www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রিয় শান্ত বন্ধু

প্রিয় শান্ত বন্ধু,

আল্লাহর কাছে সর্বক্ষণ তোর জন্য দোয়া করি স্বর্গের সর্ব উচ্চ স্তরে তোর আত্মার বসবাস হবে। আমি তন্দ্রা লয়ে জাগ্র হই বার বার তোর মুখ দেখে দেখে, তোর মুখের মিষ্টি হাসি আমায় বার বার ডেকে তুলে।

তোর কি মনে আছে, আমরা এক সময় খুব ছুট্ট ছিলাম? তুই যখন রাস্তা থেকে আমাকে ডাকতি সবুজ সবুজ বলে আমি তখন বলতাম বন্ধু আসিতেছি, ভাত মুখে নিয়েই দৌড় দিতাম তোর লয়ে। দু'জনে কাধে কাধে হাত দিয়ে চলতাম বাড়ির পাশের ক্ষেতে যেখানে অন্য সব বন্ধুরা ক্রিকেট খেলার জন্য অপেক্ষা করছে।
তোর কি মনে আছে? খেলা শেষ করে সবাই মিলে মাগরিবের নামাজ পড়তে যেতাম।
নামাজ পড়া শেষ করে দোকানে গিয়ে চা খেতে খেতে একটু মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টুমি করতাম সবাই মিলে।
তুই একটু শান্ত সভাবের ছিলো, কথা কম বলতি।
তোকে নিয়ে অনেক মজা করতাম। শুধু তোকে না, আমাদের সার্কেলের সবার আলাদা আলাদা নাম ছিলো যে নাম দিয়ে ব্যাঙ করতাম এক জন আরেক জনকে।

তোর কি মনে আছে?
যখন বৈশাখ মাস আসতো আমরা ঘুড়ি বানাতাম কত বড় বড় ঘুড়ি। রৌদ্র মাখা মাঠে খালি শরীরে সারা দিন ঘুড়ির পিছু পিছু দৌড়াতাম,সারা শরীরে ঘাম,ধূলি মাখামাখি। খাবারের কথা মনেই নেই।
তবুও দু'জন ঘুড়ি নিয়ে ব্যস্ত আছি, মায়ে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান, হাতে ইয়া মোটা বাঁশের লাঠি, দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে নিয়ে যেত।

তোর কি এখনও মনে আছে?
শৈশবের স্মৃতি।
পুকুরে সাতার কেটে কেটে পানি গোলা করে দিতাম।
সারা দিন পুকুরে দুষ্টুমি করতাম।
বিকেল বেলা সবাই মিলে বাড়ির উঠুনে লুকোচুরি, গোল্লাছুট, কত কত সব খেলায় মেতে থাকতাম।

তোর কি মনে আছে?
এক সময় তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় চলে আসলি, কি যেনো একটি কাজ পেয়েছিলি।
তখন আর তোর সাথে দেখা হতো, কোনো বিশেষ দিন ছাড়া।
প্রতি ঈদে তুই আসতি বিশেষ করে চাঁদ রাতে,আমরা সব বন্ধুরা মিলে তোর জন্য অপেক্ষা করতাম রাস্তায় বসে বসে।

তোর কি মনে আছে?
ঈদের দিন আমারা কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতাম, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, আবার কোনো কোনো ঈদে চাঁদপুর নদী দেখতে যেতাম।
নৌকায় ঘুরতাম, কাশবনের চরে নৌকা নিয়ে সবাই কত যে আনন্দ করতাম।


এক সময় আমি তোকে বেশ জ্বলাতাম, আমাকে একটা কাজ দেওয়ার জন্য, তুমি আমাকে সব সময় বলি বন্ধু আমি যে কাজ করি তুই এই কাজ কখনও করতে পারবি না।
আমি তোর কোনো কথাই শুনতাম না, তোকে জ্বালাতে জ্বালাতে এক দিন তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে গেলি, তুই যে কাজ করছি সে কাজই আমাকে দিলে, আমি মনের আনন্দে কাজ করতাম।
এক দিন তোর ওখান থেকে চলে আসলাম কারণ আমি তখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম।
তোর কি মনে আছেরে বন্ধু, আমার শান্ত বন্ধু?

তোর কাছ থেকে আসার পর তোর সাথে অনেক দিন দেখা হয়নি।
হটাৎ এক ফোন আসে তুই নাকি অসুস্থ, ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি আসিছ।
খবর পেয়ে এক দিন তোকে দেখতে গেলাম, তোর দিকে তাকিয়ে আমি বেবোলা হয়ে গেছি, তোর শরীর আগের মত নেই, তুই অজ্ঞানের মত পড়ে আছিস, জানি তখন চিনতে পারছিস কি না, আমি তোর পাশে গিয়ে বসলাম, তোর শরীরে হাত ভুলিয়ে দিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করি তুই চুপ তোর মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না।
তোর শরীর যেন বিছানার সাথে গেলে আছে।
কাগজপত্র দেখে আমি বাকরুদ্ধ, ক্যান্সারের সাথে নাকি তোর বাস।

প্রিয় বন্ধু তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না, তোকে আমাদের মাঝে রাখতে পারলাম দৃশ্যমান।
অদৃশ্য হয়ে তুই আমার চার পাশে সারাক্ষণ আছিস।
তোর সাথে দেখা করতে গত বছর গেয়েছিলাম,তোর কি মনে আছে?
তোর মাটির ঘরের সামনে,কোনো সাড়াশব্দ নেই,
তুই তো নতুন শহরে আছিস কেমন আছিস?
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা মোর স্বর্গে যেনো হয় তোর বাস।

তোর চিঠির জন্য অপেক্ষায় আছি।
ভালোবাসার প্রিয় শান্ত বন্ধু।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/১২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast