www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্ষণিক প্রেম

প্রতি প্রাত্যুষেই হাসিমাখা মুখ আর কাধে মস্ত ভারি ব্যাগ নিয়ে যে জীবটা উপরের দিকে তাকাতে তাকাতে উৎফুল্ল ভাবে আসে সেই আমাদের তাবিয়া।সুহাসিনী ঐ মেয়েটা বড্ড প্রফুল্ল।যেন বসন্তে ছাড় পাওয়া প্রজাপতি একই সাথে সে চড়ুইর থেকেও সংবেদনশীল ও বটে।বয়স আর কতো চৌদ্দ,পনেরো-ই হবে,
ঢেউ খেলানো তার চুল আর ঠোটের কোণায় এক ফালি মিষ্টি হাসি..
দুধের আস্তরণকেই মাটির রঙে কপোলের অবয়ব দেওয়া হয়েছে যেন এক নিখুত শিল্পির হাতে,তরুণী কিন্তু তরুর মতো চিকন ও না, ইষৎ লম্বা।
তার রুপের শেষ সীমানা পর্যন্ত রবি ঠাকুর-ই নিয়ে যেত পারে সেই সাধ্যি আমার নেই।
ঐ রূপেতেই কত মানুষের যে মন আটকেছে সে হিসাব কেইবা রেখেছে।

তাবিয়া এবারে মাধ্যমিক দিবে।এ বয়সে ছেলে মেয়েদের মাঝে একটা উত্তেজনাকর অবস্থা কাজ করে,তারা সব কিছুতেই থাকতে চায়;নিজেকে বড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই সবার উপর। তাবিয়া সুস্থ স্বাভাবিক এক টা চঞ্চল মেয়ে সেও এর ব্যাতিক্রম না।
ওর বাবা মাঠে কৃষি কাজ করে আর মা গৃহস্থালীর কাজ করেন।ওর ছোট বোন টা এবার সমাপনি পরিক্ষা দিবে।
বড় বোন হিসাবে আলাদা একটা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা ওর সব সময় ই থাকে।কোমল ওই মুখটাই একটা ভারি ভাব আনার ব্যর্থ চেষ্টা ওর নিত্য দিনের কাজ।কিন্তু ভারি ভাব তো আসে না আসে একটা ম্লান দু:খী ছাপ!



তাবিয়ার দিন শুরু হয় কাক ভোরে,ধর্ম কর্মের ব্যাপারেও তাবিয়া গুরুজন দের আশীর্বাদপুষ্ট।
টিউশন আর স্কুলের ব্যাস্ততা দিনভর,স্কুল থেকে
বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ-ই একদিন রাস্তায় একটা ছেলের সাথে দেখা হলো।এটা নতুন কিছু না;পথে অনেকের সাথেই দেখা হয়।কিন্তু এই দেখাটা সবার থেকে আলাদা মনে হচ্ছিল।তাবিয়ার চোখে এক ধরনের বিস্ময়তা প্রকাশ পেল।
পায়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলা মেয়েটার দৃষ্টি যেন নরছিলই না সে নিজেও জানেও কেন এত অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে সে যেন মনে হচ্ছে এই ছেলেটাই তার অনেক পরিচিত!


