রিসালাত কী রাসুলুল্লাহর সাঃ রিসালাতের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
রিসালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বার্তা, চিঠি , পয়গম, সংবাদ বা কোন ভাল কাজের দায়িত্ব বহন করে অন্য কারো কাছে পৌঁছানো। ইসলামী শরীয়তে রিসালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রিসালাত কী?
ইসলামী পরিভাষায় রিসালাত অর্থ হলো আল্লাহ্ তাআলার বার্তা বা ঘোষণা বা আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ সমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সৃষ্টির পরবর্তী থেকে মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ্ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নবী রাসুল আঃ পাঠিয়েছেন। এইসব নবী রাসুল আঃ গণ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দিতো। তাওহীদের বাণী প্রচার করতো। এই তাওহীদের বাণী প্রচারের কাজই হচ্ছে রিসালাত।
রিসালাতের প্রয়োজনীয়তাঃ
পৃথিবীতে মানুষের আবাদের শুরুর দিকে সবাই এক আল্লাহ্র ইবাদত করতো। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে মানুষ আল্লাহ্কে ভুলে যেতে থাকলো। সেইসাথে আল্লাহ্র পরিবর্তে বিভিন্ন উপাস্য তৈরি করতে লাগলো এবং পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে লাগলো। যা আল্লাহ্র তাওহীদের বিপরীত।
মানুষ যাতে আল্লাহ্কে ভুলে না যায়। তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে উপাস্য গ্রহণ না করে বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক না করে তার জন্য যুগে যুগে আল্লাহর বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নবী রাসুলদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
যদি আল্লাহ্ নবী রাসুল প্রেরণ না করতেন তাহলে পৃথিবীতে কেউ আল্লাহ্কে চিনতে এবং জানতে পারতো না। সেইসাথে আল্লাহর কোনো বান্দা তাঁর ইবাদত বন্দেগীও করতো না।
সুতরাং আল্লাহ্কে চেনার জন্য জানার জন্য এবং ইবাদত করার জন্য নবী রাসুল গণের রিসালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী রাসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেই আমরা আজ আল্লাহ্কে চিনতে এবং জানতে পেরেছি।
রিসালাত ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়াঃ
রিসালাতের দায়িত্ব একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। আল্লাহ্ যুগে যুগে প্রতিটি জাতি, গোষ্ঠীর কাছে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলেন। যখনই কোনো জাতি বা গোষ্ঠী আল্লাহর স্বরণ বিমুখ হয়, তখনই আল্লাহ্ সেই জাতি গোষ্ঠীর জন্য নবী রাসুল প্রেরণ করে তাদের সতর্ক করে দেয় এবং অমান্যকারীদের আযাবে নিমজ্জিত করেন।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর এমন কোনো জাতি নেই যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক (নবী রাসুল) প্রেরিত হয় নি।’’ [সূরা ফাতির , আয়াত: ২৪]
অন্যত্রে এসেছে:
‘‘আর প্রত্যেক উম্মতের জন্যই রয়েছে রাসূল।’’ [সূরা ইউনুস, আয়াত
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা গোষ্ঠী নেই যাদের পাপ বৃদ্ধির কারণে নবী রাসুল প্রেরণ করা হয়নি।
রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়ঃ
রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য যেসকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা কখনোই কেউ নিজের জ্ঞান চর্চা বা তপস্যা সাধনা করে অর্জন করতে পারে না। রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়। রিসালাত সরাসরি আল্লাহ্ কতৃক মনোনীত। আল্লাহ্ যাকে তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব দিতে চান তিনিই কেবল সেই দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। পৃথিবীতে যত নবী রাসুল আঃ এসেছিলেন, সবাইকে আল্লাহ্ নিজেই মনোনীত করেছিলেন।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন।’’ [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪]
রাসুল সাঃএর রিসালাতের বৈশিষ্ঠ্যঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃও একজন রিসালাতের দায়িত্ব প্রাপ্ত রাসুল। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী অন্যান্য নবী রাসুলদের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে তাওহীদের দাওআত দিতে এসেছিলেন। তাঁর রিসালাতের ধরণ এবং গঠন অন্যান্য নবী রাসুলদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
সার্বজনীনঃ
আল্লাহ্ যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু এবং শরীয়ত দিয়ে নবী রাসুল পাঠিয়েছিলেন। অতীতের সকল নবী রাসুল আঃগণ ছিলেন নির্দিষ্ট দেশ, জাতি এবং গোষ্ঠীর জন্য।
কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাঃএর রিসালাত হচ্ছে সার্বজনীন। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ সমগ্র পৃথিবীর সমগ্র জ্বীন এবং ইনসান জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তিনি কোনো নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠী এলাকা বা সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়ে প্রেরিত হননি।
আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল আপনি) বলুন হে মানবজাতি! আমি তোমাদের (বর্তমান এবং ভবিষ্যতের) সবার প্রতিই আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৫]
সুসংবাদদাতাঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন সমগ্র পৃথিবীর জ্বীন এবং মানুষের জন্য সুসংবাদ দাতা। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য সুসংবাদ এনেছেন যে, যারাই আল্লাহ্র ইবাদত করবে, তাঁর নির্দেশ, আদেশ মেনে চলবে এবং শির্ক কুফর করবেনা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
জান্নাত এমন একটি জায়গায় যেখানে দুঃখের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ্কে মানতে গিয়ে দুনিয়ায় দুঃখ দূর্দশায় পতিত হবে। সেই দুঃখ দূর্দশার পুরুষ্কার হলো জান্নাত। যেখানে রয়েছে পৃথিবীর নেয়ামতের চাইতে হাজার কোটি গুণ বেশী নেয়ামত। সেখানেই সুসংবাদ প্রাপ্তরা পৃথিবীর মানুষেরা অনন্ত কাল থাকবে।
আল্লাহ্ বলেন,
"আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। "(সূরাঃ সাবা, আয়াতঃ ২৮)
সতর্ককারীঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে তাঁর সময়ের এবং তাঁর পরবর্তীতে আগত সকল জাতি গোষ্ঠীকে সতর্ক করতে। অর্থাৎ তাঁর সময়ের পরবর্তীতেও যারা দুনিয়ায় আসবে তাদের জন্যও তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবাণী দিয়ে গেছেন।
বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উপাস্য করবে তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করাই হচ্ছে রাসুল সাঃএর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।
যুগে যুগে আল্লাহর রিসালাত নিয়ে যেসব নবী রাসুল এসেছিলেন তাঁরা ছিলেন কোনো নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু রাসুল সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য সতর্ককারী। তাঁর আনীত দ্বীন ইসলামকেই সকলকে মেনে নিতে হবে। এই ইসলামের ভিত্তিতেই সকলের বিচার বিশ্লেষণ হবে।
যারা রাসুল সাঃএর আনীত দ্বীন ইসলাম মেনে নিবে না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সীমাহীন আযাব। সেই আযাব তথা শাস্তির কথাই রাসুল সাঃ আমাদের বলে গেছেন। তাই রাসুল সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য সতর্ককারী।
আল্লাহ্ বলেন,
" হে নবী! আপনি উঠুন এবং সতর্ক করুন।’’ [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২]
আল্লাহ্ আরো বলেন এই কুরআনের সতর্কবাণী তাদের জন্যই যারা আল্লাহ্কে সত্যিকারে ভয়করে।
কুরআনে এসেছে,
" ত্বা-হা! আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নি, কিন্তু এটা তাদেরই উপদেশের জন্য যারা ভয় করে।’’ [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-৩]
আলোকবর্তিকাঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা। তিনি আল্লাহ্ থেকে যে সত্য দ্বীন ইসলাম নিয়ে এসেছেন তার সংস্পর্শে যে ই আসবে তাঁর জীবনই আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে উঠবে। রাসুল আমাদের জন্য সত্য দ্বীনের আলোক মশাল।
আল্লাহ্ বলেন,
‘‘হে নবী! আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভীতি প্রদর্শক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৫-৪৬]
অর্থাৎ যেকেউ আল্লাহর দ্বীনের সঠিক স্পর্শে আসলেই তার জীবন হবে পরিপূর্ণ। সে দুনিয়া এবং আখিরাতে হবে লাভবান।
সর্বোত্তম আদর্শঃ
রাসুল সাঃ হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের সকল মানব গোষ্ঠীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের মাপকাঠি। আল্লাহ্ তাঁকে এমন আদর্শ দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন যে তাঁর আদর্শই হচ্ছে আল্লাহর আদর্শ।
যারাই রাসুল সাঃএর আদর্শে আদর্শিক হবে তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য হবে। কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে রাসুল সাঃএর আদর্শ ধারণ করা।
আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
" (হে রাসুল) নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’’ [সূরা আল-কলম, আয়াত: ৪]
সর্বোত্তম অনুসরণীয়ঃ
রাসুল সাঃ যে ইসলাম মানব কল্যাণে নিয়ে এসেছেন তাঁর আদর্শ মাপকাঠি হচ্ছে রাসুল সাঃএর অনুসরণ। যে বা যারা রাসুল সাঃকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে তারাই আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে রাসুল সাঃএর অনুসরণ।
আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
অর্থাৎ আল্লাহ্ একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন সমগ্র মানব জাতির জন্য যে, যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, পেতে চাও, কল্যাণ চাও, দুনিয়া এবং আখিরাতের সফলতা চাও, তাহলে অনুসরণ করো শুধুমাত্র একমাত্র রাসুল সাঃএর। তাহলেই তিনি তোমাদের ভালবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। অতএব আল্লাহর কাছে একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তি হলো রাসুল সাঃ। আমাদের প্রত্যেককে একমাত্র রাসুলের আদর্শকেই অনুসরণ করতে হবে।
দ্বীনের মানদণ্ডঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃকে সত্য ধর্ম ইসলামসহ প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দ্বীনের ভীত রচনা করেছেন। ইসলামই হচ্ছে একমাত্র দ্বীন, যা দিয়ে পৃথিবীর সবাইকে বিচার এবং বিশ্লেষণ করা হবে। এই ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ধর্ম এবং জীবনবিধান। ইসলামে অতীতেও কোনো কিছু অপূর্ণ ছিলো না, বর্তমানেও নেই ভবিষ্যতেও থাকবে না।
এই পরিপূর্ণ দ্বীনকে সর্বেসর্বা ভাবে সম্পূর্ণ করেছেন রাসুল সাঃ। অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে দ্বীনের কোনো কিছুই তিনি বাকি রেখে যাননি। রাসুলুল্লাহ রিসালাতের এটাই হচ্ছে অন্যতম একটি বৈশিষ্ঠ্য।
ইসলামে রাসুলুল্লাহ সাঃএর কথাই হচ্ছে দ্বীন। তিনি যা যা হালাল করেছেন তাই ই হালাল আর যা হারাম করেছেন তা ই হারাম। তিনি যে পদ্ধতিতে দ্বীন পালন করেছেন, বলেছেন এবং অনুমতি দিয়েছেন। সেটাই হচ্ছে পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম। রাসুল ই হচ্ছে দ্বীন ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড।
আল্লাহ্ বলেন,
" রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। "(সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ৭)
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতের প্রধান দায়িত্বই ছিলো দ্বীন ইসলামকে সম্পূর্ণ করে যাওয়া। যাতে ভবিষ্যতে ইসলামের (ইবাদত এবং আইনে) মধ্যে নতুন কিছু সংযুক্ত না হয় বা কেউ করতে না পারে।
অন্যান্য নবী রাসুলগণের উম্মতেরা ধ্বংস হয়েছিল দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন আমল সৃষ্টির কারণে। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃএর পর আর কোনো নবী রাসুল আসবে না, সেহেতু রসুলুল্লাহ সাঃকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
আল্লাহ্ বলেন,
" (আজ) আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য একমাত্র দীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’’ [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
দ্বীন ইসলামে যে নতুন কিছু (ইবাদতের ক্ষেত্রে) সংযুক্ত করা যাবেনা তা সুস্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
" রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা "(মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, "প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম" (নাসাঈ হা/১৫৭৮)
অর্থাৎ দ্বীন ইসলামের ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে নতুন কোনো কিছু আবিষ্কার করা হলো নিকৃষ্টতম কাজ। যার শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নাম।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
" রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য " (মুসলিম হা/১৭১৮)।
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃএর নির্দেশিত ব্যতীত কোনো আমল কেউ করলে তা আল্লাহর কাছে সরাসরি পরিত্যাজ্য।
রাসুলুল্লাহ সাঃ জানতেন যে, ভবিষ্যতে অধিকাংশ মানুষই ইসলাম থেকে সরে গিয়ে গোমরাহ হয়ে যাবে। তাই তিনি দ্বীনের নতুন আবিষ্কার তথা বিদআতের ক্ষেত্রে কঠোর হুশিয়ারি করে গেছেন। হাদীসে এসেছে,
আবু হাসেম(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
'তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
এই হাদীসে এটা সুস্পষ্ট যে, রাসুল পরবর্তীতে দ্বীন ইসলামে নতুন করে কিছু যোগ বিয়োগের সুযোগ নেই। কেউ এমন করলে তার পরিনাম হবে রাসুলের ঘৃণাসহ তিরস্কার।
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হলো তিনি যে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকা। সেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃএর পরিবর্তে অন্য কেউ যেন দ্বীনে কম বেশী করতে না পারে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃই হচ্ছেন ইসলামের মানদন্ড।
পূর্নাঙ্গ রিসালাতঃ
