www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অহর্নিশ ভালোবাসা

আজ অপর্ণার কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে সজীবের। কত করে চেষ্টা করে সে অপর্ণাকে ভুলার তবুুুও স্মৃতির দর্পনে বার বার ভেসে আসে অপর্ণার মুখচ্ছবি। প্রাপ্তিহীন চিত্তে অপর্ণা তাকে পেতে চেয়েছিল। অপর্ণার ভালোবাসায় কোন খাদ ছিল না। অথচ নিখাদ সেই ভালোবাসাকে সে অগ্রাহ্য করেছিল। সে দিন অপর্ণা কষ্ট পেয়েছিল তা সে জানত, তবে অপর্ণার কষ্টের পরিধি সে বুঝতে চায়নি। বরঞ্জ অপর্ণাকে সে অনেকটা ভূল বুঝেছিল তখন।
অথচ যে নীলাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করল আজ মনে হয় সেই নীলার কাছে তার ভালোবাসা মূল্যহীন। পরতে পরতে সেই নীলা আজ তাকে কষ্ট দিচ্ছে, তার প্রত্যেকটি স্বপ্নকে নীলা আজ ভেঙ্গে চুরমার করছে। প্রথম প্রথম যদিও এমন ছিলো না। বিয়ের প্রথম এক বৎসর তাদের খুবই ভালো গিয়েছিল। দুজনের মধ্যে খুবই মিল ছিলো। তাদের মনে হতো পৃথিবীর মধ্যে যদি কোনো সুখী দস্পতি থাকে তাহলে তাদের মধ্যে তারাও একজন। তাদের ভালোবাসার গভীরতা ছিলো গাঢ়। একজন আরেকজনের ভাবনায় ছিলো নিরন্তর। তারা তাদের প্রেম কাহানি দিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেটির নাম হবে ‘অহর্নিশ ভালোবাসা’।
সুখ বুঝি মানুষের জীবনে বেশিদিন সয়না । তাই তাদের দাম্পত্য জীবনের একবৎসরের মাথায় অজানা অদৃশ্য সুনামি এসে আঘাত করে।
সজীবের সব সুখ আজ চলে গেছে দূর আকাশে কোন অন্ধকার মেঘের দেশে। আজ তার আর নীলার পছন্দের অসম অমীল। অথচ এই কদিন আগেও তার পছন্দই ছিলো নীলার পছন্দ।
একটা ব্যাপার সে কিছুতেই এখনও আঁচ করতে পারছেনা। সে এমন কি করেছে যে হঠাৎ করে নীলা এমন বদলে গেলো।
আসলে নীলা এখন কি চায় সে আদৌ বুঝতে পারছে না এখনও। নীলা তো তাকে স্পষ্ট করে বলেছিল সজীবই তার জীবনের প্রথম পুরুষ, সে কখনও আর কাউকে নিয়ে এমনকি কোন কল্পনা ও করেনি। তাহলে কেন নীলা আজ তাকে এমন করে কষ্ট দিচ্ছে । তার প্রত্যেকটি স্বপ্নকে এমন করে ভেঙ্গে চুরমার করছে। তাহলে কি অপর্ণা তাকে কোন অভিশাপ দিয়েছিল। আবার সে পরক্ষনে ভাবে না না তা হবে কেন, সে তো অপর্ণার সাথে কোন প্রতারণা করেনি। তা ছাড়া অপর্ণার ভালোবাসা তো নিখাদ ছিল। অপর্ণাতো সব সময়ই তার ভালই চাইতো। নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও অপর্ণা তাকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে চেয়েছিল।
বন্ধু অমিতের বোনের বিয়েতে নীলার সাথে তার পরিচয় হয়। অমিতের ছোট বোন শীলাই নীলাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় পর্ব সেরেই সজীব ভাই আপনি আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলেন আমি আসছি এই বলে শীলা চলে যায়। সজীব আচমকা কি বলবে ইতস্ততঃ বোধ করেছিল। শুধুই অপলক অনেক্ষন চেয়েছিল বিধূবদনা মৃগনয়না নীলার দিকে। নীলার হরিণের মতো সুন্দর দুটি চোখ আর চাঁদের মতো সুন্দর মুখ তাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবনার সাতরংয়ে মিশিয়ে দেয়। নীলার বিধূবদনা মুখ তার কাছে মনে হয়েছিল এ যেন ঘন বর্ষায় ধোঁয়া চাঁদ। বিকেলের সোনাগলা রোদ যখন লুটোপুটি খাচ্ছিল এমন ফর্সা সুন্দর গালে তখন সজীব ভাবছিল রোদগুলো যেন তার অপরূপ রূপ সুধা দিব্যি পান করে নিচ্ছে। নীলার দুধে আলতা গায়ের রং, লম্বা খোলা কালো কেশ যা অনেকটা কোমর ছাড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। পরনের হালকা নীল জর্জেট। সব মিলিয়ে নীলাকে অপরূপ লাগছিল। যে কারোরই দিব্যি চোখ আটকে যেতে পারে এমন রূপসুধা পান করতে। সজীবের অপলক চাহনি থামছে না দেখে নীলাই সহসা বলে উঠে -
আপনি কি কিছু ভাবছেন?
