www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

♥গ্রিক পুরাণের অমর প্রেম কাহিনীঃ থিসবি♥

সে অনেক আগের কথা ব্যাবিলন শহরে বাস করতো পাইরামস নামে এক তরুণ। সে ছিলো প্রাচ্যের সবচেয়ে সুদর্শন যুবক। আর তার পাশের বাড়িতেই থাকতো থিসবি নামে অনন্য সুন্দরী তরুণী। যার রূপ-গুণে পাগল ছিলো শহরের পুরুষেরা। কিন্তু থিসবি ভালোবাসতো পাইরামসকে। পাইরামসও জীবন দিয়ে ভালোবাসতো থিসবিকে।
পাশাপাশি বাড়িতে থেকে বেড়ে ওঠা দুইজনই নিজেদের অজান্তে পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলে। তারপর চুপচাপ তাদের প্রেম চলতে থাকে। পাইরামস থিসবিকে এনে দিলো রেশমী ওড়না। থিসবি এঁকে দিলো পাইরামসের রুমালে প্রজাপতি আর ফুলের ছবি।
প্রেমতো আর লুকিয়ে রাখা যায় না। তাই একদিন প্রকাশ পেয়ে গেলো তাদের প্রেম আর তখন বাধা হয়ে দাঁড়ালো তাদের পরিবার। না, কেউ মেনে নিবে না এই ভালোবাসা। পাইরামস ও থিসবি একে অন্যের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো। দুই জনের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করার জন্য দুই বাড়ির মাঝেখানে তুলে দেয়া হলো বিশাল এক দেয়াল।
দেয়াল এতো কঠিন যে এক পাশের কথাও অপর পাশে যেতো না। পাইরামস ভাবতো দেয়ালের ওপাশেই তার ভালোবাসার থিসবি আর থিসবি ভাবতো দেয়ালের ও পাশেই তার প্রাণপ্রিয় পাইরামস। তারা তাদের প্রেমের কথাগুলো দেয়ালকেই বলতো। বলে বলে হালকা করতো বুকের পাথর। তাদের এই প্রেমের আকুতি সহ্য করতে পারলো না পাথরের দেয়ালও। দেয়ালের বুক থেকে সে নিজেই খসিয়ে দিলো একটা পাথর আর তৈরি হলো একটা ফোকর।
এই ফোকরেই ঠোঁট রেখে ভোর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুইজন কথা বলতো। কিন্তু পরস্পরকে ছুঁতে পারতো না। দেয়ালে চুমু রেখে দুইজনই বিদায় নিতো। এইভাবে তাদের মন ভরতো না। তারা তাদেরকে আরো কাছে পেতে চাইতো। একজন আরেক জনকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠতো। তারা ঠিক করলো এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।
কথামত ঠিক করে নিলো নাইনসের সমাধি মন্দিরের পাশে মালবেরি গাছটির নিচে পরস্পর দেখা করবে। থিসবি কথা মতো আগেই চলে এলো সেই মালবেরি গাছের নিচে। মালবেরি গাছ তার বরফশুভ্র ফল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, জোছনার আলো পড়ে সেগুলো চিক চিক করছে। পাশেই ঝর্ণাধারা। হঠাৎ শব্দ শুনে থিসবি তাকিয়ে দেখে এক সিংহ রক্তমাখা চোয়াল নিয়ে তার দিকেই আসছে। ভয় পেয়ে সে দৌড়ে পালাল। দৌড়ে পালানোর সময় ঝোঁপের কাটায় আটকে গেলো তার ওড়না। সে খেয়ালই করলো না। সিংহ এসে ওড়নায় গন্ধ শুঁকলো, মুখ মুছলো, মানুষের গন্ধ লাগা ওড়নাটা নখে টেনে ছিঁড়ে ফেলে গেলো।
ও দিকে পাইরামস এসে দেখলো একটা সিংহ গর্জন করতে করতে চলে যাচ্ছে। দেখে তার অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠলো। চারপাশে খুঁজতে থাকলো থিসবিকে। অল্পদূরেই রক্তমাখা ছেঁড়া ওড়নাটা পরে ছিলো। দেখে চেনার বাকি থাকলো না পাইরামসের। এ যে তারই দেয়া থিসবির ওড়না। তবে বুঝি সিংহ থিসবিকে মেরে খেয়ে নিয়েছে! আহা! কেন সে থিসবিকে এই বিপদসংকুল স্থানে আসতে বলেছিলো! তার দোষেই হারাতে হলো থিসবির প্রাণ! প্রিয়তমাকে ছাড়া আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই তার।
থিসবির ওড়না জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। নিজের তলোয়ার বিঁধিয়ে দিলো বুকে। আর বেছে নিলো স্বেচ্ছা মৃত্যু।
কিছুক্ষণ পর থিসবি ফিরে এলো- সিংহ নিশ্চয়ই চলে গেছে আর পাইরামসও চলে এসেছে এই ভেবে। কিন্তু মালবেরি গাছের নিচে এসে আবিষ্কার করলো পাইরামস নিজের বুকে তলোয়ার বিঁধিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত অবস্হায় পড়ে আছে তার ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে। তখন সে বুঝতে পারলো সব। চিৎকার দিয়ে পাইরামসকে জড়িয়ে ধরলো পাইরামসের নিথর দেহটাকে।
কিন্তু ততোক্ষণে পাইরামস পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পেলো না থিসবি। পাইরামসের শীতল ঠোঁটে ঠোঁট রেখে তার বুকে বিঁধে থাকা তলোয়ারটি গেঁথে নিলো নিজের বুকে। আর থিসবির বুকের রক্ত লেগে লাল হয়ে উঠলো শুভ্র মালবেরি ফল।
এই যুগলের প্রেমের করুণ পরিনতি দেখলো দেবতারাও। সেই অনবদ্য প্রেমের নিদর্শন হিসেবে দেবতারা শুভ্র মালবেরি ফলকে করে দিলো টকটকে লাল।
সূত্রঃ গ্রিক পুরাণ
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৩৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • চমৎকার। গল্পটি আমি অনেক আগে পড়েছিলাম। অনেক দি ধরে খুজছি। আজ পেয়ে গেলাম। ভালো লাগলো...........................
  • ১৪/০২/২০১৫
    সুন্দর কাহিনী ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১৪/০২/২০১৫
    মুগ্ধ ..................।।
 
Quantcast