www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি (ছোট্ট) প্রেমের গল্প

মেজর জন ব্লাঞ্চারড বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, ওর ইউনিফর্মটা ঠিক ঠাক করে নিলেন। মেজর মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসা প্রত্যেক যাত্রিকে, তার চোখ বিশেষ ভাবে খুঁজছিল কলারে গোলাপ গুঁজা একজনকে যার সাথে আগে কখনো তার দেখা হয়নি, কিন্তু মন দেয়া নেয়া হয়েছে। এই মেয়েটার সাথে ব্লাঞ্চারডের যোগাযোগ প্রায় তের মাস আগে ফ্লোরিডার এক লাইব্রেরিতে। একটা বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখার সময় ওর নজর কাড়ে প্রতিটি পাতার কোনায় লিখা নোট গুলো। নরম হাতে লিখা নোটগুলোতে চিন্তাশীলতা আর অন্তর্দৃষ্টির ছাপ ছিল। বইয়ের প্রথম পাতায় পেন্সিলে লিখা নাম দেখে ব্লাঞ্চারড জানতে পারেন বইটার পূর্বসূরি ছিলেন মিস মেয়নিল।

সময় নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে ব্লাঞ্চারড খুঁজে বের করেন মেয়নিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা। ব্লাঞ্চারড মেয়নিল কে নিজের পরিচয় দিয়ে একটা চিঠি লিখলেন আর সঙ্গে এটাও জানালেন যে সে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন। পরদিন ই ব্লাঞ্চারড কে ইউরোপের জাহাজে উঠতে হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় তখন। পরবর্তী এক বছর আর কয়েক মাস ধরে ব্লাঞ্চারড আর মেয়নিলের মধ্যে নিয়মিত চিঠির আদান প্রদান হয়। চিঠির অক্ষরেই তারা পরস্পরকে জানতে পারে। প্রণয়ের শুরু তখন থেকেই, একেকটা চিঠি ছিল ওদের উর্বর হৃদয়ে ভালাবাসার বীজবপনের মত। ব্লাঞ্চারড প্রায়ই চিঠিতে মেয়েটার একটা ছবি দেখতে চাইতো কিন্তু মেয়নিল কখনো তাতে সারা দেয়নি। ওর মতে মনের যোগ থাকলে মুখের রূপ দেখার জন্য মেজরের এই উৎকণ্ঠা অমূলক। এরপর ব্লাঞ্চারডের সময় এলো ঘরে ফেরার, ঠিক ইউরোপ ছাড়ার আগে চিঠিতে ওরা ঠিক করল আমেরিকাতে পৌঁছেই দেখা করবে, সন্ধ্যা সাত টায় নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে। "তুমি আমাকে ঠিক চিনে নিতে পারবে, আমার জামার কলারে একটা লাল গোলাপ গুঁজা থাকবে" - মেয়নিল চিঠিতে জানিয়েছিল। ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা, ব্লাঞ্চারডের দুই চোখ ভিড়ের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছে কলারে গোলাপ গুঁজা মেয়নিল কে- যাকে তার কখনো দেখা হয়নি, চিঠিতে চিঠিতে মনের যোগ হয়েছে শুধু। বাকীটা এখন ব্লাঞ্চারডের মুখেই শুনি।

একজন লম্বা ছিপছিপে কম বয়সী মেয়ে আমার দিকে হেঁটে আসছিল। মেয়েটির দীর্ঘ ঢেউ খেলানো সোনালি চুল গুলো হাটার তালে তালে দুলছিল। ওর চোখ দুটো ছিল নাম না জানা কোন নীলাভ ফুলের মত। মুখের গড়নে নম্রতা আর কাঠিন্যের একটা স্পষ্ট মিশ্রণ ছিল। ওর গায়ের হাল্কা সবুজ জামাটাকে দেখে মনে হচ্ছিল বসন্ত চলে এসেছে। আমি ধীর পায়ে বিহ্বলতা নিয়ে মেয়েটার দিকে এগুচ্ছিলাম, একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম যে মেয়েটার জামার কলারে কোন গোলাপ গুঁজা ছিলোনা। মেয়েটার খুব কাছাকাছি আসতেই ও স্মিত কিন্তু খানিকটা উস্কানিমূলক হাসি দিয়ে চাপা স্বরে বললো "কি অফিসার, আমাকেই তো খুঁজছ?" আমি আরও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে মেয়েটার আরও কাছে চলে গেলাম, আর ঠিক তখনি আমি মেয়নিল কে দেখলাম মেয়েটার ঠিক পেছনে, কলারে একটা তাজা লাল গোলাপ গুঁজা। মেয়নিলের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে, ধূসর চুলগুলো একটা অনেক পুরনো হ্যাটের ভিতর ঢোকানো ছিল। বেশ ভারি শরীরের মেয়নিলের ফোলা ফোলা পা গুলোর অনেক খানিই পামশু এর বাইরে বের হয়ে ছিল। ততক্ষণে সবুজ জামার মেয়েটা বেশ দুরে চলে গিয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছি, একভাগ চাইছিল সবুজ জামার আবেদনে সাড়া দিতে, আরেক ভাগ চাইছিল মেয়নিলের সাথে থাকতে যার সাথে আমার রয়েছে আত্মার যোগ। মেয়নিলের গোলগাল মুখটাতে একটা নম্রতা ছিল, বিচক্ষণতার স্পষ্ট আভাস ছিল। ওর উষ্ণতা ভরা ধূসর চোখ দুটি সহানুভূতির আলোতে মিট মিট করে জ্বলছিল। আমি কোন দ্বিধা করিনি, আমি শক্ত করে চেপে ধরলাম আমার হাতের নীল মলাটের বইটিকে - আমার আর মেয়নিলের যোগাযোগের সূত্র। এটা হয়ত প্রেম নয়, তবে নিশ্চিত ভাবে প্রেমের চেয়েও বড় কিছু, হয়ত এমনি এক বন্ধুত্ব যা আমাকে দিয়েছে আত্ন অনুসন্ধান, অনন্ত স্থিরতা আর সীমাহীন স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। মেয়নিলকে আমার জীবনে পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। হয়তো কিছুটা হতাশা তখনো ছিল, তবু দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে গিয়ে মেয়নিল কে বললাম, "আমি মেজর জন ব্লাঞ্চারড, খুব ভালো লাগছে যে শেষপর্যন্ত আমাদের দেখাটা হয়েছে, আমরা কি আজকের ডিনার টা একসঙ্গে করতে পারি?" মেয়নিল আমার প্রস্তাব শুনে হেসে ফেললো, বললো "আমি ঠিক জানিনা তুমি কি বলতে চাইছ বৎস, তবে সবুজ জামা পড়া যেই মেয়েটা একটু আগেই চলে গেল ও আমার কলারে এই গোলাপটা গুঁজে দিয়ে বলছিল- তুমি যদি আমাকে ডিনারের নিমন্ত্রণ করো তবে তোমাকে যেন বলি ও তোমার জন্য স্টেশনের বাইরে বড় রেস্তোরাটাতে অপেক্ষা করছে।"
"এটা মনে হয় তোমার জন্য কোন ধরনের পরীক্ষা ছিল।"

শাম্মি রাজিউল্লাহ
(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মল্লিকা রায় ১৫/০৩/২০১৮
    চমৎকার গল্প । মন ভরে গেল ।ধন্যবাদ প্রিয়।
 
Quantcast