বিপন্ন অস্তিত্বের ঠাঁই (পর্ব তিন)
রাস্তায় নেমেই বিউটি দেখতে পায় শরীফ স্যারের গাড়ি। শরীফ স্যার তার নিয়মিত একজন গ্রাহক। গত কয়েকমাস হলো তার সাথে পরিচয়। খুবই আদর করে বিউটিকে। খোঁজখবর নেয় বিউটির। বিউটি বেশ কবার বলেছেন যে তার বাসায় কাজ করার জন্য। তার স্ত্রী বিউটির গাঁথা মালা খুবই পছন্দ করেন। আর সেই জন্যই বিউটি প্রতিদিন স্পেশাল মালা তৈরী করে শরীফ সাহেবের জন্য। আজও এর ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু শরীফ সাহেবের অফার বিউটি গ্রহণ করে না। কেননা তার ভয় যারা বাসা বাড়িতে কাজ করে তাদের নাকি ঠিকমতো খাবার পানি দেয় না। বাসী খাবার খেতে হয়। সেই সাথে নিয়মিত নাকি মারও খেতে হয়। সবাই প্রথম প্রথম ভালো কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের আসল মুখোশ ধরা পড়ে পরে। দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে দৈনিক যন্ত্রণাও যোগ হয়। তাই সেই ভয় থেকেই বিউটি ওদিকে পা বাড়ায় না। ফুটপাতে কষ্ট করে হলেও দিন যায়। কিন্তু কেউ নেই আপাতত যন্ত্রণা দেওয়ার। মোটামুটি স্বাধীনতা রয়েছে। সেই স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায় না সে। তবে হাবভাবে ভালো লোকইই মনে হয় শরীফ সাহেবকে। সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। নিয়মিত ফুল কিনেন। খোঁজখবর নেন। এতেই বুঝা যায় তিনি লোক ভালো। মাঝে মাঝে মনে বিউটির সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যায় বাসাবাড়িতে কাজ করতে। কেননা এখানেও যে খুব বেশি ভালো তা কিন্তু নয়। জনির নৈমিত্তিক আচরণ সেই সাথে দালাল জহিরের কুদৃষ্টি। সব মিলিয়ে কেমন নিজেকে কুৎসিতই মনে হয়। এই মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই যেন ঈশ্বর প্রদত্ত অভিশাপ।
আজ শরীফ সাহেবের মন মেজায খুবই ভালো। স্ত্রী পুত্র কন্যা বেড়াতে গেছে গ্রামের বাড়িতে। তাকে ও যেতে হবে। তবে আরও দুই দিন পর ।এই দুই দিনে সব ঠিকঠাক করেই তিনি যাবেন। তবে সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। তবুও বিশেষ কোন কারণে তিনি একটু দেরিতে যাবেন।
শরীফ সাহেবের বিবাহিত জীবন চৌদ্দ বছর। তবে এখনো প্রচুর শক্ত সমর্থ্য। চেহারায় বয়সের ছাপ নেই। সেই সাথে মন সতেজ সদা তরুণ। তাইতো প্রতিদিন ফুলের মালা নিয়ে যান রোমন্টিক মুডে। যদিও বড় মেয়ের বয়স বার তের। ছেলেটা সাত আট। তবু এখনো আগের রোমন্টিকতা ছাড়তে পারেন নাই। কিন্তু স্ত্রীটি হয়তো সময়ের টানে বয়সের ভারে, নানান সাংসারিক জটিলতায় মুড অফে চলে গেছেন।
যেহেতু ঘরওয়ালি মুডে নেই সেহেতু নিজের মুড ঠিক করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই বাইরে কিছু ঢুঁ মারাই শ্রেয়। আর এখন তো পুরো মাঠ খালি। ইচ্ছা মতো মজা কর। যদিও শরীফ সাহেব তেমন ধরনের লোক নন। তবুও মাঝে মাঝে নিজেকে অন্যরকম ভাবতে ভালো লাগে তার।
গাড়ি দাড়ালো রাস্তার এক পাশে। গাড়ি দাড়াতেই বিউটি ছুটে এলো।
কিরে কেমন আছিস তুই?
সালামালাইকুম ছ্যার। আমি ভালা আছি। আফনে কেমুন আছেন? এই লন আফনের স্পিশাল মালা।
এই বলে বিউটি মালাটা তুলে দেয় শরীফ সাহেবের হাতে। যদিও আজ স্ত্রী নেই তবুও তিনি মালা টা নিলেন। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে শরীফ সাহেব মেয়েটিকে খুশি করতেই মালাটি নিচ্ছেন। কিন্তু আসলে তা না।
বিউটিকে টাকা বুঝে দিয়ে শরীফ সাহেব বললেন,
তো তোর দিন কেমন যাচ্ছে? এই পথে পথে আর কদিন? তোকে কত বললাম অথচ তুই শুনলি না।
ছ্যার আমি এইহানেইই বহুত ভালা আছি। আফনে শুধু দোয়া কইরেন।
ঠিক আছে ঠি আছে। দোয়া সবসময়ই।
এই বলে গাড়ি টান দেন শরীফ সাহেব। আবার কি মনে করে যেন ব্রেক করেন।
এই বিউটি শোন।
বিউটি এগিয়ে এসে খুবই উৎসাহিত ভাবে জবাব দেয়।
জ্বী ছ্যার।
তোকে না আমার স্ত্রী একবার দেখতে চেয়েছে।
খালাম্মা কইলে তো যাইতে অইবোইই। বলেই বিউটি মাথা নিচু করে ফেলল।
তুই এতো সুন্দর মালা বানিয়ে দিস। তোকে খুবই পছন্দ করে। তাই তোকে দেখতে চেয়েছে।
আফনে হালি কন খালাম্মা যাইতে কইছে, কই কোন দিন নিয়া গেলেন না। বলেই একটু লজ্জা পেলো বিউটি।মাঝে মাঝে তার ভাবতে ভালো লাগে যে তার মতো মেয়েকেও পছন্দ করার মানুষ দুনিয়ায় আছে। এই সাহেবটি বেশ কবার বলেছে নিয়ে যাবে কিন্তু এখন পর্যন্ত নিয়ে যায় নাই। হয়তো সময় সুযোগ ঠিকমতো হয় নাই। তাই আজ সে খোঁটা দিয়ে দিল।
হ্যাঁ শরীফ সাহেব এর আগেও বেশ কবার বলেছেন তাকে তার বাসায় নিয়ে যাবেন। তার পরিবারের সাথে পরিচয় করানোর জন্য। কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্যে স্থির থাকতে পারেন নাই। সেই সাথে সুযোগ মিললেও কাজে লাগাতে পারেন নাই। তাই তিনি আজ একটা সুযোগ নিতে চান। তবে মোটেই তাড়াহুড়ো নয়। তিনি বিউটিকে বললেন,
তাহলে তুই যাবি? দেখিস কোন অসুবিধা থাকলে বল।
না না ছ্যার কোন অসুবিধা নাই । আফনে কইলেই আমি যামু। কন কহন যাইতে অইব।
না না এখন না। আমি সময় হলেই তোকে নিয়ে যাব। আচ্ছা যাই।
এই বলে গাড়ি টান দেয় শরীফ সাহেব। শোঁ শোঁ করে গাড়ি এগিয়ে চলে। হঠাৎ করেই খুব ফুর্তি মেযাজে আছে শরীফ সাহেব। এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করছেন হৃদয়ে। তার দীর্ঘ দিনের একটি পরিকল্পনার দিকে তিনি এগোনোর সাহস সঞ্চার করেন। তিনি মনে মনে হিসাব একটি কষতে থাকেন। এবং সাথে সাথে মিলিয়ে ফেললেন তা। আজ অফিসে তেমন কাজ নেই। যেহেতু দুই দিন পরই ছুটিতে যাচ্ছেন তাই তিনি সব কাজ একেবারে গুছিয়ে রেখেছেন অনেক আগে। যাতে যাওয়ার আগে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়।
চলমান ..........
ভুল ত্রুটি গুলো শুধরে দিলে কৃতজ্ঞ হবো।
কিন্তু শরীফ সাহেবের অফার বিউটি গ্রহণ করে না। কেননা তার ভয় যারা বাসা বাড়িতে কাজ করে তাদের নাকি ঠিকমতো খাবার পানি দেয় না। বাসী খাবার খেতে হয়। সেই সাথে নিয়মিত নাকি মারও খেতে হয়। সবাই প্রথম প্রথম ভালো কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের আসল মুখোশ ধরা পড়ে পরে। দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে দৈনিক যন্ত্রণাও যোগ হয়। তাই সেই ভয় থেকেই বিউটি ওদিকে পা বাড়ায় না। ফুটপাতে কষ্ট করে হলেও দিন যায়। কিন্তু কেউ নেই আপাতত যন্ত্রণা দেওয়ার। মোটামুটি স্বাধীনতা রয়েছে। সেই স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায় না সে। তবে হাবভাবে ভালো লোকইই মনে হয় শরীফ সাহেবকে। সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। নিয়মিত ফুল কিনেন। খোঁজখবর নেন। এতেই বুঝা যায় তিনি লোক ভালো। মাঝে মাঝে মনে বিউটির সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যায় বাসাবাড়িতে কাজ করতে। কেননা এখানেও যে খুব বেশি ভালো তা কিন্তু নয়। জনির নৈমিত্তিক আচরণ সেই সাথে দালাল জহিরের কুদৃষ্টি। সব মিলিয়ে কেমন নিজেকে কুৎসিতই মনে হয়। এই মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই যেন ঈশ্বর প্রদত্ত অভিশাপ।
আজ শরীফ সাহেবের মন মেজায খুবই ভালো। স্ত্রী পুত্র কন্যা বেড়াতে গেছে গ্রামের বাড়িতে। তাকে ও যেতে হবে। তবে আরও দুই দিন পর ।এই দুই দিনে সব ঠিকঠাক করেই তিনি যাবেন। তবে সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। তবুও বিশেষ কোন কারণে তিনি একটু দেরিতে যাবেন।
শরীফ সাহেবের বিবাহিত জীবন চৌদ্দ বছর। তবে এখনো প্রচুর শক্ত সমর্থ্য। চেহারায় বয়সের ছাপ নেই। সেই সাথে মন সতেজ সদা তরুণ। তাইতো প্রতিদিন ফুলের মালা নিয়ে যান রোমন্টিক মুডে। যদিও বড় মেয়ের বয়স বার তের। ছেলেটা সাত আট। তবু এখনো আগের রোমন্টিকতা ছাড়তে পারেন নাই। কিন্তু স্ত্রীটি হয়তো সময়ের টানে বয়সের ভারে, নানান সাংসারিক জটিলতায় মুড অফে চলে গেছেন।
যেহেতু ঘরওয়ালি মুডে নেই সেহেতু নিজের মুড ঠিক করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই বাইরে কিছু ঢুঁ মারাই শ্রেয়। আর এখন তো পুরো মাঠ খালি। ইচ্ছা মতো মজা কর। যদিও শরীফ সাহেব তেমন ধরনের লোক নন। তবুও মাঝে মাঝে নিজেকে অন্যরকম ভাবতে ভালো লাগে তার।
গাড়ি দাড়ালো রাস্তার এক পাশে। গাড়ি দাড়াতেই বিউটি ছুটে এলো।
কিরে কেমন আছিস তুই?
সালামালাইকুম ছ্যার। আমি ভালা আছি। আফনে কেমুন আছেন? এই লন আফনের স্পিশাল মালা।
এই বলে বিউটি মালাটা তুলে দেয় শরীফ সাহেবের হাতে। যদিও আজ স্ত্রী নেই তবুও তিনি মালা টা নিলেন। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে শরীফ সাহেব মেয়েটিকে খুশি করতেই মালাটি নিচ্ছেন। কিন্তু আসলে তা না।
বিউটিকে টাকা বুঝে দিয়ে শরীফ সাহেব বললেন,
তো তোর দিন কেমন যাচ্ছে? এই পথে পথে আর কদিন? তোকে কত বললাম অথচ তুই শুনলি না।
ছ্যার আমি এইহানেইই বহুত ভালা আছি। আফনে শুধু দোয়া কইরেন।
ঠিক আছে ঠি আছে। দোয়া সবসময়ই।
এই বলে গাড়ি টান দেন শরীফ সাহেব। আবার কি মনে করে যেন ব্রেক করেন।
এই বিউটি শোন।
বিউটি এগিয়ে এসে খুবই উৎসাহিত ভাবে জবাব দেয়।
জ্বী ছ্যার।
তোকে না আমার স্ত্রী একবার দেখতে চেয়েছে।
খালাম্মা কইলে তো যাইতে অইবোইই। বলেই বিউটি মাথা নিচু করে ফেলল।
তুই এতো সুন্দর মালা বানিয়ে দিস। তোকে খুবই পছন্দ করে। তাই তোকে দেখতে চেয়েছে।
আফনে হালি কন খালাম্মা যাইতে কইছে, কই কোন দিন নিয়া গেলেন না। বলেই একটু লজ্জা পেলো বিউটি।মাঝে মাঝে তার ভাবতে ভালো লাগে যে তার মতো মেয়েকেও পছন্দ করার মানুষ দুনিয়ায় আছে। এই সাহেবটি বেশ কবার বলেছে নিয়ে যাবে কিন্তু এখন পর্যন্ত নিয়ে যায় নাই। হয়তো সময় সুযোগ ঠিকমতো হয় নাই। তাই আজ সে খোঁটা দিয়ে দিল।
হ্যাঁ শরীফ সাহেব এর আগেও বেশ কবার বলেছেন তাকে তার বাসায় নিয়ে যাবেন। তার পরিবারের সাথে পরিচয় করানোর জন্য। কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্যে স্থির থাকতে পারেন নাই। সেই সাথে সুযোগ মিললেও কাজে লাগাতে পারেন নাই। তাই তিনি আজ একটা সুযোগ নিতে চান। তবে মোটেই তাড়াহুড়ো নয়। তিনি বিউটিকে বললেন,
তাহলে তুই যাবি? দেখিস কোন অসুবিধা থাকলে বল।
না না ছ্যার কোন অসুবিধা নাই । আফনে কইলেই আমি যামু। কন কহন যাইতে অইব।
না না এখন না। আমি সময় হলেই তোকে নিয়ে যাব। আচ্ছা যাই।
এই বলে গাড়ি টান দেয় শরীফ সাহেব। শোঁ শোঁ করে গাড়ি এগিয়ে চলে। হঠাৎ করেই খুব ফুর্তি মেযাজে আছে শরীফ সাহেব। এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করছেন হৃদয়ে। তার দীর্ঘ দিনের একটি পরিকল্পনার দিকে তিনি এগোনোর সাহস সঞ্চার করেন। তিনি মনে মনে হিসাব একটি কষতে থাকেন। এবং সাথে সাথে মিলিয়ে ফেললেন তা। আজ অফিসে তেমন কাজ নেই। যেহেতু দুই দিন পরই ছুটিতে যাচ্ছেন তাই তিনি সব কাজ একেবারে গুছিয়ে রেখেছেন অনেক আগে। যাতে যাওয়ার আগে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়।
চলমান ..........
ভুল ত্রুটি গুলো শুধরে দিলে কৃতজ্ঞ হবো।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
אולי כולנו טועים ১৮/১২/২০১৩
-
Înšigniã Āvî ১৭/১২/২০১৩অনবদ্য...
-
সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ ১৭/১২/২০১৩গল্পখানি অল্পতেই লেগেছে আমার ভালো
গল্পমাঝে জীবন প্রদীপ জ্বালায়ে রাখে আলো -
মুজিবুর রহমান মুনীর ১৬/১২/২০১৩এ বিজয় দিবসেও বিউটিদের ভাগ্য বদলায় নি। তারা রাস্তায় রাস্তার ভিক্ষা করে অথবা শিশু শ্রম দেয়। অথবা দুর দেশে পাচার হয়। জাতির জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিসে হয় বলুন।
এর সমাধান বিয়ে করা। শরিফ নামের কুত্সিত মনের লোকটি
পারবেনা কখনই বিউটিকে বিয়ে করতে। আর, বিয়ে ছাড়াই শারীরিক সম্পর্ক অনৈতিক।