www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিজয় দিবসের ভাবনা

১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের গণমানুষের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।সকল শৃংখল ভেঙে দিয়ে, হিংস্র অক্টোপাসের নাগপাশ থেকে বের হয়ে, মুক্ত আকাশে ডানা মেলার দিন। বিক্ষুব্দ সমুদ্রের ঝড়ের কবলে পড়া একটি জাহাজ যেন তার বিপন্ন যাত্রীদের নিয়ে ঠিক এই দিনটিতেই একটি স্বাধীন মানচিত্রে নোঙর করেছিল। সেই স্বাধীন মানচিত্রই আমাদের প্রিয়
মাতৃভূমি বাংলাদেশ এই পৃথিবীর
বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
সারা পৃথিবী অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মাত্র নয় মাসের রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত এ লাল সবুজের পতাকার দিকে। ঐ বর্বর পাক
সেনারা বুঝতে পারেনি বাঙালি কা-পুরুষ নয়। অন্যায়ের কাছে এ
জাতি মাথা নোয়াবার নয় বরং তারা বুক চিতিয়ে লড়াই করে। এই দেশের
মানুষগুলো শান্তি প্রিয় কিন্তু অশান্তির বারতা নিয়ে যারা এগিয়ে যেতে চায় তাদের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার সামর্থ্য এ দেশবাসীর আছে। আমাদের ভদ্রতাকে ওরা ভীরুতা ভেবেছিল, আমাদের সৌজন্যকে ওরা আপোষকামিতা ভেবেছিল, আমাদের অসাম্প্রদায়িক চিন্তাকে ওরা হীনতা ভেবেছিল আর এত সব ভুলের মধ্য দিয়ে ওরা যে বড় ভুলটা বুঝেছিল তা হল সামান্য বারুদের গন্ধে এ জাতি থমকে যাবে। ভাবতে অবাক লাগে! যে জাতি হাজার বছর ধরে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে এই পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে আছে, যে জাতি প্রবল প্রতাপশালী মোঘলদের সময় নিজেদের স্বীয় অস্তিত্ব বজায় রেখেছে, যে জাতি ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্র তুলে ধরেছে, যে জাতি জন্ম দিয়েছিল নবাব
সিরাজদ্দৌলার মত দেশ প্রেমিক,শহীদ
তিতুমীরের মত নির্ভীক, হাজী শরীয়তুল্লাহের মত বিচক্ষণ নেতৃত্বের। যে জাতির রক্তে মিশে আছে মাস্টার
দা সূর্যসেন,পাগলা কানাই, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার রক্ত সে জাতিকে ওরা সামান্য বারুদের ভয় দেখিয়ে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল! যে জাতি ৫২ এর
ভাষা আন্দোলনে পিচঢালা পথে ঢেলে দিয়েছিল বুকের লাল তাজা রক্ত, প্রতিষ্ঠিত করেছিল তাদের ভাষাকে। যে জাতি ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট,৬৬ এর ছয় দফা, ৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে ওদের
কে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, যে জাতি ৭ ই
মার্চে রেসকোর্স ময়দানে জন্ম
দিয়েছিল নতুন ইতিহাসের সে জাতির
ব্যাপারে ওদের সীমাবদ্ধ ধারণা ইতিহাসের সবচাইতে মূর্খতার
অধ্যায়কে হার মানায়। ওদের এই
মূর্খতা ওদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। মজলুম জন নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানির আহবানে,
কালের মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর
রহমানের নেতৃত্বে এবং সময়ের
সাহসী সন্তান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার
মাধ্যমে বীর বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
ওদের এই মূর্খতার জবাব দিতে।পৃথিবীর
ইতিহাসে অন্যতম স্বল্প মেয়াদি এ
যুদ্ধে অত্যন্ত নির্মম পরিণতি ঘটেছিল
পাকিস্থানি হায়েনাদের। বাঙালীর হৃদয়
গহনে উত্থিত যে চেতনায় স্বাধীনতার
বীজ রোপণ করা হয়েছিল তা ১৬ ই
ডিসেম্বরে এসে ফুলে ফলে বিকশিত হয়। যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন মানচিত্র, একটি সুজলা-সুফলা উর্বর ভূমি। পেয়েছি মুক্ত আকাশে ডানা মেলার ঠিকানা।

১৯৭১-২০১৩ মোট ৪২ বছর।
দীর্ঘ চার দশকে আমরা অনেক
এগিয়ে গিয়েছি। আমরা পৃথিবীর অন্যতম একটি গণতান্ত্রিক দেশ।
সারা পৃথিবীতে আমাদের ভাষা আজ
আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সব ভাই ভাই হয়ে আমরা আগামী দিনগুলোতে আরো এগিয়ে যেতে চাই।
স্বাধীনতার পরে আমাদের হয়ত
আরো এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু
কি কারনে আগাতে পারিনি তা সুচিন্তিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের সেই চেতনায় এক সুরে গাইতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকতর সুন্দর পথ
রচনা করতে হবে। তবেই আগামীর সকাল গুলোর সব ফুল, পাখি আর সূর্যের
ছড়িয়ে পড়া প্রথম আলোটুকু আমাদের
হয়ে কথা বলবে।
( হৃদয়ে একাত্তর )
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১০৯৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারণ একটি লেখা
  • প্রবাসী পাঠক ২৭/১১/২০১৩
    মা গো ভাবনা কেন?
    আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে
    তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
    তোমার ভয় নেই মা
    আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

    আমরা হারবো না হারবো না
    তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না
    আমরা পাঁজর দিয়ে দুর্গঘাঁটি গড়তে জানি
    তোমার ভয় নেই মা
    আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

    হৃদয়ে আমার একাত্তর , চেতনায় একাত্তর, একাত্তর আমার গর্ব, আমার অহংকার।
 
Quantcast