ঐক্যের মাঝেই রোয়েছে শান্তির পথ
প্রাক এসলামিক আরবের যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, গোত্রে-গোত্রে যুদ্ধ এবং সীমাহীন অশান্তির পেছনের কারণ হিসেবে যে বিষয়টি প্রকটভাবে দৃষ্টিগোচর হয় তাহলো ঐক্যহীনতা। তদানীন্তন আরবরা গোত্র, বংশ, দল-উপদলে এমনভাবে বিভক্ত ছিলো এবং এক গোত্র বা বংশ থেকে অপর গোত্রের প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা এমন উদ্ভট আকার ধারণ কোরেছিল যে নিষিদ্ধ চারটি মাস ব্যতীত এমন একটি দিনও বাদ যেতো না যেদিন কোন যুদ্ধ-রক্তপাত হয় নি। যেখানে ছিলো যত বেশি বিভক্তি, সেখানে ছিলো তত বেশি যুদ্ধ-রক্তপাত, হানাহানি, অশান্তি। এই অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে – বাকি পৃথিবী আরবদেরকে দেখতো অসভ্য, বর্বর একটি জাতি হিসেবে। তারা ছিলো বাকি পৃথিবীর ঘৃণার পাত্র।
এমনই অস্থিতিশীল পরিবেশে আরবদের মাঝে আগমন হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সমস্ত পৃথিবীর জন্য আল্লাহর প্রেরিত বিশেষ রহমত মোহাম্মদ (দ:)। তাঁর দায়িত্ব ছিলো মানবজাতির মধ্যকার যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, অশান্তি নির্মূল কোরে শান্তি স্থাপন করার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- নবুয়্যত পাবার মুহূর্ত থেকে ওফাত পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তিনি এই একটি কাজেই ব্যয় কোরেছেন। তাঁর নবী জীবনের দীর্ঘ ১৩ টি বছর কেটেছে জন্মভূমি মক্কার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে। তিনি চেষ্টা কোরেছিলেন মক্কার শতধা বিচ্ছিন্ন গোত্রগুলিকে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই বন্ধ কোরে এক সূত্রে গাঁথতে; চেষ্টা কোরেছিলেন যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, নিজেরা নিজেরা কৃত যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ কোরে এক সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, শান্তির পথে নিয়ে আসতে। কিন্তু মক্কা তাঁর আহ্বান শোনে নি। তারা রসুলাল্লাহর এই শান্তির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান কোরে আগের মতোই ফেতনা-ফাসাদে নিমজ্জিত হোয়ে থাকলো।
ইতিহাসে পাই – রসুলাল্লাহ তাঁর আহ্বান এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ রাখেন নি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই মানবজাতির ঐক্যের পথ, ভ্রাতৃত্বের পথ এবং সত্যের পথের দাওয়াত পেশ কোরেছেন। শত নির্যাতন, আঘাত, বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে পিছু হটেন নি।
আরবের ঐতিহ্যগত কারণে নিষিদ্ধ চারটি মাস তারা যাবতীয় যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ রাখতো। সেই সময় চিরশত্র“কে হাতের কাছে পেলেও তাকে কেউ আঘাত কোরত না। এই সময়টিতে তারা হজ্ব ও ওমরা পালন কোরত। দূর দূরান্ত থেকে হজ্বের কাফেলা আসতো মদিনায়। এই সুযোগে রসুলাল্লাহ প্রতিটি কাফেলাতে গিয়ে তাদেরকে যাবতীয় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, তওহীদের পথে আহ্বান কোরতেন। একদা মদিনা থেকে আগত খাজরাজ গোত্রের একটি কাফেলার সাথে রসুলাল্লাহর সাক্ষাৎ হয় আকাবা নামক স্থানে যা ছিলো মক্কা থেকে আনুমানিক তিন মাইল দূরে। অন্যান্যর মতো মদিনাও (তৎকালীন সময়ে ইয়াছরিব) ছিলো গোত্র-বংশ, দল-উপদলে বিভক্ত এবং হানাহানি-যুদ্ধ, রক্তপাতে নিমজ্জিত। কিছুদিন আগেই মদিনায় দুইটি গোত্র আওস ও খাজরাজের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং সে যুদ্ধে খাজরাজ গোত্র জয়ী হয়। মদিনা থেকে আগত ঐ কাফেলাটি ছিলো খাজরাজ গোত্রের। সেখানে উপস্থিত ছয়জন ব্যক্তি রসুলাল্লাহর সত্য দীনের দাওয়াত গ্রহণ কোরে নেন। এই ছয়জন বিশুদ্ধচিত্ত মো’মেনের দ্বারা পরবর্তীতে মদিনার আওস ও খাজরাজ গোত্রে রসুলাল্লাহর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এসলামের প্রচার শুরু হয় এবং ঐ ছয়জন ছাড়াও আরো কয়েকজন এসলাম গ্রহণ করেন। মক্কায় তখন রসুলাল্লাহর বিরোধিদের দ্বারা মো’মেনদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। মক্কাবাসীদের সত্য দীনকে গ্রহণ কোরে নেবার কোন চিহ্ন তখনও দৃষ্টিগোচর হোচ্ছিল না। অতঃপর নবুয়্যতের দ্বাদশ বর্ষে হজ্ব মওসুমে আওস ও খাজরাজ গোত্রের বারো জন (আগের বারের ৬ জন সহ) পুনরায় মক্কার আকাবায় আসেন এবং রসুলাল্লাহর হাতে বায়াত নেন। এটাই ইতিহাসে প্রথম আকাবার বায়াত নামে পরিচিত। তারা নিুোক্ত বিষয়গুলোর উপর বায়াত নিয়েছিলেন-
১. আমরা এক আল্লাহর এবাদত কোরব এবং তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক কোরব না।
২. চুরি ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবো।
৩. নিজেদের সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা কোরব না।
৪. কারো বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা কোরব না এবং কারো নিন্দাও কোরব না।
৫. যাবতীয় ভালো কাজে রসুলাল্লাহর অনুগত থাকবো।
অতঃপর রসুলাল্লাহ তাদের সাথে একজনকে মদিনায় পাঠালেন এসলামের দাওয়াত সকলের কাছে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাদ বিন মু’আজ এবং উসায়দ বিন হুযায়রের (রা:) মতো মদিনার গোত্রপতিরা ক্রমেই এসলামের বন্ধনে নিজেদের বাঁধতে সক্ষম হোল। গোত্রপতিদের সমর্থন পেয়ে দলে দলে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোতে লাগলো। যাবতীয় বিভেদ-অনৈক্য ভুলে গিয়ে এসলামের ‘এক জাতি-এক নেতা’ মূলমন্ত্রকে সাদরে গ্রহণ কোরে নিলো। রসুলাল্লাহ মক্কা থেকে যাকে মদিনায় দীনি শিক্ষা প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই মুস’আব (রা:) তাঁর প্রচারের কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন কোরে মক্কায় ফিরে আসেন এবং রসুলাল্লাহকে সবকিছু অবহিত করেন। তখনো মক্কা ও তার আশে পাশে চলছে গোত্রে গোত্রে হানাহানি, রক্তপাত, বংশগত বৈষম্য, যুদ্ধ ইত্যাদি। অপরদিকে মদিনায় যে গোত্রগুলো এসলামের বন্ধনে আবদ্ধ হোয়েছে তাদের গোত্রগুলোর পারস্পরিক হানাহানি-যুদ্ধ ইত্যাদি বন্ধ হোয়ে গেছে। কয়েকদিন পূর্বেই যে ছিলো সবচেয়ে বড় শত্র“, এসলামের ঐক্যবন্ধনীর বেষ্টনিতে প্রবেশ কোরে সেই তখন হোয়ে গেছে পরম আপনজন।
অতঃপর মদিনা থেকে তেহাত্তর জন ব্যক্তি হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় আসেন। তাদের অভিপ্রায় ছিলো রসুলাল্লাহকে মদিনায় হেজরত করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। রসুলাল্লাহ তাদের সাথে সাক্ষাৎ কোরলেন এবং তাদের অভিপ্রায় শুনলেন। অতঃপর তাদের কাছে থেকে দুইটি বিষয়ে বায়াত নিলেন-
১. আপনারা কি এসলাম প্রচারে আমাকে পুরোপুরি সাহায্য কোরবেন?
২.আপনারা কি আপনাদের শহরে আমার এবং আমার সঙ্গীদের ঠিক সেরূপ যতœ নেবেন, যেরূপ নেন আপনাদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারবর্গের?
আগন্তুকরা হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেন এবং রসুলাল্লাহও চিরদিন তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার কোরলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর এভাবেই আল্লাহ আপন করুণা গুণে এসলামের জন্য এমন একটি আশ্রয় স্থলের ব্যবস্থা কোরে দিলেন যেখান থেকে এই সত্যদীনের আইন-কানুন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও বিশ্বের জন্য অভূতপূর্ব কল্যাণ ও বরকত বয়ে নিয়ে আসে। যেখানে মক্কা এবং তায়েফের অধিকাংশ নেতৃস্থানীয়রা এই পবিত্র দীন এবং এর পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান কোরেছিল সেখানে আওস ও খাজরাজ গোত্র এটাকে পরম সোহাগভরে নিয়েছিল নিজেদের মাথায় তুলে। এই সত্য দীনকে সাহায্য করার কারণেই তারা ‘আনসার’ উপাধিতে ভূষিত হন।
এরপর থেকে সাহাবিরা রসুলাল্লাহর অনুমিতপ্রাপ্ত হোয়ে মদিনায় হেজরত করা শুরু কোরলেন এবং রসুলাল্লাহও মদিনায় হেজরত কোরলেন। রসুলসহ হেজরত করা সাহাবিদেরকে মদিনার আনসাররা বুকে টেনে নিলো এবং তাদের নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিলো। মক্কার মোহাজের আর মদিনার আনসারদের সমন্বয়ে মদিনাতে মো’মেনরা এমন অখণ্ড শক্তিতে পরিণত হোল যারা স্থাপন কোরেছিলেন পারস্পরিক øেহ-মায়া-ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত। যে মদিনায় নিজ নিজ গোত্রের মধ্যেও হানাহানি-রক্তপাত ঘটতো, যারা সামান্য বিষয়ের জের ধরে বিভক্ত হোয়ে পরস্পরঘাতী ষড়যন্ত্র-হত্যা-রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটাতো তারাই ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হোয়ে উঠলো এক অখণ্ডনীয় মানবীয় শরীরের মতো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শরীরের এক অংশে আঘাত কোরলে যেমন সম্পূর্ণ শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি এই ন্যায় ও সত্যের পথে ঐক্যবদ্ধ মানুষগুলোর একজনের কষ্ট সবাইকে ব্যথিত কোরত, এক জনের সুখ সবাইকে আনন্দিত কোরত। এসলাম পূর্ব আরবে এমন সমাজ ছিলো কল্পনার পরিসীমা থেকেও বহুদূর। এতদিন যে মানুষগুলোর মত-পথ, সিদ্ধান্ত ছিলো আলাদা, যাদের নেতা ছিলো ভিন্ন ভিন্ন, যাদের হাতে আপন সন্তানও নিরাপদ ছিলো না তারাই হোয়ে গেল একে অপরের জীবন-সম্পদের পাহারাদার। তাদের নেতা হোল এক, দীন হোল এক, উদ্দেশ্যও হোয়ে গেলো একটি। ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং আনুগত্যের সংমিশ্রণে তারা এমন একটি বজ্রশক্তিতে পরিণত হোলেন যাদের গড়া ভিত্তির উপর পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিল অর্ধ পৃথিবীর এসলামি সভ্যতা।
এই ঐক্যের ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে জাতি রক্ষা কোরতে পারে নি। গত ১৩০০ বছরের ইতিহাস শুধুই অনৈক্যের ইতিহাস, বিভেদের ইতিহাস। অর্ধপৃথিবী জুড়ে যে মোসলেম নামক জাতিটি মৃত লাশের মতো পড়ে আছে তাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণই হোল ঐক্যহীনতা। সেদিনের ঐ মক্কার আইয়্যামে জাহেলিয়াত আজ পৃথিবীব্যাপী বিস্তার কোরেছে। মোসলেম নামধারী জাতিগুলোও এই নব্য জাহেলিয়াতের বাইরে নেই বরং সত্য কথা বোলতে গেলে এটাই বোলতে হয় যে- অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিগুলোর তুলনায় আজ এই মোসলেম নামধারী জনংখ্যাটিই বেশি অনৈক্য-হানাহানি, মারামারি, বোমাবাজি, যুদ্ধ-রক্তপাতে আপাদমস্তক নিমজ্জিত হোয়ে আছে। রসুলাল্লাহ যে ঐক্যের বন্ধনে মদিনার মোসলেমদেরকে বেঁধেছিলেন এবং যে ঐক্যের উপর ভিত্তি কোরে এই জাতিটি এক সময় অর্ধপৃথিবীর পরাশক্তিতে পরিণত হোয়েছিল সেই ঐক্যের শিক্ষা থেকে আজকের মোসলেম নামধারীরা অনেক দূরে অবস্থান কোরছে।
আমরা বাঙালিরাও এর বাইরে নেই। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই দেশে নিত্য নতুন অনৈক্যের জন্ম হোচ্ছে সেই সাথে বাড়ছে অস্থিতিশীলতা। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ বিভিন্ন দল, মত, পথ, সিদ্ধান্তে বিভক্ত হোয়ে এসলাম পূর্ব আরবদের মতো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত-হত্যা, মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত রোয়েছে। যতোই দিন যাচ্ছে এই অনৈক্যের প্রবণতা ততোই বাড়ছে। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্র্রীয় প্রতিটি অঙ্গনেই আমরা শত-সহস্র মত-পথ-শ্রেণিতে বিভক্ত হোয়ে আছি। পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণে গণতন্ত্র নামক ভারসাম্যহীন সিস্টেমকে গ্রহণ করার দরুণ রাজনৈতিকভাবে আজ আমরা কমপক্ষে ৫০ টির মতো রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হোয়ে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় মেতে আছি। রাজনৈতিক অধিকারের নামে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন কোরে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। বাকি পৃথিবী আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টার হাসি হাসছে। ১৪০০ বছর আগের আরবদের মতো আমরাও বহির্বিশ্বে অসভ্য-বর্বর হিসেবে চিত্রায়িত হোচ্ছি। এভাবে চলতে পারে না। এমতাবস্থায় আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হোল ‘একতা’কে ফিরিয়ে আনা। সেদিন যদি রসুলাল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মদিনাবাসী এবং পরবর্তীতে পুরো আরব জাতি তাদের মধ্যে বিরাজমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে এক জাতি হোয়ে না যেত তাহোলে কোনভাবেই তাদের দ্বারা অর্ধপৃথিবী জয় করা সম্ভব হোত না। বর্বর, অশিক্ষিত, অসভ্য ঐ জাতিটির ঐক্যের সূত্রপাত ঘোটেছিল গুটিকতক বিষয়ে মদিনাবাসীর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যা পূর্বে উল্লেখ কোরেছি। পরবর্তীতে সেই ঐক্য ছড়িয়ে পড়েছিল জীবনের প্রতিটি দিকে, প্রতিটি অঙ্গনে।
ঠিক একইভাবে বর্তমানে আমরা যদি আমাদের সমাজে চলমান এই অনৈক্য, বিভেদ, হানাহানি এক কথায় সর্বরকম অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহোলে এখন ধর্ম, বর্ণ, দল-উপদল, ফেরকা-মাজহাব যার যার ব্যক্তিগত জীবনে রেখে মানুষ হিসাবে, একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে একতাবদ্ধ হোতেই হবে। এটা আমাদের অস্তিত্বের দাবি। এই গুটিকতক বিষয়ের ঐক্যমত্যই একসময় আমাদের চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচয় কোরিয়ে দেবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে – আমরা সকলে এক জাতি, এক মত। আমরা একে অপরের ভাই-বোন। সুতরাং, “আমরা কেউ কারো কোন ক্ষতি কোরবো না। কোন কিছুতে অগ্নিসংযোগ কোরব না, ভাঙচুর কোরব না, হানাহানি কোরব না। আমরা শক্তি প্রদর্শনের মিথ্যা নেশায় আত্মমগ্ন হোয়ে আমাদের দুর্বল ভাইদের উপর আক্রমণ চালাবো না। যে যেই দলই কোরি না কেন দল-মতকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে মানবতার কল্যাণে আমাদেরকে এই ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে একতাবদ্ধ হোতে হবে। অন্তত আমরা নিজেদের পাড়ায়, নিজেদের মহল্লায়, নিজেদের গ্রামে, নিজেদের থানা-জেলায় একতাবদ্ধ হোয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরে মডেল হবো।”
এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে – ঐক্য অনৈক্যের উপর সর্বদাই বিজয় লাভ কোরবে। কাজেই সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে বিরাজিত যাবতীয় অনৈক্যের মূলোৎপাটন ঘোটিয়ে শান্তি-সমৃদ্ধপূর্ণ সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি গড়ে তোলার। মনে রাখতে হবে আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ দান কোরুন। আমীন।
এমনই অস্থিতিশীল পরিবেশে আরবদের মাঝে আগমন হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সমস্ত পৃথিবীর জন্য আল্লাহর প্রেরিত বিশেষ রহমত মোহাম্মদ (দ:)। তাঁর দায়িত্ব ছিলো মানবজাতির মধ্যকার যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, অশান্তি নির্মূল কোরে শান্তি স্থাপন করার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- নবুয়্যত পাবার মুহূর্ত থেকে ওফাত পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তিনি এই একটি কাজেই ব্যয় কোরেছেন। তাঁর নবী জীবনের দীর্ঘ ১৩ টি বছর কেটেছে জন্মভূমি মক্কার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে। তিনি চেষ্টা কোরেছিলেন মক্কার শতধা বিচ্ছিন্ন গোত্রগুলিকে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই বন্ধ কোরে এক সূত্রে গাঁথতে; চেষ্টা কোরেছিলেন যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, নিজেরা নিজেরা কৃত যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ কোরে এক সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, শান্তির পথে নিয়ে আসতে। কিন্তু মক্কা তাঁর আহ্বান শোনে নি। তারা রসুলাল্লাহর এই শান্তির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান কোরে আগের মতোই ফেতনা-ফাসাদে নিমজ্জিত হোয়ে থাকলো।
ইতিহাসে পাই – রসুলাল্লাহ তাঁর আহ্বান এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ রাখেন নি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই মানবজাতির ঐক্যের পথ, ভ্রাতৃত্বের পথ এবং সত্যের পথের দাওয়াত পেশ কোরেছেন। শত নির্যাতন, আঘাত, বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে পিছু হটেন নি।
আরবের ঐতিহ্যগত কারণে নিষিদ্ধ চারটি মাস তারা যাবতীয় যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ রাখতো। সেই সময় চিরশত্র“কে হাতের কাছে পেলেও তাকে কেউ আঘাত কোরত না। এই সময়টিতে তারা হজ্ব ও ওমরা পালন কোরত। দূর দূরান্ত থেকে হজ্বের কাফেলা আসতো মদিনায়। এই সুযোগে রসুলাল্লাহ প্রতিটি কাফেলাতে গিয়ে তাদেরকে যাবতীয় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, তওহীদের পথে আহ্বান কোরতেন। একদা মদিনা থেকে আগত খাজরাজ গোত্রের একটি কাফেলার সাথে রসুলাল্লাহর সাক্ষাৎ হয় আকাবা নামক স্থানে যা ছিলো মক্কা থেকে আনুমানিক তিন মাইল দূরে। অন্যান্যর মতো মদিনাও (তৎকালীন সময়ে ইয়াছরিব) ছিলো গোত্র-বংশ, দল-উপদলে বিভক্ত এবং হানাহানি-যুদ্ধ, রক্তপাতে নিমজ্জিত। কিছুদিন আগেই মদিনায় দুইটি গোত্র আওস ও খাজরাজের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং সে যুদ্ধে খাজরাজ গোত্র জয়ী হয়। মদিনা থেকে আগত ঐ কাফেলাটি ছিলো খাজরাজ গোত্রের। সেখানে উপস্থিত ছয়জন ব্যক্তি রসুলাল্লাহর সত্য দীনের দাওয়াত গ্রহণ কোরে নেন। এই ছয়জন বিশুদ্ধচিত্ত মো’মেনের দ্বারা পরবর্তীতে মদিনার আওস ও খাজরাজ গোত্রে রসুলাল্লাহর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এসলামের প্রচার শুরু হয় এবং ঐ ছয়জন ছাড়াও আরো কয়েকজন এসলাম গ্রহণ করেন। মক্কায় তখন রসুলাল্লাহর বিরোধিদের দ্বারা মো’মেনদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। মক্কাবাসীদের সত্য দীনকে গ্রহণ কোরে নেবার কোন চিহ্ন তখনও দৃষ্টিগোচর হোচ্ছিল না। অতঃপর নবুয়্যতের দ্বাদশ বর্ষে হজ্ব মওসুমে আওস ও খাজরাজ গোত্রের বারো জন (আগের বারের ৬ জন সহ) পুনরায় মক্কার আকাবায় আসেন এবং রসুলাল্লাহর হাতে বায়াত নেন। এটাই ইতিহাসে প্রথম আকাবার বায়াত নামে পরিচিত। তারা নিুোক্ত বিষয়গুলোর উপর বায়াত নিয়েছিলেন-
১. আমরা এক আল্লাহর এবাদত কোরব এবং তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক কোরব না।
২. চুরি ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবো।
৩. নিজেদের সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা কোরব না।
৪. কারো বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা কোরব না এবং কারো নিন্দাও কোরব না।
৫. যাবতীয় ভালো কাজে রসুলাল্লাহর অনুগত থাকবো।
অতঃপর রসুলাল্লাহ তাদের সাথে একজনকে মদিনায় পাঠালেন এসলামের দাওয়াত সকলের কাছে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাদ বিন মু’আজ এবং উসায়দ বিন হুযায়রের (রা:) মতো মদিনার গোত্রপতিরা ক্রমেই এসলামের বন্ধনে নিজেদের বাঁধতে সক্ষম হোল। গোত্রপতিদের সমর্থন পেয়ে দলে দলে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোতে লাগলো। যাবতীয় বিভেদ-অনৈক্য ভুলে গিয়ে এসলামের ‘এক জাতি-এক নেতা’ মূলমন্ত্রকে সাদরে গ্রহণ কোরে নিলো। রসুলাল্লাহ মক্কা থেকে যাকে মদিনায় দীনি শিক্ষা প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই মুস’আব (রা:) তাঁর প্রচারের কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন কোরে মক্কায় ফিরে আসেন এবং রসুলাল্লাহকে সবকিছু অবহিত করেন। তখনো মক্কা ও তার আশে পাশে চলছে গোত্রে গোত্রে হানাহানি, রক্তপাত, বংশগত বৈষম্য, যুদ্ধ ইত্যাদি। অপরদিকে মদিনায় যে গোত্রগুলো এসলামের বন্ধনে আবদ্ধ হোয়েছে তাদের গোত্রগুলোর পারস্পরিক হানাহানি-যুদ্ধ ইত্যাদি বন্ধ হোয়ে গেছে। কয়েকদিন পূর্বেই যে ছিলো সবচেয়ে বড় শত্র“, এসলামের ঐক্যবন্ধনীর বেষ্টনিতে প্রবেশ কোরে সেই তখন হোয়ে গেছে পরম আপনজন।
অতঃপর মদিনা থেকে তেহাত্তর জন ব্যক্তি হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় আসেন। তাদের অভিপ্রায় ছিলো রসুলাল্লাহকে মদিনায় হেজরত করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। রসুলাল্লাহ তাদের সাথে সাক্ষাৎ কোরলেন এবং তাদের অভিপ্রায় শুনলেন। অতঃপর তাদের কাছে থেকে দুইটি বিষয়ে বায়াত নিলেন-
১. আপনারা কি এসলাম প্রচারে আমাকে পুরোপুরি সাহায্য কোরবেন?
২.আপনারা কি আপনাদের শহরে আমার এবং আমার সঙ্গীদের ঠিক সেরূপ যতœ নেবেন, যেরূপ নেন আপনাদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারবর্গের?
আগন্তুকরা হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেন এবং রসুলাল্লাহও চিরদিন তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার কোরলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর এভাবেই আল্লাহ আপন করুণা গুণে এসলামের জন্য এমন একটি আশ্রয় স্থলের ব্যবস্থা কোরে দিলেন যেখান থেকে এই সত্যদীনের আইন-কানুন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও বিশ্বের জন্য অভূতপূর্ব কল্যাণ ও বরকত বয়ে নিয়ে আসে। যেখানে মক্কা এবং তায়েফের অধিকাংশ নেতৃস্থানীয়রা এই পবিত্র দীন এবং এর পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান কোরেছিল সেখানে আওস ও খাজরাজ গোত্র এটাকে পরম সোহাগভরে নিয়েছিল নিজেদের মাথায় তুলে। এই সত্য দীনকে সাহায্য করার কারণেই তারা ‘আনসার’ উপাধিতে ভূষিত হন।
এরপর থেকে সাহাবিরা রসুলাল্লাহর অনুমিতপ্রাপ্ত হোয়ে মদিনায় হেজরত করা শুরু কোরলেন এবং রসুলাল্লাহও মদিনায় হেজরত কোরলেন। রসুলসহ হেজরত করা সাহাবিদেরকে মদিনার আনসাররা বুকে টেনে নিলো এবং তাদের নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিলো। মক্কার মোহাজের আর মদিনার আনসারদের সমন্বয়ে মদিনাতে মো’মেনরা এমন অখণ্ড শক্তিতে পরিণত হোল যারা স্থাপন কোরেছিলেন পারস্পরিক øেহ-মায়া-ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত। যে মদিনায় নিজ নিজ গোত্রের মধ্যেও হানাহানি-রক্তপাত ঘটতো, যারা সামান্য বিষয়ের জের ধরে বিভক্ত হোয়ে পরস্পরঘাতী ষড়যন্ত্র-হত্যা-রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটাতো তারাই ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হোয়ে উঠলো এক অখণ্ডনীয় মানবীয় শরীরের মতো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শরীরের এক অংশে আঘাত কোরলে যেমন সম্পূর্ণ শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি এই ন্যায় ও সত্যের পথে ঐক্যবদ্ধ মানুষগুলোর একজনের কষ্ট সবাইকে ব্যথিত কোরত, এক জনের সুখ সবাইকে আনন্দিত কোরত। এসলাম পূর্ব আরবে এমন সমাজ ছিলো কল্পনার পরিসীমা থেকেও বহুদূর। এতদিন যে মানুষগুলোর মত-পথ, সিদ্ধান্ত ছিলো আলাদা, যাদের নেতা ছিলো ভিন্ন ভিন্ন, যাদের হাতে আপন সন্তানও নিরাপদ ছিলো না তারাই হোয়ে গেল একে অপরের জীবন-সম্পদের পাহারাদার। তাদের নেতা হোল এক, দীন হোল এক, উদ্দেশ্যও হোয়ে গেলো একটি। ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং আনুগত্যের সংমিশ্রণে তারা এমন একটি বজ্রশক্তিতে পরিণত হোলেন যাদের গড়া ভিত্তির উপর পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিল অর্ধ পৃথিবীর এসলামি সভ্যতা।
এই ঐক্যের ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে জাতি রক্ষা কোরতে পারে নি। গত ১৩০০ বছরের ইতিহাস শুধুই অনৈক্যের ইতিহাস, বিভেদের ইতিহাস। অর্ধপৃথিবী জুড়ে যে মোসলেম নামক জাতিটি মৃত লাশের মতো পড়ে আছে তাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণই হোল ঐক্যহীনতা। সেদিনের ঐ মক্কার আইয়্যামে জাহেলিয়াত আজ পৃথিবীব্যাপী বিস্তার কোরেছে। মোসলেম নামধারী জাতিগুলোও এই নব্য জাহেলিয়াতের বাইরে নেই বরং সত্য কথা বোলতে গেলে এটাই বোলতে হয় যে- অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিগুলোর তুলনায় আজ এই মোসলেম নামধারী জনংখ্যাটিই বেশি অনৈক্য-হানাহানি, মারামারি, বোমাবাজি, যুদ্ধ-রক্তপাতে আপাদমস্তক নিমজ্জিত হোয়ে আছে। রসুলাল্লাহ যে ঐক্যের বন্ধনে মদিনার মোসলেমদেরকে বেঁধেছিলেন এবং যে ঐক্যের উপর ভিত্তি কোরে এই জাতিটি এক সময় অর্ধপৃথিবীর পরাশক্তিতে পরিণত হোয়েছিল সেই ঐক্যের শিক্ষা থেকে আজকের মোসলেম নামধারীরা অনেক দূরে অবস্থান কোরছে।
আমরা বাঙালিরাও এর বাইরে নেই। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই দেশে নিত্য নতুন অনৈক্যের জন্ম হোচ্ছে সেই সাথে বাড়ছে অস্থিতিশীলতা। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ বিভিন্ন দল, মত, পথ, সিদ্ধান্তে বিভক্ত হোয়ে এসলাম পূর্ব আরবদের মতো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত-হত্যা, মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত রোয়েছে। যতোই দিন যাচ্ছে এই অনৈক্যের প্রবণতা ততোই বাড়ছে। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্র্রীয় প্রতিটি অঙ্গনেই আমরা শত-সহস্র মত-পথ-শ্রেণিতে বিভক্ত হোয়ে আছি। পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণে গণতন্ত্র নামক ভারসাম্যহীন সিস্টেমকে গ্রহণ করার দরুণ রাজনৈতিকভাবে আজ আমরা কমপক্ষে ৫০ টির মতো রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হোয়ে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় মেতে আছি। রাজনৈতিক অধিকারের নামে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন কোরে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। বাকি পৃথিবী আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টার হাসি হাসছে। ১৪০০ বছর আগের আরবদের মতো আমরাও বহির্বিশ্বে অসভ্য-বর্বর হিসেবে চিত্রায়িত হোচ্ছি। এভাবে চলতে পারে না। এমতাবস্থায় আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হোল ‘একতা’কে ফিরিয়ে আনা। সেদিন যদি রসুলাল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মদিনাবাসী এবং পরবর্তীতে পুরো আরব জাতি তাদের মধ্যে বিরাজমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে এক জাতি হোয়ে না যেত তাহোলে কোনভাবেই তাদের দ্বারা অর্ধপৃথিবী জয় করা সম্ভব হোত না। বর্বর, অশিক্ষিত, অসভ্য ঐ জাতিটির ঐক্যের সূত্রপাত ঘোটেছিল গুটিকতক বিষয়ে মদিনাবাসীর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যা পূর্বে উল্লেখ কোরেছি। পরবর্তীতে সেই ঐক্য ছড়িয়ে পড়েছিল জীবনের প্রতিটি দিকে, প্রতিটি অঙ্গনে।
ঠিক একইভাবে বর্তমানে আমরা যদি আমাদের সমাজে চলমান এই অনৈক্য, বিভেদ, হানাহানি এক কথায় সর্বরকম অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহোলে এখন ধর্ম, বর্ণ, দল-উপদল, ফেরকা-মাজহাব যার যার ব্যক্তিগত জীবনে রেখে মানুষ হিসাবে, একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে একতাবদ্ধ হোতেই হবে। এটা আমাদের অস্তিত্বের দাবি। এই গুটিকতক বিষয়ের ঐক্যমত্যই একসময় আমাদের চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচয় কোরিয়ে দেবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে – আমরা সকলে এক জাতি, এক মত। আমরা একে অপরের ভাই-বোন। সুতরাং, “আমরা কেউ কারো কোন ক্ষতি কোরবো না। কোন কিছুতে অগ্নিসংযোগ কোরব না, ভাঙচুর কোরব না, হানাহানি কোরব না। আমরা শক্তি প্রদর্শনের মিথ্যা নেশায় আত্মমগ্ন হোয়ে আমাদের দুর্বল ভাইদের উপর আক্রমণ চালাবো না। যে যেই দলই কোরি না কেন দল-মতকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে মানবতার কল্যাণে আমাদেরকে এই ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে একতাবদ্ধ হোতে হবে। অন্তত আমরা নিজেদের পাড়ায়, নিজেদের মহল্লায়, নিজেদের গ্রামে, নিজেদের থানা-জেলায় একতাবদ্ধ হোয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরে মডেল হবো।”
এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে – ঐক্য অনৈক্যের উপর সর্বদাই বিজয় লাভ কোরবে। কাজেই সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে বিরাজিত যাবতীয় অনৈক্যের মূলোৎপাটন ঘোটিয়ে শান্তি-সমৃদ্ধপূর্ণ সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি গড়ে তোলার। মনে রাখতে হবে আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ দান কোরুন। আমীন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
একনিষ্ঠ অনুগত ০১/০৯/২০১৪
এসলাম, মোমেন, মোসলেম... শব্দগুলো কি ইচ্ছাকৃত লেখা।। ইসলাম, মু'মিন, মুসলিম এমন ই তো লেখা উত্তম মনে করি।