বর্ণবাদ
আমি ইংরেজিতে কাঁচা। তাই বর্ণবাদ বা নারীবাদের ইংরেজি টা আয়ত্ত করতে বেগ পেতে হয়।রেসিজম, ফেমিনিজম- শুনতেই কেমন জানি একটা ভাব ভাব ব্যাপার!
আমরা আধুনিক তবে ভীষণ মাত্রার মূর্খ।বর্ণবাদ কে আমরা মনে করি কেবল চামড়ার ভেদাভেদ হিসেবে। সাদা চামড়া আর কালো চামড়ার ভেদাভেদ।অথচ আমার দৃষ্টিতে বর্ণবাদের শিকড় আরো গভীরে বিস্তৃত।জাতিগত বর্ণবাদ, ধর্মীয় বর্ণবাদ, সামাজিক বর্ণবাদ, রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের মতো অহরহ বর্ণবাদে আমরা জর্জরিত।
জর্জ ফ্লয়েডকে চেক জালিয়াতির অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে গলার উপর হাঁটু চেপে ধরে।আর তাতেই ক্ষেপে উঠেছে বিশ্ব।অথচ নেলসন ম্যান্ডেলা কে যখন নির্বাসিতা করে কারাগারে আটকে রেখে ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিলো তখন বিশ্ব বিবেক ঘুমিয়ে ছিলো নিশ্চয়!চামড়া ভিত্তিক বর্ণবাদের বলিষ্ঠ উদাহরণ কিন্তু মোহাম্মদ আলী,মার্টিন লুথার'রা ও।এমনকি বর্ণবাদের নির্মম শিকার ১৪ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ বালক জর্জ স্টিনি ও।যার মৃত্যুর ৭০ বছর পর জানা যায়,যে হত্যাকান্ডের অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল সে তাতে সম্পৃক্ত ছিলোই না।শুধুমাত্র চামড়া কালো হওয়ার কারণে তিন ঘন্টারও কম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয় যেখানে রাখা হয়নি স্টিনির পক্ষের আইনজীবী, প্রত্যক্ষদর্শী।এবং এই স্টিনি'ই পুরো আমেরিকা জুড়ে এখনো পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ আসামী( বাস্তবিকপক্ষে নিরপরাধ শিশু)।
ধর্মভিত্তিক বর্ণবাদের জন্য এশিয়া উপমহাদেশই যথেষ্ট। এই বাংলাদেশের কথাই ধরুন, নামে সবাই মুসলিম। অথচ, সুন্নি ওহাবি আরো হাবিজাবি ফেকরা বের করে এখন একে অন্যের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে।এমনকি এ নিয়ে রক্তও গড়িয়েছে অনেক।এরপর আসা যাক "সংখ্যাগরিষ্ঠ" বিশ্লেষণে।শুধু ধর্মীয় জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে খুব সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়।এটা আধুনিক বর্ণবাদ নয় কী??ব্লগার হত্যাও আধুনিক বর্ণবাদেরই অংশ।
জাতিগত বর্ণবাদ আরও ভয়াবহ। এক্ষেত্রে একটা জাতিকে হয় চারদিক থেকে চেপে ধরে নয় একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমাদের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কথা।সংখ্যায় কম হওয়া বা অনুন্নত হওয়ার কারণে,অধিকার খাটানোর জন্য তাদের নাম দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী! অথচ দেশ স্বাধীনের পেছনে তাদেরও অসামান্য অবদান ছিলো।তারপর চীনের উইঘুর সম্প্রদায়। শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে যাদেরকে পুরো বিশ্ব থেকেই গোপন করে ফেলা হয়েছে।এরপর আসে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা।এরা একাধারে জাতিগত এবং ধর্মভিত্তিক বর্ণবাদের স্বীকার।
২০১১ সালের ফেলানি হত্যার কথা মনে আছে নিশ্চয়। রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের প্রকিষ্ট উদাহরণ। সিরিয়া,ইরান,ফিলিস্তিন সহ নাম না জানা অনেক দেশই বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদে টালমাটাল।
যতদিন পর্যন্ত না আমরা একজন মানুষকে শুধুই মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে পারবো, ততদিন এমন বর্ণবাদী আচরণ ও নির্যাতন চলতেই থাকবে৷তবে আমার মনে হয় না এ ধারা কখনো শেষ হবে,কিন্তু এর তীব্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে....
-গাজী মোহাম্মদ শাহাদাত।
চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ।
০৭-০৬-২০২০.