ছেলেটার নাম শুভ্র,এবারে উচ্চ মাধ্যমিক দিলো।
ইষৎ স্বাস্থের অধিকারী সুদর্শন তরুণ
মাধ্যমিক,চেহারায় একটা মায়াবি ভাব।শুভ্র একটা ট্রাউজার আর হাফাহাতা ধরনের গেঞ্জি পড়ে।
মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক ঢাকা থেকে শেষ করেছে।
এই ৪ বছরের শুধু দুই টা ঈদ ছাড়া আর গ্রামের বাড়ি আসে নাই।শুভ্রর বাবা মা আর ছোট বোন মিলে পরিবার।পুরো পরিবার-ই থাকতো একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে।
এখোন পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয় নি,তাই সে একটু ছুটিতে আছে।
আজ কাল শহর,গ্রামের সবাই ই বেশ সচেতন। পরিক্ষা শেষ হতে না হতেই কোচিং ক্লাস শুরু করার ব্যাস্ততা ওঠে প্রবল বেগের সাথে।
কিন্তু শুভ্রর কথা ও এই ক'দিন ছুটিতে থাকবে।রেজাল্ট দেওয়ার পর বাকি সব ভাবা-ভাবি!
পরিক্ষা যে খারাপ হয়েছে সেটা ঠিক না,ছোট থেকেই পড়ালেখায় বেশ যত্নবান।
ছুটির দিন গুলো কাটাতেই ওর গ্রামে আসা
ক্লাস ৮ পর্যন্ত ও এখানেই থেকেছে,সে সুবাদে কিছু বন্ধু বান্ধবও আছে।তাদের সাথে গল্প গুজব করে ওর সময় গুলো বেশ ভালোই কাটছে।
নিয়ম করে সকাল সকাল মুক্ত বাতাস উপভোগ করতে শুভ্র ছাড়ছে না।সেই সাথে বন্ধুদের কে নিয়ে রোজ বিকেলে নদী পাড়ে যাওয়া ওর এক প্রকারের রুটিন হয়ে গেছে।

সেদিন তাবিয়া কে দেখে শুভ্রর কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে।এমন হয় মাঝে মধ্যে।কাউকে দেখলে মায়া লাগে ইচ্ছে হয় কাছে যেতে।কিন্তু করা যায় না। আর তাই হয়ত বেশি করে যেতে ইচ্ছা করে।মানুষের মন টাই এমন যেটা পাই না সেটার জন্য আকুলি বিকুলি করে।

।প্রতিদিন রাস্তার ধারে সেই জায়গাটায়, যেখানে তাবিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল সেখানে শুভ্র দাঁড়িয়ে থাকতো, তাবিয়ার আসার সময়।
ওর আসার সময় টা শুভ্র বেশ রপ্ত করে ফেলেছিল।

ও রোজ-ই দাড়াতো। সাদামাটা বেশে,আধুনিক ফ্যাশান টা ঠিক ওর রোচে না।ট্রাউজারের সাথে হাফ হাতা গেঞ্জি আর পায়ে এক জোড়া দুই ফিতে ওয়ালা স্যান্ডেলেই অপেক্ষা করত;প্রেম প্রিয়াসা মেটাবার জন্যে! কেন দাড়াতো সেটা তাবিয়া জানেনা।জানবার চেষ্টাও করে নি।
তবে তাবিয়ার যেন এটা অভ্যাসে বদলে গেছিল শুভ্রকে দেখলেই মন ভালো হয়ে যেত আনমনেই হেসে ফেলত আর না দেখতে পেলেই ওর মনের আকাশে অন্ধকার মেঘেরা এসে জমাট বাধত।ও নিজেও জানেনা কিসের এমন মায়া।মাঝে মাঝে ওদের স্কুলের সামনেও যেত আত্নচোরা সুবোধ শুভ্র।তাবিয়ার জানালায় একটু উকি আর কাজল মাখা হাসিটা সকালের মিষ্টি রোদে মিশে যে নেশার ঘোর তৈরি হতো তাতে আসক্ত শুভ্র।
এভাবে বেশ অনেক দিন-ই চলে গেলে।
শুভ্রর রেজাল্ট বের হলো,এলাকার সবাই মিষ্টি পেল,এলাকায় বেশ একটা সুনাম ছড়িয়ে গেল।
এর মাঝে চলে গেল প্রায় এক মাস।এবারে শুভ্র কে ঢাকা গিয়ে কোচিং এ ভর্তি হতে হবে। শুভ্রর বাবা রেজাউল করিম,সরকারী চাকুরীজীবী। বেশ মোটা স্বাস্থের গোলগাল মানুষ,মুখে খোচা খোচা দাড়ি।চুল গুলো এক দমই ছোট করে কাটা।যাকে বলে আর্মি ছাটে চুল কাটা।
শুভ্রর না মিস রেহালা বেগম।মাধ্যমিক পাশ করার পরেই তার বাবা সরকারী চাকুরীজীবী রেজাউল করিম কে দেখে বিয়ের ব্যাবস্থা করেন।সেখান থেকেই গৃহীণি রেহালা বেগম।সন্তান দের পড়ালেখা নিয়ে বেশ সচেতন।
রেজাউল সাহেব ঢাকাতেই আছেন।সে ফোনে মিস রেহালা বেগম কে জানালেন ঢাকায় ফিরে আসতে, হাতে বেশি সময় নেই।
ছেলে কে ভর্তি পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।তাই ঢাকা যেতে হবে।


প্রতিদিন একবার করে হলেও তাবিয়ার সাথে শুভ্রর দেখা হয়।ঢাকা চলে যাবে শুনে ওর বেশ ভালোই লেগেছিল কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো তাবিয়ার সাথে আর দেখা হবে না!সারা রাত এই চিন্তায় ঠিক মতো ঘুমুতে পারলো না;শেষে ঘুম এলো মাঝ রাতের পরে।গভীর ঘুম,চারদিক শান্ত;বাইরে ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।বিশাল রাতের এই নির্জনতা যেন শেকল বন্দী!কোন দিকেই তার প্রবাহ নাই।এমন নির্জন রাতের গভীর ঘুমে শুভ্র মগ্ন।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শুভ্র দেখছে,সে আর তাবিয়া তার সামনেই হেটে যাচ্ছে,একা নয়!সাথে নতুন কেউও আছে।ব্যাপার টা বড় আশ্চর্যের,তাবিয়াকে দেখে তো আমার বেশ ভাল মেয়েই মনে হয়েছে এর সাথে এ কে?
আবার নিজেই নিজেকে বলছে-হ্যা ও তো ভালো মেয়েই।ওর ই পছন্দের কেউ হয়ত!পছন্দ করা তো দোষের কিছু না।
আকস্মীক যে ঘটনা গুলো মানব মন কে উত্তেজীত করে তোলে,যাকে সে মেনে নিতে পারে না সহজ কোন ব্যাখায় ;তেমন কোন কিছু দেখলেই মানুষের ঘুম ভেঙে যায়।
স্বপ্ন বুড়োর জগৎ ছেড়ে সে পাড়ি জমায় বাস্তবে







কিন্তু শুভ্র ঘটনা টা কে সহজ ভাবে ব্যাখা দিয়ে মানিয়ে নিয়েছে তাই ওর ঘুম ভাঙলো না।গভীর ঘুমে আবার তলিয়ে গেল।স্বপ্নের মাঝে ঈষৎ উত্তেজনায় ঘুম টা একটু হালকা হয়ে এলেও এখন ও ভারী ঘুমে।স্বপ্ন টার ও সময় শেষ।



ঘুম ভাঙতেই ব্যস্ত ভাবে বিছানা থেকে নামল শুভ্র।গত রাতের স্বপ্ন টা ভিন্ন ব্যস্ততার আর কিছু নেই।
বিছানায় ধপাস করে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতে দেখল অদূর পুকুর টার ওপার থেকে সূর্য উঠছে!
ভর পেট খাওয়ার পর একটু ভালো রকমের মোটা মানুষ হাটতে বের হলে যেমন অলসতার সাথে আস্তে ধীরে আসে ঠিক তেমন ই চলন আজ কের সূর্য টার!
ও খানিক ক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনে উদাস হয়ে গেল।
ক্ষণিক ক্ষণে হঠাৎ-ই চৈতন্য ফিরে এল শুভ্রর,কাল রাতের ঘটনা টা মনের মাঝে হিসাব করে বুঝতে পারল এটা নিছক ই একটা স্বপ্ন।
কিন্তু শুভ্র ঠান্ডা হতে পারলো না মনের মাঝে একটা অস্থীরতা চলতে লাগল।শেষ মেষ ঠিক করলো তাবিয়াকে ও সব টা খুলে বলবে।

শুভ্রর ছোট কাকার মেয়ে পড়ে তাবিয়াদের স্কুলের ক্লাস ৮ এ।
নাম ঐশী।
-কুকড়ানো চুল,একটু ডানিপিটে স্বভাবের।
ঐশীর থেকেই তাবিয়ার নাম টা
জেনে নিল একটু কৌশলে,বিনিময়ে অবশ্য একটা কাপ আইসক্রিম খাওয়াতে হয়েছে





একদিন তাবিয়া রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল একাই, সাথে ওর কোন বান্ধবী ছিল না।রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল শুভ্র সে এগিয়ে গিয়ে বুকে ধরফরানি নিয়েই কথা বললো ওর সাথে বললো;
আমি তোমাকে পছন্দ করি,তোমাকে দেখতে আমার ভালোলাগে।
তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই আমি তোমাকে শুধু দেখতে চাই।আর বলতে চাই ভালোবাসি! অনেক ভালোবাসি!


কথা গুলো যেন তাবিয়ার কানের কাছে কেউ বার বার বলছিল সারা রাস্তা দিয়ে ও শুধু ভয় নিয়েও মুচকি হাসছিল।।
তাবিয়া বলে গেল -আপনি সুন্দর আর মানুষ স্বভাবত-ই সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট তবে আমি আপনাকে কোন স্বপ্ন দেখাতে চাই না আপনি পথে না দাড়ালেই আমি খুশি হবো।





অল্পতেই যেন বিরহের সূচনা করে দিয়ে গেল।
এরপর থেকে শুভ্র আর রাস্তায় দাড়াতো না।
এভাবে চলে গেল অনেকগুলো দিন দেখা হয় না ওদের।কিন্তু তাবিয়ার খুব মনে পড়ে ছেলেটার পাগলামী ওর একটু হাসি দেখেই জগৎ জ্বয় করা আনন্দ দূর থেকেই ওকে দেখা..
কিন্তু বেশ অনেক দিন হিয়ে গেল কেউ আর ওকে হাসায় না পাগলামী করে না তাই হয়ত ছেলেটার কথা বার বার মনে পড়ে..
একদিন টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তাবিয়া।মোড়ের কাছে ব্যস্ত ওই রাস্তার ওপাশ টাতে দেখে বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠছে;ছলছলে জলে ভেসে যাচ্ছে তাবিয়ার চোখ দুটা,ভিতর টা যেন অসহনীয় একটা পীড়াই মেতেছে।
ওর চাহনী যেন শুভ্রকে বিদায় দিচ্ছে,যাও প্রিয় ছেড়ে দিলেম!আর হবে না দেখা,ভালো থেকো তুমি।

সিটে বসে জানালা দিয়ে তাকাতেই শুভ্রর চোখ পড়ল তাবিয়ার দিকে

তাবিয়ার চোখে ভাসা পানির জোয়ারে কতটুকু ঠিক ঠাহর করলে সে বলতে পারি নে,তবে তাবিয়ার চোখের পানি টা শুভ্রর দৃষ্টি ফাকি দিতে পারলো না।

এ জল টুকু যে তার জন্যই বিদায় বেলার উপহার সেটা বুঝতে আর বাকি থাকল না,ইচ্ছে হচ্ছিল ছুট্টে গিয়ে বলে -আর কেদো না পাখি টি,অপেক্ষার বেলা ফুরিয়েছে!

কিন্তু বেলা হয়ত আসলেই ফুরায়ে যায় নাই তাই সেদিনের আধো ছায়া খেলার শেষ টা হলো বিরহ তেই।



কয়েক মাস পার হয়ে গেল,শুভ্রর স্মৃতিতে ভাটা পড়েছে কিন্তু মায়া এখোন যায় নি।ওর মাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ।
বেশ খোলামেলা ভাবেই দিন কাটছে,বাবা মা ও কিছু বলে না।শুভ্র গেছে প্রাই পাচ থেকে ছয় মাস হলো,ও এখোন ভালোবাসা কে পুষিয়ে রেখেছে আপন ভাবে
এর মাঝে শুভ্র একদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে এলো।

যেই যাইগাটাই ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, সকলে স্কুলে যায় কিন্তু তাবিয়ার দেখা নেই!
বুঝতে পারছে না ও কেন নেই।
পরের দিন ও একই সময় ওই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে থাকলো,তাবিয়ার দেখা নেই!
মন খারাপ করে শুভ্র ফিরে আসলো,সারাদিন মন ভার।ঠিকমতো কারো সাথে কথা বলছে না, পুরানো বন্ধুরা ডাকতে আসলে এড়িয়ে যাচ্ছে।রাতে বিছানায় এপাশ ও পাশ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো। খুব ভোরেই ঘুম ভাঙলো।বাড়ির বাইরের পুকুর টার ওপাড়ে সেই বাকা নারিকেল গাছ টা চোখে পড়ল।কত না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে।আভসা স্মৃতি গুলো রঙিন হয়ে ধরা দিলো এর ক্যানভাসে।মনে পড়ল পাড়ার ছেলেদের সাথে নারিকেল গাছে ওঠা,গাছের মাথা থেকে পুকুরে ঝাপিয়ে পড়া,কত কত স্মৃতি মেশানো বাকা এই প্রবীণ গাছ টার সাথে।ভাবতে ভাবতে ভোরের আলো আধারী কাটিয়ে সকালের সূর্য মিটিমিটি হাসতে শুরু করল।পিছন থেকে অল্প স্বরে ভাঙা কন্ঠে ভাইয়া,ও ভাইয়া ডাক শুনে পিছনে তাকালো।শুভ্রর ছোট কাকার মেয়ে ডাকছে,দাদি তার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে। খাবার খেয়ে উঠে আবার পুকুর পাড়ে গিয়ে বাকা গাছ টাই একটু বসলো আর পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকলো,অজানা কোন এক ভাবনায় ডুবে আছে শুভ্র।হঠাৎ-ই মনে পড়লো স্কুলের তো সময় হয়ে গেছে।ছেলে মেয়েতা দলে দলে স্কুলে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি করে রাস্তার পাশের এই গাছটার কাছে এসে দাড়ালো।ততক্ষণে প্রায় সকলেরই স্কুলে পৌছানো শেষ।শুভ্র মন খারাপ করে ফিরে আসতে যাচ্ছে এমন সময় দেখলো তাবিয়ার মতো দেখতে একটা মেয়ে দূর থেকে আসছে।তাবিয়া কাছ আসতেই চঞ্চল হয়ে উঠলো দু জোড়া চোখ! ওর কান বেয়ে মুখে কয়েকটা চুল ভাসছে।শুভ্র আর একটু কাছে এসে স্নিগ্ধ সে চুল ক'টি আলতো করে ছুয়ে কানের ওপাশে নিয়ে গেল আর ম্লান স্বরে বললো,"ভালোবাসি,ভালোবাসি ওই কাজল চোখের অস্থিরতা!
ভালোবাসি ওই কপোলের স্নিগ্ধ কমলতা।"
তাবিয়া আর কিছু বলতে পারলো না।
লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেছে সারা মুখ!

আর মনে মনে বললো, "ভালোবাসি তোমার ওই অপেক্ষা,
ভালোবাসি!বড্ড ভালোবসি,
তোমার নম্র ছোয়া!"
মনের কথাটাই যেন পড়তে রক্তিম মুখটা দেখে পড়ে নিল শুভ্র।
ও বললো তুমি চিন্তা করো না লক্ষিটি!আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফিরে আসবো তোমার কাছে,তোমার হয়ে!
তাবিয়া কাপা গলায় শুধু একবার বিদায় দিলো বললো,"ভালো থেকো ভালোবাসা।"
শুভ্র বাড়ির দিকে ফিরে আসছিল চঞ্চল মনে।তাবিয়া অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে ছিলো, শুভ্র পিছে ফিরে দেখলো তাবিয়া এখোন যায় নাই।ও বুঝতে পারলো তাবিয়ার কষ্ট হচ্ছে, শুভ্রর ও খারাপ লাগলো কিন্তু ও বুঝল আমাকে শক্ত হতে হবে।তাই ইশারা করলো স্কুলে যাও পাখিটা।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তাবিয়া বুঝতে পেরে স্কুলের দিকে ঘুরে হাটতে শুরু করলো এ হাটা নি:শ্বব্দে।রাস্তার দুই পাশের গাছের ছায়ায় হাটছিল আর ভাবছিল কবে শেষ হবে এ বিরহের যে বিরহ আজ শুরু হলো ভালোবাসার ই প্রথম লগ্নে। ভাবতে ভাবতেই তাবিয়া স্কুলের দিকে আগালো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০১/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast