ভালো বন্ধু
ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই পিতা-মাতার কথা মেনে চলে। তেমনি মাছুম ও মামুন তাদের বাবা-মায়ের কথা মেনে চলে। দু'জনেই আলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। তাদের একে অন্যের সাথে রয়েছে গভীর বন্ধুত্ব। গ্রামের ছোট বড় সকলে দু'জনকে ভালো ছেলে হিসেবে স্নেহ করেন। পড়ালেখার তারা সর্বদাই একে অন্যের প্রতিযোগী। সমাপনী পরীক্ষায় দু'জনেই গোল্ডেন প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের বাবা-মা এতে খুবই আনন্দিত। তারা নিজেদের ছেলেদের নিয়ে গর্ববোধ করেন এবং নিয়মিত উৎসাহ প্রদান করেন। যেহেতু তাদের শাসনের প্রয়োজন হয়না তাই তারা বাবা-মা, ভাই-বোনের আদর সোহাগে বড় হচ্ছে।
মামুনের বাবা রহিম সাহেব পার্শ্ববর্তী এলাকার হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। চাকরির সুবাদে ছেলেকে সেখানেই ভর্তি করেন। অন্যদিকে মাছুমের বাবা আজাদ সাহেব ধার্মিক মানুষ। ছেলেকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। কেননা তিনি মনে করেন, ইসলামি শিক্ষা ছাড়া মানুষ প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারে না। তাই ছেলেকে নিকটবর্তী শহরের উন্নত এক মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। দু'জনেই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে দুই বন্ধু গ্রামে এসে একে অন্যের বাড়ি যায়। আত্নীয়দের খোঁজ খবর নেয়। বিকেলবেলা পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটায়। খেলার সময় সাথীদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলে এবং তাদেরকেও অন্যদের সাথে সুন্দর কথা বলতে উৎসাহ দেয়। তাই ছেলেরা তাদের নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। নামাজের সময় হলে মাছুম মসজিদে চলে যায় পাশাপাশি সকল বন্ধুদের মসজিদে যেতে অনুরোধ জানায়। সে বন্ধুদের বলতে চেষ্টা করে মুসলমান হলে তাকে দিনে অবশ্যই পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হবে। অনেকেই তার আহবানে সাড়া দেয়। একসাথে নামাজ পড়ে সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়।
মামুন এ বছর মেট্রিক শেষ করে জেলা শহরের সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। অন্যদিকে মাছুম তিন বছরের কম সময়ে পবিত্র কুরআন হিফয করার পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণি শেষ করে। এ বছর সেও দাখিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। অতঃপর ধর্মীয় উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য দেশের অন্যতম এক সরকারি আলিয়া মাদরাসায় আলিমে ভর্তি হয়েছে।
একদিন মাছুম ও মামুন রাজধানীতে থাকা প্রাচীন ঐতিহ্য সমুহ পরিদর্শনে যায়। পাশেই ছিল জাতীয় মসজিদ, সেখানে তারা জুম'আর নামাজ আদায় করে। হোটেলে দুপুরের খাবার সেড়ে একটি ইকো পার্কে গাছের ছায়ায় পাকা করা এক বেঞ্চে বসে গল্প করতে আরম্ভ করে। গল্পের শুরুতে প্রাধান্য পেয়েছে নিজেদের ছেলেবেলা। অতঃপর শিক্ষাজীবন, খেলাধুলা। একপর্যায়ে মাছুম ধর্মীয় বিষয়ে কিছু বলা শুরু করলে, মামুন বলে উঠলো, আমিও তোমাকে এসব বিষয়ে বলার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সুযোগ হচ্ছিলো না। মাছুম বলে উঠলো, আল্লাহ আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, আজ সকল বিষয়ে কথা হবে।
অতঃপর মাছুম বলতে লাগলো, আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি আমাদেরকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রথমত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনতে হয়েছে। তারপর নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। বছরে রামাদ্বানে একমাস রোজা রাখছি। আর যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা পবিত্র ভুমি মক্কায় গিয়ে হজ্জ আদায় করছেন এবং মদিনা শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারত করছেন। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যাকাত আদায় করছেন। সকল মুসলমান সর্বদা পাক পবিত্র থাকবে, হালাল-হারাম মেনে চলবে। ফরজ বিষয়গুলো অবশ্যই পালন করবে, সত্য কথা বলবে, মিথ্যা থেকে দুরে থাকবে, ছোট বড়দের সম্মান করবে, বড় ছোটদের স্নেহ করবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করবে না। ব্যবসা বা অন্য কোনোভাবে মানুষকে ধোকা দিবে না।
মামুন এবার মাছুমকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো, এতোদিন আমাদের বন্ধুত্ব ছিল কেবল একে অন্যকে ভালো লাগা, একসাথে চলা এসবের জন্যই। কিন্তু বন্ধুত্ব কি আসলে তা-ই? এ ব্যাপারে তারা একজন ভালো শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়ে জানতে পারলো, বন্ধুত্ব হলো, একে অন্যকে ভালো কাজে আহবান করা, উৎসাহ প্রদান করা এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা। কেননা ইহাই শ্রেষ্ঠ জাতির কাজ। এখন মাছুম তার বন্ধু মামুনকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে উৎসাহিত করতে শুরু করে এবং সকল প্রকার মন্দ থেকে বেঁচে থাকার আহবান জানায়। কেননা স্কুলে পড়ার সুবাদে তার আরো বন্ধু হয়েছিল যারা নামাজসহ অন্যন্য বিষয়ে যত্নশীল না থাকায় মামুনও একটু গাফলতি শুরু করছিল। এখন মামুনও মাছুমের অনুসরণ করে মাঝেমধ্যে মাছুমকে ভালো কাজে সহযোগিতা করছে।
আসলে ভালো বন্ধু তারাই হয় যারা ভালো কাজে সহযোগী হয় এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পরিপূর্ণ চেষ্টা করে। আমরা নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে সাজাতে ভালো বন্ধুর সাথী হব। আর নিজেও একজন ভালো বন্দু হতে চেষ্টা করবো।
৩০ সেপ্টেম্বর, সুনামগঞ্জ
মামুনের বাবা রহিম সাহেব পার্শ্ববর্তী এলাকার হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। চাকরির সুবাদে ছেলেকে সেখানেই ভর্তি করেন। অন্যদিকে মাছুমের বাবা আজাদ সাহেব ধার্মিক মানুষ। ছেলেকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। কেননা তিনি মনে করেন, ইসলামি শিক্ষা ছাড়া মানুষ প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারে না। তাই ছেলেকে নিকটবর্তী শহরের উন্নত এক মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। দু'জনেই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে দুই বন্ধু গ্রামে এসে একে অন্যের বাড়ি যায়। আত্নীয়দের খোঁজ খবর নেয়। বিকেলবেলা পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটায়। খেলার সময় সাথীদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলে এবং তাদেরকেও অন্যদের সাথে সুন্দর কথা বলতে উৎসাহ দেয়। তাই ছেলেরা তাদের নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। নামাজের সময় হলে মাছুম মসজিদে চলে যায় পাশাপাশি সকল বন্ধুদের মসজিদে যেতে অনুরোধ জানায়। সে বন্ধুদের বলতে চেষ্টা করে মুসলমান হলে তাকে দিনে অবশ্যই পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হবে। অনেকেই তার আহবানে সাড়া দেয়। একসাথে নামাজ পড়ে সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়।
মামুন এ বছর মেট্রিক শেষ করে জেলা শহরের সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। অন্যদিকে মাছুম তিন বছরের কম সময়ে পবিত্র কুরআন হিফয করার পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণি শেষ করে। এ বছর সেও দাখিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। অতঃপর ধর্মীয় উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য দেশের অন্যতম এক সরকারি আলিয়া মাদরাসায় আলিমে ভর্তি হয়েছে।