না কিছু না।
সজীব ইতস্ততঃ বোধ করে! কি বলবে ভেবে পায় না।
সজীবের ইতস্ততঃ বোধ নীলা আঁচ করতে পারে। তাই নীরবতা ভাঙ্গাতে নীলাই সজীবকে প্রশ্ন করে-
আপনি কিসে পড়েন?
বি, এ সম্মান শেষ বর্ষ।
তুমি?
আমি বি, এ সম্মান প্রথম বর্ষ।
কোন বিষয় নিয়ে পড়ছ?
দর্শন।
সত্যিই!
কেনো আপনার কি মনে হয়? আমি কি মিথ্যে বলছি?
না মানে
মানেটা কি?
না, মানে আমি ও দর্শন নিয়ে পড়ছি।
তাহলে তো ভালই হলো।
কি ভাবে?
সজীবের এমন প্রশ্নে নীলা আটকে যায়। সহসা কোন জবাব নি দিয়ে শুধুই বলে না মানে, আমি বলছিলাম কি...
দুজন এক বিষয়ে পড়ছি তাতো ভালই, তাই নয় কি?
সজীব মৃদু হেসে বলে তাতো অবশ্যই।
এমন সময় শীলা এসে বলে কিরে কি গল্প করছিস সজীব ভাইয়ের সাথে?
নারে তেমন কিছু না। এইমাত্র জানলাম আমার মতো সজীব ভাই ও দর্শন নিয়ে পড়ছেন।

ও হে তোকে তো আমার বলাই হয়নি। আর সময় ও বা পেলাম কই। সজীব ভাই কিন্তু আবার খুব মেধাবী ছাত্র। আমার তো মনে হয় তিনি ফাস্ট ক্লাস পাবেন। তাছাড়া প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল ও তাই বলে। তুই অবশ্য চাইলে উনার সাহায্য নিতে পারিছ।
কি সজীব ভাই আপনি আমার বান্ধবীকে সাহায্য করবেন না?
কেনো করবোনা, একশবার করবো।
ওর কিন্তু প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আর মাত্র দুমাস বাকি। আপনার কিন্তু এখনই ওকে সাহায্য করতে হবে।
আমিতো বললাম আমি করবো। তবে একটা বিষয় আমি বুঝলাম না, তুমি বলছো তোমার বান্ধবীকে সাহায্য করতে আর যিনি সাহায্য নিবেন তিনি কিছুই বলছেন না। আমার তো মনে হয় উনার আদৌ কোন সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
না না না, তা না। শীলা আপনাকে বলছে তাই আমি আর কিছু বলছি না।
এখনতো আপনি পরিস্কার হলেন সজীব ভাই?
তা তো হলাম।
এখন আপনি দয়া করে আপনার মোবাইল নাম্বারটা আমার বান্ধবীকে দিন।
সেই দিনের মতো আলাপ এখানেই থামে। আর বেশি দূর যায় নি। একটু পরেই নীলা চলে যায়। বিদায় বেলায় সজীব বলে ওহ্ হে ভালো কথা তোমার মোবাইল নাম্বার তো আমি নিলাম না। তোমার নাম্বারটা কি ?
এই আমি মিস কল দিচ্ছি, আপনি সেইব করে নিন।
না মানে এই জন্য আমি তোমার নাম্বার আমার মোবাইলে সেইব করছি, আমি আবার সব সময় অপরিচিত নাম্বার হলে কলবাক করি না বা ব্যস্ত থাকলে অপরিচিত নাম্বারের ফোন ও রিসিভ করি না।
তাই না কি?
শুধুই হ্যাঁ বলে সজীব আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে, আজকের মতো বিদায়। ফোনে কথা হবে, এই বলে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
সেই রাত্রে বার বার নীলার কথা সজীবের মনে আসছিল এমনকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও নীলাকে দেখেছিল। সকালে ভাবছিল নীলাকে ফোন দেবে কিন্তু দেয়নি। নীলা কি ভাববে এই ভেবে। তাছাড়া নীলার কাছে তো আর তার কোন দরকার নেই। তবে মনে মনে সে নীলার ফোনের অপেক্ষা করতে থাকে। তার সেই অপেক্ষা বেশিদূর গড়ায়নি। বিকেলেই নীলার ফোন আসে।
হ্যালো সজীব ভাই। আমি নীলা বলছি।কি আমাকে চিনতে পারছেন?
চিনবো না মানে, অবশ্যই চিনতে পারছি।
মুঠোফোনের সেদিনের কথোপকথন প্রায় ঘন্টাখানেক হয়। যদিও বেশিরভাগ কথোপকথন ছিল নীলার পড়ালেখা নিয়ে। তবে তার কাছে মনে হয়েছিল পাঁচ মিনিট ও কথা হয়নি। নীলা যখন বলছিল তাহলে এখন রাখি, অন্যসময় কথা হবে। সে বলেছিল আচ্ছা রাখো তবে বলার খাতিরে। একটুতেই তার মন চাচ্ছিলনা ফোন রাখতে।
সজীবের কথামতো পরদিন নীলা সজীবের বাসায় আসে নোট নিতে। তারপরদিন নীলার দাওয়াতে সজীব নীলাদের বাসায় যায় এবং তাদের বাসার সবার সাথে পরিচিত হয়। বাসার সবার ব্যবহারে সে মুগ্ধ হয়। তার কাছে মনে হয় এদের সবাইকে সে অনেক আগ থেকে চেনে।
সেদিনের পর থেকে নীলার সাথে তার সম্পর্ক ঘনিষ্টতার সূত্রপাতে রূপ নেয়। আর সেই রূপ স্বল্প সময়ে গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠে।
কবে যে নীলা তার হৃদয়ের পুরোটা যায়গা দখল করে নেয় তা সের টেরই পায়নি। এক সময় সে বুঝতে পারে নীলাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। সে সত্যি সত্যি নীলাকে ভালোবাসে।
শীলার মাধ্যমে জানতে পারে নীলাও তাকে ভালোবাসে। তবে নীলাতো আর নিজ থেকে তাকে বলবে না যে তাকে ভালোবাসে তাই সে ভাবে আর দেরি না করে নীলাকে সে প্রকাশ করবে তার ভালোলাগার কথা। তার এক বন্ধু তাকে একদিন বলেছে, মেয়েরা এমনই হয় যে মনে মনে ভালোবাসবে তবে নিজ থেকে প্রকাশ করবে না। ইশারায় বুঝাতে চাইবে তবে সেই ভাষা কি আর সবাই বুঝবে। নীলা যদি এমনই হয় তাহলে সরাসরি নীলার কাছ থেকে তার কখনো জানা হবেনা যে নীলা ও তাকে ভালোবাসে। যতই শীলা তাকে বলুক।
যেই ভাবা সেই কাজ। সেদিনই বিকেলে সজীব নীলাকে একাট চাইনিজ রেস্তোরায় দাওয়াত করে এবং তার ভালোলাগার কথা জানায়।
জড়তা মিশ্রিত কন্ঠে বলে -
নীলা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কবে যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তা ঠেরই পাইনি। আমার মন বলছে তুমি ও আমাকে ভালোবাসো। মনের কথাতো আর সব সময় সত্যি হয় না, তাই তোমার কন্ঠে শুনতে চাই। দয়া করে তোমার মনের কথাটি বলো।
বলো নীলা, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
নিশ্চুপ নীলার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে সজীব রীতিমতো ঘামছিল। সে মনে মনে ভাবছিল তাহলে কি শীলা তাকে মিথ্যে বলেছে যে নীলা ও তাকে ভালোবাসে। পরক্ষনে আবার ভাবে না না তা হবে কেনো। শীলা তাকে মিথ্যে বলবে কেনো। এতসব ভাবোনায় সে যখন অসহিষ্ণু প্রায় তখন নীলা বলে উঠে -
আপনি তো জানেনই আমার মনের কথা তারপরও কি আমাকে মুখে বলতে হবে?
না মানে, কিছু কিছু কথা আছে যা শুনলে খুবই ভালো লাগে।
শ্রুতিমধুর, শুনলে মনে হয় আরও শুনি।
তাই কথাটি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
নিশ্চুপ নীলার মুখ দেখে সজীব বুঝতে পারছে নীলা লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু তার যে নীলার কন্ঠে শুনা চাই মধুময় সেই কথাটি।
সজীব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নীলার মুখের দিকে। তার যেনো তৃপ্তি মেঠে না। যতো দেখে নীলাকে তার আরও দেখতে ইচ্ছে হয়। সে পরিস্কার দেখতে পায় নীলার মুখে লজ্জার ছাপ।
এই লজ্জামিশ্রিত মুখখানি তার কাছে অন্যদিনের চাইতে অধিকতর মায়াবি মনে হয়। সে কিছুতেই চোখের পলক ফেলতে পারছে না। দু’একবার নীলার সাথে তার দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে তবে নীলা সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে।
এভাবে অনেক্ষণ যাওয়ার পর সহসা নীলার নিরবতা ভাঙ্গে। নীলার কন্ঠে উচ্চারিত হয় সজীবের অপেক্ষিত মধুমিশ্রিত কথাটি। নীলা বলে উঠে -
আমি ও আপনাকে ভালোবাসি।
খুবই ভালোবাসি।
সজীবের ইশারাতে মিনিট খানেকের মধ্যেই রেস্তোরার পরিচারক একগুচ্ছ গোলাপসহ একটি বড় উপহারের প্যাকেট সজীবের হাতে এনে দেয়। প্রথমে গোলাপ গুচ্ছটি সজীব নীলার হাতে দেয় এবং বলে -
আমি ও তোমাকে খুবই ভালোবাসি।
সজীব নীলার হাতে হাত ধরে ললাটে চুম্বন রেখা এঁকে দেয়। পরে উপহারের প্যাকেটটি ও নীলার হাতে তুলে দেয়।

প্রথমে আমি ভাবছিলাম ফুল দিয়ে তোমাকে আমার ভালোবাসার কথাটি জানাই। পরে ভাবি তুমি যদি আমার ভালোবাসা প্রত্যাখান করে ফুলের গুচ্ছটি আমার উপর ছুঁড় ফেলো।
সজীবের কথা শুনে নীলা শব্দ করে হাসতে শুরু করে। কিছু একটা আন্দাজ করে নীলার হাসি দেখে সজীব ও হাসতে শুরু করে।
এই সুখময় দিনগুলির কথা ভাবতে ভাবতে সজীব একসময় তার বর্তমান সময়ের ভাবনায় চলে আসে আর নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে কেনো তার জীবন এমন হলো? কেনো তার জীবনে সুখ স্থায়ী হলো না? কেনো তার জীবনে এতো কষ্ট?
এমন সব অতীত ভাবনা আর কতক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সজীব অসহিষ্ণু প্রায় এমন সময় তার মাথায় নীলার হাতের স্পর্শে তার চেতনা ফিরে আসে। নীলার চোখে তার চোখ থমকে দাঁড়ায়। এযে পলকহীন চাহনি। মনের সব আকুতি মিশিয়ে নীলার চোখের সব ভাষা বুঝার এ যেন এক ব্যর্থ প্রয়াস।
সজীবের এমন অপলক চাহনি দেখে নীলা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সহসাই বলে উঠে কি হল তোমার, তুমি এমন করে কি দেখছো আমায়?
নির্বাক সজীবের কাছে কোন উত্তর না পেয়ে নীলা আবার বলে উঠে, কি হলো তুমি কিছু বলছো না যে!
তুমি কি আমার কথা কিছু শুনতে পারছো?
তোমার কি হয়েছে বলতো? এতক্ষন ধরে তুমি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছো। কি এমন তুমি আমাকে দেখছো, বলতো?
তারপরও কোন উত্তর না পেয়ে এবার নীলা সজীবের দুই হাত ধরে তার মুখোমুখি বসে কন্ঠে আকুতি মিশিয়ে বলে আমি জানিনা তোমার কি হয়েছে, তবে আমি যদি তোমায় কোন দুঃখ দিয়ে থাকি তবে আমি এই হাত জোড় করে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
এবার সজীবের নীরবতা ভাঙ্গল, তবে কথায় নয় অশ্রুতে।
তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রুর ঝর্ণা ধারা বইতে শুরু করলো। সজীবের চোখে এমন অশ্রু দেখে নীলা স্তম্ভীত হয়! এতদিন ধরে সজীবের সাথে সংসার করছে অথচ কখনও সজীবের চোখে এমন অশ্রু দেখেনি । নীলা কি বলবে ভেবে উঠতে পারেনি। সজীবের অশ্রুধারা ও বেগবান হচ্ছে। নীলা কিছু না ভেবে অজান্তে বলে উঠে এই আমি আবার বলছি, আমি যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেই তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই তোমার মাথা ছুঁয়ে শপথ করছি আমি আর তোমাকে কোন কষ্ট দেব না। তোমার সুখই আমার সুখ, তোমার দুখই আমার দুখ। জীবনের অবশিষ্ট দিন গুলো তোমার ছায়ার নিচে বাঁচতে চাই। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন যে মূল্যহীন। তুমি কেন বুঝনা সব কিছু কি মুখে বলতে হয়।
তুমি বুঝো আমি তোমকে ভালবাসি না!
তুমি তো প্রমাণে বিশ্বাসী, তুমি কি প্রমাণ চাও?
সজীবকে নিয়ে নীলার লেখা ডায়রি ও কবিতার খাতাটি সজীবের হাতে তুলে দেয়। পরক্ষণে বলে উঠে আমার মনে হয় তাতে ও তুমি সন্তুষ্ঠ হবেনা, তুমি আরও প্রমাণ চাইবে। এইবলে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা নীলা সমুদ্রের দিকে চলে যায় ভালোবাসার প্রমাণ দিতে।
নীলা যেন আজ বাঁধভাঙ্গা রমণী। ভালোবাসার প্রমাণে মরীয়া সে আজ।
সজীবের হৃদয়ের সব সন্দেহ আজ সে দূর করতে চায়।
সজীব যে তার একার, একান্তই তার।
ব্রেইনটিউমারে আক্রান্ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়া প্রিয়তমা নীলার শয্যাপাশে বসে সেদিনের এই কথাগুলো সে ভাবছে। ব্রেইনটিউমার ধরা পড়ায় আজ সে বুঝতে পারছে নীলার এতদিনের পাগলামির কারণ। অথচ ভুল বুঝে সে নীলাকে কতই না অপবাদ দিয়েছে।
সজীব ঘুমন্ত নীলার হাতে হাত রেখে মনের আকুতি মিশিয়ে বার বার বলছে নীলা আমি তোমাকে আর কখও ভুল বুঝব না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও নীলা। এই তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি আমি তোমকে আর কষ্ট দেব না। আমি তোমাকে অহর্নিশ ভালোবাসবো।
একটু পরেই নীলাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু নীলাকে রেখে এক মুহূর্তের জন্য কোথাও যেতে তার মন চাচ্ছে না। তবু ও অগত্যা তাকে নীলাকে রেখে আসতে হলো। পরক্ষণে দু’হাত তুলে সে সৃষ্টিকর্তার কাছে নীলার রোগমুক্তির প্রার্থনায় মনোনিবেশিত হলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast