www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিরোনামহীন

<১>
রাত ১২:২৬
পাশের রুম থেকে আলো আসছে। কে যেন টুকটাক শব্দ করছে। জানালায় উকি দেওয়া রাস্তার লেম্পপোস্ট গুলোও আলো দিচ্ছে।এত্তো আলো কেন?এডিসনের কি আর কোনো কাজ ছিল না?আমি যে আলোকে ভয় পাই।অন্ধকারকে ভালবাসি। অথচ যে মানুষটা অন্ধকারকে ভালবাসতে শিখিয়েছিল সেই তো নেই।কি লাভ আলোর ঝলকানিকে উপেক্ষা করে?মনে হচ্ছে কেউ বোধহয় মাথায় হাতুড়ি পেটাচ্ছে।কি যন্ত্রণা!আলো বুঝি এতো খারাপ!

তখনও খানদের তিনতলা বাড়িটা মাথা তুলে দাড়ায় নি।নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে শুধু।পাশের আকাশ ছোয়া সুপারি গাছটা তখনও ঠায় দাড়িয়ে।স্পষ্ট মনে পড়ছে পেছনের খালি জায়গা টায় সবুজ ঘাস উকি দেওয়ার আগেই সবুরের খরগোশ গুলো গায়েব করে দিত। আর আমি?দাঁড়িয়ে থাকতাম কলেজের গেইটে।কি জানি কিসের আশায়!প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা আমাকে বলত আঁতেল।আমার নিঃসঙ্গতা দেখে হাসত।আমিও হাসতাম, নিজেকে দেখে,উপহাসের হাসি।মনে মনে ভাবতাম যেদিন নিঃসঙ্গতা দূর হবে সেদিনের পর আর কখনও ঐ শব্দটি উচ্চারণও করবনা।আমার অবাক নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছিল।এক রমণী আগমনের মধ্য দিয়ে।রমণী! তা বলা যায়।যে কোন উপমাই যে ওর তুলনায় কম মনে হয়।

<2>
আষাঢ়ের মাঝামাঝি চলছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা।কবিরা বলেন এই সময়টা নাকি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের।কথাটা শুনেই খানিকটা চমকে উঠল ও।ও যে আমাকে প্রেমিক ভাবত না।বয়সে ছোট কোনো ছেলে কি কখনও প্রেমিক হতে পারে?লোকে শুনলে না জানি কি ভাবে!লোকলজ্জা বুঝি ওর একটু বেশীই ছিল।তা নাহলে আপাদমস্তক ঢেকে কেউ বাইরে যায়?কখন যে কি হয় ঠিক আছে!

ওর সাথে,নিলুর সাথে প্রায়সময়ই উচুস্তরের কথাবার্তা হতো।কথা বলতাম সাধারণের কাঠি থেকে একধাপ উপরের মানুষের ব্যাপারে। ভুল ধরতাম হূমায়ুন আহমেদ,জীবনানন্দ দাশ,পাবলো নেরুদার।হূমায়ুন সাহেব কিন্তু 'দেয়াল' লিখে ভাল করেননি।লোকে ভাববে রাজনীতে 'Involved' হয়ে গেছেন।কি আশ্চর্য!আবার সেই লোকলজ্জা।আমরা কথা বলতাম আর্টসেল,One direction, শিরোনামহীনকে নিয়ে।আর্টসেলের উচিত আরেকটু 'hard metal' বাজানো।এদিক দিয়ে অর্থহীন কিন্তু 'নিকৃষ্ট'-তে ভাল কাজ করছে।
-আরে দেখছ নোবেলের শান্তি পুরস্কারটা কে পাইছে?
-ওবামা নাকি পাইছে।ওকে দিল কেন বুঝলাম না।
-ওকে দিবে না তো কাকে দিবে? বলেই হাসি শুরু করল।এত্তো সুন্দর করে মানুষ হাসে কি করে।

মাঝে মাঝে আবৃতি করে শোনাত। সুনীলের কবিতা,রুদ্রের কবিতা,আমার প্রিয়।ওর কন্ঠ সবচেয়ে সুন্দর লাগত জীবনানন্দের 'উন্মষ' কবিতাটি।আমি শুনতে শুনতে হারিয়ে যেতাম।
"নিবিড় রমণী তার জ্ঞানময় প্রেমিকের খোজে
অনেক মলিন যুগ অনেক রক্তাক্ত যুগ সমুত্তীর্ণ করে,
আজ এই সময়ের পারে এসে পুনরায় দেখে
আবহমানের ভাড় এসেছে গাধার পিঠে চড়ে।।"
আমি রবি ঠাকুরের কাছ থেকে ধার নিয়ে বলতাম-'আমি পাইলাম,আমি ইহাকে পাইলাম'।

অনেক সময় কবিতার ভাষায় কিংবা গানের সুরে কথা বলতাম আমরা।
-'একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব,
আবার কি আসবনা এই পৃথীবিতে ফিরে?'
-'আসব,আসব এখনও যে অনেক কাজ বাকি,
কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে মুমূর্ষের বিছানার কিনারে দাড়ানো যে বাকি।'
নিলু হাসত।বলত আমি নাকি পাগল।আমি গতানুগতিক বাংলা সিনেমার মতো বলতাম-আমি যে তোমার প্রেমে পাগল!রাগে লাল হতো ও।বয়সে ছোট কোনো ছেলে কি কখনোও প্রেমিক হতে পারে?ছি!ছি!লোকলজ্জা বলেও তো একটা জিনিস আছে!

[আগামী অংশ পরবর্তীতে]
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আমি গতানুগতিক বাংলা সিনেমার
    মতো বলতাম-আমি যে তোমার
    প্রেমে পাগল!রাগে লাল হতো ও।
    বয়সে ছোট কোনো ছেলে কি কখনোও
    প্রেমিক
  • রক্তিম ১৩/১১/২০১৪
    অসম্ভব সুন্দর একটা আবহ । এখন আছে শেষটা জানার ইচ্ছা । ভালো থাকবেন ।
  • রহিমুল্লাহ শরিফ ১৩/১১/২০১৪
    দারুণ লিখেছেন ৷
  • আমিন চৌধুরী ১১/১১/২০১৪
    কি দিব ভেবে পাই না...সজীব ভাই
  • আরে ভাই একটা শিরোনাম তো দেন। ভালোই হয়েছে।
  • মাসুম মুনাওয়ার ০৭/১১/২০১৪
    খুব ভাল লাগলো
  • রেনেসাঁ সাহা ০৭/১১/২০১৪
    পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে মুখিয়ে আছি। ভালো লেগেছে বেশ।
 
Quantcast