www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিরোনামহীন (দ্বিতীয় পর্ব)

<৩>
ততদিনে গমগমে মেঘগুলো বিদায় নিয়েছে।তার জায়গা নিয়েছে শরতের শ্বেতশুভ্র মেঘগুলো।আমার জীবনে তখন বসন্ত চলছে।আমার প্রত্যেকটা কাজ প্রত্যেকটা চিন্তার শুরু আর শেষ হতো আমার বসন্তরাণীকে ঘিরে।আমি যে ঐ অপরুপাকে ভালবাসি,কি জানি বোধহয় একটু বেশীই ভালবাসি। চিরদিন আগলে বাহুডোরে রাখতে চাই তাকে।

অতটা জোছনা নেই আজ।চাঁদকে আড়াল করে রেখেছে মেঘগুলো। লেকের উল্টো পাশ দিয়ে হাঁটছি। হাতে হাত রেখে।নিলু আবৃতি করে শোনাচ্ছিল।
"যেখানে রুপালি জোছনা ভিজিয়েছে শবের ভেতর,
যেখানে অনেক মশা বানিয়েছে তাদের ঘর,
সেখানে সোনালি মাছ খুটে খুটে খায়
সেই সব নীল মশা মৌণ আকাংখা...."

***এখান থেকে present form-এ লেখা হচ্ছে***

হঠাত্‍ ঘুরে দেখল নিলু।আবৃতিটাও বন্ধ করে দিল।এরকমটা তো কখনোও হয়নি।ও বলত সবার আগে কবিতা তারপর বাকি পৃথীবী।
-'কি হইছে নিলু?'
-'মনে হচ্ছে কে যেন পিছু নিয়েছে'
আমি হাসলাম,যাকে বলে অট্টহাসি। নিলুও হাসল,তবে রাগ মেশানো হাসি।কবিরা তাহলে মিথ্যা বলেনা! রাগলে আসলেই মেয়েদের সুন্দর দেখায়।ঘোর কাটল নিলুর চিত্‍কারে।কে নাকি ওর হাত ধরেছে।কে?জিজ্ঞাসা করতেই ও সাদা টি-শার্ট পরা একটা কম বয়েসী ছেলেকে দেখিয়ে দিল।আচ্ছা মতন পিটিয়েছিলাম।নীলু না থাকলে মেরেই ফেলতাম।কত্ত বড় সাহস! কিন্তু পরে বুঝেছিলাম সাহসটা আমিই বেশী দেখিয়ে ফেলছি।

হাত দেখে প্রেমে পড়া যায় নাকি! অবাক করল নীলু।ঐ ছেলেটা নাকি ওর হাত দেখেই প্রেমে পরেছিল। নীলু যে সবসময় বোরকা নামক আজব জিনিস পড়ে বের হতো। ছেলেটার প্রেম মনে হয় আমার থেকে গাঢ়ই!কি বলো নীলু?কথাটা শোনে নীলু চড় দিয়েছিল।বাহ্ মেয়েদের চড়!জীবনে প্রথম।কি আশ্চর্য!নীলু আবার বলল বয়সে ছোট কোন ছেলে কি প্রেমিক হতে পারে।লোকলজ্জা...!

<৪>
এমন একজন মানুষকে কখনোও হাসপাতালে দেখব ভাবিনি।আই.সি. ইউ. তে কারও ঢোকার অনুমতি নেই।চেনা ডাক্তার।বলে-কয়ে ঢোকার অনুমতি পেলাম। ডাক্তাররাও তাহলে মানুষ হয়!

এ কাকে দেখছি আমি!চোখের নিচে রংচটা কালো দাগ।যেন কেউ আগুনের ছ্যাক দিয়েছে।হাতে-পায়ে সবখানেই ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্ট। জানোয়ার গুলো ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে ওকে।দুদিন তো আর কমসময় না। একবার যদি হাতের কাছে পেতাম। মনে পড়ছে পুরনো দিনগুলির কথা। হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা খালি পায়ে শিশিরভেজা(নীলুর বুদ্ধিতে ঘাসে পানি ছিটিয়ে শিশির বানাতাম)ঘাসে হাঁটা।নীলুকে শোনাতে লাগলাম আমার কথা,আমাদের কথা।আমাদের বসন্তের কথা।জানো,অর্থহীনের সুমনের না ক্যান্সার ধরা পরছে। আর জানো ইরানে না আরেকজনের গলা কাটছে ধর্ষণের জন্য।এ নিয়ে কতজন হলো বলত।এই নীলু,তুমি তো এসবের খবর রাখ,বলনা। শোনতেছো তুমি?উঠ না।এই দেখো তোমার গিটারটা নিয়ে আসছি। একটা গান গেয়ে শোনাও না।ঐ যে Yaatri-র স্বপ্নচূড়া-২ অ্যালবামের গানটা।উঠ না নীলু,প্লীজ।

ডাক্তারের সাথে কথা বললাম।চেনা মানুষ।চেম্বারে ডেকে নিলেন।
-'বুঝলে অমিত,ক্ষতটা কিন্তু একটু ডিপই।তলপেটে dangerous infection create করেছে।তবে বেশী injured হয়েছে Fallopian tube টা।ঐখানে Uterus এর কাছে isthmus থাকে।কিভাবে জানি ঐটা injured হয়েছে।Normaly এটা হয়না।তোমাকে এটা বলার যে isthmus এর বাচ্চা হওয়াতে important rule আছে।'
-'তার মানে ও মা হতে পারবে না?
-'দেখা যাক।'
-'আচ্ছা ও সুস্থ হবে তো?'
ডাক্তারের মুখ দেখেই যা বুঝার বুঝে গেলাম।বেরিড়ে এলাম চেম্বার থেকে।রাজ্যের বিষাদ নিয়ে।

[পরবর্তী অংশ আগামীতে]
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast