www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কবির পুরস্কার

সারা জীবনে পুরস্কার যত পেয়েছি সেগুলো ঘরের ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রেখেছিলাম, তবে পুরস্কারের লোভ বার বার যত বেড়েছে কর্মের মধ্যেই ডুব দিয়েছি ততই । গভীর থেকে গভীরে আরও ভাল আরও ভাল উৎকর্সতার লক্ষ্যে। ভাল কাজ করার লোভ আমার চিরকালের । যে কাজ আমায় শিখেয়েছে টাকা পয়সার থেকেও মূল্যবান হল কর্ম । যে কর্ম আমায় সময় কে পিছনে ফেলতে শিখিয়েছে । আমি যখন কবিতা লিখতে শুরু করি সে সময় টা যে আমার কিংবা কবি কুলের অনুকুলে ছিল বলা চলেনা । রাতের পর রাত জেগেছি কেবল দু লাইন কবিতা সংযোজন করার জন্য । মা প্রতিবারেই প্রতিবাদ করত । জিবন ধারণের কোন উপযুক্ত কাজ আমি করতাম না বলে । কবিতা যে সে সময় সকলে পড়ত তা কিন্তু নয় । সময় টা সাহিত্যের প্রতি যেন অবিচার করছে বলেই আমার মনে হত । কেউ কেউ আমাকে সতর্ক করার জন্য মনে করিয়ে দিত কবি সুকান্তের কথা ।
কমুনিষ্ট প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন কবি । লেখা কবিতা সর্বদাই অসহায় মানুষের কথা বলত । শ্রমিক শ্রেনীর বৈষ্যমের কথা বলত । সে সময় বাঙলায় বামপন্থী শাষণ ব্যবস্থার সরকার বাংলার জনগন কে উদ্ভুদ্ধ করতে সুকান্তের কবিতাকে ব্যবহার করেছিল সুনিপুন ভাবে । গ্রামের প্রতিটি ক্লাবে সুকান্তের কবিতার বই পাওয়া যেত । যে কোন আবৃত্তির প্রতিযোগিতায় সুকান্তের কবিতা পাঠ থাকা ছিল নিশ্চতই । অথচ সেই কবিকেই অকালে চলে যেতে হয়েছে , এ বিশ্ব থেকে প্রায় নিরবে ।

মা আমাকে অভয় দিতেন না , উনি কখনই কবিতার ধার ধারতেন না , কেবল বলতেন নিজের জীবন টা এভাবে নষ্ট করিস না । কবিতা লিখলে সংসার চলবে না , একটা কাজ যোগার কর , ঘরে বৌ নিয়ে আয় এই বয়সে আমি আর পাড়ছি না , তাছাড়া আমি মরে গেলে কে তোকে দেখবে ? অথচ মাই আমাকে বলতেন জিবনে এমন কাজ করা উচিৎ যা কিনা কর্মে রুপান্তরিত হবে এবং সেই কর্মই ধর্মে রুপান্তরিত হবে ।
আর আমি দৃঢ় সংকল্পে মেনে নিয়েছিলাম লেখালিখি করাই আমার কাজ, কবিতা সৃষ্টি করাই আমার কর্ম এবং তার দ্বারাই এ জগৎ সংসারে মানব জাতীর কল্যান সাধিত হয়, সেটাই আমার ধর্ম ।

আমাদের বাড়ি গ্রামের ভিতর ছিল । খানিক টা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে নামতে হত । হিমালয়ের কোলে এই বাংলার দার্জিলিং শহর থেকে কিছুটা দুরে , যারা এখানে বেড়াতে এসেছেন তারা খানিক টা অনুমান করতে পারবেন ঘুম স্টেশনের কাছে , মানে পাংখা বাড়ির রাস্থা দিয়ে এসে হিলকার্ট রোড ধরে এলে , ঘুম শহরে পৌছনোর আগের শেষ বাকটায় নামতে হত । ব্রিটিশ রোপ ওয়ের কাছ টাতে , সেখান থেকে দুতেরিয়া ফরেষ্টের পাশ ধরে হনুমান মন্দির হয়ে রেনবো ফলস্ ইন্দ্রানির পাশেই ছিল আমাদের গ্রামের বাড়ি । তা প্রায় অনেকটা পথ , পায়ে হেটে পাহাড়ি রাস্তায় এইখানে পৌছতে ঘন্টা খানেক তো লেগেই যেত ।

এখন এই বার্ধক্যে পৌছে এই রাস্তা দিয়ে চলতে বড়ই কষ্ট হচ্ছে, খানিক টা ক্লান্তি আর অবসন্নতা গ্রাস করেছে আমাকে , তা কম পথ তো পেড়িয়ে আসিনি আমি, সেই সূদুর দক্ষিন ভারত থেকে,তা প্রায় চার দিন, প্রথমে কন্যাকুমারী থেকে ইগমোর ষ্টেশন এই এগার ঘন্টার পথ পৌছতেই লেগে গেল প্রায় কুড়ি ঘন্টা তারপর ভিল্লুপুরাম আবার তিরুপতি মেন তারপর কাডপাতি আবার হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি সেখান থেকে ঘুম ।
নিঊ জলপাইগুড়িতেই পৌছতে পৌছতে সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা বেজে গেল । কোন মতে একটা গাড়ি নিয়ে যখন ব্রিটিশ রোপওয়ের কাছে নামলাম এখন মাঝরাত বলা চলে, তবে আজ আসার সময় পাংখা বাড়ির রাস্তা ধরে আসেনি চালক, বলেছিল হিলকার্ট রোড এখন অনেক ভালো রাতের অন্ধকারে চলা যায় , তবে কুয়াশা আর মেঘ যদি না রাস্তায় এসে পড়ে ।
সত্যিই সড়ক ব্যবস্থা এখন দেখার মতো , বেশ চওড়া দুলেনের রাস্তার মাঝ খান দিয়ে আলোক স্তম্ভ আর আলোর রোশনাইয়ে এ পাহাড়ি রাস্তাটা কেই মনে হচ্ছিল স্বর্গপথ । আমি যত স্বর্গের কাছাকাছি পৌছছিলাম আমার মনে জাগছিল কত কথা, নেলসন মেন্ডেলার কথা, মার্টিন লুথার কিং এর কথা, তারা সারা জীবন কিভাবে গান্ধীজির পথ অনুসরন করে রাষ্ট্রের কল্যানে মানব সেবায় জীবন অতিবাহিত করে ছিলেন, আবার শান্তির জন্য মেন্ডেলার কিংবা ডেসমন্ড টুডুর নোবেল পাওয়া যেমন আনন্দ আমায় দিয়েছে, তেমনি গুরু মহাত্মা কেন যেন ব্রাত্য হয়ে ছিলেন এই সুইডেন বাসিদের কাছে ব্রিটিশ রাজনৈতিক কারনে , আমাকে ভাবিয়েছে তখনকার শান্তি পরিচালন কমিটি কেন এক বারও গান্ধীজি কে নির্বাচন করতে পারেন নি বিশ্ব শান্তির নোবেল প্রাপক হিসাবে । যা হোক সে বিশ্ময় ঘোর যতটা আজও আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল তার থেকে বোধ হয় আজ ক্লান্তির রেশ একটু বেশিই ছিল , আমার কোন কথা বলার ইচ্ছা শক্তি ছিল না কেবল ঘুম ঘোর নিয়ে ক্লান্তিতে আধো তন্দ্রায় কেটেছে আমার এ পথ ।
গাড়ির চালক আর তার সঙ্গী ছোকরার কথা বার্তা আমার কানে আসছিল , আমাকে নিয়ে ওরা যথেষ্ঠ যে কৌতহলি ছিল তা আমি সে সময়ই টের পেয়েছিলাম ।
সঙ্গীটি যখন মানে সহ চালক তার চালককে প্রশ্ন করছিল খুবই আস্তে আস্তে এবং ফিস ফিসানি সুরে ।
এই লোকটাকে কি হোটেল মাউন্ট এভারেষ্টে ছাড়ব আমরা , চালক বললেছিল দেখছিস না বুড়োটার অবস্থা , কেমন নোংরা নোংরা পোশাক , আধো জট পাকানো তেলহীন রুক্ষ লম্বা লম্বা চুল দাড়ি, সাথে একটা ট্রেকিং এর ছেড়া ব্যাগ আর স্পোর্টস সু , একে ওই চার তারা হোটেলে ঢুকতে দেবে নাকি ?
সহ চালক টি বলেছিল এই আধ পাগলা বুড়োটার টাকা কড়ি আছে বলেই তো মনে হয় , দেখলে না আমাদের কেমন আসার জন্য হাজার টাকা বকসিশ্ দিল তাও আবার অগ্রিম ।
চালক উত্তরে বলেছিল - ওসব কথা বাদ দে এই লোকটি যেখানে নামতে চায় নামিয়ে দেব, এখন চুপ কর, বেটা পাগলা বুড়ো যদি শুনতে পায় কি ভাববে কে জানে ।
আর আমি কেবল কবি গুরুর সেই অমোঘ বাণী - ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভূ , মনে মনে শ্মরণ করতে করতে তন্দ্রা থেকে ঘুমের পথে এগিয়ে চলছিলাম ।

এই রাস্তাটার কোন বিকল্প রাস্তা এখনও হলো না, অবশ্য হওয়াটা ও স্বাভাবিক নয়, এক দিকে খাড়াই পাহাড় আর অন্য দিকে খাদ, রাস্তাটা খুবই সংকীর্ণ কোথাও কোথাও ধস নেমে পরিসর দু ফুট মতো হবে, এখন খুব অন্ধকার তাও নয়, আবছা অন্ধকার সপ্তমির চাদ আছে মাথার উপর, তবে মেঘেদের সাথে তার লুকোচুরি লেগেই আছে, আর রিসর্টে যাওয়ার পথটা ছেড়ে আসার পর থেকে দেখছি কুয়াশা যেন ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারছিনা। পাহাড়ের গায়ে হাত রেখে রেখে ক্রমশ নামছি খুব সতর্ক ভাবে । এখানে রাস্তার ঢাল প্রায় তিরিশ ডিগ্রী মতো হবে, তার উপড় পায়ের নিচে কোনোটা বড় আবার কোনোটা খুব ছোট ছোট নুড়ি পাথর পড়ছে । একটু ভুল হলেই বাম দিকের গভীর খাদে পরতে হতে পারে ।
এখন খুব ঠান্ডা লাগছে আমার, হাত পা গুলো যেন আরষ্ট হয়ে আসছে । শরীর টা মাঝে মধ্যেই ঝাকুনি দিয়ে কেপে কেপে উঠছে । এরকম অবস্থা যা আমার শারীরিক কিংবা মানসিকতার উর্ধে উঠে অর্থাৎ আমার ব্যক্তিত্ব কে চরমতার সাথে লড়তে শেখাচ্ছে। প্রকৃতি যেন আমার জন্যই তৈরি ছিল আমাকে স্বাগত জানাতে । এই প্রকৃতির সংগে আমার সম্পর্ক জন্ম থেকেই । আমার শৈশব, আমার যৌবন, আমায় আত্মবিশ্বাস দিয়ে রেখেছিল । আমার আশৈশব ব্যবহার ঢেকে রেখেছে এই প্রকৃতির সে উজ্জল সৌন্দর্য্যতাকে, কেন জানিনা আমার মনে হয় বার বার এই প্রকৃতিকে আমার মায়ের আচল ছাড়া কোন বিশ্লেষণ বিচার করতে পারিনি এখনো । আমি যাকে খুবই ভালবাসি, যার কাছ থেকে শিখতে চেয়েছি বার বার, যার একনিষ্ট ভক্ত আমি, যার প্রতি উপভোগ করতে শিখেছি ভালবাসার সাথে সন্মান, অন্যান্য মানসিক বিকাশে সাথে পরিবেশ যেভাবে ওতপ্রোত ভাবে জরিয়ে থাকে । আমি বার বার উত্তেজিত হয়েছি এই ভেবে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্যতায় তার নিজস্বতায় এবং তার পরিবেশের উপাদানের সাথে একাত্ম হয়ে থাকার যে পরিচয় বহন করে । আমি সর্বদাই তার কাছে শিক্ষার্থী থেকেছি । জিবনের চড়াই উৎরাই এখনও যে সম্পূর্ন হয় নি,আমিও যে এই প্রকৃতির একটি ঊপাদান, আমি একজন কবি, আমি একজন রাজনৈতিক সত্তা । একজন সাধারণ ছেলে থেকে একজন কবি হয়ে ওঠা সেখান থেকে সমাজ জীবনের আদর্শ, নীতি কে ভর করে মানুষের ভাল করতে চেয়ে রাজনীতি কে আকড়ে ধরা, নিজের জীবনে নিজের আলোকপাতের ভাবনা সে কথাই আমার অচেতন হতে বসা মনে বার বার উকি দিচ্ছে ।

অনেকটা সময় এভাবে চলতে চলতে অবশেষে আমার গ্রামে এসে পৌছলাম । ইন্দ্রানী ঝর্নার জলের শব্দ এখন শুনতে পাচ্ছি । মনে হচ্ছে মা যেন আমায় কাছে ডাকছে আয় খোকা খানিক টা তৃষ্ণা মিটিয়ে নে। গরম দিনে ঝর্নার জলে শীতল স্নানের কথা ভেবে খানিক টা শরীরে রোমাঞ্চ অনুভব করছি । কিন্তু তার পরও এত ঠান্ডা লাগছে যে সোজা হয়ে দাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে । গ্রামে বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে হল । নিজের বাড়ির পথ চিনতে পারছি না । নিজেকে বড় অসহায় লাগছে তবে মনের শক্তি কিছুতেই কমতে দেব না এরকম একটা ভাবনা মনের ভিতর কাজ করে চলেছে ।
আশেপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, তাছাড়া এই রাতে অর্থাৎ রাত প্রায় তিন প্রহরে কে বা জেগে থাকবে, এমন কি কুকুর গুলোও এই শীতে কোন নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে বলেই আমার মনে হয় ।
কেবল ঝর্নার জলের ডাক আর হালকা কুয়াশায় আবছা দুটো একটা বাড়ি ছাড়া নজরে কিছুই ঠাহর করতে পারছিনা । আর আমার বিস্মৃতি হয়ে যাওয়া সকল লোকজন যদিও বা সামনে এসে পড়ে তাহলেই বা তাদের চিনব কি ভাবে, একথা ভেবেও মনে সংশয় দানা বাধতে থাকল । এসব কথা ভাবতে ভাবতে কোন মতে হাতরে হাতরে মনের জোরে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করলাম । কিন্তু কোন মতে আমার বাড়ি আমি খুজে পাচ্ছি না । বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর একটা দরজার সামনে এসে পৌছ্লাম । পাথরের চাই দিয়ে ঘেরা পাচিলের মধ্যে একটা কাঠের দরজা বেশ পূরানো তবে বেশ শক্ত পক্ত, বেশ মোটা লোহার কড়া লাগানো, ভিতর থেকে বন্ধ করা । এই দরজা টাকে আমার খুব চেনা চেনা মনে হল । তবে নিশ্চিত হতে পারছিনা । আর শরীরের অবস্থা এখন ক্লান্তিতে আর খিদেতে মিশে এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, আমার ভাবনা চিন্তার জন্য কোন সময় শরীর আর বহন করতে পারছে না । শরীরের সকল স্নায়ু আর দুটো চোখ জুরে কেবল ঘুম নেমে আসছে ।

তবে বাড়ির ভিতরের লোকজন যে এখনও জেগে আছে সে বিষয়ে নিশ্চিৎ হতে পেরেছি । বাড়ির ভিতর থেকে বেশ কিছু মহিলার হাল্কা হাসি ঠাট্টার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি । আমি জোরে ডাকার চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু কিছুতেই গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না । অগ্যতা দরজার কড়া নেড়ে ভিতরের মানুষ দের জানান দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম । বেশ কয়েকবার এভাবে কড়া নাড়ার পর ভিতরের আওয়াজ থেমে গেল । একেবারে নিশ্চুপ , শুধুই যেন সদা জাগ্রত সে ঝর্না ছাড়া এখন সকল রাত জাগা পাখিও তাদের কন্ঠস্বর থামিয়ে জানতে চাইছে, এ সময়ে এ অবাঞ্ছিত আমি কে ?

আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস খুব ঘন হতে শুরু করেছে, আমার শরীর সামনের ঝুকে আসছে , প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা আমার কমতে শুরু করেছে ।আমার দুটো চোখ বুজে আসছে। হঠাৎ ভিতর থেকে দরজার খিল খোলার শব্দে আমি খানিকটা সম্বিৎ ফিরে পেলাম । দরজা খুলে যে লোকটি আমার সামনে দাড়াল আমি তাকে চেনার চেষ্টা করলাম কিন্তু চিনতে পারলাম না । বয়সের ভারে লোকটি কুজো হয়ে গেছে, শরীর সোজা করতে পারছে না । ঘার উচু করে কোন মতে হ্যারিকেন টা আমার মুখের সামনে ধরে কাপা কাপা গলায় বিশ্ময়ের সুরে প্রশ্ন করল।
রামবাবু আপনি ?
আমি বললাম -একমাত্র আপনি তাহলে আমাকে চিনিতে পেরেছেন ?
কেন চিনতে পারবোনা বাবু, আমার এ বয়সে এদ্যাশ ও দ্যাশ মিলাইয়া আমি নব্বুই টি বর্ষা দ্যাখসি , তোমাকে ছোট বেলা থ্যেইকা এই কোলে কইরা মানুষ করসি । তুমি আমায় চিনতে পারস্যো ... বাবু ?
আমি আমার স্মৃতির কোঠরে আঘাত আঘাত করে মুখ দিয়ে একাটাই শব্দ অতি কষ্টে খুব ধীরে ঊচ্চারণ করলাম - ফিদা চাচা !
ফিদা চাচা - একি হাল করেসো রামবাবু !
আমি- আমি খুব ক্লান্ত চাচা , কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে । আমায় কিছু খাবার আর শোবার ব্যবস্থা করে দাও তারাতারি , আমি আর দাড়াতে পারছিনা ।
ফিদা চাচা - ভিতরে আইসো তারাতারি বলে দরজার বাম দিকে অর্থাৎ আমার ডান দিকে দাড়িয়ে ডান হাতে হ্যারিকেন টা ধরলেন ।
আমি কোন মতে দড়জার গায়ে হাত দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম ।
ফিদা চাচা দড়জা বন্ধ করতেই , উপর থেকে বন্ধ ঘরের ভিতর হতে মহিলা কন্ঠের বেশ জোর গলায় প্রশ্ন ।
হ্যা রে ফিরদৌস , দড়জায় এত রাতে কে এসছিল রে । এই শালা পুলিস ঢ্যামনা গুলো এত রাতেও এসেছিল । ও শালারা আমাদের ধান্দা বন্ধ করে ছাড়বে দেখছি । শালাদের জালায় সব লোকাল কাষ্টমার তো শিলিগুড়ি চলে যাচ্ছে ।
ফিদা চাচা - না কমলা মাসি , তেনারা আসেন নাই । আমার বড় ভাইয়ের পোলা আইসে । তুমি তারে চিনবা না । আর ও এখন মোর ঘরে থাকব্যানে । তুমি চিন্তা কইরো না। তোমাগো কাম চালাইয়া যাও ।
এবার একটা মেয়েলি কন্ঠে তামাসার সুরে একটি মেয়ে বলে উঠল -
এই দ্যাখ দ্যাখ ঢ্যামনা বুড়োর টারে একটু দেখ, কতবার বলেছি শালার বুড়ো এই শীতে কখন যে ট্যেসে যাবি জানতেও পারবো না , মাঝে মধ্যে ঘরে খদ্দের না থাকলে এসে আমার কাছে থাকতে বলিছি । না হয় রাতে একটু জরিয়ে ধরে সোহাগ করতাম । তা শালার বুড়ো এ ঘর মুখো হয় না । তা এত কাল গিয়ে এখন এক ঘরে পুরুষে পুরুষে রাত কাটাবি । নাকি শালার বুড়োর এখন ওই ছেলেরা ছেলেরা আর মেয়েরা করে কি যেন বলে , আরে বলনারে শ্যামলি , হ্যা মনে পড়েছে সমকাম জেগেছে ।
ফিদা চাচা এবার তিতিক্ষার সুরে চেচিয়ে উঠে বলল - হ্যারে ঢ্যামনি তুই শুই পাওস নাই , কইলাম না আমার বড় ভাইয়ের পোলা আইসে ।
তর্ বাপের থ্যাইকাও বড় । এহন তোর এই কথ্যা গুলা না বললেই চলতাছিল না তর্ কি লাজ সরম্ সবটুকুই গ্যাছে । আরে আল্লারেও তো একটু ডরান লাগে না কি ?
সেই মেয়েটি আবার বলে উঠল - আরে যে বাপ আমারে স্কুলের বই কিনে শিক্ষিত করার বদলে আমার ডাগর বুকে হাত বোলাইতো । রাতের পর রাত আমারে ধর্ষন করত । আমারে যৌন শিক্ষার প্রাকটিকাল ক্লাস করাত । আর একটু বড় হতেই আম্মার চিকিৎসার খরচের যোগান লাগবে বলে জোর করে ঘরে আটটা দশটা করে খদ্দের ঢোকাত । এই পুরুষ সমাজ টারে দেখে আমি লাজ সরমের কথা ভাবব । আর আল্লারে তো কম ডাকিনি দাতে দাত চেপে যখন যন্ত্রনায় আর শরীর গুলোর চাপ আমি সহ্য করতে পারতাম না । যা বুড়ো ঘুমিয়ে পর সকালে স্নানের সময় তোরে আবার বৃন্দাবন দেখাব ।

আমি দাড়িয়ে এই সব কথোপকথন শোনার পর আমার শিরা উপশিরার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ঝড় বয়ে গেল । আমি আবার সোজা হয়ে দাড়ালাম । আমার শরীরের মধ্যের সকল জড়তা যেন কোথায় পালিয়ে গেল । আমি ফিদা চাচা কে বললাম, চাচা দরজা খুলে দাও, আমি এখানে আর এক মুহূর্ত থাকবো না ।
ফিদা চাচা - কোথায় যাবা রামবাবু ? তোমাগো ঘর এখন আর নাই । তুমি যে দল করতা, সেই পার্টির পার্টি অফিস এহন ওডা । তোমাগো ঘর ভাইংগা ফেলাইছে । ক্যাবল তোমার মায়ের আর তোমার মুর্তি বসাইয়া রাখসে ওহানে । মাথা গোজ্যার কোন ঠাই নাই সেহানে । আর যদি অই সবনমের কথায় রাগ হয় , অর হইয়া আমি ক্ষমা চাইতেছি বাবু , এই তোমার দুখান পায় ধরতাসি ।
একি করছ ফিদা চাচা ! এই বলে আমি খানিকটা পিছনের দিকে সরে দাড়াবার চেষ্টা করলাম , কিন্তু নিজেকে সামাল দিতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলাম ।

এখানে মাটি বলে খুব কম অংশই পাওয়া যায় । যেখানটায় পড়লাম যায়গাটা সম্পূর্ন পাথুরে অর্থাৎ বাড়ির উঠোনে । প্রথমে হাতের উপর ভর করে ওঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু কনুই আর কাধের পেশি শক্তি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ল যে আমি কোন শক্তি পেলাম না । আমি সম্পূর্ন ধরাশায়ী হলাম । আমি দেখতে পেলাম বাড়ির উঠনের কুয়োটা এখনো আছে ।
ফিদা চাচা কাউকেই ডাকল না , হাত থেকে হ্যারিকেন টা আমার আর ঘরের দুরত্বের মাঝখানটায় একটু এগিয়ে গিয়ে নামিয়ে রাখলো । আমার কাছ এসে আমার পিঠ থেকে ব্যাগ টাকে খুলে আমার বাম পাশে রাখলেন, প্রথমে আমার হাতের কনুইয়ের উপরের অংশ অর্থাৎ বাহু ধরে তোলার চেষ্টা করলো । আমার নিজস্ব কোন শারীরিক শক্তির যোগান নেই দেখে ক্ষান্ত হলো আর তারপর চিত করে শোয়ালেন, শেষ মেস আমার মাথার কাছটায় এসে মাথার দুইপাশ দিয়ে পিঠে হাত গলিয়ে আমাকে আতি কষ্টে তুলে বসালো । এভাবে কিছুটা সময় যাবার পর আমি খানিকটা ধাতস্ত হলাম । এসবের মাঝে ফিদা চাচা যে সকল বলে যাচ্ছিল, আমি তার কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না । ফিদা চাচার বৃদ্ধ কাধে ভর দিয়ে আবার উঠে দাড়ালাম বটে কিন্তু শ্রবন শক্তি যেন ক্রমশ হারিয়ে ফেলছিলাম।
ফিদা চাচা আমায় বাম কাধে আর ডান হাতে হ্যারিকেন ধরে ঘরে আনলেন । খাটের কিনারায় বসিয়ে আমার পাদুটো ধরে উচু করে খাটে শুইয়ে দিলেন । ঘরের ভিতরটা বেশ গরম লাগলো আমার । ঘরের ভিতর ডান দিকে আগুন জ্বালাবার জায়গায় আরো খানিক কাঠ জড়ো করা ছিল, কয়েকটা নিয়ে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ঠেলে দিলো, বেশ জোরে আগুন জ্বলতে শুরু করল । ঘরের দরজায় ভিতর দিয়ে খিল লাগিয়ে আমার কাছে এসে বসতে গেল কিন্তু হঠাৎ কি যেন মনে করে আবার হ্যারিকেন ছাড়াই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল ।

আমি মনে করতে লাগলাম এই ঘরে শৈশব থেকে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া এই ছেলেটা আমি যে কত বার এসেছি তার হিসাব নেই । কিন্তু কোন দিন এখানেই আমাকে রাত্রিবাস করতে হবে ! একথা কন দিন স্বপ্নেও ভাবিনি । এই বাড়ির প্রতিটি ইট কাঠ আমাকে চেনে। কিন্তু আমিনা চাচি, শবনম... শবনম মানে চাচার একমাত্র মেয়ে আমার থেকে বছর দশেকের ছোট । তাদের কারও দেখাতো পেলাম না, বরং যে মেয়েটার কথা গুলো সব বেশি থেকে জ্বালা ধরাচ্ছিল আমার অস্তিত্বে , তার নামও তো চাচা বলল শবনম ! তবে গলার স্বর শবনমের মতো তো লাগল না, সে আমাকে রাম দা বলেই ডাকত, আর আমি এসেছি শুনলে , এক দৌড়ে দোতালা থেকে কাঠের সিড়ি বেয়ে নেমে আসত আমার কাছ, আমাকে জড়িয়ে ধরত, আব্দার করত, এতদিন পর এসেছি, কি এনেছি ওর জন্যে, তবে এখন তো এমনটি ও করতেই পারবে , হিসাব মতো ওর যা বয়স হবে তাতে ওর দু চারটে সন্তানের মা হয়ে থাকবে । আবার আসতেও পারে , মামা বলে কথা, পরিচয় করাবেনা সেকি আবার হয় নাকি । আর এই মেয়েটির গলার স্বর শুনে মনে হল আঠারো অথবা কুড়ি হবে । তবে কথা গুলো যে নিদারুন সত্যি তা বোঝা যাচ্ছিল । যেন সমাজের গালে, পৌরুষ পরিচয় বহন করা পৌরুষ দের গালে ঠাসিয়ে ঠাসিয়ে চড় মারছিল ।
আবার এদিকে এরা কারা তা আমার বুঝতে দেরি হয়নি যদিও, তবুও এরা এখানে কিভাবে এল , আর এদের যে ধান্দা, তা এখানে চালাচ্ছে ।এই কথা ভাবতে ভাবতে কিছুতেই জীবনের হিসাব মেলাতে পারছিনা । সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ।

ফিদা চাচা ঘরে প্রবেশ করলো আমার ব্যাগটি নিয়ে খাটের নিচে রেখে, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন তারপর আবার বেড়িয়ে গেল। আমি আবার আমার শৈশবের দিন গুলোর কথা মনে করার চেষ্টা করতে থাকলাম । কোন কিছুই যেন ভুলে যাইনি তবে সবকিছু স্পষ্ট ভাবে মনে আসছে না । এখন আমি অনেকটা সুস্থ অনুভব করছি । শ্বাস নিতে আর আগের মতো কষ্ট হচ্ছে না ।
আবার ফিদা চাচা ঘরের ভিতর এল , ফিদা চাচার এক হাতে খাবারের একটা টিফিন ক্যারি, অন্য হাতে চায়ের পট । একেবারে আমার কাছে এসে খাটের উপর একটা পুরানো খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর খাবার গুলো রেখে , আমার পায়ের দিকে খাটের নিচ থেকে জলের বোতল বের করে আবার আমার মুখের সামনে এসে প্রশ্ন করলো ।
রাম বাবু এহন কেমন লাগতাছে ?
ঘাড় নেড়ে উত্তর দিলাম , ভাল ।
আমার গলা থেকে কিছুটা অস্পষ্ট হলেও ফিদা চাচার বুঝতে অসুবিধা হলনা । এবার আমার মাঝ বরাবর এসে খাটে উঠে বসে আবার প্রশ্ন করলেন ।
তুমি কি একা একা উইঠ্যা বসতে পারবা ?
নিজের কিছুটা লজ্জা বোধ হল , তবে সংকোচ না করে বললাম- পারব । তবে দরকার হলে আপনাকে একটু সাহাজ্য করতে হতে পারে ।
কি বলহ রাম বাবু তোমার লাগি সাহাজ্য করতে পারুম না ।
আমি - সে কথা কখ্ন বললাম । তবে মনে হয় এবার আমি পারব ।
ঠিক আছে উইঠ্যা পড় দেহি , এহন এই গুলান খাহন লাগবে । তারাতারি সুস্থ হওন লাগবে ।

আজ এই সময় ফিদা চাচার অনেক পুরানো কথা আমার মনে পড়ছে । চাচা বলতেন - মানুষের সকল প্রকার কাজকর্মের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য হওয়া একমাত্র তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যাবতীয় আমলের প্রতিদান পাওয়া না পাওয়া সে আমলকারীর নিয়তের খাঁটি-অখাঁটি হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। হাদীস দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী শরী‘আতে নিয়তের অবস্থান অতি উঁচু স্থানে। বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য হয় না। আমলের শুদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়ত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা সকল ইবাদতে নিয়তকে খাঁটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোনো আমল কিছুতেই সঠিক হতে পারে না। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে এ বিষয়টিও সাব্যস্ত হয় যে, মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই কৃতকর্মের ফলাফল লাভ করে। এমনকি সে নিজের ব্যবহারিক জীবনে পানাহার, উপবেশন, নিদ্রা ইত্যাদির ন্যায় যে কাজগুলো সে অভ্যাস-বশে সম্পাদন করে সে সব কাজও সদিচ্ছা এবং সৎ নিয়তের কারণে পুণ্যময় আমলে পরিণত হতে পারে। আর সওয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে। যেমন কেউ হালাল খাবার খাওয়ার সময় উদর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইবাদতের জন্য শক্তি ও সক্ষমতা লাভের নিয়তও যদি করে নেয় তাহলে এর জন্য সে অবশ্যই সওয়াবের অংশিদার হবে।
এমনিভাবে মনোমুগ্ধকর ও মনোরঞ্জক যে কোনো বৈধ বিষয়ও নেক নিয়তের সঙ্গে উপভোগ করলে তা ইবাদতে রূপান্তরিত হয়। হাদীসে এ বিষয়টিও লক্ষ্যনীয় যে, নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে। কাজেই কোনো ইবাদতের সময় ‘নিয়তের দো‘আ’ জাতীয় কিছু মুখে উচ্চারণ করা যাবে না; কাজের সাথে অন্তরের উদ্দেশ্যেরও সমন্বয় থাকতে হবে। বরং মুখে উচ্চারণের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি জোহরের সালাত আদায় করার সময় অন্তরে জোহরের সালাত আদায় করার নিয়ত করে আর মুখে অন্য সালাতের কথা এসে যায় । তাহলে তার জোহরের সালাতই আদায় হবে। এতে জোহরের সালাতের নিয়তের কোনো ত্রুটি হবে না।
ফিদা চাচার অনেক কথাই আমি বুঝতাম না কারন তার ভাষার মধ্য অনেক শব্দই থাকত আরবি ।
তবে নিয়ত শব্দের মানে আমি আবিস্কার করে ছিলাম , উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, অভিলাষ, মনোবাঞ্ছা, মনের ঝোঁক, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত কর এ সবই যে বোঝায় তা বেশ বুঝেছিলাম। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Intension ইহাই নিয়তের মানে ।
তবে ফিদা চাচার আজকের এই উপকারের প্রতিদান আমি কিভাবে পরিশোধ করব ? আমার অন্তর আত্মায় সে প্রশ্ন আমার পরম ঈশ্বরের দিকে নিক্ষেপ করলাম ।
ফিদা চাচার জোগার করা গরম মোমো , গরম সুপ আর গরম চা খাওয়ার পর শরীরে যেন প্রান ফিরে পেলাম । এটাই আমার প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার ফিদা চাচার বাড়িতে খেয়েছি, আমিনা চাচি আমাকে নিজের ছেলেই মনে করত । তাছারা শবনম যেদিন প্রথম বিরিয়ানি রান্না করল , সে স্বাদ আমি এখনও অনুভব করতে পারছি । ফিদা চাচার ঘরে কোনদিন গোমাংস উঠত না । ফিদা চাচা, আমিনা চাচি কিংবা শবনম ওরা কেউ তা পছন্দ করত না । চাচা বলত ইসলাম ধর্ম কখনই বলেনি তোমাকে গোমাংস খেতে হবে । বকরি ঈদের সময় চাচা খাসি কুরবানি দিতেন আর তার থেকে আমাদের ঘরেও সে সময় ঈদের উৎসব পালিত হত । ফিদা চাচা একজন ধর্মপ্রান মানুষ ছিল, ছিল কি বলছি আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি , ফিদা চাচা তা কোন দিন ত্যাগ করতে পারবে না । সে যাই হোক ফিদা চাচা তার মনুষ্যত্বের ধর্ম যে ভাবে পালন করেন তা আমার কাছে আজও শিক্ষনীয় । ফিদা চাচা কে বললাম ব্যাগ থেকে আমার ওষুধের বাক্সটা বের করতে । ফিদা চাচা তা তৎক্ষনাৎ বের করে দিলেন । আমি তার থেকে কমবিফ্লেম ৩০০ একটা নিয়ে জল দিয়ে ঢোক মারলাম , খানিক পরে আরও একটা এন্টাসিড খেলাম । শরীরে এত ধকল গেছে আমার রাতেই জ্বর আসতে পারে তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন আংশে ব্যাথাও শুরু হয়ে গেছিল ।
ফিদা চাচা বলল - আজ রাতটা এভাবে কাটায়ে দাও বাবু, সকালে ডাক্তার ডাইক্যা আনুম হানে ।
আমি ব্যাগ হতে কোন মতে ফিদা চাচার বের করে দেওয়া জামা কাপড় গুলো নিয়ে রাতের পোশাক বদলালাম । এখন অনেক টা ফ্রেশ লাগছে নিজেকে তবে বাইরে গিয়ে কুয়োর জল তুলে হাত পা ধুয়ে চোখে মুখে একটু জল দিতে পারলে যে খুব ভাল লাগত সেটা খুব বুজতে পারছি , কিন্তু সে সক্ষমতা আমি অনেক আগেই হারিয়েছি । সে কথা না ভেবে গরম কম্বলের ভিতর শরীরটা কে আরাম দিতে পারলেই বোধহয় এ শরীর প্রতি খানিকটা সুবিচার করা হবে তা বুঝতে পারছি । আমি আর দেরি করলাম না । ফিদা চাচা কে দেখলাম মেঝেতে বিছানা করে নিতে । এখন বোধহয় আর বেশি রাত্রি নেই সকালের রেশ বুঝতে পারছি , এত গরম ঘরের মধ্যেও এক লহমা ঠান্ডা বাতাস ঢুকে পড়ল । আমি শুয়ে পড়েছি । চাচাও হ্যারিকেন নিভিয়ে দিয়েছেন , বুঝতে পারছি ফিদা চাচা এখন গভীর ঘুমের দেশে আছে ।

আমি ঘুমাবার জন্য চোখের পাতা দুটি এক করে আছি কিন্তু এত ক্লান্তির পরও ঘুম কিছুতে আসছে না । আমার ছোখের সামনে আমার মায়ের মূখ , বাবার মুখ , আমিনা চাচির মুখ, শবনমের মুখ ভেষে উঠছে বারবার, তাছাড়া ঘরের ভিতর আগুন জ্বলছে সেই আগুনের আলোয় ঘর আলোকিত হয়ে আছে । আমি বার বার কাত হয়ে অর্থাৎ আমার ডান দিকে ফিরে ঘুমাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু মনের মধ্যে সংসয় ও কাজ করছে , আমি শুনেছি ডান দিকে কাত হয়ে ঘোমালে নাকি হার্ট এটাকের সম্ভাবনা থাকে , অসুস্থ শরীর বলে একটা দোনামোনা কাজ করছে মনের ভিতর । অবশেষে পশমের কম্বল টা মাথার দিয়ে ঢাকা দিয়ে যাকে মুরি দিয়ে ঘোমাবার চেষ্টা করতে থাকলাম । আমার মনে আসতে থাকল বাবার কাছে আর এই ফিদা চাচার মুখে শোনা গল্প গুলি , পরে অবশ্য আমিনা চাচি আর মায়ের মুখেও শুনেছি সে কথা অনেক বার ।

বাবার কাছে শুনেছি আমাদের আর ফিদা চাচাদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশে , ধুমতি নদীর তীরে , নদীর ওপার ছিল হরিপুর আর এ পাড়ের কুষ্টিয়া গ্রামে , কুষ্টিয়া এখন শহর শুনেছি । আমার বাবা সুশিল চন্দ্র সান্যাল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী , মা ছিলেন সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী , সালটা ছিল ১৯৭১ , ২৫ শে মার্চ রাত্রি হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শেল, মর্টার, ছোট কামান আর অজস্র গুলির শব্দে কেপে উঠল । আমরা সকলেই দিক বিদিক হয়ে ছুটতে লাগলাম । বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল গেটের সামনে থেকে শুধু গুলি ছুটে আসছে । আর অসংখ্য ছাত্র - ছাত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে । এরকম সম্ভাবনার কথা যে আমরা জানতাম না তা নয় । কিন্তু এভাবে হঠাৎ এসে পড়বে তা কল্পনাও করতে পারিনি তার উপর শিক্ষাঙ্গনে তা ছিল স্বপ্নাতীত । তা যাইহোক আমি বেড়িয়ে দেয়ালের অর্থাৎ মুল গেটের পাচিলের দিকে আশ্রয় নিলাম । সেখান থেকে ইকবাল হলের দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে দেখি কিছু মেয়ে ছুটে আসছে আমার দিকে রোকেয়া হলের দিক দিয়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে নীলক্ষেত রোডের দিকে পালাতে চাইছে আর সামনের দিক দিয়ে ওদের উপর গুলি চলছে । আর রোকেয়া হল থেকে যে সব মেয়েদের বেড়িয়ে আসতে দেখেছি সেই দলের পিছনের সারির মেয়ে গুলোর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তারা জীবন্ত দগ্ধ হতে হতে ছুটে গুলির সামনে ঝাপিয়ে পড়ছিল । আবার তার মধ্য কিছু মেয়ে প্রানে বেচে গিয়েছিল । তোর মা আর আমিনা চাচি ছিল সেই বেচে যাওয়া মেয়ে দের মধ্যে অন্যতম ।
আমরা তিনজন একসংগে পালাতে শুরু করলাম ওদের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে । আমরা দেখলাম অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে হত্যা করা হল।
সেই কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯ জন শিক্ষককে হত্যা করা হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ নং নীলক্ষেতের বাড়িতে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলুর রহমানকে তার দুই আত্মীয়সহ হত্যা করা হল। ফজলুর রহমানের স্ত্রী দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পাক বাহিনী অধ্যাপক আনোয়ার পাশা (বাংলা) ও অধ্যাপক রাশিদুল হাসানের (ইংরেজি) বাড়িতেও প্রবেশ করল। উভয় পরিবার খাটের নিচে লুকিয়ে সেই যাত্রা প্রাণে বাঁচেন। ঘরে ঢুকে ঢুকে তাঁদের খানা তল্লাসি শুরু করেদিল হানাদাররা । অনেক অধ্যাপক সে রাত্রে বেঁচে গেলেও, মুক্তিযুদ্ধের শেষে তাঁরা আলবদর বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পারেননি, এমনকি বাড়ি পরিবর্তন করেও। ২৪নং বাড়িতে থাকতেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (নজরুল গবেষক ও বাংলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক)। সেই বাড়ির নিচে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ দুই মা তাদের শিশু সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়ায় সিঁড়িতে রক্ত ছিল। পাক সৈন্যরা ভেবেছিল, অন্য কোন দল হয়ত অপারেশন শেষ করে গেছে তাই তারা আর ঐ বাড়িতে ঢোকেনি। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন প্রাণে বেঁচে যান। ঐ বাড়িরই নিচতলায় থাকতেন এক অবাঙালি অধ্যাপক। পঁচিশে মার্চের আগেই সেই ব্যক্তি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার সব অবাঙালি পরিবার তা-ই করেছিলেন।

ফুলার রোডের ১২নং বাড়িতে হানা দিয়ে হানাদাররা নামিয়ে নিয়ে যায় অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকিকে (সমাজ বিজ্ঞান)। তাঁকে গুলি করতে গিয়েও, পরে তাকে ছেড়ে দিল এবং উপরের তলার ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদিরকে গুলি করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল। ২৭শে মার্চ অধ্যাপক মুকতাদিরের লাশ পাওয়া গেল ইকবাল হলে (বর্তমান জহুরুল হক হল)। সলিমুল্লাহ হল এবং ঢাকা হলে (বর্তমান শহীদুল্লাহ্‌ হল) হানা দিয়ে সলিমুল্লাহ হলের হাউস টিউটর ইংরেজির অধ্যাপক কে এম মুনিমকে সেনারা প্রহার করল এবং ঢাকা হলে এনে হত্যা করল। গণিতের অধ্যাপক এ আর খান খাদিম আর অধ্যাপক শরাফত আলীকেও । জগন্নাথ হলের মাঠের শেষ প্রান্তে অধ্যাপকদের বাংলোতে ঢুকে তারা অর্থনীতির অধ্যাপক মীর্জা হুদা এবং শহীদ মিনার এলাকায় ইতিহাসের অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবীরের বাড়িতে ঢুকে তাঁদের নাজেহাল করে ক্ষান্ত হল ।
জগন্নাথ হলে হামলা করার সময় আক্রান্ত হলেন হলের প্রাক্তন প্রাধ্যক্ষ ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব । পাক হানাদাররা হত্যা করে অধ্যাপক দেব এবং তার পালিত মুসলমান কন্যা রোকেয়ার স্বামীকে। পরে জগন্নাথ হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়ার্টার, সেখানে হত্যা করা হয় পরিসংখ্যানের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তার পুত্র ও আত্মীয়সহ। জগন্নাথ হলে আরো নিহত হন হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য।
(এ তথ্য সকল যে নির্ভূল তার জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক আনোয়ার পাশার উপন্যাস ''রাইফেল রোটি আওরাত'' গ্রন্থটি কোন একসময় অধ্যায়ন করার পরামর্শ দিতেন ।)

এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছি আমরা তিনজন , তিন দিন ধরে এই রক্তাক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে পাক হানাদার দের চোখে ধুলো দিয়ে কাটিয়েছি । চারি দিকে ক্ষত বিক্ষত লাস আর আমরা, বাইরের জগৎ থেকে সম্পুর্ন বিছিন্ন,কার্তুজ আর মর্টারের আঘাতের চিহ্ন সর্বত্র ছড়িয়ে তার সাথে হানাদার দের বুটের আওয়াজ , কখনও কখনও আমরা লাশেদের সাথে পড়ে থেকেছি, নিজেদের ওদের চোখে মৃত প্রমান করতে । প্রতি মূহুর্তে অনুভব করতে থাকলাম আমরা আর বাচব না । বিষাক্ত বাতাসে পোড়া আর পচতে শুরু করা মানুষের দুর্গন্ধ , কোন উপায় খুজে পাচ্ছিলাম বেচে থাকার জন্য, এই তিন দিনের আতঙ্ক , বেদনা আর অনাহার আমাদের বাচার আশাকে প্রায় শুন্য করে দিয়ে ছিল ।
অবশেষে ২৮ শে মার্চ রাত্রি প্রায় ১২টার সময় আমরা জগন্নাথ হলের দিক দিয়ে আজিম পুরের দিকে রওনা দিলাম । তারপর বাম দিকে লালবাগ আর ডান দিকে নতুন পল্টন লাইন ফেলে নবাব গঞ্জের দিকে হাটতে শুরু করে দিলাম । সেখান দিয়ে কামরাংগা চরে এসে সাতরে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে খোলামোড়া হয়ে বাবুর গ্রাম । সেই রাতে হাসান নগরে গনহত্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল , আমরা তাই আর ওই দিকে এগোই নি ।

বাবুর গ্রামে পৌছনোর পর আমরা জনবসতি এলকা ছেড়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে চলতে গিয়ে কিছু মুন্সই গঞ্জের পরিবার পেয়ে গেলাম , ওরা সকলেই শিবালয়ের দিকে এগোচ্ছিল তাদের সংগ নিয়ে আমরাও শিবালয়ের পথে চলতে শুরু করলাম । শিবালয় হচ্ছে পদ্মা আর ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর সঙ্গোমস্থল । ওনাদের কিছু আত্মিয়ের বসবাস আছে সেখানে । আমরা যে পথ দিয়ে এগোচ্ছিলাম তখন আশেপাশের গ্রাম গুলোতেও আগুন জ্বলছে । প্রায় ভোর বেলা নাগাদ আমরা সকলেই শিবালয় পৌছলাম । আমাদের মধ্যে থাকা কিছু মানুষ আবার ফজরের নামাজ সারলেন ।

শিবালয়ে এসে মুন্সি গঞ্জের ওই পরিবার গুলো তাদের আত্মিয়ের বোডনৌকা নিয়ে পদ্মার বুক ধরে আমাদের বাড়ির পথেই এগোচ্ছিল । কিন্তু নৌকায় জায়গার অভাবে আমাদের নিতে রাজি হচ্ছিল না । তবে মুন্সি গঞ্জের কিছু মানুষের অনুরোধে আমাদের পদ্মা পার করে দিতে সম্মত হল । আমরা উঠে নৌকায় পড়লাম । পদ্মা পাড় হবার সময় আমাদের সাথে বেশ ভাল পরিচয় হল । আমিনা যেহেতু ওনাদের স্বজাতির মেয়ে তাই ওনারা আমিনাকে ওনাদের সংগে থাকার অনুরোধ করল কিন্তু আমিনা রাজি না হওয়াতে । ওনারা আমাদের দৌলত দিয়া - পাটুরিয়া ফেরী ঘাটের এপাড়ে নামিয়ে কিছু মুড়ি বাতাসা খাবার জন্য দিয়ে সাবধানে থাকার কথা বলে এগিয়ে গেলেন ।
আমরা দৌলত দিয়া ফেরী ঘাট থেকে পদ্মার পাড় ধরে রাজবাড়ী শহরের দিকে না গিয়ে গোদার বাজারের পথ ধরলাম , সেখান থেকে রামচন্দ্র পুর জামে মসজিদের পাশ হয়ে শ্যামপুর, কুমড়া খালি হয়ে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা বিশ্রামহীন হাটার পর আমরা কুষ্টিয়া এসে পৌছলাম । তারপর ধুমতি নদী পার হয়ে মংগল বাড়িয়া মানে আমাদের গ্রামে পৌছলাম ।

আমি আমিনা আর তোর মা রাতের অন্ধকারে আমাদের গ্রামে ঢুকলাম , কিন্তু কোনকিছুই চিনতে পারছিনা , আমাদের গ্রাম সম্পূর্ন নিশ্চিহ্ন । আমাদের কাঠের বাড়ি ছিল তা আগুনে ভষ্মিভূত, এখনও ধোয়া বেরোচ্ছে । আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল ! আমার বাবা, মা , ঠাকুর মা, আর সকল কাকা, কাকিমা, জ্যাঠা, জ্যাঠিমা, দাদা, ভাই, বোন, দিদিরা কোথায় ? এ প্রশ্নের কোন উত্তর পাবো সে প্রত্যাশার কোন দিক আমি দেখতে পাচ্ছি না । আমি হতভম্ব হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম ।


ফিরদৌস আমাদের পড়শি ছিল, মানে পাশের বাড়ির ছেলে বললেও চলে । আমরা একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি । আমাদের বংশ পরম্পরায় এখানেই বসবাস করতাম । আমাদের পূর্বপূরুষদের সকলের একই জায়গায় বসবাসের ফলে আমাদের ভিটা বাড়িটা প্রায় একটা গ্রামের রুপ ধারন করেছিল । আর আমাদের বাড়ির পিছন থেকেই ফিরদৌস দের গ্রাম শুরু । ফিরদৌসদের বাড়িটা আমাদের বাড়ি থেকে বড়জোর দুশো হাত দুরত্বেই হবে। যাই হোক ফিরদৌস আমার থেকে খুব ছোট ছিলনা বয়সে বছর তিনেকের হবে । ওরাও পূর্বপুরুষ থেকে এখানেই বসবাস করত । ওর বাপ, দাদুরা কাঠের ব্যাবসা করত । ওরা শিলিগুড়ি থেকে শাল কাঠ এনে ঢাকা শহরে বিক্রি করত । আর আমাদের চাষ আবাদ ছিল, তাছাড়া আমার বাবা মানে তোর দাদু পেশায় ডাক্তার ছিলেন । ভালই পশার ছিল আর আমি যেহেতু একমাত্র সন্তান ছিলাম তাই আমার যত্ন আত্মিরে বাড়ির সকলেই খেয়াল রাখত । আমরা জ্যাঠতুতো খুড়তুতো ভাই বোন মিলিয়ে সংখ্যায় প্রায় জনা সত্তর ছিলাম, তার মধ্যে জনা বিশেক তো আমরা প্রায় সম বয়সি । আমরা অন্য কোথাও খেলতে যেতাম না তবে ফিরদৌস আর ওর বোন আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসত । আমাদের সংগেই বড় হয়েছে , খেলা ধূলা - লেখাপড়া সবকিছু ।তারপর ওর বোনের বিয়েতে আমরা কত আনন্দ করেছি । ফিরদৌস বেশি দূর পড়াশুনা করেনি । স্কুল ফাইনাল পাশ করার পর বাপ দাদাদের সাথে কাঠের ব্যাবসায় যোগ দিয়েছিল । ওদের চারটে বড় বার্জ নৌকা ছিল , তাতে করে শাল , সেগুন আরও কত ধরনের কাঠ আনত ওরা ।





ক্রমশ...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৮/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Abheek ০৯/০২/২০১৮



    খুব সুন্দর!!
  • সাঁঝের তারা ২৮/০১/২০১৮
    কবিতা লিখলে সংসার চলবে না - কথাটা কিন্তু সত্যি।
    • শিবশঙ্কর ৩০/০১/২০১৮
      অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্য। শেষ এখনো বাকি সংগে থাকুন ।
  • মারুফা তামান্না ২৮/০১/২০১৮
    ভাল লাগল
    • শিবশঙ্কর ৩০/০১/২০১৮
      অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্য। শেষ এখনো বাকি সংগে থাকুন ।
 
Quantcast