বিপন্ন অস্তিত্বের ঠাঁই (পর্ব পাঁচ)
ঠিক আছে। তুই যাইতে ছাইলে যা। তই আমার যা কওয়ার দরকার আমি কইলাম। বাকিটা তোর মর্জি। খুবই হতাশ গলায় কথাগুলো বলল রহিমা বুড়ি।
বিউটি নিজের উপর আস্থা রেখেই বলল, নানী - তুমি খালি খালি চিন্তা কইরো নাতো। আমার কিছু অইব না।
বুবুরে আমি খালি খালি চিন্তা করি। কত দেখলাম এই বয়োসে। খুবই হতাশা মাখানো কন্ঠে রহিমা বুড়ি আক্ষেপের সুরে বলল।
হইছে হইছে তুমার এই লইয়া আর চিন্তা করনের কাম নাই। তুমি দোকান সামলাও। আমি গেলাম। বলেই বিউটি আসলো শরীফ সাহেবের সামনে।
স্যার আফনে একটু খাড়ান। আমি এই যাইতেছি এই আইতাছি।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। একটু তাড়াতাড়ি কর। শরীফ সাহেব নিজের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলেন। উত্তেজনায় তার শিরা ধমনি টকবক করে ছুটতে লাগলো।
রহিমা বুড়ি দোকানে এসে শরীফ সাহেবকে ভালো করে খেয়াল করতে লাগলো। শরীফ সাহেবের স্নায়ুবিক উত্তেজনা তার দীর্ঘ বয়সের চোখ ফাঁকি দিতে পারছে না। শরীফ সাহেব সহজে পান সিগারেট খান না। আগে এগুলোর একটা চাহিদা ছিলো। কিন্তু দীর্ঘ দিন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জীবন যাপনের কারণে এইসব চাহিদা ফিকে হয়ে গেছে।রহিমা বুড়ির দোকানের সামনে অনেকেই সিগারেট টানছে।নিজের উত্তেজনার কারণে হোক আর অন্যের সিগারেট টানা দেখে হোক , কেন জানি তার প্রচুর সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে। কিছুতেই নিজেকে সিগারেট থেকে নিভৃত করতে পারছে না।
শেষ পর্যন্ত রহিমা বুড়ির কাছ থেকে একটি সিগারেট কিনে টানতে আরম্ভ করলো শরীফ সাহেব। এদিকে বিউটির আসতে কতক্ষণ লাগে সেটাই চিন্তা করছেন শরীফ সাহেব । তার উপর রহিমা বুড়ির সন্দেহ মাখা দৃষ্টি তাকে বেশ বিব্রত করে তুলছে। শরীফ সাহেব একমনে সিগারেট টানছেন। কিন্তু সিগারেটের মজা তিনি পাচ্ছেন না। বেশ লোকজন রহিমা বুড়ির দোকানে। তবুও বুড়িটি তার দিকে ভালোই নজর রাখছেন। শরীফ সাহেব ঘনঘন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। নাহ এখনো বিউটি আসছে না কেন। অস্থিরতার কারণে শরীফ সাহেব হালকা ঘামতে লাগলেন। তিনি সিগারেট টানতে টানতে বেশ হাসফাঁস করছেন। এটা রহিমা বুড়ি ভালোই টের পাচ্ছেন। শরীফ সাহেবের চোখেমুখে বেশ অস্থিরতার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে বিউটি তার ছোট্ট কুঠিরে এসে তৈরি হতে লাগলো। প্রথমে সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলো। সাবানের কারণে তার সত্যিকার রূপের কিছুটা উজ্জ্বলতা ফিরে এলো। তারপর মুখে হালকা সস্তা ক্রিম লাগালো। ক্রিম লাগানোর কারণে তার চেহারায় যথেষ্ট লাবন্য দেখা গেল। ক্রিম লাগানোর পর সে নিজেকে আয়নায় দেখল। নিজেকে নিজে দেখে সে খুবই অবাক হলো। সে এতো সুন্দর! তার চোখেমুখে এক ধরনের আনন্দের ঝিলিক বইতে লাগলো। তারপর সে দীর্ঘ অপরিচ্ছন্ন চুলে হাত দিলো। হালকা তেল দিয়ে রুক্ষ চুলগুলোকে মানুষ করতে চাইলো। বেশ কিছু সময় তার ব্যয় হলো চুল ঠিক করতে। সে নিয়মিত নিজের পরিচর্যা করে না। কেননা এই ছিন্নমূল জীবনে তাদের রূপের মূল্য খুবই নগন্য। সবার দৃষ্টি এতো কুৎসিত যে সে নিজেকে রূপবতী ভাবাটা ভুলে গেছে সেই কবে।
চুল ঠিকঠাক করার পর সে আরেকবার তাকায় আয়নার দিকে। তাকাতেই নিজের রূপ দেখে নিজেই লুকায় নিজের মাঝে। তার মনে একধরনের আনন্দের বন্যা বয়। সেই আনন্দের উচ্ছ্বাসে তার বালিকা সুলভ রূপ ধরা পড়ে। এরপর তার প্রিয় গোলাপী ফ্রকটি পড়ে নেয় সে। এই ফ্রকটি সে সবসময় পড়ে না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সাহেবদের বাসায় গরীবদের জন্য দাওয়াতের ব্যবস্থা করা হয়। তখন বিউটি তার এই প্রিয় ফ্রকটি পড়ে।
এই গোলাপী ফ্রকটিতে তাকে সদ্য ফোঁটা কোন গোলাপের কলির মতো দেখায়। নিজের রূপ সৌন্দর্যে নিজেই অভিভূত হয় বিউটি। তার সারল্য মাখা মুখে সদ্য কিশোরীর নবযৌবনা রূপ পরিলক্ষিত হয়। বালিকা উত্তীর্ণ এই কিশোরীর হৃদয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে যায়। দীর্ঘ অবহেলায় পালিত এই সদ্য কিশোরীটির আকাশে যেন আজ রংধনুর রঙিন ছটায় আলোকিত। মানুষ হিসেবে যে তার মর্যাদা সেতো প্রায়ই ভুলেই গেছে। তাছাড়া সুদীর্ঘ সময় সে কারো কাছ থেকে মমতা পায়নি। তাই আজ যখন শরীফ সাহেবের স্ত্রী দেখা করতে বলেছেন, তখন বিউটির মনে তার অতীতের কথা স্বরণে এলো।
একটা সময় ছিলো যখন তারও কোন না কোন আপনজন ছিলো। তার পরিবার ছিলো। ছিলো ঘর ভরা মানুষ। ছিলো আদরের ভাইবোন। আনন্দের সময় কাটতো প্রিয় বন্ধুদের সাথে। আজ সেই সব সুদূর অতীতে পরিনত। সময়ের বানে জীবনের টানে আজ বিউটি বেঁচে আছে একপ্রকার খড়কুটোর মতো।
তার এই শিখড়হীন জীবনে চাই শিখড়ের আস্বাদন। আর তাইতো রহিমা বুড়ির শত বাধা স্বত্বেও বিউটি বিশ্বাস করতে চায় এখনো পৃথিবীতে আছে ভালবাসা। সেজন্যই মানুষের আদিম প্রবৃত্তির টানে বিউটি পেতে চাইছে মায়া মমতা সমৃদ্ধ পরম ভালবাসার স্বাদ।
নিজেকে পরিপাটি করে বিউটি দ্রুত হাটা দেয় রহিমা বুড়ির দোকানে। রহিমা বুড়ি তাকে এক পলক দেখেই চোখ কপালে তুলে ফেলল। এই মেয়ে এমন আগুন ঝরা রূপ নিয়ে কোন আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে। রহিমা বুড়িকে সত্যিই খুব বিচলিত দেখালো। এই মেয়েটির জন্য তার গহীনে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করতে লাগলো। কিন্তু এই মেয়েটি তো তার কোন কথাই বিশ্বাস করছে না। সে কিভাবে বাঁচাতে পারবে এই মেয়েকে?
চলমান ........
বিউটি নিজের উপর আস্থা রেখেই বলল, নানী - তুমি খালি খালি চিন্তা কইরো নাতো। আমার কিছু অইব না।
বুবুরে আমি খালি খালি চিন্তা করি। কত দেখলাম এই বয়োসে। খুবই হতাশা মাখানো কন্ঠে রহিমা বুড়ি আক্ষেপের সুরে বলল।
হইছে হইছে তুমার এই লইয়া আর চিন্তা করনের কাম নাই। তুমি দোকান সামলাও। আমি গেলাম। বলেই বিউটি আসলো শরীফ সাহেবের সামনে।
স্যার আফনে একটু খাড়ান। আমি এই যাইতেছি এই আইতাছি।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। একটু তাড়াতাড়ি কর। শরীফ সাহেব নিজের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলেন। উত্তেজনায় তার শিরা ধমনি টকবক করে ছুটতে লাগলো।
রহিমা বুড়ি দোকানে এসে শরীফ সাহেবকে ভালো করে খেয়াল করতে লাগলো। শরীফ সাহেবের স্নায়ুবিক উত্তেজনা তার দীর্ঘ বয়সের চোখ ফাঁকি দিতে পারছে না। শরীফ সাহেব সহজে পান সিগারেট খান না। আগে এগুলোর একটা চাহিদা ছিলো। কিন্তু দীর্ঘ দিন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জীবন যাপনের কারণে এইসব চাহিদা ফিকে হয়ে গেছে।রহিমা বুড়ির দোকানের সামনে অনেকেই সিগারেট টানছে।নিজের উত্তেজনার কারণে হোক আর অন্যের সিগারেট টানা দেখে হোক , কেন জানি তার প্রচুর সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে। কিছুতেই নিজেকে সিগারেট থেকে নিভৃত করতে পারছে না।
শেষ পর্যন্ত রহিমা বুড়ির কাছ থেকে একটি সিগারেট কিনে টানতে আরম্ভ করলো শরীফ সাহেব। এদিকে বিউটির আসতে কতক্ষণ লাগে সেটাই চিন্তা করছেন শরীফ সাহেব । তার উপর রহিমা বুড়ির সন্দেহ মাখা দৃষ্টি তাকে বেশ বিব্রত করে তুলছে। শরীফ সাহেব একমনে সিগারেট টানছেন। কিন্তু সিগারেটের মজা তিনি পাচ্ছেন না। বেশ লোকজন রহিমা বুড়ির দোকানে। তবুও বুড়িটি তার দিকে ভালোই নজর রাখছেন। শরীফ সাহেব ঘনঘন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। নাহ এখনো বিউটি আসছে না কেন। অস্থিরতার কারণে শরীফ সাহেব হালকা ঘামতে লাগলেন। তিনি সিগারেট টানতে টানতে বেশ হাসফাঁস করছেন। এটা রহিমা বুড়ি ভালোই টের পাচ্ছেন। শরীফ সাহেবের চোখেমুখে বেশ অস্থিরতার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে বিউটি তার ছোট্ট কুঠিরে এসে তৈরি হতে লাগলো। প্রথমে সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলো। সাবানের কারণে তার সত্যিকার রূপের কিছুটা উজ্জ্বলতা ফিরে এলো। তারপর মুখে হালকা সস্তা ক্রিম লাগালো। ক্রিম লাগানোর কারণে তার চেহারায় যথেষ্ট লাবন্য দেখা গেল। ক্রিম লাগানোর পর সে নিজেকে আয়নায় দেখল। নিজেকে নিজে দেখে সে খুবই অবাক হলো। সে এতো সুন্দর! তার চোখেমুখে এক ধরনের আনন্দের ঝিলিক বইতে লাগলো। তারপর সে দীর্ঘ অপরিচ্ছন্ন চুলে হাত দিলো। হালকা তেল দিয়ে রুক্ষ চুলগুলোকে মানুষ করতে চাইলো। বেশ কিছু সময় তার ব্যয় হলো চুল ঠিক করতে। সে নিয়মিত নিজের পরিচর্যা করে না। কেননা এই ছিন্নমূল জীবনে তাদের রূপের মূল্য খুবই নগন্য। সবার দৃষ্টি এতো কুৎসিত যে সে নিজেকে রূপবতী ভাবাটা ভুলে গেছে সেই কবে।
চুল ঠিকঠাক করার পর সে আরেকবার তাকায় আয়নার দিকে। তাকাতেই নিজের রূপ দেখে নিজেই লুকায় নিজের মাঝে। তার মনে একধরনের আনন্দের বন্যা বয়। সেই আনন্দের উচ্ছ্বাসে তার বালিকা সুলভ রূপ ধরা পড়ে। এরপর তার প্রিয় গোলাপী ফ্রকটি পড়ে নেয় সে। এই ফ্রকটি সে সবসময় পড়ে না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সাহেবদের বাসায় গরীবদের জন্য দাওয়াতের ব্যবস্থা করা হয়। তখন বিউটি তার এই প্রিয় ফ্রকটি পড়ে।
এই গোলাপী ফ্রকটিতে তাকে সদ্য ফোঁটা কোন গোলাপের কলির মতো দেখায়। নিজের রূপ সৌন্দর্যে নিজেই অভিভূত হয় বিউটি। তার সারল্য মাখা মুখে সদ্য কিশোরীর নবযৌবনা রূপ পরিলক্ষিত হয়। বালিকা উত্তীর্ণ এই কিশোরীর হৃদয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে যায়। দীর্ঘ অবহেলায় পালিত এই সদ্য কিশোরীটির আকাশে যেন আজ রংধনুর রঙিন ছটায় আলোকিত। মানুষ হিসেবে যে তার মর্যাদা সেতো প্রায়ই ভুলেই গেছে। তাছাড়া সুদীর্ঘ সময় সে কারো কাছ থেকে মমতা পায়নি। তাই আজ যখন শরীফ সাহেবের স্ত্রী দেখা করতে বলেছেন, তখন বিউটির মনে তার অতীতের কথা স্বরণে এলো।
একটা সময় ছিলো যখন তারও কোন না কোন আপনজন ছিলো। তার পরিবার ছিলো। ছিলো ঘর ভরা মানুষ। ছিলো আদরের ভাইবোন। আনন্দের সময় কাটতো প্রিয় বন্ধুদের সাথে। আজ সেই সব সুদূর অতীতে পরিনত। সময়ের বানে জীবনের টানে আজ বিউটি বেঁচে আছে একপ্রকার খড়কুটোর মতো।
তার এই শিখড়হীন জীবনে চাই শিখড়ের আস্বাদন। আর তাইতো রহিমা বুড়ির শত বাধা স্বত্বেও বিউটি বিশ্বাস করতে চায় এখনো পৃথিবীতে আছে ভালবাসা। সেজন্যই মানুষের আদিম প্রবৃত্তির টানে বিউটি পেতে চাইছে মায়া মমতা সমৃদ্ধ পরম ভালবাসার স্বাদ।
নিজেকে পরিপাটি করে বিউটি দ্রুত হাটা দেয় রহিমা বুড়ির দোকানে। রহিমা বুড়ি তাকে এক পলক দেখেই চোখ কপালে তুলে ফেলল। এই মেয়ে এমন আগুন ঝরা রূপ নিয়ে কোন আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে। রহিমা বুড়িকে সত্যিই খুব বিচলিত দেখালো। এই মেয়েটির জন্য তার গহীনে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করতে লাগলো। কিন্তু এই মেয়েটি তো তার কোন কথাই বিশ্বাস করছে না। সে কিভাবে বাঁচাতে পারবে এই মেয়েকে?
চলমান ........
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০৪/০১/২০১৪
-
এফ সাকি ২১/১২/২০১৩পিপড়ার পাখা হয় মরিবার তরে।
ঘটনা কি তেমন কিছু বুঝতে সময় লাগাটা স্বাভাবিক।
মনে মনে দোয়া করছি মেয়েটি যেন রক্ষা পায়।