রাসুল সাঃএর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত। অর্থাৎ তাঁর আনীত দ্বীনই শেষ এবং পরিপূর্ণ ইসলাম। তিনি দ্বীন ইসলামে যা সংযোজন বিয়োজন করেছেন তা ই সম্পূর্ণ। আল্লাহ্ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল বিষয়াদি দিয়ে পূর্নাঙ্গ ইসলাম সহকারে রাসুলুল্লাহ সাঃকে প্রেরণ করেছেন। অন্যান্য নবী রাসুলদের রিসালাত ছিলো বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী বা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতই হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত যা সমগ্র জাতির জন্য এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য।
রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁর উপর দায়িত্ব প্রাপ্ত রিসালাতের সকল বার্তা তাঁর উম্মতদের পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি কোনো কিছুই গোপন বা বাকি রেখে দেননি।
আল্লাহ্ বলেন,
" হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। [আল মায়িদাহ ৫:৬৭]
এই আদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহ্ থেকে যাকিছুর আদেশ নির্দেশ পেয়েছেন তা তিনি যেন পরিপূর্ণভাবে সবার কাছে পৌঁছে দেন। এতে তিনি যেন কারো নিন্দার ভয়ে পিছপা না হন। রাসুল সাঃও তেমন করেছিলেন যেমন আল্লাহ্ আদেশ দিয়েছিলেন।
পবিত্র হাদীসে এসেছে,
আয়েশা (রাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে যে, নবী (সাঃ) কিছু জিনিস গোপন রেখেছেন, (প্রকাশ বা প্রচার করেননি), সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। "(বুখারী ৪৮৫৫নং)
একদা আলী (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল যে, আপনাদের নিকট কুরআন ব্যতীত অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণকৃত কোন জিনিস আছে কি? উত্তরে তিনি কসম করে বললেন, না। তবে কুরআন উপলব্ধি করার জ্ঞান, আল্লাহ যাকে দান করেন। (বুখারী)
বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সাহাবার সামনে মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন, "তোমরা আমার ব্যাপারে কি বলবে?" তাঁরা সকলেই বলেছিলেন যে,'আমরা সাক্ষ্য দেব যে, (আপনার উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তা) পৌঁছে দিয়েছেন, (আমানত) আদায় করে দিয়েছেন এবং (উম্মতের জন্য) হিতাকাঙ্ক্ষা ও নসীহত করেছেন।' মহানবী (সাঃ) আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, "হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?" অথবা তিনি তিনবার বললেন, "আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।" (মুসলিম) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি। তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো।
উপরোক্ত বিষয় দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ তাঁর উপর আরোপিত সকল দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে গেছেন। সুতরাং তাঁর পরবর্তীতে কেউ যদি ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন বিয়োজন করে বা নতুন করে কিছু পালন করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা
শেষ নবীঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন শেষ নবী। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাঁর তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় হাজার হাজার যেসব নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের সমাপ্তি হচ্ছে রাসুল সাঃ। অন্যান্য নবী রাসুল গণ খন্ডকালীনভাবে দ্বীনের যে কাজ করে গেছেন তাদের স্বীকৃতি দিয়ে দ্বীনকে পূর্নাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসুলুল্লাহ সাঃ।
রাসুলের প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের পর আর কোনো নতুন দ্বীন বা প্রতিষ্ঠিত দ্বীনে আর হ্রাসবৃদ্ধি হবেনা। তাই রাসুলুল্লাহ সাঃই হচ্ছেন আল্লাহ্র শেষ মনোনীত রাসুল।
আল্লাহ্ বলেন,
" মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। " (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৪০)
পরিশেষে বলা যায়, রাসুলুল্লাহর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত এবং রিসালাতের সমাপ্তি। তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আনীত দ্বীনে নতুন করে কোনো কিছু সংযোজন বিয়োজন করা যাবেনা। তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর শেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পরবর্তীতে আর কোনো নবী বা রাসুলের আগমন হবেনা। প্রতিটি মুসলমানকে অবশ্যই রাসুলের আদর্শে আদর্শিক হয়ে জীবনযাপন এবং ধর্মপালন করতে হবে। তাহলেই ঐ ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ লাভ করবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
রিসালাত কী?
ইসলামী পরিভাষায় রিসালাত অর্থ হলো আল্লাহ্ তাআলার বার্তা বা ঘোষণা বা আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ সমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সৃষ্টির পরবর্তী থেকে মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ্ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নবী রাসুল আঃ পাঠিয়েছেন। এইসব নবী রাসুল আঃ গণ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দিতো। তাওহীদের বাণী প্রচার করতো। এই তাওহীদের বাণী প্রচারের কাজই হচ্ছে রিসালাত।
রিসালাতের প্রয়োজনীয়তাঃ
পৃথিবীতে মানুষের আবাদের শুরুর দিকে সবাই এক আল্লাহ্র ইবাদত করতো। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে মানুষ আল্লাহ্কে ভুলে যেতে থাকলো। সেইসাথে আল্লাহ্র পরিবর্তে বিভিন্ন উপাস্য তৈরি করতে লাগলো এবং পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে লাগলো। যা আল্লাহ্র তাওহীদের বিপরীত।
মানুষ যাতে আল্লাহ্কে ভুলে না যায়। তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে উপাস্য গ্রহণ না করে বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক না করে তার জন্য যুগে যুগে আল্লাহর বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নবী রাসুলদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
যদি আল্লাহ্ নবী রাসুল প্রেরণ না করতেন তাহলে পৃথিবীতে কেউ আল্লাহ্কে চিনতে এবং জানতে পারতো না। সেইসাথে আল্লাহর কোনো বান্দা তাঁর ইবাদত বন্দেগীও করতো না।
সুতরাং আল্লাহ্কে চেনার জন্য জানার জন্য এবং ইবাদত করার জন্য নবী রাসুল গণের রিসালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী রাসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেই আমরা আজ আল্লাহ্কে চিনতে এবং জানতে পেরেছি।
রিসালাত ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়াঃ
রিসালাতের দায়িত্ব একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। আল্লাহ্ যুগে যুগে প্রতিটি জাতি, গোষ্ঠীর কাছে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলেন। যখনই কোনো জাতি বা গোষ্ঠী আল্লাহর স্বরণ বিমুখ হয়, তখনই আল্লাহ্ সেই জাতি গোষ্ঠীর জন্য নবী রাসুল প্রেরণ করে তাদের সতর্ক করে দেয় এবং অমান্যকারীদের আযাবে নিমজ্জিত করেন।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর এমন কোনো জাতি নেই যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক (নবী রাসুল) প্রেরিত হয় নি।’’ [সূরা ফাতির , আয়াত: ২৪]
অন্যত্রে এসেছে:
‘‘আর প্রত্যেক উম্মতের জন্যই রয়েছে রাসূল।’’ [সূরা ইউনুস, আয়াত
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা গোষ্ঠী নেই যাদের পাপ বৃদ্ধির কারণে নবী রাসুল প্রেরণ করা হয়নি।
রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়ঃ
রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য যেসকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা কখনোই কেউ নিজের জ্ঞান চর্চা বা তপস্যা সাধনা করে অর্জন করতে পারে না। রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়। রিসালাত সরাসরি আল্লাহ্ কতৃক মনোনীত। আল্লাহ্ যাকে তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব দিতে চান তিনিই কেবল সেই দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। পৃথিবীতে যত নবী রাসুল আঃ এসেছিলেন, সবাইকে আল্লাহ্ নিজেই মনোনীত করেছিলেন।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন।’’ [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪]
রাসুল সাঃএর রিসালাতের বৈশিষ্ঠ্যঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃও একজন রিসালাতের দায়িত্ব প্রাপ্ত রাসুল। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী অন্যান্য নবী রাসুলদের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে তাওহীদের দাওআত দিতে এসেছিলেন। তাঁর রিসালাতের ধরণ এবং গঠন অন্যান্য নবী রাসুলদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
সার্বজনীনঃ
আল্লাহ্ যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু এবং শরীয়ত দিয়ে নবী রাসুল পাঠিয়েছিলেন। অতীতের সকল নবী রাসুল আঃগণ ছিলেন নির্দিষ্ট দেশ, জাতি এবং গোষ্ঠীর জন্য।
কিন্তু হযরত মুহাম্মদ সাঃএর রিসালাত হচ্ছে সার্বজনীন। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ সমগ্র পৃথিবীর সমগ্র জ্বীন এবং ইনসান জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তিনি কোনো নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠী এলাকা বা সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়ে প্রেরিত হননি।
আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল আপনি) বলুন হে মানবজাতি! আমি তোমাদের (বর্তমান এবং ভবিষ্যতের) সবার প্রতিই আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৫]
সুসংবাদদাতাঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন সমগ্র পৃথিবীর জ্বীন এবং মানুষের জন্য সুসংবাদ দাতা। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য সুসংবাদ এনেছেন যে, যারাই আল্লাহ্র ইবাদত করবে, তাঁর নির্দেশ, আদেশ মেনে চলবে এবং শির্ক কুফর করবেনা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
জান্নাত এমন একটি জায়গায় যেখানে দুঃখের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ্কে মানতে গিয়ে দুনিয়ায় দুঃখ দূর্দশায় পতিত হবে। সেই দুঃখ দূর্দশার পুরুষ্কার হলো জান্নাত। যেখানে রয়েছে পৃথিবীর নেয়ামতের চাইতে হাজার কোটি গুণ বেশী নেয়ামত। সেখানেই সুসংবাদ প্রাপ্তরা পৃথিবীর মানুষেরা অনন্ত কাল থাকবে।
আল্লাহ্ বলেন,
"আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। "(সূরাঃ সাবা, আয়াতঃ ২৮)
সতর্ককারীঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে তাঁর সময়ের এবং তাঁর পরবর্তীতে আগত সকল জাতি গোষ্ঠীকে সতর্ক করতে। অর্থাৎ তাঁর সময়ের পরবর্তীতেও যারা দুনিয়ায় আসবে তাদের জন্যও তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবাণী দিয়ে গেছেন।
বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উপাস্য করবে তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করাই হচ্ছে রাসুল সাঃএর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।
যুগে যুগে আল্লাহর রিসালাত নিয়ে যেসব নবী রাসুল এসেছিলেন তাঁরা ছিলেন কোনো নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু রাসুল সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য সতর্ককারী। তাঁর আনীত দ্বীন ইসলামকেই সকলকে মেনে নিতে হবে। এই ইসলামের ভিত্তিতেই সকলের বিচার বিশ্লেষণ হবে।
যারা রাসুল সাঃএর আনীত দ্বীন ইসলাম মেনে নিবে না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সীমাহীন আযাব। সেই আযাব তথা শাস্তির কথাই রাসুল সাঃ আমাদের বলে গেছেন। তাই রাসুল সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য সতর্ককারী।
আল্লাহ্ বলেন,
" হে নবী! আপনি উঠুন এবং সতর্ক করুন।’’ [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২]
আল্লাহ্ আরো বলেন এই কুরআনের সতর্কবাণী তাদের জন্যই যারা আল্লাহ্কে সত্যিকারে ভয়করে।
কুরআনে এসেছে,
" ত্বা-হা! আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নি, কিন্তু এটা তাদেরই উপদেশের জন্য যারা ভয় করে।’’ [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-৩]
আলোকবর্তিকাঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা। তিনি আল্লাহ্ থেকে যে সত্য দ্বীন ইসলাম নিয়ে এসেছেন তার সংস্পর্শে যে ই আসবে তাঁর জীবনই আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে উঠবে। রাসুল আমাদের জন্য সত্য দ্বীনের আলোক মশাল।
আল্লাহ্ বলেন,
‘‘হে নবী! আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভীতি প্রদর্শক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৫-৪৬]
অর্থাৎ যেকেউ আল্লাহর দ্বীনের সঠিক স্পর্শে আসলেই তার জীবন হবে পরিপূর্ণ। সে দুনিয়া এবং আখিরাতে হবে লাভবান।
সর্বোত্তম আদর্শঃ
রাসুল সাঃ হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের সকল মানব গোষ্ঠীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের মাপকাঠি। আল্লাহ্ তাঁকে এমন আদর্শ দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন যে তাঁর আদর্শই হচ্ছে আল্লাহর আদর্শ।
যারাই রাসুল সাঃএর আদর্শে আদর্শিক হবে তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য হবে। কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে রাসুল সাঃএর আদর্শ ধারণ করা।
আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
" (হে রাসুল) নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’’ [সূরা আল-কলম, আয়াত: ৪]
সর্বোত্তম অনুসরণীয়ঃ
রাসুল সাঃ যে ইসলাম মানব কল্যাণে নিয়ে এসেছেন তাঁর আদর্শ মাপকাঠি হচ্ছে রাসুল সাঃএর অনুসরণ। যে বা যারা রাসুল সাঃকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে তারাই আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে রাসুল সাঃএর অনুসরণ।
আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
অর্থাৎ আল্লাহ্ একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন সমগ্র মানব জাতির জন্য যে, যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, পেতে চাও, কল্যাণ চাও, দুনিয়া এবং আখিরাতের সফলতা চাও, তাহলে অনুসরণ করো শুধুমাত্র একমাত্র রাসুল সাঃএর। তাহলেই তিনি তোমাদের ভালবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। অতএব আল্লাহর কাছে একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তি হলো রাসুল সাঃ। আমাদের প্রত্যেককে একমাত্র রাসুলের আদর্শকেই অনুসরণ করতে হবে।
দ্বীনের মানদণ্ডঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃকে সত্য ধর্ম ইসলামসহ প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দ্বীনের ভীত রচনা করেছেন। ইসলামই হচ্ছে একমাত্র দ্বীন, যা দিয়ে পৃথিবীর সবাইকে বিচার এবং বিশ্লেষণ করা হবে। এই ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ধর্ম এবং জীবনবিধান। ইসলামে অতীতেও কোনো কিছু অপূর্ণ ছিলো না, বর্তমানেও নেই ভবিষ্যতেও থাকবে না।
এই পরিপূর্ণ দ্বীনকে সর্বেসর্বা ভাবে সম্পূর্ণ করেছেন রাসুল সাঃ। অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে দ্বীনের কোনো কিছুই তিনি বাকি রেখে যাননি। রাসুলুল্লাহ রিসালাতের এটাই হচ্ছে অন্যতম একটি বৈশিষ্ঠ্য।
ইসলামে রাসুলুল্লাহ সাঃএর কথাই হচ্ছে দ্বীন। তিনি যা যা হালাল করেছেন তাই ই হালাল আর যা হারাম করেছেন তা ই হারাম। তিনি যে পদ্ধতিতে দ্বীন পালন করেছেন, বলেছেন এবং অনুমতি দিয়েছেন। সেটাই হচ্ছে পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম। রাসুল ই হচ্ছে দ্বীন ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড।
আল্লাহ্ বলেন,
" রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। "(সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ৭)
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতের প্রধান দায়িত্বই ছিলো দ্বীন ইসলামকে সম্পূর্ণ করে যাওয়া। যাতে ভবিষ্যতে ইসলামের (ইবাদত এবং আইনে) মধ্যে নতুন কিছু সংযুক্ত না হয় বা কেউ করতে না পারে।
অন্যান্য নবী রাসুলগণের উম্মতেরা ধ্বংস হয়েছিল দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন আমল সৃষ্টির কারণে। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃএর পর আর কোনো নবী রাসুল আসবে না, সেহেতু রসুলুল্লাহ সাঃকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
আল্লাহ্ বলেন,
" (আজ) আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য একমাত্র দীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’’ [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
দ্বীন ইসলামে যে নতুন কিছু (ইবাদতের ক্ষেত্রে) সংযুক্ত করা যাবেনা তা সুস্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
" রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা "(মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, "প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম" (নাসাঈ হা/১৫৭৮)
অর্থাৎ দ্বীন ইসলামের ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে নতুন কোনো কিছু আবিষ্কার করা হলো নিকৃষ্টতম কাজ। যার শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নাম।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
" রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য " (মুসলিম হা/১৭১৮)।
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃএর নির্দেশিত ব্যতীত কোনো আমল কেউ করলে তা আল্লাহর কাছে সরাসরি পরিত্যাজ্য।
রাসুলুল্লাহ সাঃ জানতেন যে, ভবিষ্যতে অধিকাংশ মানুষই ইসলাম থেকে সরে গিয়ে গোমরাহ হয়ে যাবে। তাই তিনি দ্বীনের নতুন আবিষ্কার তথা বিদআতের ক্ষেত্রে কঠোর হুশিয়ারি করে গেছেন। হাদীসে এসেছে,
আবু হাসেম(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
'তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
এই হাদীসে এটা সুস্পষ্ট যে, রাসুল পরবর্তীতে দ্বীন ইসলামে নতুন করে কিছু যোগ বিয়োগের সুযোগ নেই। কেউ এমন করলে তার পরিনাম হবে রাসুলের ঘৃণাসহ তিরস্কার।
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হলো তিনি যে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকা। সেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃএর পরিবর্তে অন্য কেউ যেন দ্বীনে কম বেশী করতে না পারে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃই হচ্ছেন ইসলামের মানদন্ড।
পূর্নাঙ্গ রিসালাতঃ
রাসুল সাঃএর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত। অর্থাৎ তাঁর আনীত দ্বীনই শেষ এবং পরিপূর্ণ ইসলাম। তিনি দ্বীন ইসলামে যা সংযোজন বিয়োজন করেছেন তা ই সম্পূর্ণ। আল্লাহ্ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল বিষয়াদি দিয়ে পূর্নাঙ্গ ইসলাম সহকারে রাসুলুল্লাহ সাঃকে প্রেরণ করেছেন। অন্যান্য নবী রাসুলদের রিসালাত ছিলো বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী বা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃএর রিসালাতই হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত যা সমগ্র জাতির জন্য এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য।
রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁর উপর দায়িত্ব প্রাপ্ত রিসালাতের সকল বার্তা তাঁর উম্মতদের পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি কোনো কিছুই গোপন বা বাকি রেখে দেননি।
আল্লাহ্ বলেন,
" হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। [আল মায়িদাহ ৫:৬৭]
এই আদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহ্ থেকে যাকিছুর আদেশ নির্দেশ পেয়েছেন তা তিনি যেন পরিপূর্ণভাবে সবার কাছে পৌঁছে দেন। এতে তিনি যেন কারো নিন্দার ভয়ে পিছপা না হন। রাসুল সাঃও তেমন করেছিলেন যেমন আল্লাহ্ আদেশ দিয়েছিলেন।
পবিত্র হাদীসে এসেছে,
আয়েশা (রাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে যে, নবী (সাঃ) কিছু জিনিস গোপন রেখেছেন, (প্রকাশ বা প্রচার করেননি), সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। "(বুখারী ৪৮৫৫নং)
একদা আলী (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল যে, আপনাদের নিকট কুরআন ব্যতীত অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণকৃত কোন জিনিস আছে কি? উত্তরে তিনি কসম করে বললেন, না। তবে কুরআন উপলব্ধি করার জ্ঞান, আল্লাহ যাকে দান করেন। (বুখারী)
বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সাহাবার সামনে মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন, "তোমরা আমার ব্যাপারে কি বলবে?" তাঁরা সকলেই বলেছিলেন যে,'আমরা সাক্ষ্য দেব যে, (আপনার উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তা) পৌঁছে দিয়েছেন, (আমানত) আদায় করে দিয়েছেন এবং (উম্মতের জন্য) হিতাকাঙ্ক্ষা ও নসীহত করেছেন।' মহানবী (সাঃ) আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, "হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?" অথবা তিনি তিনবার বললেন, "আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।" (মুসলিম) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি। তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো।
উপরোক্ত বিষয় দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ তাঁর উপর আরোপিত সকল দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে গেছেন। সুতরাং তাঁর পরবর্তীতে কেউ যদি ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন বিয়োজন করে বা নতুন করে কিছু পালন করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা
শেষ নবীঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন শেষ নবী। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাঁর তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় হাজার হাজার যেসব নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের সমাপ্তি হচ্ছে রাসুল সাঃ। অন্যান্য নবী রাসুল গণ খন্ডকালীনভাবে দ্বীনের যে কাজ করে গেছেন তাদের স্বীকৃতি দিয়ে দ্বীনকে পূর্নাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসুলুল্লাহ সাঃ।
রাসুলের প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের পর আর কোনো নতুন দ্বীন বা প্রতিষ্ঠিত দ্বীনে আর হ্রাসবৃদ্ধি হবেনা। তাই রাসুলুল্লাহ সাঃই হচ্ছেন আল্লাহ্র শেষ মনোনীত রাসুল।
আল্লাহ্ বলেন,
" মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। " (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৪০)
পরিশেষে বলা যায়, রাসুলুল্লাহর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত এবং রিসালাতের সমাপ্তি। তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আনীত দ্বীনে নতুন করে কোনো কিছু সংযোজন বিয়োজন করা যাবেনা। তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর শেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পরবর্তীতে আর কোনো নবী বা রাসুলের আগমন হবেনা। প্রতিটি মুসলমানকে অবশ্যই রাসুলের আদর্শে আদর্শিক হয়ে জীবনযাপন এবং ধর্মপালন করতে হবে। তাহলেই ঐ ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ লাভ করবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নাসিফ আমের চৌধুরী ২৬/০৬/২০২২ভালো লিখা
-
শফি আহমেদ ২০/০৫/২০২২খুবি সুন্দর লেখা।
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ১৩/০৪/২০২২সুন্দর ধর্মীয় উপস্থাপন!
এই ধরণের লেখাগুলো পর্ব করে দিলে ভালো হয়! -
সাইয়িদ রফিকুল হক ১২/০৪/২০২২ভাল।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১২/০৪/২০২২আলহামদুলিল্লাহ। অনন্য লেখা।