আমরা আধুনিক তবে ভীষণ মাত্রার মূর্খ।বর্ণবাদ কে আমরা মনে করি কেবল চামড়ার ভেদাভেদ হিসেবে। সাদা চামড়া আর কালো চামড়ার ভেদাভেদ।অথচ আমার দৃষ্টিতে বর্ণবাদের শিকড় আরো গভীরে বিস্তৃত।জাতিগত বর্ণবাদ, ধর্মীয় বর্ণবাদ, সামাজিক বর্ণবাদ, রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের মতো অহরহ বর্ণবাদে আমরা জর্জরিত।
জর্জ ফ্লয়েডকে চেক জালিয়াতির অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে গলার উপর হাঁটু চেপে ধরে।আর তাতেই ক্ষেপে উঠেছে বিশ্ব।অথচ নেলসন ম্যান্ডেলা কে যখন নির্বাসিতা করে কারাগারে আটকে রেখে ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিলো তখন বিশ্ব বিবেক ঘুমিয়ে ছিলো নিশ্চয়!চামড়া ভিত্তিক বর্ণবাদের বলিষ্ঠ উদাহরণ কিন্তু মোহাম্মদ আলী,মার্টিন লুথার'রা ও।এমনকি বর্ণবাদের নির্মম শিকার ১৪ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ বালক জর্জ স্টিনি ও।যার মৃত্যুর ৭০ বছর পর জানা যায়,যে হত্যাকান্ডের অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল সে তাতে সম্পৃক্ত ছিলোই না।শুধুমাত্র চামড়া কালো হওয়ার কারণে তিন ঘন্টারও কম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয় যেখানে রাখা হয়নি স্টিনির পক্ষের আইনজীবী, প্রত্যক্ষদর্শী।এবং এই স্টিনি'ই পুরো আমেরিকা জুড়ে এখনো পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ আসামী( বাস্তবিকপক্ষে নিরপরাধ শিশু)।
ধর্মভিত্তিক বর্ণবাদের জন্য এশিয়া উপমহাদেশই যথেষ্ট। এই বাংলাদেশের কথাই ধরুন, নামে সবাই মুসলিম। অথচ, সুন্নি ওহাবি আরো হাবিজাবি ফেকরা বের করে এখন একে অন্যের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে।এমনকি এ নিয়ে রক্তও গড়িয়েছে অনেক।এরপর আসা যাক "সংখ্যাগরিষ্ঠ" বিশ্লেষণে।শুধু ধর্মীয় জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে খুব সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়।এটা আধুনিক বর্ণবাদ নয় কী??ব্লগার হত্যাও আধুনিক বর্ণবাদেরই অংশ।
জাতিগত বর্ণবাদ আরও ভয়াবহ। এক্ষেত্রে একটা জাতিকে হয় চারদিক থেকে চেপে ধরে নয় একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমাদের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কথা।সংখ্যায় কম হওয়া বা অনুন্নত হওয়ার কারণে,অধিকার খাটানোর জন্য তাদের নাম দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী! অথচ দেশ স্বাধীনের পেছনে তাদেরও অসামান্য অবদান ছিলো।তারপর চীনের উইঘুর সম্প্রদায়। শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে যাদেরকে পুরো বিশ্ব থেকেই গোপন করে ফেলা হয়েছে।এরপর আসে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা।এরা একাধারে জাতিগত এবং ধর্মভিত্তিক বর্ণবাদের স্বীকার।
২০১১ সালের ফেলানি হত্যার কথা মনে আছে নিশ্চয়। রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের প্রকিষ্ট উদাহরণ। সিরিয়া,ইরান,ফিলিস্তিন সহ নাম না জানা অনেক দেশই বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদে টালমাটাল।
যতদিন পর্যন্ত না আমরা একজন মানুষকে শুধুই মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে পারবো, ততদিন এমন বর্ণবাদী আচরণ ও নির্যাতন চলতেই থাকবে৷তবে আমার মনে হয় না এ ধারা কখনো শেষ হবে,কিন্তু এর তীব্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে....
-গাজী মোহাম্মদ শাহাদাত।
চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ।
০৭-০৬-২০২০.
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১২/০৩/২০২২অনুপম সুন্দর
-
Md. Rayhan Kazi ২৫/০৬/২০২০মুগ্ধতা একরাশ
-
গোলাম কিবরিয়া সৌখিন ১২/০৬/২০২০নির্মূল করা অসম্ভব প্রায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সঠিক অনুধাবন।
-
ফয়জুল মহী ১১/০৬/২০২০অসাধারণ লেখা ।
-
কবীর হুমায়ূন ১১/০৬/২০২০ধর্ম, বর্ণ ও জাতপ্রথার বিভেদে পৃথিবীর মানুষের মনুষ্যত্ব দিন দিন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের মানুষ প্রজাতির জন্য খুবই লজ্জার একটি বিষয়। কথায় বলি, সেরা জীব। কর্মে ও আচরণে তা দেখাতে পারি না। ভালো লিখেছেন। শুভ কামনা।