কুব্বাতের অসহায়ত্ব
ফজরের আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল কুব্বাতের। খেজুর পাতার পাটিতে তার বিছানা, নিত্য দিনের মতো ধড়-মড় করে উঠতে গেল। কিন্ত ডান পা-টা নড়ে না। কে যেন বিছানার সাথে ভীষণ ভাবে জাপটে ধরে আছে।
প্রতিদিনই কাকডাকা ভোরে ফজরের নামাজ শেষে বেরিয়ে পড়ে কুব্বাত। উদ্দেশ্য কাজের সন্ধান। শক্ত-সামর্থ্য শরীর, কাজ করেই চারটি মুখে প্রতিদিনকার অন্ন যোগাতে চায় সে। কোনদিন মহাজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তিন চাকার ভ্যান চালায়, কোন কোন দিন দিনমজুর খাটে, আরো কত সব কাজ। দিন আনে দিন খায়, কোন-না কোন ভাবে দু-বেলা ডালভাত খেয়ে হেসে খেলে ভালই কেটে যাচ্ছিল কুব্বাত ও তার পরিবারের।
সখিনা কুব্বাতের বউ, তিন বছরের মনিমা ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে তাদের আর বৃদ্ধা জয়গুন বিবিকে নিয়ে কুব্বাতের চার সদস্যের সংসার। কে মা, কে বাবা, কুব্বাতের জানা হয়নি কোনদিন, এ নিয়ে আক্ষেপও নেই তার। তিন কি সাড়ে তিন বছর বয়স হবে, ফুলতলার হাট থেকে কুব্বাতকে কুড়িয়ে পায় রহীম মিয়া। বিষয়টি রহীম মিয়া ও জয়গুন বিবির কাছ থেকে জানতে পারে কুব্বাত।
আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো রহীম মিয়া মারা গেছেন। হাটে হাটে কাঁচা তরি-তরকারী বিক্রি করে নিঃসন্তান রহীম মিয়া ও জয়গুন বিবির সংসার চলতো। কুব্বাতকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর বেশ আদর-যত্ন করেই বড় করেছে তারা। তখন থেকেই কুব্বাত তাদেরকে কাকা-কাকি বলে ডাকে।
নিত্য দিনের মতো পুব-আকাশে সূর্য্য উঁকি দেয়ার আগেই কাজের জন্য সেদিন বেরিয়ে পড়েছিল কুব্বাত। কিন্তু, কোন কাজ পাচ্ছিল না, মহাজনের একটা ভ্যানও পাওয়া গেলনা। চিন্তিত কুব্বাত কাজের জন্য এখানে সেখানে ধরনা দিতে লাগল, তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে কয়েকটি ক্ষুধার্ত মুখ। অবশেষে এক গাছ ব্যবসায়ী আকবর গাছ কাটার জন্য ঠিক করলো তাকে। বড় একটা তেতুলগাছ কাটতে হবে, পাঁচশত টাকা দিবে। কথা মতো কাজে লেগে গেল, তেতুলগাছের ডালে ডালে কোপ লাগায় কুব্বাত। ধারালো দা-এর আঘাতে একের পর এক ডালগুলো নীচে পড়তে থাকে। কিন্তু হায় দুর্ভাগ্য! হঠাৎ স্লিপ-কেটে দা-টা কুব্বাতের ডান পায়ে আঘাত হানলো, পায়ের রগটা কেটে গেলো, অনেক বড় ক্ষত। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল।
আল্লা...... রে ...... মরে গেলাম ...... বাঁচাও ...... বাবাগো ...... মাগো বলে চিৎকার।
তারপর আর কিছুই মনে নেই কুব্বাতের।
সাতদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ নিজেকে আবিষ্কার করলো কুব্বাত। ডান পায়ে বড় ব্যান্ডেজ, পাশে বউ, মেয়ে আর জয়গুন বিবির চোখগুলো ভীষণ উদ্বিগ্ন। সরকারি হাসপাতাল, টুকটাক খরচগুলো গাছ ব্যবসায়ী আকবরই বহন করেছে। গতকাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছাড়া পেয়েছে কুব্বাত। হাটতে পারেনা, ডাক্তার বলেছে ঠিকভাবে সুস্থ হতে আরো ছয়মাস লাগবে।
নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয় কুব্বাতের, কপোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, এতদিন এ চারটি মুখে অন্ন জুটবে কেমনে। মানুষের কাছে হাত পাতা, কুব্বাতের মন সায় দেয় না।
তাই কুব্বাতের আজকের এই ভ্রম।
এ ভ্রম ভীষণ অসহায়ত্বের, বড্ড অমানবিক!