একদিন মাছুম ও মামুন রাজধানীতে থাকা প্রাচীন ঐতিহ্য সমুহ পরিদর্শনে যায়। পাশেই ছিল জাতীয় মসজিদ, সেখানে তারা জুম'আর নামাজ আদায় করে। হোটেলে দুপুরের খাবার সেড়ে একটি ইকো পার্কে গাছের ছায়ায় পাকা করা এক বেঞ্চে বসে গল্প করতে আরম্ভ করে। গল্পের শুরুতে প্রাধান্য পেয়েছে নিজেদের ছেলেবেলা। অতঃপর শিক্ষাজীবন, খেলাধুলা। একপর্যায়ে মাছুম ধর্মীয় বিষয়ে কিছু বলা শুরু করলে, মামুন বলে উঠলো, আমিও তোমাকে এসব বিষয়ে বলার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সুযোগ হচ্ছিলো না। মাছুম বলে উঠলো, আল্লাহ আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, আজ সকল বিষয়ে কথা হবে।
অতঃপর মাছুম বলতে লাগলো, আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি আমাদেরকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রথমত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনতে হয়েছে। তারপর নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। বছরে রামাদ্বানে একমাস রোজা রাখছি। আর যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা পবিত্র ভুমি মক্কায় গিয়ে হজ্জ আদায় করছেন এবং মদিনা শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারত করছেন। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যাকাত আদায় করছেন। সকল মুসলমান সর্বদা পাক পবিত্র থাকবে, হালাল-হারাম মেনে চলবে। ফরজ বিষয়গুলো অবশ্যই পালন করবে, সত্য কথা বলবে, মিথ্যা থেকে দুরে থাকবে, ছোট বড়দের সম্মান করবে, বড় ছোটদের স্নেহ করবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করবে না। ব্যবসা বা অন্য কোনোভাবে মানুষকে ধোকা দিবে না।
মামুন এবার মাছুমকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো, এতোদিন আমাদের বন্ধুত্ব ছিল কেবল একে অন্যকে ভালো লাগা, একসাথে চলা এসবের জন্যই। কিন্তু বন্ধুত্ব কি আসলে তা-ই? এ ব্যাপারে তারা একজন ভালো শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়ে জানতে পারলো, বন্ধুত্ব হলো, একে অন্যকে ভালো কাজে আহবান করা, উৎসাহ প্রদান করা এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা। কেননা ইহাই শ্রেষ্ঠ জাতির কাজ। এখন মাছুম তার বন্ধু মামুনকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে উৎসাহিত করতে শুরু করে এবং সকল প্রকার মন্দ থেকে বেঁচে থাকার আহবান জানায়। কেননা স্কুলে পড়ার সুবাদে তার আরো বন্ধু হয়েছিল যারা নামাজসহ অন্যন্য বিষয়ে যত্নশীল না থাকায় মামুনও একটু গাফলতি শুরু করছিল। এখন মামুনও মাছুমের অনুসরণ করে মাঝেমধ্যে মাছুমকে ভালো কাজে সহযোগিতা করছে।
আসলে ভালো বন্ধু তারাই হয় যারা ভালো কাজে সহযোগী হয় এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পরিপূর্ণ চেষ্টা করে। আমরা নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে সাজাতে ভালো বন্ধুর সাথী হব। আর নিজেও একজন ভালো বন্দু হতে চেষ্টা করবো।
৩০ সেপ্টেম্বর, সুনামগঞ্জ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৮/১০/২০২০অপরূপ অনুপম
-
ফয়জুল মহী ১৪/১০/২০২০শিক্ষণীয় গল্প। আল্লাহ সবার সহায় হউন l
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৪/১০/২০২০শুভেচ্ছা। স্বাগতম।
আর শুভকামনা। -
মুহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন শরীফ ৩০/০৯/২০২০তারুণ্যের আমার পাতায় লেখাটি প্রকাশ করার জন্য তারুণ্য ডটকমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।