শাসনের চেয়ে সোহাগ শ্রেয়
“শাসনের চেয়ে সোহাগ শ্রেয়”
সুজন খুবই দুষ্ট ছেলে।স্কুলে গিয়ে সারাদিন ক্লাস না ক’রে স্কুলের বাগানে আম পাড়ে জাম পাড়ে,সহপাঠীদের সাথে,মারামারি জগড়া বাঁধিয়ে রাখে সবার সাথে। আর এই নিয়ে স্কুলের স্যারদের উপর ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে সুজন। তার বাবা মাকে স্কুলে ডেকে আনা হলো। কিন্তু সুজনকে পায় কোথায়?
সহপাঠিদের কে ডেকে পাঠানো হলো সুজনকে খুঁজে আনতে।কিন্তু যারা তাকে খুঁজে আনতে গিয়েছে তারা মাইর খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে এল।তা দেখে তো প্রধান শিক্ষকের চোখ তো কপালে উঠলো।সুজনের বাবা মা’কে বলে উঠলেন,
“দেখেছেন আপনার ছেলের কান্ড? আমরা কত অতিষ্ঠ হয়ে আছি”
সুজনের বাবা মা লজ্জ্যায় মুখ নিচু করে নিলেন।একমাত্র ছেলে বলে বেশ ভালো ভাবে শাসন করা হয়ে উঠেনি।আহ্লাদে রেখে মাথায় তুলে রেখেছিলেন সবসময়,কিন্তু যার ফলশ্রুতিতে এমনটি হয়ে দাঁড়াবে তা তাঁরা কোন দিন ভাবেননি।
সারাদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁদের বসিয়ে রেখেছিলেন একটা হিল্লে করার জন্য। কিন্তু সুজন কে কোথায় পাই? স্কুলের আশে পাশে অনেক খুঁজলেন কিন্তু সুজনকে পাওয়া গেলো না বলে,বেশ চিন্তিত হয়ে বাবা মা বাড়ি ফিরে এলেন।ভাবলেন হয়তো সুজন বাড়ি ফিরে গেছে।
আসলে তায়,সুজন দুপরের খাবার সেড়ে মনের সুখে ঘুমাচ্ছে।তা দেখে বাবা ভীষণ রেগে গিয়ে সুজনকে উত্তম মধ্যম প্রহার করতে এগিয়ে গেলেন,কিন্তু মায়ের বাঁধা দেওয়াতে আজ বেঁচে গেলো সুজন। বাবা তাকে অনেক রকম ভাবে বুঝাতে লাগলেন,কিন্তু কে শুনে কার কথা?
বেশ সন্ধ্যেবেলা বাবা বাড়ি ফিরে এলেন,দেখলেন সুজন ঘুমাচ্ছে।অমনি মাথাটি চরমে গিয়ে গরম হয়ে গেলো। হাতের কাছে একটা বড় রশি দেখে,টেনে নিয়ে সুজনের হাতে বাঁধলেন,এবং পায়ে বাঁধলেন।আর হাত পা দুটি একসাথে টেনে বাঁধলেন ক্যাকড়ার মত পড়ে আছে।কিন্তু সুজনের তখনি ঘুম ভাঙেনি। ছেলের এমন হাল দেখে,মা দৌঁড়ে এসে কান্না শুরু করে দিলেন।
কিন্তু মায়ের কথা কে শুনে।মায়ের চিৎকারে সুজন জেগে উঠে দেখলো।সে ক্যাকড়ার মত পড়ে আছে হামাগুড়ির মত।কিন্তু কিছুই বলতে পাড়ছে না।কেবল ফ্যালফ্যাল করে চারিদিকে দেখছে।এতটুকু ছয় বছরের বাচ্ছা’র এমন পরিস্থিতি মনের মাঝে কি হতে পারে?বাবা একটা পাটের বস্তা নিয়ে বলে উঠলেন,
“তোকে আজ এই বস্তাবন্দি করে নদী’তে ভাসিয়ে দিব”মুহূর্তেই সুজনের চোখ যেন
কপালে উঠে গেলো।জডসড় ভয়ের আক্রমন গ্রাস করলো।মনের মাঝে একটা প্রকট ঝড়ের আবাস পেল সুজন।ঘন্টা খানেকের মত তাকে বেঁধে রাখা হলো।বাবা কেবল একের পর এক অগ্নি চোখে শাসনের প্রশ্ন করতে লাগলেন,কিন্তু সুজন কোন উত্তর দিতে পারছে না। ভয়ের কবলে ভাসমান তার হৃদপিন্ড যেন ধকধক করছে।সুজন কোন উত্তর দিচ্ছে না বলে,বেশ কয়েকটি উত্তম মাধ্যম শুরু করে দিলেন।কিন্তু এমন নির্মমতা,এবং বর্বরতা কতটুকু সইতে পারে সুজনের ছোট্ট উদরে?
মা দৌঁড়ে এসে সুজনের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে নিজের বুকে টেনে নিলেন। এবং নিজের কক্ষে নিয়ে খাওয়ালেন অতি যত্ন করে।আর দুষ্টামি না করার জন্য বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু সুজনের যেন মায়ের কথার প্রতি কোন খেয়াল নেই।
ভোরে আকাশের আলোয় জগত তাপ অনুভূত হচ্ছে সবার।কিন্তু সুজনের গায়ে জ্বরের তাপে শরীর পুড়িয়ে অঙ্গার হচ্ছে।এমন অনুভব করছে সে।ভীষণ জ্বর।গায়ে হাত দিলে মনে হয় যেন খৈ ফুটবে। মা কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না।বাবা ও ছেলের অবস্থা দেখে বুদ্ধিহীনতায় ভুগছেন।একমাত্র সন্তান বলে কথা। দৌঁড়ে ডাক্তার ডেকে আনলেন, ডাক্তার সুজনের পরিস্থিতি দেখে চোখ যেন চশমার লেন্স ভেঙে বাইরে চলে আসবে।
সুজন থরথর করে কাঁপছে।তার শরীরের গরমে এই মুহূর্তে যদি তার শরীরটাকে পুকুরের জলে ভিজিয়ে রাখা হয় মনে হবে যেন মাছ সব সিদ্ধ যাবে!!
তিনদিন কেটে গেলো,অথচ জ্বরের কমাকমির কোন লক্ষণ নেই।খবর পেয়ে স্কুলের সহপাঠিরা ছুটে এলো।প্রধান শিক্ষক এসে পাশে ঘেঁষে বসলেন।অমনি সুজন ভয়ে আবার মূর্ছা গেলো।মনের স্পন্দনে যেন এখন আতংকের বসবাস।
কিছুক্ষণ পর আবার জ্ঞান ফিরে এলো।কিন্তু পাশে বসে থাকা বাবা’কে দেখে নিজের শরীর টা যেন খিঁচতে লাগলো সাংঘাতিক ভয়ে।সুজনের শরীরটা কাঁপছে থরথর।
কয়েকদিন পর আজ জ্বর কিছুটা কম। ডাক্তারের চিকিৎসায় শরীরের জ্বর কমলে ও মনের ভীতরে আতংকের ঝড়ের কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না দেখে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
দিন যতই গড়াতে লাগলো,ততই সুজন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে।সারাক্ষণ বেশ বোবা বেশে দিন কাটায়।নেই কোন হৈ হুল্লোড়,নেই কোন দুষ্টামি!!কয়েক দিন পর পর নিদারুণ অসুখে ভুগছে।শরীর টা যেন দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।আজকাল সে যেন অন্ধকারে থাকতে বড় বেশি ভালোবাসে।তা দেখে মায়ের কান্নার শেষ নেই।আর বাবা সারাক্ষণ অনুতাপের দুহনে জ্বলছেন।তিনি আজ বেশ বুঝতে পেরেছেন,শিশুদের শাসনে নয়,সোহাগের আদর দিয়ে মন জয় করা শ্রেয়।তা না হলে আজকের সুজনের হাল এমন হবার কথা না।
(সমাপ্ত)
সুজন খুবই দুষ্ট ছেলে।স্কুলে গিয়ে সারাদিন ক্লাস না ক’রে স্কুলের বাগানে আম পাড়ে জাম পাড়ে,সহপাঠীদের সাথে,মারামারি জগড়া বাঁধিয়ে রাখে সবার সাথে। আর এই নিয়ে স্কুলের স্যারদের উপর ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে সুজন। তার বাবা মাকে স্কুলে ডেকে আনা হলো। কিন্তু সুজনকে পায় কোথায়?
সহপাঠিদের কে ডেকে পাঠানো হলো সুজনকে খুঁজে আনতে।কিন্তু যারা তাকে খুঁজে আনতে গিয়েছে তারা মাইর খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে এল।তা দেখে তো প্রধান শিক্ষকের চোখ তো কপালে উঠলো।সুজনের বাবা মা’কে বলে উঠলেন,
“দেখেছেন আপনার ছেলের কান্ড? আমরা কত অতিষ্ঠ হয়ে আছি”
সুজনের বাবা মা লজ্জ্যায় মুখ নিচু করে নিলেন।একমাত্র ছেলে বলে বেশ ভালো ভাবে শাসন করা হয়ে উঠেনি।আহ্লাদে রেখে মাথায় তুলে রেখেছিলেন সবসময়,কিন্তু যার ফলশ্রুতিতে এমনটি হয়ে দাঁড়াবে তা তাঁরা কোন দিন ভাবেননি।
সারাদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁদের বসিয়ে রেখেছিলেন একটা হিল্লে করার জন্য। কিন্তু সুজন কে কোথায় পাই? স্কুলের আশে পাশে অনেক খুঁজলেন কিন্তু সুজনকে পাওয়া গেলো না বলে,বেশ চিন্তিত হয়ে বাবা মা বাড়ি ফিরে এলেন।ভাবলেন হয়তো সুজন বাড়ি ফিরে গেছে।
আসলে তায়,সুজন দুপরের খাবার সেড়ে মনের সুখে ঘুমাচ্ছে।তা দেখে বাবা ভীষণ রেগে গিয়ে সুজনকে উত্তম মধ্যম প্রহার করতে এগিয়ে গেলেন,কিন্তু মায়ের বাঁধা দেওয়াতে আজ বেঁচে গেলো সুজন। বাবা তাকে অনেক রকম ভাবে বুঝাতে লাগলেন,কিন্তু কে শুনে কার কথা?
বেশ সন্ধ্যেবেলা বাবা বাড়ি ফিরে এলেন,দেখলেন সুজন ঘুমাচ্ছে।অমনি মাথাটি চরমে গিয়ে গরম হয়ে গেলো। হাতের কাছে একটা বড় রশি দেখে,টেনে নিয়ে সুজনের হাতে বাঁধলেন,এবং পায়ে বাঁধলেন।আর হাত পা দুটি একসাথে টেনে বাঁধলেন ক্যাকড়ার মত পড়ে আছে।কিন্তু সুজনের তখনি ঘুম ভাঙেনি। ছেলের এমন হাল দেখে,মা দৌঁড়ে এসে কান্না শুরু করে দিলেন।
কিন্তু মায়ের কথা কে শুনে।মায়ের চিৎকারে সুজন জেগে উঠে দেখলো।সে ক্যাকড়ার মত পড়ে আছে হামাগুড়ির মত।কিন্তু কিছুই বলতে পাড়ছে না।কেবল ফ্যালফ্যাল করে চারিদিকে দেখছে।এতটুকু ছয় বছরের বাচ্ছা’র এমন পরিস্থিতি মনের মাঝে কি হতে পারে?বাবা একটা পাটের বস্তা নিয়ে বলে উঠলেন,
“তোকে আজ এই বস্তাবন্দি করে নদী’তে ভাসিয়ে দিব”মুহূর্তেই সুজনের চোখ যেন
কপালে উঠে গেলো।জডসড় ভয়ের আক্রমন গ্রাস করলো।মনের মাঝে একটা প্রকট ঝড়ের আবাস পেল সুজন।ঘন্টা খানেকের মত তাকে বেঁধে রাখা হলো।বাবা কেবল একের পর এক অগ্নি চোখে শাসনের প্রশ্ন করতে লাগলেন,কিন্তু সুজন কোন উত্তর দিতে পারছে না। ভয়ের কবলে ভাসমান তার হৃদপিন্ড যেন ধকধক করছে।সুজন কোন উত্তর দিচ্ছে না বলে,বেশ কয়েকটি উত্তম মাধ্যম শুরু করে দিলেন।কিন্তু এমন নির্মমতা,এবং বর্বরতা কতটুকু সইতে পারে সুজনের ছোট্ট উদরে?
মা দৌঁড়ে এসে সুজনের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে নিজের বুকে টেনে নিলেন। এবং নিজের কক্ষে নিয়ে খাওয়ালেন অতি যত্ন করে।আর দুষ্টামি না করার জন্য বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু সুজনের যেন মায়ের কথার প্রতি কোন খেয়াল নেই।
ভোরে আকাশের আলোয় জগত তাপ অনুভূত হচ্ছে সবার।কিন্তু সুজনের গায়ে জ্বরের তাপে শরীর পুড়িয়ে অঙ্গার হচ্ছে।এমন অনুভব করছে সে।ভীষণ জ্বর।গায়ে হাত দিলে মনে হয় যেন খৈ ফুটবে। মা কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না।বাবা ও ছেলের অবস্থা দেখে বুদ্ধিহীনতায় ভুগছেন।একমাত্র সন্তান বলে কথা। দৌঁড়ে ডাক্তার ডেকে আনলেন, ডাক্তার সুজনের পরিস্থিতি দেখে চোখ যেন চশমার লেন্স ভেঙে বাইরে চলে আসবে।
সুজন থরথর করে কাঁপছে।তার শরীরের গরমে এই মুহূর্তে যদি তার শরীরটাকে পুকুরের জলে ভিজিয়ে রাখা হয় মনে হবে যেন মাছ সব সিদ্ধ যাবে!!
তিনদিন কেটে গেলো,অথচ জ্বরের কমাকমির কোন লক্ষণ নেই।খবর পেয়ে স্কুলের সহপাঠিরা ছুটে এলো।প্রধান শিক্ষক এসে পাশে ঘেঁষে বসলেন।অমনি সুজন ভয়ে আবার মূর্ছা গেলো।মনের স্পন্দনে যেন এখন আতংকের বসবাস।
কিছুক্ষণ পর আবার জ্ঞান ফিরে এলো।কিন্তু পাশে বসে থাকা বাবা’কে দেখে নিজের শরীর টা যেন খিঁচতে লাগলো সাংঘাতিক ভয়ে।সুজনের শরীরটা কাঁপছে থরথর।
কয়েকদিন পর আজ জ্বর কিছুটা কম। ডাক্তারের চিকিৎসায় শরীরের জ্বর কমলে ও মনের ভীতরে আতংকের ঝড়ের কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না দেখে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
দিন যতই গড়াতে লাগলো,ততই সুজন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে।সারাক্ষণ বেশ বোবা বেশে দিন কাটায়।নেই কোন হৈ হুল্লোড়,নেই কোন দুষ্টামি!!কয়েক দিন পর পর নিদারুণ অসুখে ভুগছে।শরীর টা যেন দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।আজকাল সে যেন অন্ধকারে থাকতে বড় বেশি ভালোবাসে।তা দেখে মায়ের কান্নার শেষ নেই।আর বাবা সারাক্ষণ অনুতাপের দুহনে জ্বলছেন।তিনি আজ বেশ বুঝতে পেরেছেন,শিশুদের শাসনে নয়,সোহাগের আদর দিয়ে মন জয় করা শ্রেয়।তা না হলে আজকের সুজনের হাল এমন হবার কথা না।
(সমাপ্ত)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কল্পনা বিলাসী ১৬/১০/২০২০ভালো হয়েছে
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ১৪/০৯/২০১৫শিশুদের স্নেহ ও যত্ন দুটোর সঙ্গে একটু শাসন ও প্রয়োজন। তবে বেশি ভীতিপ্রদ হলে ক্ষতিকারক। এমনটা না হলেই ভালো। গল্পটা শিক্ষনীয়। ভালো লাগলো।
টাইপিং এর সময় বানানে একটু লক্ষ্য / পুর্ণছেদ এর পর স্পেস প্রয়োজন।
সহপাঠীদের>(প্রথম স্তবক), ঝগড়া >, রক্তাক্ত >, লজ্জায়, সেরে>, উত্তমমধ্যম > -
ঐশিকা বসু ০৪/০৯/২০১৫যথার্থই বলেছেন। তবে গল্পটা একটু মন্তব্যমূলক হয়ে গেল। আরেকটু এডিটিং করা থাকলে যেন আরো ভাল হত।
-
এম এস সজীব ০৪/০৯/২০১৫ভাল
-
অভিষেক মিত্র ০৩/০৯/২০১৫অসাধারণ
-
কষ্টের ফেরিওলা ০৩/০৯/২০১৫' অনেক সুন্দর হয়ছে।
সামনে আর ও ভালো করবেন।