ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার ফলই হলো আজকের অনৈক্য
ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার ফলই হলো আজকের অনৈক্য
দীর্ঘ দু’শো বছর যে ঔপনিবেশিক শক্তিটি দাপটের সাথে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল শাসন করলো, বলা হোয়ে থাকে যে তারা এতদঞ্চলের মানুষদের চাপের মুখে বিতাড়িত হোয়েছে। বাস্তবতা হোচ্ছে এটা আংশিক সত্য মাত্র। মূলত এরা নিজেরা নিজেরা গত শতাব্দীতে দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ কোরে ক্রমশ দুর্বল হোয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে তাদের অধীনস্থ অঞ্চলগুলোতে তাদের শাসনের ব্যাপারে মানুষ বিদ্রোহীও হোয়ে উঠেছিল। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যে শক্তিটি অর্ধ-দুনিয়া শাসন করলো তারা অবশ্যই সর্বদিক দিয়ে সচেতন একটি জাতি। তাই তারা আগাম বুঝতে পেরেছিল তাদের ঔপনিবেশিক আমল শেষের দিকে, হয়তো এসব অঞ্চলকে আর বেশি দিন এভাবে দাবিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু ঐ সময়ের জন্য এটাও বাস্তব ছিল যে, তারা যদি চাইতো তাহলে জোর কোরে আরো বেশ কিছুটা সময় শাসন কোরতে পারতো। কিন্তু বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকায় এই শক্তিটি আপসে এদেশীয় জনতার মধ্যে হোতে তাদের পছন্দনীয় একটি বিশেষ শ্রেণির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আলগোছে সরে পড়ে। তারা জানতো শতাব্দীর পর শতাব্দী এইভাবে মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। একদিন না একদিন তাদেরকে এই সব অঞ্চল থেকে বিদায় নিতেই হবে। তাই তারা নিজেদের স্বার্থ কায়েম রাখার জন্য পূর্ব থেকেই একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কোরল।
প্রথমত তারা ঐ সময়ের সকল শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ কোরে নিজেদের সুবিধা মতো দুইটি ধারায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু কোরল। এর একটি অংশ ধর্মীয় অংশ এবং অন্যটি সাধারণ শিক্ষা। উপমহাদেশের বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেসটিংস ১৭৮০ সনে ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কোলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরল। এই মাদ্রাসায় এসলাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা কোরে একটি নতুন এসলাম দাঁড় করালেন যে এসলামের বাহ্যিক দৃশ্য প্রকৃত এসলামের মতোই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটার আকিদা এবং চলার পথ আল্লাহর রসুলের এসলামের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ তারা একটি বিকৃত এসলাম শেখানোর ব্যবস্থা করলো।
এই শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাসে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোনো কিছুই রাখা হলো না, যেন মাদ্রাসা থেকে বের হোয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার কোরে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি কোরে রোজগার করা ছাড়া আর কোন পথ না থাকে। ব্রিটিশরা এটা এই উদ্দেশ্যে কোরল যে তাদের মাদ্রাসায় শিক্ষিত এই মানুষগুলো যাতে বাধ্য হয় দীন বিক্রি কোরে উপার্জন কোরতে এবং তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত এসলামটা এই জনগোষ্ঠীর মন-মগজে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হোয়ে যায়। তারা তাদের এই পরিকল্পনায় শতভাগ সাফল্য লাভ কোরল। এই মাদ্রাসা প্রকল্পের মাধ্যমে ধর্মব্যবসা ব্যাপক বিস্তার লাভ কোরল এবং এর মাধ্যমে মোসলেমদের মধ্যেও অন্যান্য ধর্মের মতো একটি স্বতন্ত্র পুরোহিত শ্রেণি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ কোরল। তারা ব্যস্ত হোয়ে পড়লো দীনের বহু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাসে এবং নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হলো ফলে নিজেদের মধ্যে হাজারো বিভক্তি সৃষ্টি হতে থাকলো, ফলশ্র“তিতে এই জাতি ব্রিটিশ খ্রিস্টান প্রভুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেললো। এই পুরোহিত শ্রেণির কর্মকাণ্ডের ফলে তাদেরকে অনুসরণকারী বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চরিত্র প্রকৃতপক্ষেই পরাধীন দাস জাতির চরিত্রে পরিণত হলো, কোনদিন তাদের প্রভুদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার চিন্তা করারও শক্তি রোইল না। ফলে তারা চিরতরে নৈতিক মেরুদণ্ডহীন হোয়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মুখাপেক্ষি হোয়ে রোইল। আমাদের এই উপমহাদেশে হিন্দু-মোসলেম অনৈক্য, বিভেদ, দাঙ্গা সূত্রপাতও ঘটে মূলত এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের পর থেকে।
যাইহোক, এভাবেই ব্রিটিশ খ্রিস্টান পণ্ডিতরা নিজেরা অধ্যক্ষ থেকে ১৯২৭ সন পর্যন্ত ১৪৬ বছর ধোরে এই মোসলেম জাতিকে এই বিকৃত এসলাম শেখালো। অতঃপর তারা যখন নিশ্চিত হলো যে, তাদের তৈরি করা বিকৃত এসলামটা তারা এ জাতির হাড়-মজ্জায় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হোয়েছে এবং আর তারা কখনও এটা থেকে বের হোতে পারবে না তখন তারা ১৯২৭ সনে তাদের আলীয়া মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষিত মওলানা শামসুল ওলামা কামাল উদ্দিন আহমেদ (এম.এ.আই.আই.এস) এর কাছে অধ্যক্ষ পদটি ছেড়ে দিলো (আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, মূল- আঃ সাত্তার, অনুবাদ- মোস্তফা হারুণ, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ, Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal” by Dr. Sekander Ali Ibrahimy (Islami Faundation Bangladesh), মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস, মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
বর্তমানে এসলামের ধ্বজাধারী যে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণিটি ধর্মেকে ব্যবহার কোরে ব্যবসা করছে, অপরাজনীতি করছে, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করছে তা মূলত ঐ ব্রিটিশদের তৈরি ষড়যন্ত্রমূলক মাদ্রাসা শিক্ষার ফসল। প্রকৃত এসলাম এটা স্বীকৃতি দেয় না। ব্রিটিশদের এই ষড়যন্ত্রের ফলেই এই উপমহাদেশে ধর্মীয় বিভেদ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।
অপরদিকে এই বিরাট এলাকা শাসন কোরতে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেরানীর কাজ করার জন্য যে জনশক্তি প্রয়োজন সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির মাধ্যমে সেই উপযুক্ত কেরাণী তৈরি করার বন্দোবস্ত করা হলো। তারা এতে ইংরেজি ভাষা, সুদভিত্তিক অংক, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, প্রযুক্তিবিদ্যা অর্থাৎ পার্থিব জীবনে যা যা প্রয়োজন হয় তা শেখানোর বন্দোবস্ত রাখলো। কিন্তু এখানে স্রষ্টা, নবী-রসুল, অবতার, আখেরাত ও ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সম্বন্ধে প্রায় কিছুই রাখা হলো না, অর্থাৎ নৈতিক শিক্ষা, সচ্চরিত্রবান হবার শিক্ষা এখানে একেবারেই রোইল না। এসলামের গৌরবময় ইতিহাস, সনাতন ধর্মীদের সত্যযুগের ইতহাস অর্থাৎ নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিবর্তে ইউরোপ-আমেরিকার রাজা-বাদশাহদের ইতিহাস, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কাহিনীই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ফলে এই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটি মনে-প্রাণে প্রভুদের সম্বন্ধে একধরনের ভক্তি ও নিজেদের অতীত সম্বন্ধে হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলো। বাস্তবতা এমন দাঁড়ালো যে তারা নিজেদের প্রপিতামহের নাম বলতে না পারলেও ইউরোপীয় শাসক, রাজা-রানী, কবি, সাহিত্যিকদের তস্য-তস্য পিতাদের নামও মুখস্ত করে ফেললো। নিজেদের সোনালী অতীত ভুলে যাওয়ায় তাদের অস্থিমজ্জায় এটা প্রবেশ কোরল যে সর্বদিক দিয়ে প্রভুরাই শ্রেষ্ঠ।
এই দুই অংশের বাইরে বাকি ছিলো উভয়প্রকার শিক্ষাবঞ্চিত এক বিশাল জনসংখ্যা; এই বৃহত্তর জনসংখ্যা শিক্ষা-দীক্ষাহীন প্রায় পশু পর্যায়ের বিশৃঙ্খল জনসংখ্যায় পরিণত হোয়েছে, যাদের না আছে ধর্মের জ্ঞান না আছে পার্থিব জ্ঞান। এরা পরকালিন মুক্তির আশায় মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত পরধনলোভী ধর্মব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা দিয়ে, দাওয়াত কোরে খাইয়ে সন্তষ্ট রাখার চেষ্টা করে। অন্যদিকে পার্থিব সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ধর্মহীন, চরিত্রহীন, কপট ও পাশ্চাত্য প্রভুদের গোলাম শ্রেণির শরণাপন্ন হয়। এরা উভয় শ্রেণির দ্বারা প্রতারিত, বঞ্চিত ও শোষিত হয়। যা হোক, এভাবে যখন প্রভুদের এদেশ ছেড়ে যাবার সময় হলো তখন তারা কাদের হাতে শাসনভার ছেড়ে যাবে তা নিয়ে মোটেও তাদের চিন্তা কোরতে হলো না। একে তো ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটি শাসন করার যোগ্য নয়, এমনকি শাসন করার ব্যাপারে আগ্রহীও নয় (বর্তমানেও এদের উত্তরসূরিদের একটা অংশ তাই মনে করে। এরা মনে করে শাসন যে-ই করুক, আমরা ধর্ম-কর্ম করতে পারলেই চোলবে), আর সাধারণ মূর্খ জনতার হাতে শাসনদণ্ড ছাড়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না, বাকি থাকে নিজেদের হাতে গড়া সাধারণ শিক্ষিত অংশটি। এদের হাতে শাসনভার ছেড়ে যাওয়ার লাভ বহুমুখী। একে তো তারা প্রভু বোলতে অজ্ঞান, তাছাড়া প্রভুরা না থাকলেও তারা যে প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করেই চোলবে এ ব্যাপারে প্রভুরা একেবারেই নিশ্চিত ছিলেন।
এরাই প্রভুদের অনুপস্থিতিতে শাসনভার পাওয়ার অধিকারী এবং পাশ্চাত্য প্রভুরা আগে থেকেই তাদের জন্য এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে তুলেছে, তার একটি বড় প্রমাণ তাদেরকে অধিকার আদায়ের পথ শিক্ষা দেওয়ার নামে তাদের পছন্দসই রাজনীতি শিক্ষা দেওয়া। এই প্রভুদেরই একজন, এলান অক্টাভিয়ান হিউম (Allan Octavian Hume. 1829-1912) নামে কথিত ‘ভারতপ্রেমী’ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (Indian National Congress) নামে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে এদেশীয় শিক্ষিত শ্রেণিটিকে এদেশীয়দের অধিকার আদায়ের রাজনীতি শিক্ষা প্রদান করেন। অবাক করা ব্যাপার এই যে তিনি তাদের কাছে ‘ভারতপ্রেমী’ নামে পরিচিত। তার কাছ থেকেই এই রাজনীতিকরা পাশ্চাত্য প্রভুদের তৈরি পদ্ধতিতে রাজনীতি শিক্ষা লাভ করেছেন। এই শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই বর্তমানের রাজনীতিকরাও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের ঘৃণা কুড়ানো এই রাজনীতিকরা তাদেরই বর্তমান উত্তরসূরি।
কাল অতিবাহিত হোয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রতি প্রভুদের পূর্ব মানসিকতা এখনো যায় নি। আমাদের সম্পদ থেকে শোষণ করার মানসিকতা এখনও পর্যন্ত তাদের দূর হয় নি। ঐ সময়ে নিয়েছে জোর করে আর এখন নেয় নেতা-নেত্রীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার নামে আঁতাত করে। যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা কোরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারাই তাদের আনুকূল্য পায়। আর এই আনুকূল্যের রসদ হোচ্ছে আমাদের নেতাদের বিভিন্ন দাসত্ব চুক্তি, দাসখত।
যাই হোক, গোলামি যুগে প্রভুরা আমাদেরকে যে রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমরা নির্দিধায় আজও তা চর্চা করে যাচ্ছি। অথচ এই System-এর ভিত্তিতেই অনৈক্য প্রোথিত হোয়ে আছে। আর এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে ঐক্যই সমৃদ্ধি আর অনৈক্য ডেকে আনে ধ্বংস। বাস্তবতা হোচ্ছে এই শিক্ষা এমন একটি ব্যবস্থা যা একমাত্র গোলামদের জন্যই প্রযোজ্য, অনুগত দাসদের বিদ্রোহ করার পরিবর্তে গোলামিতে ব্যস্ত রাখতে এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ জন্যই এটি সাম্রাজ্যবাদীরা বার বার তাদের কাক্সিক্ষত ভূ-খণ্ডে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরছে।
ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হোয়ে আজকের শিক্ষিত শ্রেণিটির অধিকাংশই হোয়ে গেছে ধর্মহীন, স্রষ্টাহীন, আত্মাহীন, বস্তবাদী, আত্মকেন্দ্রীক, ভোগ-বিলাসী, পাশ্চাত্যদের অনুকরণকারী অতি প্রভুভক্ত একটি প্রাণি বিশেষ। এখন তাদেরই ষড়যন্ত্রমূলক তন্ত্র-মন্ত্রকে আমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে একদিকে ঐ চরিত্রহীন শিক্ষিত শ্রেণিটি আমাদেরকে করেছে শত-সহস্র ভাগে বিভক্ত, অপরদিকে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে ঐক্যের পরিবর্তে শত-সহস্র মজহাব-ফেরকায় বিভক্ত করেছে। তাদেরই ষড়যন্ত্রের ফলে আমরা এক ভাই আরেক ভাইয়ের রক্তে হলি খেলছি, নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করে চলেছি, আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্র“তে পরিণত হোয়েছি; এভাবে আজ আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হোয়েছি।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এখন একান্ত প্রয়োজন সকল অনৈক্য, বিভেদ-ব্যবধান ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঐক্যকে ফিরিয়ে আনা। তাহোলেই সম্ভব হবে পৃথিবীর বুকে আত্ম-মর্যাদাসম্পন্ন একটি জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আমরা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারী হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সেই ঐক্যের আহ্বানই করছি মানবজাতিকে।
[ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী রচিত, “ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা” পড়ার জন্য অনুরোধ রোইল।]
----রিয়াদুল এসলাম।
দীর্ঘ দু’শো বছর যে ঔপনিবেশিক শক্তিটি দাপটের সাথে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল শাসন করলো, বলা হোয়ে থাকে যে তারা এতদঞ্চলের মানুষদের চাপের মুখে বিতাড়িত হোয়েছে। বাস্তবতা হোচ্ছে এটা আংশিক সত্য মাত্র। মূলত এরা নিজেরা নিজেরা গত শতাব্দীতে দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ কোরে ক্রমশ দুর্বল হোয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে তাদের অধীনস্থ অঞ্চলগুলোতে তাদের শাসনের ব্যাপারে মানুষ বিদ্রোহীও হোয়ে উঠেছিল। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যে শক্তিটি অর্ধ-দুনিয়া শাসন করলো তারা অবশ্যই সর্বদিক দিয়ে সচেতন একটি জাতি। তাই তারা আগাম বুঝতে পেরেছিল তাদের ঔপনিবেশিক আমল শেষের দিকে, হয়তো এসব অঞ্চলকে আর বেশি দিন এভাবে দাবিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু ঐ সময়ের জন্য এটাও বাস্তব ছিল যে, তারা যদি চাইতো তাহলে জোর কোরে আরো বেশ কিছুটা সময় শাসন কোরতে পারতো। কিন্তু বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকায় এই শক্তিটি আপসে এদেশীয় জনতার মধ্যে হোতে তাদের পছন্দনীয় একটি বিশেষ শ্রেণির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আলগোছে সরে পড়ে। তারা জানতো শতাব্দীর পর শতাব্দী এইভাবে মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। একদিন না একদিন তাদেরকে এই সব অঞ্চল থেকে বিদায় নিতেই হবে। তাই তারা নিজেদের স্বার্থ কায়েম রাখার জন্য পূর্ব থেকেই একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কোরল।
