www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সীমান্ত হত্যা ও বন্দি পাখিদের গল্প

সীমান্ত হত্যা ও বন্দি পাখিদের গল্প
ফাঁদ পেতে রাখলে ফাঁদে পাখিরা পা দিবেই কিংবা বন্দি খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়ার তাগিদে পাখি খাঁচা থেকে বেরোনোর চেষ্টা করবেই। কারণ পাখি খাঁচার বাইরের আকাশের কিঞ্চিত সৌন্দর্য্য দেখেছে। তেমনি মুক্ত আকাশ অথচ সীমান্ত বা দেয়ালের বাঁধা থাকলেও মানুষ তা টপকানোর চেষ্টা করবেই। কারণ মানুষও পাখির মতো মুক্ত আকাশ কিংবা পৃথিবীর কিঞ্চিত সৌন্দর্য্য দেখেছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মানবের পবিত্রাত্মা মেনে নেয় না। আত্মার টানেই হোক আর পরিস্থিতির কারণেই হোক, কিংবা হোক ভ্রমণপিপাসার কারণে – মানুষ চায় না কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বন্দি থাকতে। মানুষ চায় পাখির মতো সীমান্তের কাঁটাতার কিংবা দেয়াল নামক বন্দি খাঁচা থেকে বের হয়ে মুক্ত আকাশে উড়তে, পৃথিবীর সর্বত্র ভ্রমণ করতে। মানুষের এই অভিযাত্রিক গুণটি বহু পূরনো, আদিম। কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবির কবিতায় এটাই ফুটে উঠেছে:
“থাকবো নাকো বদ্ধঘরে,
দেখবো এবার জগতটাকে।
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।”
তাই এই মানুষকে এভারেস্টের আকাশচুম্বী-হতাশ করা দূরত্বও এভারেস্ট জয়ের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দমিয়ে রাখতে পারেনি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাওয়ার ইচ্ছেটুকুকেও। মানুষের অভিযাত্রিক গুণটি আজ তাকে দুর্গম ও যোজন যোজন দূরত্বের মঙ্গল গ্রহের মতো জায়গায় বসবাসের অভিলাষ ও সাহস যুগিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অনেকদিন আগে থেকেই আরম্ভ করে দিয়েছে। যেখানে এতো দূরত্ব, এতো বাঁধা, এতো সংকট, এতো সমস্যার জাল মানুষের মুক্ত ও অভিযাত্রিক মনকে দমাতে পারে নি, সেখানে সামান্য সীমান্তের বাঁধা তার ইচ্ছার কাছে পায়ের কাঁটা মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাই সে কাঁটাকে মাড়িয়ে ওপাড়ে যেতে চায়। কিন্তু সে তো জানে না যে, অভিকর্ষীয় ত্বরণ ডিঙ্গিয়ে যতো সহজে অন্য গ্রহে কিংবা এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করা যায়, ঠিক ততোটাই বা তারচেয়েও কঠিন এই দুইমাথার কাঁটাতার পেরিয়ে সীমান্তের ঐ পাড়ে যাওয়া। কারণ গ্রহ-উপগ্রহ জয়ে কিংবা এভারেস্ট জয় করতে গেলে তো কেউ আর তার দিকে বন্দুক তাক করে রাখেনা। এই অভিযাত্রিক মনের মানুষেরা তো বিশ্বাসই করতে চায় না যে বন্দুকের গুলির কাছে প্রক্ষিপ্ত রকেটের কোনো মূল্যই নেই! কিন্তু মানুষের আত্মিক দিকটার যে চরম লোপ পেয়েছে!
পাখিরা স্বাধীনতার ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়তে চায়। অতিথি পাখিরা উড়ে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে – প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। তবে সব পাখিরাই চায় না। ঐ পাখিরা তার বাসা ছাড়া আর কিইবা চেনে! কিন্তু ওরাতো বাকি পাখিদের ভ্রমণ স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয় নি! তবে মানুষ হয়ে আমরা মানুষের মুক্ত ভ্রমণের অধিকারকে কেনো ভিসা/পাসপোর্টের দুটি পাতায় আর সীমান্তের কাঁটাতার কিংবা প্রাচীরে কুক্ষিগত করে রাখলাম?
সীমান্ত নামের বন্দি খাঁচা থেকে মানুষ বেরোনোর পায়তারা করলে তার দিকে বন্দুক তাক করে ট্রিগারে আঙ্গুল রাখি, যেনো শিকারের অন্যতম টার্গেট! যদি খাঁচা থেকে বের হবে হবে বোঝা যায়, অমনিতেই বুক ঝাঁঝরা। গুলির শব্দ একটু পরেই শোনা যায়। তার আগেই ফিনকি দিয়ে রক্তগুলো কাঁটাতার কিংবা দেয়ালে লেপ্টে শুকিয়ে যায়। কাঁটাতারে ঝুলে রয় ফেলানী নামের পাখিরা। যে পাড়ে যেতে চেয়েছিলো, সে পাড়ে আর হয়না যাওয়া তার। বরং জীবনের শেষ পাড়েই চলে যায় পৃথিবীর মানুষদের মুখে থু তু দিয়ে!
শিকারীরাতো মানুষ-খেকো নয়! তবে কেনো এই মানব-রক্ত-খেলা !
Anna Sewell এর লেখা Black Beauty গল্পটার কথা মনে পড়ে গেলো। ফেলানীদেরকে সেই গল্পের খরগোশ মনে হলো। যার দাম নেই ঘোড়ার Lord এর রক্তপৈশাচিক খেলার আনন্দের কাছে। ফেলানীদের থুতুকে এরা অবজ্ঞা করে আরো হিংস্র হয়ে যায়। এজন্যই প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সীমান্ত হত্যায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ কি মানবতা বিরোধী নয়?
সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে অনেক রকমের প্রতিবাদ- প্ল্যাকার্ড সম্বলিত বিক্ষোভ-মিছিল, অনশন প্রতিপক্ষদেশের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হ্যাকিং, ব্লগিং ইত্যাদি হয়েছে। হয়েছে রাষ্ট্রদ্বয়ের সীমান্তবাহিনীর মধ্যে অজস্র পতাকা বৈঠক। দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অধীনে হয়েছে দ্বিপাক্ষিক দফা দফা আলোচনা। কিন্তু কই! এতো কিছুর পরেও তো কিছুই হলোনা। সমস্যার কোনো সুরাহা মিলছেও না। মাঝ থেকে শুধু চা খরচের বিলটাই বেড়ে যায়। এভাবে সীমান্ত হত্যার সমাধান সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তবে অনেক আগেই তার সমাধান হয়ে যেতো।
তবে কি সমাধানের পথ নেই? আছে। আপনাদের হয়তো এতক্ষণে মোটামুটি একটা ধারণা চলে এসেছে যে সমাধানের পথটা কী? পাখির খাঁচাটাই ভেঙ্গে ফেলতে হবে। বুঝলেন না তো?
যদি আমরা ফেলানীদের বাঁচাতে চাই, মানব স্বভাবের আদি ও অকৃত্রিম গুণকে স্বাধীন করে দিতে চাই তাহলে মানুষে মানুষে মিলন মেলা ঘটাতে যা কিছু অন্তরায় তা মিটিয়ে দিতে হবে। আমি যা বোঝাতে চাইছি তা সকল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্র বিভক্তিকরণের বিরুদ্ধে, সকল জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে অর্থ্যাৎ আমি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সকল সিস্টেমের বিরুদ্ধেই কথা বলছি।
তবে হ্যা, আমি একটা মহাসত্যের পক্ষে। শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্যের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, ভারসাম্যের পক্ষে অর্থ্যাৎ আল্লাহর দেয়া সিস্টেমের পক্ষে। আল্লাহর দেয়া সে সিস্টেম মেনে নিলেই পৃথিবী হয়ে যাবে ভারসাম্যপূর্ণ। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকসহ সকল ক্ষেত্রে ফিরে আসবে ভারসাম্য, তওহীদভিত্তিক ঐক্য -আনুগত্য- শৃংখলার মেলবন্ধনে প্রস্ফূটিত হবে পারস্পরিক সম্মানবোধ- অমায়িক ব্যবহার ও ভালোবাসা- মানবীয় অকৃত্রিম চরিত্রের সমাবেশ। পৃথিবীতে থাকবেনা কোনো সাম্প্রদায়িকতা-বিভেদ-বৈষম্য, যেমনটি হয়েছিলো মক্কা-মদিনায় প্রকৃত এসলাম প্রতিষ্ঠার পর।
আর আমাদের ফেলানী পাখিরা মনের আনন্দে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে যেখানে যখন খুশি যেতে পারবে একা একা। প্রয়োজন হবে না সীমান্তে কোন কাঁটাতার কিংবা সীমান্ত প্রহরীর। এমনকি ফেলানীরা যদি রাতের আঁধারে স্বর্ণালঙ্কার গায়ে জড়িয়ে একা একা দূরে কোথাও যায়, তার মনে না থাকবে আত্মসম্ভ্রম হারানোর ভয়, না থাকবে গয়না চুরি-ডাকাতি কিংবা হারানোর ভয়। এটাই এসলামের অতীত ইতিহাস। চলুন আমরা আল্লাহর দেয়া সিস্টেমকে মেনে নিই।

-ইলিয়াস আহমেদ
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৮৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast