www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শেষ পৃষ্ঠায় একাকীত্ব

.
...লেখায়ঃ শামসুজ্জামান স্বপ্ন (পেত্নীর বর)
গল্পের ছেলেটা কাদতো না কখনোই, ছেলেদের কাদতে হয় না।
সেদিনও ছেলেটার চোখে একফোটা জল ছিলো না যেদিন মেয়েটা ওকে বলেছিল সামনের মাসে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে নীল,
বুকের ভেতর নেমে আসা অশ্রুকে আগলে ছেলেটা কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছিলো মেয়েটাকে। বলতেই পারেনি তোকে ভালোবাসি, নিজের চাইতেও বেশী ভালোবাসি তোকে।
যেদিন ছেলেটার হাজারটা স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল সেদিনও ছেলেটার চোখে অশ্রুর বৃষ্টি হয়নি নেমে আসেনি নীরব ঝর্ণাধারা,
বুকের ভেতর আগল দিয়ে রেখেছিল বুনো পাহাড়ি সে ঢল। কারণ ছেলেটা জানতো আবেগ দিয়ে স্বপ্ন বোনা যায় জীবন চালানো যায় না।
ছেলেটা বিশ্বাস করতো ওকে নিয়ে নিত্যনতুন রঙীন স্বপ্ন দেখা মেয়েটিও একসময় বাস্তবতা বুঝে যাবে ওকে ভূলে নতুন কাউকে ঠিকই একসময় আপন করে নিবে, হয়তো ক্ষণিকের আবেগ মেয়েটার চোখে অশ্রু আনবে কিন্তু ক'ফোটা অশ্রু মোচন করতে গিয়ে সে মেয়েটার সারাজীবনের অনুশোচনা হতে চায়নি। তাই আগল দিয়েছিল বুকের সমুদ্রে। বেধে রেখেছিল অশ্রুর বিষবাষ্প।
গল্পের মেয়েটাও অসম্ভব ভালোবাসতো নীল নামের এক অনুভূতি শুন্য একটা পাথরকে, মেয়েটা টার্মস টমাস এর মতই বিশ্বাস করতো ফুল ফুটাতে চাইলে শক্ত পাথরেই ফোটাতে হয় তাহলে সেই ফুল শুধু একজনের জন্যই শোভা বিতরণ করবে।
কিন্তু বইয়ের পাতা আর জীবনের বাস্তবতা যে এক জিনিষ নয় সেটা বুঝতে পারেনি মেয়েটা, হয়তো বুঝতেই চায়নি।
প্রত্যেকদিন ছেলেটাকে নিয়ে একটা করে নতুন স্বপ্ন আকা মেয়েটার বাসা থেকে একসময় বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে। অনুভূতিহীন ছেলেটাকে এসব বললে ছেলেটা কোন গুরুত্বই দিত না।
এবার মেয়েটি নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। পরিবার থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। ও বিষয়টা নীল কে বললে অনূভূতি শুন্য ছেলেটি ওকে কংগ্রাচুলেট করে। আঘাতে জর্জরিত মেয়েটি অশ্রু অভিমানে দুরে সরে আসে ছেলেটির থেকে। সিদ্ধান্ত নেয় অনেক দুরে চলে যাবার দৃষ্টি সীমার বাইরে।
৩০ শে এপ্রিল গায়ে হলুদের রাতে সবাই যখন আনন্দে আত্মহারা তখন কেউই জানতো না পৃথিবী নামের এ স্বার্থপর স্থান টাকে চিরবিদায় বলেছে অভিমানী মেয়েটি কাউকে জানতেই দেয়নি তার স্বপ্নগুলো মরে যাওয়ার সাথে সাথেই মরে গিয়েছিল সে আর সেই মরা লাশটা বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারছিলনা বলেই মুক্তি দিয়েছিল নিজেকে চিরমুক্তি।
ছেলেটা ভাবতেও পারেনি মেয়েটার আবেগ এতটা মারাত্মক ছিল। সে ভেবেছিল অশ্রুজল শুকিয়ে গেলে নিজেকে ঠিকই গুছিয়ে নিবে অভিমানী, কিন্তু ছেলেটির মিথ্যে অনূভূতি শুন্যতা যে সারাজীবনের জন্য ছেলেটির চোখে অশ্রুর অস্তিত্ব একে দিবে বুঝতেই পারেনি। বুঝতেই পারেনি যে ছেলেটি মেয়েটি কি রঙের ড্রেস পড়ে আছে তা না দেখে বলতে পারলেও ওর বুকের ভেতরে কতটুকু ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।
না মেয়েটি যেদিন সব ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেদিনও কাদেনি ছেলেটি তবে সেদিন কোন অভিনয় ছিলনা। সত্যিই কাদতে পারছিলনা ছেলেটি। এতদিন বুকের ভেতরে অশ্রু আগলে রাখা ছেলেটি হাজার চেষ্টা করেও ওর চোখে একফোটা অশ্রু নামাতে পারেনি। হয়তো বিধাতাই সেদিন ওর কাদার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন।
মেয়েটি অনেক গুলো স্বপ্ন দেখেছিল ওকে নিয়ে, কোন এক ফাগুনের রাতে ওকে নিয়ে জোছনাবিলাস এ মেতে উঠতে চেয়েছিল শহরের রাস্তায়। তারাদের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে হাটতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ফুটপাতের রাস্তা থেকে সস্তা দামের আইস্ক্রীম খেতে চেয়েছিল। বৃষ্টির রাতগুলোতে বিদ্যুৎ চমকালে ওকে জড়িয়ে খুজে নিতে চেয়েছিল ছোট্ট আশ্রয়।
বিকেলের বৃষ্টিতে হাত ভেজাতে চেয়েছিল ছেলেটির চোখে হাত রেখে।
অনূভূতি শুন্য ছেলেটির চোখে এখন অশ্রু আসে, সময়ে অসময়ে আসে।
একাকীত্বের প্রতিটি প্রহরে যখন ফাগুনের রাতে আকাশে জোছনা ডেকে যায় ছেলেটির চোখে তখন নোনাজল চিকচিক করে।
শ্রাবণের কালো মেঘ চিরে যখন আলোর ঝলকানি হয় তখন ছেলেটিরও বুক চিরে নেমে আসে অশ্রুজল। বিকেলের বৃষ্টি যখন ধরাকে সিক্ত করে, কেমন করে জানি ছেলেটিরও গন্ডদেশ সিক্ত হয়ে যায় হৃদয়ের বৃষ্টিতে।
প্রত্যেকটা দিন বিকেলে টেবিলের উপর চা রাখে ছেলেটি।
দুইকাপ চা, এক কাপ ঠোটে, আরেক কাপে বাড়ে শুন্যতা..........
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast