হিমু পরিবহণ ৫ম পর্ব
আমার অবস্থান এখন রমনা পার্কের একটি বেঞ্চে। কয়েক ঘন্টার জন্য আমি বেঞ্চটির মালিক। একটু আয়েশ করে পা ছড়িয়ে বসে আছি যাতে অন্য কেউ এখানে ভাগ বসাতে না পারে। ভুরি মোটা একটি লোক জগিং করতে করতে আমার এখানে এসে একটু আগে থেমেছিল। সে কিছুক্ষণের জন্য এখানে বসতে চেয়েছিল। এ ধরণের লোকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এরা ধীরে ধীরে কথা জমানোর চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে একজন বাধ্য শ্রোতার মত আপনাকে তার বক্তব্য শোনতে হবে। এই সুন্দর সোনালী সন্ধ্যায় আমি তার বক্তব্য শোনতে চাচ্ছিলাম না। আমি তাকে বল্লাম, দেখুন আমি কয়েক ঘন্টার জন্য এ বেঞ্চে নিজেকে রাজা ঘোষণা করেছি তাই রাজার রাজ্যে আপাতত কোন প্রজার স্থান নেই। ভদ্র লোক একটু অপমান বোধ করলেন মনে হচ্ছে। কিছুটা ক্ষোভও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধরণের পরিস্থিতি সে কিভাবে মোকাবেলা করবে বুঝতে পারছেনা। তার কানের লতি অগ্রভাগ থেকে শুরু করে ঘাঁড়ের কিছু অংশ উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে তবে সোডিয়াম লাইটের আলোতে বিষয়টা ভালো করে বুঝা যাচ্ছেনা। আচ্ছা আপনি কি মাস্তান? আমি মাস্তান নই এবং আমার চৌদ্দ গোষ্ঠিতেও কোন মাস্তান নেই। তবে এত ত্যাদরামী করতাছেন কেন? ত্যাদরামী না একটু বাদরামী করছি বিশেষ করে সন্ধ্যায় সোডিয়াম লাইটের আলোতে আমার এ বাদরামী গুলো প্রকাশিত হয়। এখন আপনি আমার পাশে বসলে দেখা যাবে আপনার সাথেও আমি বাঁদরামী করছি, কিছুক্ষণ পর খামছি দিচ্ছি কিংবা মাথার উকুন মারছি। ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন তিনি এতক্ষণ মাথায় ছিটওয়ালা পরিপূর্ণ একজন পাগলের সাথে কথা বলছিলেন তাই কথা না বাড়িয়ে আবার তিনি তার জগিং শুরু করলেন। আমার চারপাশে একটা আলো আঁধারি পরিবেশ । আকাশে চাঁদ নেই তবে তারা আছে অনেক। আমি এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কাগজ কলম থাকলে সে এই মুহূর্তে হয়ত একটা কবিতা লিখে ফেলতাম। ওগো হিমালয়ের পাদ দেশের উচ্ছল ঝর্ণা ধারা, তোমার শীতল জলে জ্বলছে প্রতিফলিত তারা। কবিতাটা আরো একটু এগোতে পারত কিন্তু হঠাত্ বাদলের আগমনে তা আর সম্ভব হলনা। আমি অবশ্য বাদলকে প্রথমে চিনতে পারিনি। খালি পা, মূখ ভর্তি দাড়ি, হাতে লাঠি আর পরনে একটা লম্বা গামছা। তাকে দেখলে কে বলবে যে, এই ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ভাই স্লামুআলাইকুম, কেমন আছেন? আমিতো আছি কিন্তু তোর এই দশা কেন? ভাইয়া আমার কি দোষ, ল্যাংটা বাবার আদেশ। এই চীজটা আবার কে? ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ পড় একজন তান্ত্রিক সাধক পুরুষ সর্ম্পকে এই ধরণের কথা বলা ঠিক না। তুই এসব বাদ দিয়ে বাসায় যা। আমি এখন ল্যাংটা বাবার আদর্শ প্রচারে ব্যস্ত। তোর ল্যাংটা বাবার আদর্শ কি এরকম গামছা পড়ে পৃথিবীর সবাই ল্যাংটা হয়ে ঘুরবে তাহলে তো একদিন দেখা যাবে আমাদের সব এমপি, মন্ত্রীরা একসময় গামছা পড়ে ঘুরছে। আসলে সবাই ঘুরবেনা তবে কেউ কেউ ঘুরবে যারা ল্যাংটা বাবার আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করবে। তোদের ল্যাংটা বাবার কোন বাণী টানি জানিস। জানি তো, অলী কূল শিরোমনী, যুগের মুজাদ্দিদ, জিন্দায়ে আশেকি, হক্কানী পীর বাবা ল্যাংটা শাহ বলেছন, কম খাও, কম কও, কম ঘুমাও মানে সব কিছু কম কম করো। তাই বুঝি তুই জামা কাপড় রেখে গামছা ধরেছিস। সে এক গাল হেসে বল্ল, সবই বাবার আদেশ। বাবা কি বলেছেন জান। কি বলেছেন তা আমি কিভাবে জানব? বলেছেন এ দুনিয়াটা হচ্ছে একটা আবর্জনা তাই সিদ্ধি লাভ করতে হলে এ আবর্জনা থেকে দূরে থাকো। তাই তুই সংসার ধর্ম বাদ দিয়ে সন্যাসব্রত পালন করছিস?
এত সন্যাসব্রত নয়। তবে কি ত্যাগ? সংসার বিরাগী ত্যাগী সাধক। ভাইয়া এখানে তুমি ত্যাগ দেখলে কোথায় এতো ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর পথের অভিযাত্রা। বাদলের কথা শোনে আমার প্রাচীন খৃষ্টান সাধকদের কথা মনে পড়ল। তারা বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুত কাজ করত। কেউ একই জায়গায় এক পায়ে বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে থাকত, কারো কারো গায়ে বৃক্ষের লতা পাতায় প্যাচিয়ে থাকত। তারা সকল রকম দুনিয়াবী চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করত। একবার এক খৃষ্টান যুবক সন্ন্যাসী মতবাদে দীক্ষা নিয়ে ধ্যান মগ্ন হয়ে এক পাহাড়ের পাদদেশে বসে রইলেন সেখানে তার মা তার তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় অনাহারে অর্ধাহারে মারা গেলেন। উক্ত যুবক মায়ের মৃত্যু এতটুকু বিচলত না হয়ে চোখ বুজে মায়ের লাশ ডিঙিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। আমি বাদল কে নিয়ে সে ধরনের চিন্তায় মগ্ন আছি।
আমি গম্ভীরভাবে বাদলকে ডাকলাম। বাদল। জ্বি, হিমু ভাই। এই পৃথিবীতে মহাপুরুষ কয়জন? মহাপুরুষতো ভাইয়া একজন ই আর সে হচ্ছ তুমি। কে বলেছে আমি মহাপুরুষ? মহাপুরুষতো তোর ঐ ল্যাংটা বাবা। ল্যাংটা বাবা মহাপুরুষ হতেই পারে না। তোর মতে কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মহাপুরুষ না ল্যাংটা বাবা? নিঃসন্দেহে হিমু ভাই তুমি তুমি এবং তুমি? তবে আমার কথা হল এসব বাদ দিয়ে তুই এখন বাসায় যা।
আমাদের কথার মাঝখানেই পাশ থেকে একটা আর্তচিত্কার ভেসে উঠল। প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলাম। ল্যাংটা বাবার শিষ্যতো ভয়ে দৌড়ি দিচ্ছিল। আমি তাকে ধমকের সুরে বল্লাম থাম। সে বল্ল, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয় আমি মায়ের ছেলে মায়ের কাছে ফিরে যাই। এই চামচিকার আত্মা নিয়ে এতদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালি কিভাবে? চল গিয়ে দেখি বিষয়টা কি? বাদল ভয়ে ভয়ে আমার সাথে এগিয়ে যায়। একটু এগিয়েই দেখলাম কয়েকজন মাস্তান অস্ত্র হাতে একটি মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বাদল ভয়ে উল্টাদিকে দৌড় দিতে চাইল। আমি বল্লাম, এই গাঁধা থাম। মেয়েটিকে সোডিয়াম লাইটের আলোতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছেনা। ভয়ে কাঁপছে সে। আমি তাদের পাশে গিয়ে অত্যন্ত আদবের সাথে সালাম দিলাম। স্লামুআলাইকুম ভাইজানেরা। আমার আকস্মিক সালামে তারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। নেতা গোছের একজন বল্ল. এই শালা তুই কে? দেখুন কথায় আছে ভদ্র ব্যবহার পেতে হলে ভদ্র ব্যবহার করতে হয়। আপনার বাপ মা কি আপনাকে ভদ্র ব্যবহার শিখায়নি। এই শামচু. অয় এত কতা কয় কেন অরে কিন্তু কাচা খাইয়া ফালামু। শামচু তেড়ে আসে এই বেটা গেলি না সুট কইরা দিম? সুট করতে গেলেতো পিস্তলে গুলি থাকতে হবে আপনাদের পিস্তলেতো গুলিই নেই। আমার কথায় যেন সবার পাখি উড়ে গেছে। নেতা গোছের লোকটি বল্ল, ভাই আমগো পিস্তলে গুলি নাই সেইডা আপনে বুঝলেন ক্যামনে। আমি না শোনার ভান করে বল্লাম, আপনাদের সাথে পরিচয় করায়ে দেই ইনি হচ্ছেন ল্যাংটা পীরের খলিফা বাদল। তিনি বহু কেরামতের মালিক। এখানে বসে তিনি কোহেকাফ নগরীর জ্বীনদের সাথে কথা বলে থাকেন। বাদল আমতা আমতা করে বল্ল, আমিতো ভাই ল্যাংটা বাবার মুরিদ কিন্তু ল্যাংটা বাবা আবার আপনাদের সামনে দাঁড়ানো হিমু ভাইয়ের মুরিদ। এবার পিস্তল রেখে সবাই আমার পা পেঁচিয়ে ধরল। আমি বল্লাম আমার কাছে নয় এই মেয়েটির কাছে মাফ চাও। মেয়েটি যেন এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্য ছিল তাদের মাফ চাওয়ার আগেই সে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠল।
এত সন্যাসব্রত নয়। তবে কি ত্যাগ? সংসার বিরাগী ত্যাগী সাধক। ভাইয়া এখানে তুমি ত্যাগ দেখলে কোথায় এতো ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর পথের অভিযাত্রা। বাদলের কথা শোনে আমার প্রাচীন খৃষ্টান সাধকদের কথা মনে পড়ল। তারা বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুত কাজ করত। কেউ একই জায়গায় এক পায়ে বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে থাকত, কারো কারো গায়ে বৃক্ষের লতা পাতায় প্যাচিয়ে থাকত। তারা সকল রকম দুনিয়াবী চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করত। একবার এক খৃষ্টান যুবক সন্ন্যাসী মতবাদে দীক্ষা নিয়ে ধ্যান মগ্ন হয়ে এক পাহাড়ের পাদদেশে বসে রইলেন সেখানে তার মা তার তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় অনাহারে অর্ধাহারে মারা গেলেন। উক্ত যুবক মায়ের মৃত্যু এতটুকু বিচলত না হয়ে চোখ বুজে মায়ের লাশ ডিঙিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। আমি বাদল কে নিয়ে সে ধরনের চিন্তায় মগ্ন আছি।
আমি গম্ভীরভাবে বাদলকে ডাকলাম। বাদল। জ্বি, হিমু ভাই। এই পৃথিবীতে মহাপুরুষ কয়জন? মহাপুরুষতো ভাইয়া একজন ই আর সে হচ্ছ তুমি। কে বলেছে আমি মহাপুরুষ? মহাপুরুষতো তোর ঐ ল্যাংটা বাবা। ল্যাংটা বাবা মহাপুরুষ হতেই পারে না। তোর মতে কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মহাপুরুষ না ল্যাংটা বাবা? নিঃসন্দেহে হিমু ভাই তুমি তুমি এবং তুমি? তবে আমার কথা হল এসব বাদ দিয়ে তুই এখন বাসায় যা।
আমাদের কথার মাঝখানেই পাশ থেকে একটা আর্তচিত্কার ভেসে উঠল। প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলাম। ল্যাংটা বাবার শিষ্যতো ভয়ে দৌড়ি দিচ্ছিল। আমি তাকে ধমকের সুরে বল্লাম থাম। সে বল্ল, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয় আমি মায়ের ছেলে মায়ের কাছে ফিরে যাই। এই চামচিকার আত্মা নিয়ে এতদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালি কিভাবে? চল গিয়ে দেখি বিষয়টা কি? বাদল ভয়ে ভয়ে আমার সাথে এগিয়ে যায়। একটু এগিয়েই দেখলাম কয়েকজন মাস্তান অস্ত্র হাতে একটি মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বাদল ভয়ে উল্টাদিকে দৌড় দিতে চাইল। আমি বল্লাম, এই গাঁধা থাম। মেয়েটিকে সোডিয়াম লাইটের আলোতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছেনা। ভয়ে কাঁপছে সে। আমি তাদের পাশে গিয়ে অত্যন্ত আদবের সাথে সালাম দিলাম। স্লামুআলাইকুম ভাইজানেরা। আমার আকস্মিক সালামে তারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। নেতা গোছের একজন বল্ল. এই শালা তুই কে? দেখুন কথায় আছে ভদ্র ব্যবহার পেতে হলে ভদ্র ব্যবহার করতে হয়। আপনার বাপ মা কি আপনাকে ভদ্র ব্যবহার শিখায়নি। এই শামচু. অয় এত কতা কয় কেন অরে কিন্তু কাচা খাইয়া ফালামু। শামচু তেড়ে আসে এই বেটা গেলি না সুট কইরা দিম? সুট করতে গেলেতো পিস্তলে গুলি থাকতে হবে আপনাদের পিস্তলেতো গুলিই নেই। আমার কথায় যেন সবার পাখি উড়ে গেছে। নেতা গোছের লোকটি বল্ল, ভাই আমগো পিস্তলে গুলি নাই সেইডা আপনে বুঝলেন ক্যামনে। আমি না শোনার ভান করে বল্লাম, আপনাদের সাথে পরিচয় করায়ে দেই ইনি হচ্ছেন ল্যাংটা পীরের খলিফা বাদল। তিনি বহু কেরামতের মালিক। এখানে বসে তিনি কোহেকাফ নগরীর জ্বীনদের সাথে কথা বলে থাকেন। বাদল আমতা আমতা করে বল্ল, আমিতো ভাই ল্যাংটা বাবার মুরিদ কিন্তু ল্যাংটা বাবা আবার আপনাদের সামনে দাঁড়ানো হিমু ভাইয়ের মুরিদ। এবার পিস্তল রেখে সবাই আমার পা পেঁচিয়ে ধরল। আমি বল্লাম আমার কাছে নয় এই মেয়েটির কাছে মাফ চাও। মেয়েটি যেন এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্য ছিল তাদের মাফ চাওয়ার আগেই সে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০২/১০/২০১৪ভালো লাগলো...............
-
আসোয়াদ লোদি ১৯/০৮/২০১৪এই হিমু আর হুমায়ুন আহমদের হিমুর মধ্যে অনেক মিল ।
-
আবু সাহেদ সরকার ১৮/০৮/২০১৪লেখাটি বেশ সুন্দর লাগলো পড়ে। সময় নিয়ে পড়লাম।