ফিরোজ, সিদ্ধেশ্বরী, ১২/০৩/২০১৬
প্রতিদিনই কাকডাকা ভোরে ফজরের নামাজ শেষে বেরিয়ে পড়ে কুব্বাত। উদ্দেশ্য কাজের সন্ধান। শক্ত-সামর্থ্য শরীর, কাজ করেই চারটি মুখে প্রতিদিনকার অন্ন যোগাতে চায় সে। কোনদিন মহাজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তিন চাকার ভ্যান চালায়, কোন কোন দিন দিনমজুর খাটে, আরো কত সব কাজ। দিন আনে দিন খায়, কোন-না কোন ভাবে দু-বেলা ডালভাত খেয়ে হেসে খেলে ভালই কেটে যাচ্ছিল কুব্বাত ও তার পরিবারের।
সখিনা কুব্বাতের বউ, তিন বছরের মনিমা ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে তাদের আর বৃদ্ধা জয়গুন বিবিকে নিয়ে কুব্বাতের চার সদস্যের সংসার। কে মা, কে বাবা, কুব্বাতের জানা হয়নি কোনদিন, এ নিয়ে আক্ষেপও নেই তার। তিন কি সাড়ে তিন বছর বয়স হবে, ফুলতলার হাট থেকে কুব্বাতকে কুড়িয়ে পায় রহীম মিয়া। বিষয়টি রহীম মিয়া ও জয়গুন বিবির কাছ থেকে জানতে পারে কুব্বাত।
আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো রহীম মিয়া মারা গেছেন। হাটে হাটে কাঁচা তরি-তরকারী বিক্রি করে নিঃসন্তান রহীম মিয়া ও জয়গুন বিবির সংসার চলতো। কুব্বাতকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর বেশ আদর-যত্ন করেই বড় করেছে তারা। তখন থেকেই কুব্বাত তাদেরকে কাকা-কাকি বলে ডাকে।
নিত্য দিনের মতো পুব-আকাশে সূর্য্য উঁকি দেয়ার আগেই কাজের জন্য সেদিন বেরিয়ে পড়েছিল কুব্বাত। কিন্তু, কোন কাজ পাচ্ছিল না, মহাজনের একটা ভ্যানও পাওয়া গেলনা। চিন্তিত কুব্বাত কাজের জন্য এখানে সেখানে ধরনা দিতে লাগল, তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে কয়েকটি ক্ষুধার্ত মুখ। অবশেষে এক গাছ ব্যবসায়ী আকবর গাছ কাটার জন্য ঠিক করলো তাকে। বড় একটা তেতুলগাছ কাটতে হবে, পাঁচশত টাকা দিবে। কথা মতো কাজে লেগে গেল, তেতুলগাছের ডালে ডালে কোপ লাগায় কুব্বাত। ধারালো দা-এর আঘাতে একের পর এক ডালগুলো নীচে পড়তে থাকে। কিন্তু হায় দুর্ভাগ্য! হঠাৎ স্লিপ-কেটে দা-টা কুব্বাতের ডান পায়ে আঘাত হানলো, পায়ের রগটা কেটে গেলো, অনেক বড় ক্ষত। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল।
আল্লা...... রে ...... মরে গেলাম ...... বাঁচাও ...... বাবাগো ...... মাগো বলে চিৎকার।
তারপর আর কিছুই মনে নেই কুব্বাতের।
সাতদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ নিজেকে আবিষ্কার করলো কুব্বাত। ডান পায়ে বড় ব্যান্ডেজ, পাশে বউ, মেয়ে আর জয়গুন বিবির চোখগুলো ভীষণ উদ্বিগ্ন। সরকারি হাসপাতাল, টুকটাক খরচগুলো গাছ ব্যবসায়ী আকবরই বহন করেছে। গতকাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছাড়া পেয়েছে কুব্বাত। হাটতে পারেনা, ডাক্তার বলেছে ঠিকভাবে সুস্থ হতে আরো ছয়মাস লাগবে।
নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয় কুব্বাতের, কপোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, এতদিন এ চারটি মুখে অন্ন জুটবে কেমনে। মানুষের কাছে হাত পাতা, কুব্বাতের মন সায় দেয় না।
তাই কুব্বাতের আজকের এই ভ্রম।
এ ভ্রম ভীষণ অসহায়ত্বের, বড্ড অমানবিক!
ফিরোজ, সিদ্ধেশ্বরী, ১২/০৩/২০১৬
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
jannatul ripa ০৮/১০/২০১৬খুব বালো লাগল পড়তে পেরে,,
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১৯/০৩/২০১৬ভালো লাগল নামটা চেঞ্জ করে।
-
দেবব্রত সান্যাল ১৫/০৩/২০১৬গল্পের শিরোনাম "কুব্বাতের ভ্রম " । তারপর গল্পে গাছ কাটতে গিয়ে কুব্বাতের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ভ্রমটা কি ? সকালে ঘুম থেকে উঠে সাময়িক ভাবে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা ভুলে যাওয়া ! গল্পের পাঞ্চটা পরিস্কার নয়।
-
মোঃ ফিরোজ হোসেন ১২/০৩/২০১৬পরামর্শ চাই