হিমু পরিবহণ 2য় পর্ব
মাথার উপরে সূর্য। ঝকঝকে আকাশ। দুইয়ে মিলে প্রচন্ড দাবদাহ যাকে বলে একদম ঠাডা পড়া রোদ। আমি উদ্দেশ্য বিহীন ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। আজ বুঁয়া আসেনি। তার নাকি পেটে কামড় জাতীয় কি একটা রোগ হয়েছে। আমাদের ম্যাচের বুয়া কোন সাধারণ মহিলা না। তিনি এলাকার বুয়া কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী। তাদের সাধারণ সভায় একবার বিশেষ অতিথী হিসেবে আমি দাওয়াত পেয়েছিলাম। সে একদিন আমাকে বল্ল, হিমু ভাই আপনের কিন্তু আমগো আজকের মিটিংয়ে থাকন ই লাগব। আমি থেকে কি করব আমিতো আর এম,পি মন্ত্রী নই। হিমু ভাই এইডা কোন কতা অইল আপনের এম পি, মন্ত্রী অওনের রাস্তা কি বন্দ অইয়া গেছে? আমি বুয়া কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী হিসাবে সবসময় আপনের লগে আছি। তুমি যখন বলছ তখনতো আমার রাস্তা ক্লিয়ার। যাইহোক সেই সভানেত্রী মহোদয় আজ অসুস্থ। হয়ত তার আজ কোন মিটিং আছে তাই পেটে কামড়ের কথা বলে চম্মট দিয়েছে। খিদেয় আমার পেটের নাড়ী ভুরি বের হবার যোগাড়। একমাত্র হলুদ পানজাবিটা পড়ে রাস্তা দিয়ে হাটছি। পানজাবিতে পকেট নেই আর পকেট নেই মানে টাকাও নেই। খিদের চোটে মাথায় কিছু কাজ করেছেনা, সট সার্কিট লুজ হয়ে যাচ্ছে, কি করব বুঝতে পারছি না। রাস্তার পাশেই ডাস্টবিন মহালের দেখা পেলাম। ডাস্টবিন মহালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার খিদেটা আরেকটু মোচড় দিয়ে উঠল। কয়েকটি পথ শিশু ডাস্টবিন মহালের ভিতর খাবার খুঁজছে। একজন মুরগীর রানের কিছু অংশ পেয়েছে। খুব মজা করে খাচ্ছ সে। কয়েকটি দাঁড়কাক ও দেখা যায়। বাচ্চাগুলোর কারণে তারা ডাস্টবিন মহালের সামনে যেতে পারছেনা। হঠাত্ একটি ছোট্ট রুটির টুকরো দেখতে পেলাম। কথায় আছে, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি আর যেখানে চাঁদ নয় বরং স্বয়ং রুটি উপস্থিত সেখানেতো কথাই নেই। আমি রুটির দিকে এগিয়ে গেলাম কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে কোথা থেকে যেন একটা নেড়ি কুকুর এসে রুটিটাকে ছুঁ মেরে নিয়ে যায়। আমি করুণ চোখে বেয়াদপ কুকুরটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হঠাত্ ফোনটা বেজে উঠল। মাজেদা খালার ফোন। হিমু তুই কই? খালা আমিতো ডাস্টবিন মহালের পাশে। ডাস্টবিন মহাল মানে? মানে ডাস্টবিনের পাশে। তবে মহাল বলছিস কেন? না মানে মশক কমিটির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি এ নাম দিয়েছে। দেখ হিমু আমার সাথে ফাইজলামি করবিনা, আমি তোর খালা সেটা মাথায় রাখবি, তো ওখানে কি করছিস? খিদে লেগেছে তাই খাবার খুঁছছি। আবার ইয়ার্কি করছিস, তুই কি শুরু করেছিস এসব? বাদ দাও ওসব, কি জন্য ফোন দিয়েছ বল? হিমুরে তোর খালুতো পাগল হয়ে গেছে? পাগল হয়েছো তো কি হয়েছে তাকে পাগলা গারদে পাঠাও। তুই এ কথা বলতে পারলি। খারাপটা কি বল্লাম? পাগলের হ্যাভেন মানে স্বর্গতো পাবনা তাকে পাবণা পাঠিয়ে দাও। তুই একটা কাঠকোট্টা টাইপের দাঁড়কাক। আচ্ছা গালি দাও সমস্যা নাই, খালুর পাগলামির লক্ষণ গুলো বল। সে সারাদিন বডি দাও নিয়ে বসে থাকে, কেউ সামনে গেলেই তাকে কোপাতে আসে। এতো সাংঘাতিক বিপদ। তবে আর বলছি কি, তুই তাড়াতাড়ি আয়। আচ্ছা বডি দাও না হয়ে চাইনিজ কোড়াল হতে পারত না। এসব তুই কি বলছিস হিমু? না মানে আমার খালুজান একজন আধুণিক মানুষ, সে একটা বডি দাও নিয়া বসে আছে, ব্যাপারটা কেমন না। তুই কি বলতে চাস? তুমি একটা কাজ কর আজ ই বাজার থেকে একটা চাইনিজ কুড়াল নিয়ে আস, আমি একটু পড়েই এসে পড়ব।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০২/১০/২০১৪হিমু মাজেদা খালা খালু বেশ ভালো। আমি যে হিমু ভক্ত।
-
মারুফা তামান্না ২৮/০৬/২০১৪অনেক ভালো লাগল
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ২৮/০৬/২০১৪সুলতান ভাইয়া আছেন দেখছি। কালো পানির জনক। ভাল লাগল।
-
কবি মোঃ ইকবাল ২৬/০৬/২০১৪বেশ চমৎকার গল্প।
-
মল্লিকা রায় ২৬/০৬/২০১৪খুব সুন্দর একটি গল্প পড়লাম---ভালো লাগলো।