www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গল্প

**** বোবাকান্না ******
লেখায়: ®শামসুজ্জামান স্বপ্ন
(ছোট পরীর আব্বু)
নীল স্কার্ট পড়া মেয়েটাকে প্রতিদিনই বড় বাড়িটার ব্যালকনিতে দেখতাম আমি, বড় বড় মায়াবী চোখের মেয়েটাকে খুব ভালো লাগতো আমার। ওর হাটা চলা সব কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করতাম। তবে সব ঠিক থাকলেও একটা জিনিষ আমি খেয়াল করিনি সেটা হল কখনওই আমি মেয়েটাকে কারো সাথে কথা বলতে দেখিনি।
প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার পথে ওদের বাড়িটা পড়তো। তাই দিনে একবার হলেও ওকে দেখতে পেতাম আমি। এমন করে চলতে চলতে কখন যে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়লাম, এরই সাথে আমার বন্ধুমহলে বিষয়টা প্রচার হয়ে গেল। সব বন্ধুরা আমাকে মেয়েটাকে নিয়ে ক্ষেপাতো। এর মধ্যে রিফাত ছিল আমার সবচাইতে কাছের বন্ধু। একদিন ও আমাকে ডেকে বলল এই অয়ন শোন, তুই কি সত্যি কোন মেয়েকে ভালোবাসিস? আমি উত্তরে হুম বলায় ও মেয়েটার নাম জানতে চাইল, আমি তখন ওকে বললাম আমি তো মেয়েটার নামই জানি না,। আমার কাছে একথা শোনার পর রিফাত তো হেসেই খুন, হাসতে হাসতে বললো হায়রে আমার রোমিও বন্ধু, যে মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তারই নাম জানিস না।
রিফাতের কথাটা শুনে অনেক লজ্জা পেয়েছিলাম সেদিন, ভেবেছিলাম আসলেই তো অন্তত অই মেয়েটার নাম তো জানা উচিৎ ছিল আমার। সেদিন নিজের মাল্টি ট্যালেন্টেড ইগোকে বিসর্জন দিয়ে রিফাতকে বলেছিলাম "দোস্ত আমি সত্যিই ওই মেয়েকে অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলেছি, এখন বলতো কি করা যায়। প্রতিউত্তরে ও বললো আমাকে আগে মেয়েটাকে দেখা দেখি, তারপর সব প্লানিং করা যাবে। ওই মহুর্তে রিফাতের উপর খুব রাগ হচ্ছিল আমার, শালা আমি মরছি এক যন্ত্রণায় আর উনি আগে দেখবেন তারপর প্ল্যান-প্রোগ্রাম। কিন্তু তখন নিরুপায় এর মত ওর কথা মেনে নিলাম। সিদ্ধান্ত হল আজ কলেজ ছুটির পর রিফাতকে সাথে নিয়ে ওই মেয়েটার বাসার সামনে যাব আমি।এরপর ও মেয়েটাকে দেখে বুদ্ধি বের করবে কি করা যায়। অপেক্ষার প্রহরগুলো খুব দীর্ঘ হয়, আমার মনে হচ্ছিল সেদিন সময়টা যেন থেমে গেছে আটকে গেছে ঘড়ির কাটা। অবশেষে সেই কাঙ্খিত মহুর্তটা এল, কলেজ ছুটির পর দুই বন্ধু মিলে হাটতে লাগলাম ওই মেয়েটার বাড়ির রাস্তা ধরে, মনে হতে লাগল রাস্তাটা যেন আর ফুরোচ্ছেই না, অবশেষে একসময় ওদের বাসার সামনে চলে এলাম দুজনেই, ওদের বাসাটা দেখেই চিনতে পারলো রিফাত, আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো ও " রিফাত তুই শিওর এই বাড়িটাই" আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম হুমম কেন? ও বললো তুই কি আসলেই মেয়েটার নাম জানিস না, আমি বললাম নাতো, কেন কি হয়েছে? আমিও ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে কিছুটা অবাক হচ্ছিলাম, পরে বললাম রিফাত, বন্ধু সত্যি করে বলবি কাহিনীটা কি? আর তুই কি ওই মেয়েটাকে চিনিস? তোর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে তুই ওই মেয়েকে চিনিস আর ওর সম্পর্কে অনেক কিছু জানিস, যা অবশ্যই সেটা ভালো কিছুই নয়, অর্থাৎ খুব কষ্টকর আর ভয়ংকর কিছু, দোস্ত প্লিজ আমাকে আর ঘোরের মধ্যে রাখিস না, প্লিজ সবকিছু এখনি বল, ও তখন ওই বাড়িটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো "দেখতো ওই মেয়েটাই কি না?" আমি ওদিকে তাকালাম, হ্যা ওই মেয়েটাই তো, ওকে বললাম হ্যা, ওই মেয়েই, কেন বন্ধু কি সমস্যা প্লিজ আমাকে বল, আমার আর সহ্য হচ্ছে না, নার্ভগুলো ছিড়ে যেতে চাচ্ছে, প্লিজ এখনি বল। এরপর রিফাত আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বললো চল আগে গিয়ে কোথাও বসি তারপর তোকে বলবো ওই মেয়ের স্টোরি।
হাটতে হাটতে কৈলাশ রঞ্জন মাঠের মধ্যে এসে বসলাম, অনেক্ষণ চুপ থেকে শুরু করল রিফাত, ওই মেয়ের নাম মুন্নি, আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমাদের স্কুলে ক্লাস থ্রি তে ভর্তি হয় ও। আমাদের পাশের বাসায় ভাড়া থাকতো বলে একসাথে স্কুলে যেতাম আমরা। ও যখন খুব ছোট তখন ওর আব্বু-আম্মুর মাঝে খুব ঝগড়া হত। ওর আব্বু আরেকটা মহিলার প্রতি খুব দুর্বল ছিল যা ওর আম্মু কখনোইই মেনে নিতে পারে নি। স্বভাবতই প্রতিদিন ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো, এসব দেখলে একটা শিশুর যা হয় তাই হল, দিনে দিনে খুব একাকি আর চুপচাপ স্বভাবের হয়ে গেল ও। ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিক কাহিনিটি ঘটে ও যখন ক্লাস ফাইভে পড়তো, একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে ওর বাবা ওর মাকে খুন করে গলায় দড়ি বেধে সিলিং এ ঝুলিয়ে দিচ্ছে, হতভম্ব মেয়েটি চিৎকার দেয়ার আগেই ওর বাবা এসে ওর গলা চেপে ধরে। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় ও। মারা গেছে ভেবে ওর বাবা ওকে ওই অবস্থায় রেখে ওর মাকে সিলিং এ ঝুলিয়ে রাখে। তার আগে ওকে ওর মায়ের পাশে টেনে নিয়ে ওর মায়ের হাতের ছাপ ওর গলায় বসিয়ে দেয়। তারপর চলে যায়। ওর বাবা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে আসে ওর। সাথে সাথে দেখে ওর বাবা বুদ্ধি করে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে গেছে। কোনমতে দরজাটা খুলে পাশের বাসার কাছে এসে দরজাটা নক করেই আবার অজ্ঞান হয়ে যায় ও। ওদের পাশের বাসার মালিক ওই ওই অবস্থায় পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। বিকেলে ওর জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু বিধি বাম, ওর বাবা গলা চাপার কারণে আর প্রচন্ড মেন্টাল শক থেকে চিরদিনের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে ও। কিন্তু ওর সাক্ষীতেই ওর বাবাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থেকে ওর এই খালার বাসাতেই ঠাই হয়। এরপর থেকে শুরু হয় ওর আরেক সমস্যা ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করে ও। একটা সময় পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই ওর খালা খালু এই ঘরে বন্দী করে রাখতে শুরু করে। এখন এই একটা ঘর আর ব্যালকনিতে বাধা পড়ে গেছে মেয়েটার জীবন। মেয়েটার জন্য মাঝে মাঝে খুব দু:খ হয় রে কিন্তু কিছুই করার নেই। এটুকু বলেই থামলো রিফাত। তাকিয়ে দেখি ওর দুচোখ পানিতে টলমল করছে, আমার চোখেও কেন জানিনা নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছে পানি। রিফাতকে বিদায় জানিয়ে হাটতে শুরু করলাম। যে করেই হোক ওই মেয়েকেই জীবনসাথী বানাবো আমি, ওর অনুভূতিহীন নিশ্চল চোখে আবার আমি স্বপ্ন একে দিব, নাহয় কথা বলতে পারবেনা, নাহয় সমাজে সবার সামনে লজ্জিত হতে হবে আমাকে। ভয় পাইনা আমি। আমি যে ওকে পাব, করতে পারবো একটা বোবাকান্নার অবসান আর তা না হলে আরেকটা গল্পের সৃষ্টি হবে সুচনা হবে আরেকটা বোবাকান্নার।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৪/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ২৬/০৪/২০১৭
    মার্জিত লেখকের স্বচ্ছন্দ লেখনী
  • বেশ ভাল
  • দারুণ ছোট গল্প!!!!
  • মধু মঙ্গল সিনহা ২২/০৪/২০১৭
    ভাল বিষয়।
  • সাঁঝের তারা ২২/০৪/২০১৭
    খুব ভাল বিষয়। কিন্তু লেখাটা একটা দীর্ঘ প্যারাগ্রাফের মত। আশাকরছি লেখক প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখা দেখে শিখবেন সাজিয়েগুছিয়ে গল্প লিখতে - গল্পের মান উন্নত হবে। সে আশা রইল...
 
Quantcast