প্রথমত তারা ঐ সময়ের সকল শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ কোরে নিজেদের সুবিধা মতো দুইটি ধারায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু কোরল। এর একটি অংশ ধর্মীয় অংশ এবং অন্যটি সাধারণ শিক্ষা। উপমহাদেশের বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেসটিংস ১৭৮০ সনে ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কোলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরল। এই মাদ্রাসায় এসলাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা কোরে একটি নতুন এসলাম দাঁড় করালেন যে এসলামের বাহ্যিক দৃশ্য প্রকৃত এসলামের মতোই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটার আকিদা এবং চলার পথ আল্লাহর রসুলের এসলামের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ তারা একটি বিকৃত এসলাম শেখানোর ব্যবস্থা করলো।
এই শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাসে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোনো কিছুই রাখা হলো না, যেন মাদ্রাসা থেকে বের হোয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার কোরে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি কোরে রোজগার করা ছাড়া আর কোন পথ না থাকে। ব্রিটিশরা এটা এই উদ্দেশ্যে কোরল যে তাদের মাদ্রাসায় শিক্ষিত এই মানুষগুলো যাতে বাধ্য হয় দীন বিক্রি কোরে উপার্জন কোরতে এবং তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত এসলামটা এই জনগোষ্ঠীর মন-মগজে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হোয়ে যায়। তারা তাদের এই পরিকল্পনায় শতভাগ সাফল্য লাভ কোরল। এই মাদ্রাসা প্রকল্পের মাধ্যমে ধর্মব্যবসা ব্যাপক বিস্তার লাভ কোরল এবং এর মাধ্যমে মোসলেমদের মধ্যেও অন্যান্য ধর্মের মতো একটি স্বতন্ত্র পুরোহিত শ্রেণি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ কোরল। তারা ব্যস্ত হোয়ে পড়লো দীনের বহু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাসে এবং নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হলো ফলে নিজেদের মধ্যে হাজারো বিভক্তি সৃষ্টি হতে থাকলো, ফলশ্র“তিতে এই জাতি ব্রিটিশ খ্রিস্টান প্রভুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেললো। এই পুরোহিত শ্রেণির কর্মকাণ্ডের ফলে তাদেরকে অনুসরণকারী বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চরিত্র প্রকৃতপক্ষেই পরাধীন দাস জাতির চরিত্রে পরিণত হলো, কোনদিন তাদের প্রভুদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার চিন্তা করারও শক্তি রোইল না। ফলে তারা চিরতরে নৈতিক মেরুদণ্ডহীন হোয়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মুখাপেক্ষি হোয়ে রোইল। আমাদের এই উপমহাদেশে হিন্দু-মোসলেম অনৈক্য, বিভেদ, দাঙ্গা সূত্রপাতও ঘটে মূলত এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের পর থেকে।
যাইহোক, এভাবেই ব্রিটিশ খ্রিস্টান পণ্ডিতরা নিজেরা অধ্যক্ষ থেকে ১৯২৭ সন পর্যন্ত ১৪৬ বছর ধোরে এই মোসলেম জাতিকে এই বিকৃত এসলাম শেখালো। অতঃপর তারা যখন নিশ্চিত হলো যে, তাদের তৈরি করা বিকৃত এসলামটা তারা এ জাতির হাড়-মজ্জায় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হোয়েছে এবং আর তারা কখনও এটা থেকে বের হোতে পারবে না তখন তারা ১৯২৭ সনে তাদের আলীয়া মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষিত মওলানা শামসুল ওলামা কামাল উদ্দিন আহমেদ (এম.এ.আই.আই.এস) এর কাছে অধ্যক্ষ পদটি ছেড়ে দিলো (আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, মূল- আঃ সাত্তার, অনুবাদ- মোস্তফা হারুণ, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ, Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal” by Dr. Sekander Ali Ibrahimy (Islami Faundation Bangladesh), মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস, মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
বর্তমানে এসলামের ধ্বজাধারী যে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণিটি ধর্মেকে ব্যবহার কোরে ব্যবসা করছে, অপরাজনীতি করছে, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করছে তা মূলত ঐ ব্রিটিশদের তৈরি ষড়যন্ত্রমূলক মাদ্রাসা শিক্ষার ফসল। প্রকৃত এসলাম এটা স্বীকৃতি দেয় না। ব্রিটিশদের এই ষড়যন্ত্রের ফলেই এই উপমহাদেশে ধর্মীয় বিভেদ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।
অপরদিকে এই বিরাট এলাকা শাসন কোরতে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেরানীর কাজ করার জন্য যে জনশক্তি প্রয়োজন সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির মাধ্যমে সেই উপযুক্ত কেরাণী তৈরি করার বন্দোবস্ত করা হলো। তারা এতে ইংরেজি ভাষা, সুদভিত্তিক অংক, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, প্রযুক্তিবিদ্যা অর্থাৎ পার্থিব জীবনে যা যা প্রয়োজন হয় তা শেখানোর বন্দোবস্ত রাখলো। কিন্তু এখানে স্রষ্টা, নবী-রসুল, অবতার, আখেরাত ও ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সম্বন্ধে প্রায় কিছুই রাখা হলো না, অর্থাৎ নৈতিক শিক্ষা, সচ্চরিত্রবান হবার শিক্ষা এখানে একেবারেই রোইল না। এসলামের গৌরবময় ইতিহাস, সনাতন ধর্মীদের সত্যযুগের ইতহাস অর্থাৎ নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিবর্তে ইউরোপ-আমেরিকার রাজা-বাদশাহদের ইতিহাস, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কাহিনীই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ফলে এই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটি মনে-প্রাণে প্রভুদের সম্বন্ধে একধরনের ভক্তি ও নিজেদের অতীত সম্বন্ধে হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলো। বাস্তবতা এমন দাঁড়ালো যে তারা নিজেদের প্রপিতামহের নাম বলতে না পারলেও ইউরোপীয় শাসক, রাজা-রানী, কবি, সাহিত্যিকদের তস্য-তস্য পিতাদের নামও মুখস্ত করে ফেললো। নিজেদের সোনালী অতীত ভুলে যাওয়ায় তাদের অস্থিমজ্জায় এটা প্রবেশ কোরল যে সর্বদিক দিয়ে প্রভুরাই শ্রেষ্ঠ।
এই দুই অংশের বাইরে বাকি ছিলো উভয়প্রকার শিক্ষাবঞ্চিত এক বিশাল জনসংখ্যা; এই বৃহত্তর জনসংখ্যা শিক্ষা-দীক্ষাহীন প্রায় পশু পর্যায়ের বিশৃঙ্খল জনসংখ্যায় পরিণত হোয়েছে, যাদের না আছে ধর্মের জ্ঞান না আছে পার্থিব জ্ঞান। এরা পরকালিন মুক্তির আশায় মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত পরধনলোভী ধর্মব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা দিয়ে, দাওয়াত কোরে খাইয়ে সন্তষ্ট রাখার চেষ্টা করে। অন্যদিকে পার্থিব সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ধর্মহীন, চরিত্রহীন, কপট ও পাশ্চাত্য প্রভুদের গোলাম শ্রেণির শরণাপন্ন হয়। এরা উভয় শ্রেণির দ্বারা প্রতারিত, বঞ্চিত ও শোষিত হয়। যা হোক, এভাবে যখন প্রভুদের এদেশ ছেড়ে যাবার সময় হলো তখন তারা কাদের হাতে শাসনভার ছেড়ে যাবে তা নিয়ে মোটেও তাদের চিন্তা কোরতে হলো না। একে তো ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটি শাসন করার যোগ্য নয়, এমনকি শাসন করার ব্যাপারে আগ্রহীও নয় (বর্তমানেও এদের উত্তরসূরিদের একটা অংশ তাই মনে করে। এরা মনে করে শাসন যে-ই করুক, আমরা ধর্ম-কর্ম করতে পারলেই চোলবে), আর সাধারণ মূর্খ জনতার হাতে শাসনদণ্ড ছাড়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না, বাকি থাকে নিজেদের হাতে গড়া সাধারণ শিক্ষিত অংশটি। এদের হাতে শাসনভার ছেড়ে যাওয়ার লাভ বহুমুখী। একে তো তারা প্রভু বোলতে অজ্ঞান, তাছাড়া প্রভুরা না থাকলেও তারা যে প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করেই চোলবে এ ব্যাপারে প্রভুরা একেবারেই নিশ্চিত ছিলেন।
এরাই প্রভুদের অনুপস্থিতিতে শাসনভার পাওয়ার অধিকারী এবং পাশ্চাত্য প্রভুরা আগে থেকেই তাদের জন্য এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে তুলেছে, তার একটি বড় প্রমাণ তাদেরকে অধিকার আদায়ের পথ শিক্ষা দেওয়ার নামে তাদের পছন্দসই রাজনীতি শিক্ষা দেওয়া। এই প্রভুদেরই একজন, এলান অক্টাভিয়ান হিউম (Allan Octavian Hume. 1829-1912) নামে কথিত ‘ভারতপ্রেমী’ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (Indian National Congress) নামে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে এদেশীয় শিক্ষিত শ্রেণিটিকে এদেশীয়দের অধিকার আদায়ের রাজনীতি শিক্ষা প্রদান করেন। অবাক করা ব্যাপার এই যে তিনি তাদের কাছে ‘ভারতপ্রেমী’ নামে পরিচিত। তার কাছ থেকেই এই রাজনীতিকরা পাশ্চাত্য প্রভুদের তৈরি পদ্ধতিতে রাজনীতি শিক্ষা লাভ করেছেন। এই শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই বর্তমানের রাজনীতিকরাও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের ঘৃণা কুড়ানো এই রাজনীতিকরা তাদেরই বর্তমান উত্তরসূরি।
কাল অতিবাহিত হোয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রতি প্রভুদের পূর্ব মানসিকতা এখনো যায় নি। আমাদের সম্পদ থেকে শোষণ করার মানসিকতা এখনও পর্যন্ত তাদের দূর হয় নি। ঐ সময়ে নিয়েছে জোর করে আর এখন নেয় নেতা-নেত্রীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার নামে আঁতাত করে। যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা কোরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারাই তাদের আনুকূল্য পায়। আর এই আনুকূল্যের রসদ হোচ্ছে আমাদের নেতাদের বিভিন্ন দাসত্ব চুক্তি, দাসখত।
যাই হোক, গোলামি যুগে প্রভুরা আমাদেরকে যে রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমরা নির্দিধায় আজও তা চর্চা করে যাচ্ছি। অথচ এই System-এর ভিত্তিতেই অনৈক্য প্রোথিত হোয়ে আছে। আর এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে ঐক্যই সমৃদ্ধি আর অনৈক্য ডেকে আনে ধ্বংস। বাস্তবতা হোচ্ছে এই শিক্ষা এমন একটি ব্যবস্থা যা একমাত্র গোলামদের জন্যই প্রযোজ্য, অনুগত দাসদের বিদ্রোহ করার পরিবর্তে গোলামিতে ব্যস্ত রাখতে এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ জন্যই এটি সাম্রাজ্যবাদীরা বার বার তাদের কাক্সিক্ষত ভূ-খণ্ডে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরছে।
ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হোয়ে আজকের শিক্ষিত শ্রেণিটির অধিকাংশই হোয়ে গেছে ধর্মহীন, স্রষ্টাহীন, আত্মাহীন, বস্তবাদী, আত্মকেন্দ্রীক, ভোগ-বিলাসী, পাশ্চাত্যদের অনুকরণকারী অতি প্রভুভক্ত একটি প্রাণি বিশেষ। এখন তাদেরই ষড়যন্ত্রমূলক তন্ত্র-মন্ত্রকে আমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে একদিকে ঐ চরিত্রহীন শিক্ষিত শ্রেণিটি আমাদেরকে করেছে শত-সহস্র ভাগে বিভক্ত, অপরদিকে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে ঐক্যের পরিবর্তে শত-সহস্র মজহাব-ফেরকায় বিভক্ত করেছে। তাদেরই ষড়যন্ত্রের ফলে আমরা এক ভাই আরেক ভাইয়ের রক্তে হলি খেলছি, নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করে চলেছি, আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্র“তে পরিণত হোয়েছি; এভাবে আজ আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হোয়েছি।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এখন একান্ত প্রয়োজন সকল অনৈক্য, বিভেদ-ব্যবধান ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঐক্যকে ফিরিয়ে আনা। তাহোলেই সম্ভব হবে পৃথিবীর বুকে আত্ম-মর্যাদাসম্পন্ন একটি জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আমরা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারী হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সেই ঐক্যের আহ্বানই করছি মানবজাতিকে।
[ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী রচিত, “ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা” পড়ার জন্য অনুরোধ রোইল।]
----রিয়াদুল এসলাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আহমাদ সাজিদ ১৮/০৯/২০১৪
সর্বোপরি, মোহাম্মদ বায়েজিদ খান পন্নী সম্পর্কে ভালো ধারণা কখনো হয় নি। আর হিযবুত তাওহীদকে সব সময় মনে হতো জঙ্গি আর ভন্ড দল।
এটা আমার্ একান্ত মতামত।