দ্রৌপদীর অপমান ♣
মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এর নায়িকা বলে যদি কারোকে মেনে নিতেই হয়, তিনি দ্রৌপদী। অসংখ্য নারী চরিত্রের মিছিলে পাঞ্চালী সত্যিই অনন্যা।
বার বার মনে হতে পারে, কী রয়েছে এই নারীর অন্তরে-অন্দরে, যার জন্য মহাকাব্যের তাবড় বীররাও নতজানু? কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, অসামান্য রূপ ও গুণের সমন্বয় থাকা সত্ত্বেও দ্রৌপদী বারংবার অপমানিতা।
অনুমান করা যায়, এই অপমানের পিছনে কাজ করেছে যৌন ঈর্ষা।
দ্রৌপদীর অপমানের প্রসঙ্গে উঠলে সবার আগে মাথায় আসে কৌরবসভায় দুঃশাসনের হাতে তাঁর বস্ত্রহরণের ঘটনা। এখানেও মনে রাখা দরকার, কেবল এখানেই অপমানিত হননি কৃষ্ণা।
‘মহাভারত’-এর বিভিন্ন পর্বে তাঁর প্রতি ধাবিত হয়েছে অবমাননা। তিনি লাঞ্ছিতা হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
• প্রথমেই যদি ‘বস্ত্রহরণ’-এর প্রসঙ্গ তোলা যায়, তবে দেখা যাবে এটাই দ্রৌপদীর জীবনের সবথেকে বড় অপমান। এই অসম্মানই তাঁকে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহায় নিষিক্ত করে। কৌরবের শোণিতে বেণীবন্ধন করবেন বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন। পাশা খেলায় পাণ্ডবদের পরাজয়ের পরে রজঃস্বলা, একবস্ত্রা দ্রৌপদীকে কেশাকর্ষণ করে নিয়ে আসা হয় কৌরবসভায়। দুর্যোধন তাঁকে কুৎসিৎ ইঙ্গিত করেন। তার পরে দুঃশাসন তাঁর বস্ত্রহরণে প্রবৃত্ত হন। শেষরক্ষা করেন দ্রৌপদীর একান্ত মিত্র শ্রীকৃষ্ণ।
• বনবাস পর্বে পাণ্ডবরা যখন কামাখ্যা অরণ্যে বাস করছিলেন, তখন সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ সেখানে আসেন। তিনি আবার দুর্যোধনের বোন দুঃশলার স্বামী। জয়দ্রথ কামাখ্যারণ্যে দ্রৌপদীকে দেখতে পান। তিনি দ্রৌপদীকে বোঝাতে থাকেন, তাঁর স্বামীরা যেহেতু ভাগ্যবিপর্যয়ের মধ্য রয়েছেন, সেহেতু তাঁর উচিত তাঁদের ত্যাগ করা এবং জয়দ্রথের অনুগামিনী হওয়া। বলাই বাহুল্য, এই কুপ্রস্তাবে দ্রৌপদী রাজি হননি। জয়দ্রথ তখন দেখলেন, কথায় কাজ হবে না, তিনি দ্রৌপদীকে হরণ করার চেষ্টা করেন। পণ্ডবরা জয়দ্রথের কীর্তি জানতে পারেন এবং সেখানে ছুটে আসেন। অকুস্থলে পৌঁছে দ্রৌপদীর কাছে তার অপমানের কথা জানতে পারেন। পরে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করে কৃষ্ণার অপমানের প্রতিশোধ নেন।
‘বিরাট রাজসভায় অপমানিতা পাঞ্চালী’: রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত
• দ্রৌপদীর আর এক অপমান ঘটে অজ্ঞাতবাস পর্বে। পাঞ্চালী তখন সৈরিন্ধ্রী নাম নিয়ে বিরাট রাজের অন্তঃপুরে বাস করছিলেন। বিরাট রাজের শ্যালক ও সেনাপতি কীচক দ্রৌপদীকে দেখে কামাতুর হয়ে পড়েন। তিনি তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। দ্রৌপদী তাতে অসম্মত হন এবং জানান, তাঁর স্বামীরা এমন ঘটনার কথা জানতে পারলে কীচক বিপদে পড়বেন। কীচক তাতেও দমেননি। তিনি কৃষ্ণার শ্লীলতাহানি করতে উদ্যত হন। পরে রাত্রে ভীম কীচককে বধ করেন।
• তার স্বয়ম্বর সভায় কৃষ্ণা কর্ণকে অপমান করেছিলেন। কর্ণের পিতৃপরিচয় তুলে তাঁকে খারিজ করেছিলেন পাণিপ্রার্থীর আসন থেকে। কর্ণ এই অপমান ভুলতে পারেননি। তিনি পরে পাণ্ডবদের দুঃসময়ের কালে এই অপমানের শোধ তুলতে পাল্টা অপমান করেন দ্রৌপদীকে। তিনি বলেন, দ্রৌপদীর উচিত তার স্বামীদের ত্যাগ করে দুর্যোধনকে পতিরূপে বরণ করা। আর একটি স্বামীতে তার সতীত্ব এমন কিছু নষ্ট হবে না। তিনি দ্রৌপদীকে গণিকা হিসেবে বর্ণনা করেন। এবং জানান, সভায় তার বস্ত্রহরণ করা কিছু অন্যায় কাজ নয়। পাঞ্চালীর এই অপমানের প্রেক্ষিতে অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেন তিনি কর্ণকে বধ করবেন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইফ রুদাদ ২২/১২/২০১৭আবার পড়লাম, দ্রৌপধিরা মরে নাই, এখনও আছে এই নষ্ট সমাজে।
-
সাইফ রুদাদ ১৫/০৯/২০১৬দ্রৌপদীর কি একাধিক স্বামী ছিল?
-
পরশ ০৫/০৮/২০১৬অনেক ভাল লেগেছে
-
পরশ ০২/০৮/২০১৬সেইরম হইছে
-
স্বপ্নময় স্বপন ০১/০৮/২০১৬অদ্ভুত একটি অনুভুতি অনুভুত হলো! অসম্ভব সুন্দর লেখা!