www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হিমু পরিবহণ সুলতান মাহমুদ ৬ ষ্ঠ পর্ব

আমার অবস্থান এখন মীরাদের গেস্ট রুমে। আমি ও কাজী নজরুল ইসলাম একসাথে গল্প করছি। তিনি একটি বেহালা নিয়ে দেয়ালের পেন্টিংয়ে বসে আছেন। মুখে হাসি হাসি ভাব। তিনি বসে বসে আমাকে তার বিখ্যাত গান গুলো শুনাচ্ছেন। আমি তন্ময় হয়ে তার গান শোনছি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করছি। আমর প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি আরেকটি গান ধরলেন। আমায় নহেগো, ভালোবাস সখা, ভালোবাস মোর গান। আমি বল্লাম হে কবি আমি শুধু আপনার গানই নয় আপনাকেও ভালোবাসি। প্রমাণকি তুমি আমাকে ভালোবাস? আপনার অনেক কবিতা আমার মূখস্ত। শোনাও দেখি তোমার কেমন মূখস্ত। আমি বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলাম। তিনি অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এর মাঝেই মীরা চা নিয়ে প্রবেশ করল। কি ব্যাপার একা একা কবিতা আবৃত্তি করছেন যে । না ইয়ে মানে নজরুল কে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলাম । পাগলের মত কি যা তা বলছেন, নজরুলতো কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে তাকে আবার কিভাবে কবিতা শোনাবেন। মীরা তুমি হয়ত জানোনা কবিরা মরেনা তারা আ- জীবন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। মীরাদের বাসায় কিভাবে আসলাম তাতো আপনাদের জানানো হয়নি। সন্ধ্যায় যে মেয়েটিকে মাস্তানদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলাম তার নামই মীরা । আমি মাস্তানদের বল্লাম তোমরা যাও সবাই তার কাছে হাতজোড় করে মাফ চাও। মীরার কান্নার বেগ তখনো কমেনি। সবাই মীরার সামনে হাতজোড় করে মাফ চাইল । আমি বল্লাম মীরা তুমি ওদের মাফ করে দাও না হয় আমার নির্দেশে কোহেকাফ নগরীরর জ্বীনেরা এসে ওদের ঘাড় মটকে খাবে। আমার কথা শোণে মীরা হেসে ফেল্ল। অদ্ভুত সুন্দর সে হাসি। আমি বুঝলাম হাসি ই মাফির লক্ষণ। আমি বল্লাম চল তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। সে বল্ল, না না আমি একাই যেতে পারব। ও আপনাদেরতো মহামান্য মাস্তানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। তারা মূলত মলম পদ্ধতি ও মরিচের গুড়া পদ্ধতিতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গ্রুপের নেতার নাম বাদশা। তার অনুপস্থিতিতে শামচু সব দেখাশোনা করে থাকে। বাকিরা এখনো শিক্ষানবিস। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হলে তাদেরকেও একেকটি গ্রুপের লিডার বানিয়ে দেওয়া হবে। আমি তাদের নেতা কে বল্লাম, বাদশা সাহেব, মরিচের গুড়া আর মলম পদ্ধতিতো উন্নতমানের পেশা সে সব রেখে মহিলাদের হাইজ্যাক বিষয়টা আপনাদের পেশার সাথে কতটুকু সংগতী পূর্ণ। সে আমতা আমতা করে বল্ল আসলে হুজুর মরিচের গুড়া আর মলম মারতে মারতে একঘেঁয়েমী আইসা পড়ছে তাই রুচি পরিবর্তনের জন্য দুই একটা খুচরা কাম হাতে লই। মরিচের গুড়া আর মলম মারার কাজটাতো খুব সহজ কাজ না? হ, হুজুর বড়ই কঠিন কাম। একবার এক মহিলারে মরিচের গুড়া মারতে গিয়া পুরাটাই আমার চোখে ঢুইক্যা গেল। আমি তখন চউখ্যে সরিষা ফুল দেকতাছি আর ঐদিকে বেকুব মহিলা চোখ জ্বইলা গেল বইলা কান্দন শুরু করছে। আমি চোখ বুজেই কইলাম, এই মহিলা কান্দেন ক্যান? গুড়াতো লাগছে আমার। কিন্তু কে হোনে কার কথা। হে কানতেই আছে। ঐদিকে দেহি পাবলিক লাডিসোডা লইয়া আইতাছে আমারে মারতে। আমি কানা চোখ লইয়া উল্ডা দৌড় দিলাম। কপাল মন্দ। ড্রেনে পইরা মরণ দশা আর পাবলিকের মাইরতো খাইলাম ফ্রি। হুজুর দু আ কইরেন আর যাতে এই ধরণের খুচরা কাম করন না লাগে। ঠি ক আছে দোয়া করে দিলাম। হুজুর যদি কিছু মনে না করেন তয় একদিন এই নাদান বান্দাগো লগে চাইরডা ডাইল ভাত খাইবেন। ঠিক আচ্ছে দাওয়াত কুবুল। তয় যাই হুজুর। ঠিক আছে সাবধানে যেও। জ্বে আচ্ছা । আমি মীরা আর ল্যাংটা বাবার মুরিদ বাদল একসাথে হাটছি। আচ্ছা আপনার নামটাইতো জানা হলনা। আমার নাম মীরা। আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন কারণ আপনি বয়সে আমার চেয়ে বড়। ঠিক আছে মীরা। তোমার বাসা কোথায়? ধানমন্ডি। তোমাকে আমাদের সাথে গেলে কিন্তু হেটে যেতে হবে কারণ আমার পকেটে কোন টাকা নেই। সমস্যা নেই আমার কাছে আছে। ঠিক আছে চল তাহলে। আমি বাদল কে বিদায় দিয়ে মীরাকে নিয়ে তার বাসায় এলাম। আমাকে চা দিয়ে মীরা বল্ল, আপনি বসেন আমি বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি একা একা বসে চা খাচ্ছি। ওদিকে বেচারা কাজী নজরুল আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হিমু। জ্বি। তোমার কি ভদ্রতা জ্ঞান বলতে কিছু নেই। না ইয়ে মানে কেন এমন কথা বলছেন? আমি তোমাকে এত গুলা গান শোনালাম আর তুমি আমাকে রেখেই একা একা চা খাচ্ছ। আমি আসলেই লজ্জিত। মীরাকে বলি আপনার জন্য এক কাপ চা করে দেওয়ার জন্য। না থাক তার আর দরকার নেই। আসলে তোমাকে দেখে আমার পুরানো দিনের একটা কথা মনে পড়ে গেল। কি কথা? একবার ফরিদপুর গিয়েছিলাম কবি জসিমের বাড়িতে। রাতে আমি সবাইকে গান শোনাচ্ছি। হঠাত্ আমার চায়ের তেষ্টা পেল। জসিমকে বল্লাম চা দাও। কিন্তু জানা গেল এ গ্রামের কোথাও কোন চা পাতা নেই। ওদিকে আমারও চায়ের নেশা আর জসীম ও বিষয়টা নিয়ে বিব্রত। তো কিভাবে যেন এক কাপ চা ম্যানেজ হল। সে যে কি বিস্বাদ তা তোমাকে কি বলব? গল্প শোনে হিমু হাসছে। এদিকে মীরার বাবা কখন যে তার পাশে এসে বসেছে তা খেয়াল করেনি সে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক। আপনার নাম হিমু? জ্বি হিমালয় থেকে হিমু। তো একা একা হাসছিলেন কেন? না তেমন কিছু না, এই কাজী নজরুলের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করছিলাম আর কি। কাজী নজরুলের সাথে কি কথা? এই তার গান কবিতা গল্প নিয়ে দু চারটা কথা আরকি? তা কাজী নজরুল শোনেছে আপনার কথা? আমিতো এতক্ষণ তার সাথেই কথা বলছিলাম, তিনি আমার কাছে চা খেতে চাইলেন আমি বল্লাম চা পাতা নাই শুনে খুব দুঃখ পেলেন তিনি। মীরার বাবা আমার উল্টা পাল্টা কথা শোনে বোধহয় কিছুটা ভরকে গেলেন। আসলে মানুষ ভরকে দেওয়ার মধ্যে এক ধরণের অদ্ভুত আনন্দ আছে আমি এখন সে বিশেষ আনন্দের মাঝে ডোবে আছি। আপনি আমার মেয়েকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তাই আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। শুধু আমার প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করলেই হবেনা আমার সাথে কোহেকাফ নগরির যে জ্বীনের সহায়তা করেছিল তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হবে।কোহেকাফ নগরির জ্বীন, বিষয়টা বুঝলাম না। থাক কিছু অংশ নাইবা বুঝলেন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮০৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast