন্য নাতাশা একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সে আরামবাগের এক বিখ্যাত হুজুরের সাথে দেখা করে এসেছে। তার পানি মিশ্রিত উটের দুধ সে গত কয়েক দিন ধরে পান করছে। হুজুরের দু’ আর বরকতে এবার আর তার কোন চিন্তা নাই। তবে নাতাশার মনটা হঠাৎ বিষন্ন হয়ে যায়। ভ‚তপূর্ব সতেরো প্রেমিকের ছবি তার মনে ভেসে উঠে। সতেরো প্রেমিকের সাথে সতেরোটি ট্র্যাজিডি। এই সতেরোটি ট্র্যাজিডি-ই বিভিন্ন মহান কারণে ঘটছে। যারা রোমিও এণ্ড জুলিয়েট পড়েছেন। যারা লাইলী-মজনুকে জেনেছেন, তারা শুনে রাখুন নাতাশার প্রতিটি বিয়োগান্তক ঘটনা এর চেয়ে মহান এর চেয়ে পবিত্র। তার প্রতিটি বিয়োগান্তক ঘটক আধুনিক প্রেমিকাদের অধিকার রক্ষার ইতহিাস, লক্ষ তরুনীর দাবি আদায়ের ইতিহাস। তার প্রথম প্রেমিক নয়ন, সারা বিকেল তাকে নিয়ে ঘুরেছিল কিন্তু আদর করে কিছু কিনে দেয়নি। এটা কি মেনে নেয়া যায়। বন্ধ হয়ে গেল সীমটা। দ্বিতীয় প্রেমিক কথায় কথায় তাকে সোনা বলে ডাকত অথচ একদিন একটা এ্যামিটিশনের আংটি কিনে দিয়েছিল। কেমন প্রতারক আপনারাই চিন্তা করুন। তৃতীয় প্রেমিক, কোথাও গেলে শুধু বাদাম খাওয়াতো, কি রকম কনজুস! একবার ভাবুনতো। চতুর্থ প্রেমিক একদিন হোটেলের বিল দিতে গিয়ে বল্ল “সরি, মানিব্যাগটা রেখে এসেছি, তোমার কাছে কিছু টাকা হবে”? কি ট্র্যাজেডিক! পঞ্চম প্রেমিক একদিন বল্ল, “তুমি ময়ূরীর মত সুন্দরী” অথচ ময়ূরীর পায়ের রং বিচ্ছিরি! আচ্ছা এটা কোন উপমা হল। ষষ্ঠ প্রেমিক ঘন ঘন মিডস কল দিত। এ কি রকম স্বভাব। সপ্তম প্রেমিক হঠাৎ দাঁড়ি রাখা শুরু করল। একদিন বল্ল,“বুঝলা মেয়েদের পর্দা করা উচিত”। আপনারাই বলুন ক্যাটরিনা কাইফ কি পর্দা করে। অষ্টম প্রেমিক একদিন কথায় কথায় বলেছিল গালতো নয় যেন টমেটো, কেন আপেল হলে কি দোষ হত। নবম প্রেমিক একটি মেয়েকে নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সে ঢুকেছিল। কোন বিশুদ্ধ প্রেমিকা কি এটা মেনে নিতে পারে, আপনারাই বলুন। দশম প্রেমিক একদিন বল্ল, “আচ্ছা ঢাকায় তোমাদের বাড়ি কয়টা”? দেখলেন তো খেয়াল কোনদিকে।
এগারোতম প্রেমিক বলেছিল,“তুমি বল্লে আমি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে প্রমাণ করব আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি”। আচ্ছা লাফ দেন তো। অথচ সে লাফ দেয়নি। দেখেছেন কি রকম ভণ্ড! বারতম প্রেমিক তার জন্মদিনে উইশ করেনি এটা কি প্রেমের পরিপন্থি নয়! নাতাশার ধারণা তেরো সংখ্যাটি আনলাকি তাই তেরো নম্বর প্রেমিকটির সব যোগ্যতা থাকলেও তেরো সংক্রান্ত জটিলতায় তেড়াবেড়া হয়ে গেল। চৌদ্দ নম্বর প্রেমিক তাকে শুধু রান্না শেখার উপদেশ দিতে। আচ্ছা মেয়েরা কি রান্না শেখার জন্য জন্মেছে। পনেরো ন¤^র প্রেমিক আবার মায়ের ভক্ত তাহলে বউয়ের সেবা করবে কে? এটাতো রীতিমত ডেঞ্জারাস! ষোল নম্বর প্রেমিকের ভুরি মোটা। তার ডায়েট কন্ট্রোল করা উচিত। সতেরো ন¤^র প্রেমিকের ফেসবুক স্পাটাসে তিন হাজার মেয়ের ছবি, সেখানে নাতাশার অবস্থান তিন হাজার এক! সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন, কোন তুচ্ছ কারণে নাতাশা তার প্রেমকে বিসর্জন দেয়নি। সরকারের উচিত নাতাশার প্রেমকে স্মরণীয় করতে সতেরোটি তাজমহল গড়ে তোলা। এখানে বিশ্ব প্রেম নিয়ে গবেষণা হবে, দেওয়া হবে ডক্টরেট ডিগ্রি। যাই হোক কাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কাল নাতাশা তার আঠারো নম্বর প্রেমের শুভ উদ্ভোধন করতে যাচ্ছে। তাকে সে চোখে দেখেনি, তবে মোবাইলে গল্প করতে করতে অল্প অল্প ভালোবাসাহ, তবে কাল তার পূর্ণতা পাবে। নাতাশা বলেছিল,“সে পড়বে নীল শাড়ি, অপর দিকে মদন মোহন সরি মোহন সে পড়বে ঢাকাই ফতুয়া”। নাতাশার হাতে থাকবে গোলাপ আর মোহনের এক হাতে চকবার অন্য হাতে বার্গার। ঠিক পাঁচটায় রমনা গেটে দেখা করবে তারা।

১৪ই ফেব্রূয়ারি। বিকেল পাঁচটা। গোলাপ নিয়ে রমনা গেটে দাঁড়িয়ে আছে নাতাশা। কিন্তু ফতুয়া পড়া কোন ছেলেকে তো চকবার ও বার্গার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে না। সময় গড়িয়ে যায়। মনে মনে হুজুরকে ডাকে নাতাশা। আচ্ছা হুজুরের উটের দুধে কি পানির পরিমান একটু বেশি ছিল। মোবাইলটা হাতে মোহনকে কল দেয়। দুঃখিত এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়্। ধক! করে বুকটা কেঁপে উঠে নাতাশার। প্রচণ্ড মানুষিক কষ্টে মুষড়েপড়ে। নেটওয়ার্ক ডিস্টাব নাতো। বার বার চেষ্টা করে। না কোন লাভ হচ্ছে না। কান্না পায় নাতাশার। মাথাটা যুরে আসে, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পাড়যায় সে। সাথে সাথে জ্ঞান হারায়।

ছিমছাম পরিপাটি একটি কক্ষ, সাজানো-গোছানে। নরম বিছানা, গায়ে কম্বল জড়ানো। ঠিক এমনি একটি পরিবেশ নিজেকে আবিষ্কার করে নাতাশা। এখনও সবকিছু মনে করতে পারছেনা। ধীরে সব কিছু স্পর্শ হয়ে উঠছে। সে বুঝতে পারল জ্ঞান হারানোর পরে নিশ্চয়ই কেউ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। হঠাৎ দরজাটা খোলে গেল। কিন্তু তার সামনে এটা কে দাঁড়িয়ে? বিশ্ব বিদ্যালয়ের জীবনে যে মেয়েটিকে সে একদম পছন্দ করেনা। যার কথা শোনলে তার গায়ে জ্বালা ধরে যায়। সেই তার সামনে দাঁড়িয়ে বিষয়টা হজম করতে কিছুটা সময় লাগে নাতাশার। কারণ ইসলামের ইতিহাসে পড়ুয়া সাদিয়া নামের এ মেয়েটি তার দু’চোখের বিষ। সাদিয়া রূমে ঢুকেই সালাম দেয়। কি এখন তোমার কেমন লাগছে? আমি জানি আমাকে তুমি একদম পছন্দ করনা, ঠিক আছে করোনা তাই বলে এখন উত্তেজিত হয়োনা এতে তোমার অসুখটা আরো বেড়ে যাবে। এটা আমাদের বাড়ি। আমরা গরিব, তোমাকে সেবা করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। তবে আমি ভেবে অবাক হচ্ছি তুমি কোন দুঃখে রমনা গেটের সামনে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে। ভাগ্যিস আমরা ছিলাম। যাই হোক এখানে তোমার কোন ভয় নেই। নাতাশা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শুনছিল। তার চোখে জল এসে গেছে। এই মেয়েটাকে সে অপমান করেছে যে কিনা তার সেবা করেছে। কিন্তু কি দোষ ছিল সাদিয়ার। তার অপরাধ সে ধর্মীয় বিধি বিধান ঠিকমত মেনে চলত আর অন্যদের কেও মানার ব্যাপারে উৎসাহ দিত। একদিন নাতাশাকে ও সে এ ব্যাপারে বলতে এসেছিল কিন্তু নাতাশা তাকে চূড়ান্ত অপমান করেছিল। তাকে ছোট লোক, আদিম এসব বলে গালা গাল দিয়েছিল। কিন্তু সাদিয়া নিরবে সব সহ্য করেছিল। কিন্তু সেই সাদিয়া-ই কিনা আজ, উফ! সে আর ভাবতে পারছেনা। কান্নায় ভেঙে পড়ে নাতাশা। সাদিয়া ব্যস্ত হয়ে উঠে। কি ব্যাপার নাতাশা, তুমি কাঁদছ কেন? আমি তোমাকে কত অপমান করেছি আর সেই তুমি-ই কিনা-- আর বলতে পারেনা নাতাশা। সাদিয়া তাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখে। দূর পাগলি আমি কিচ্ছু মনে করিনি। আচ্ছা আগে বল তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন? তুমি শোনবে, শোনবে আমার কথা? অবশ্যই, তুমি বল। নাতাশা ধীরে ধীরে সব খোলে বলে সাদিয়াকে? সাদিয়া শোনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। নাতাশা তুমি যদি কিছু মনে না কর তবে আমি তোমায় কিছু বলব। না তুমি বল, মনে করার কি আছে। আসলে আমাদেরকে ভালোবাসা এবং ভালো লাগার মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ভালোবাসা আসলে একটি চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু ভালোলাটা একদম প্রাথমিক পর্যায়ের একটা ব্যপার। কিছু সমস্যা হল অনেক সময় আমরা ভালোলাগাটাকেই ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেই এবং জীবনে ভুল করি। তোমার বিষয়টাও তাই ঘটেছে। আরেকটা বিষয় মনে রাখবে তোমার অনেককেই ভালোলাগতে পারে অথচ বিয়ে কিন্তু একজনকেই করবে। মজার ব্যাপার হল প্রেম করলেও, তুমি একজনকে বিয়ে করবে, না করলেও একজনকে বিয়ে করবে। তাই প্রেমের পিছনে সময় নষ্ট না করাই ভালো। তুমি বরং এ সময় গুলোকে কাজে লাগাতে পারো। এতে তোমার ব্যক্তি জীবন ও ক্যারিয়ার আরও বেশি সার্থক হয়ে উঠবে। মানুষ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানো। আমরা যদি ভালো মানুষ হতে পারি তাহলে অন্যান্য সব বিষয় খুব সহজেই আমাদের জীবনে ধরা দেবে। কিন্তু আমাদের যুব সমাজ যদি প্রেমের পিছনেই তাদের সব সময় নষ্ট করে দেয় তবে গঠন মূলক কাজ করবে কখন। নাতাশা অবাক হয়ে সাদিয়ার কথা গুলো শুনছিল। আমিতো এই ভাবে কখনো চিন্তা করিনি। সত্যি তো মিথ্যে ভালোবাসার পিছনে ছুটতে গিয়ে আমি কত সময় নষ্ট করেছি। তবে আমি কিন্তু একজনকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। সাদিয়া অবাক হয়। আবার কাকে ভালোবাসলে? আমাদের সাদিয়াকে। তাই নাকি? সে আমার পরম সৌভাগ্য। আল্লাহর রাসূল কি বলেছেন জানো? কি বলেছেন? তিনি বলেছেন “যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসলো এবং আল্লাহর জন্য কারও সাথে শত্রæতা করল সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরসের ছায়ার নিচে স্থান পাবে”। আর একটি হাদিস শোন, এক দিন এক সাহাবি, আল্লাহর রাসূলকে বললেন “হে রাসূল আমি আপনাকে ভালোবাসি”। রাসূল বললেন “তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, তবে কিয়ামতের পরে আমি যেখানে থাকব, তুমিও সেখানে থাকবে”। এখন বিষয় হলো আল্লাহর রাসূলকে উক্ত সাহাবি কেন ভালোবাসত? আবশ্যই আল্লাহর রাসূলের সৎ চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে। এখন আল্লাহর রাসূল সৎ কাজ যদি জান্নাতে যায়, তবে উক্ত সাহাবি অবশ্যই জাহান্নামে যাবে না। অপর দিকে ঐ সাহাবি যদি একটি খারাপ লোককে ভালোবাসতো তবে খারাপ কাজ করে ঐ লোকটি জাহান্নামি হলে, উক্ত সাহাবি অবশ্যই জান্নাতি হতো না। সুতরাং কাউকে ভালোবাসার মানদণ্ড হওয়া উচিৎ তার ভালো গুণ। তুমি যেহেতু আমার ভালো গুণ দেখে আমাকে ভালোবেসেছো ,তাই আমি ভালো কাজ করে জান্নাতে গেলে তুমি ও জান্নাতে যাবে। নাতাশা বলে উঠল, আমীন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১০/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভাল
  • যে কেনো দৃষ্টি কোন থেকেই লেখাটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছ। বেশ ভালো লাগলো। আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেদায়েত করুক। আমীন............
  • ভাল লাগল বেশ।
  • আফরান মোল্লা ১২/১০/২০১৪
    অসাধারণ!!!এত্ত ভালো লাগলো যে বলে বুঝাতে পারব না।শুধু বলি,প্রিয়তে রেখে দিলাম. . . .
 
Quantcast