www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিপন্ন অস্তিত্বের ঠাঁই (পর্ব দুই)

ঐ তুরে ডাকি হুনোছনা?
জনির গলা ফাটা চিৎকার করে ডাকে বিউটিকে। চারদিকে ব্যস্ত পথচারীর আনাগোনা। হুশ হুশ করে ছুটে চলছে গাড়ি। এই ব্যস্তময় শহরে জনির মতো স্বভাব মাতালের আওয়াজ না শুনারই কথা। তবে বিউটি লক্ষ্য করল  জনিকে। নির্বিকার ভঙ্গিতে মুখ ফিরালো তার দিকে বিউটি।

জনি তার টলমল শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। এসেই তো টাকা চাইবে। এখন পর্যন্ত তেমন বেচা বিক্রি হয়নি। তার উপর সকাল সকাল এই প্যাচাল। কিছুই ভালো লাগে না বিউটির।

কাছে এগিয়ে আসলে বিউটির ঝাঝালো উক্তি,
কি অইছে? সকাল সকাল তুমারে নেশায় ধরছে?
অই মাতারী এতো কথা কছ কিয়ের লাইগ্গা? জলদি টেহা দে। বলতে বলতেই জনি স্থির হয়ে দাড়াতে পারে না। তার এখনই পুড়ি খেতে হবে। বেশীক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। নেশার এমনই প্রভাব যে শরীরে খিচুনি শুরু হয়ে যায় দেরি হলে।

বিউটির টাকা দেওয়ার অপেক্ষা করে না জনি। সে নিজেই টাকা হাতড়াতে থাকে বিউটির কোমড়ে। বিউটি যে একজন মেয়ে এটা সে এই মুহূর্তে মনে করতে চায়না। তার টাকার দরকার এবং তা যত তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় ততই মঙল। জনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চায় বিউটি। কিন্তু ব্যর্থ হয় সে। তার নেশাগ্রস্ত হাতের কুৎসিত শক্তির কাছে পরাভূত হয় সে। লাজ শরমের বালাই না করে জনি যা পায় তাই হাতড়ে নেয়। কিছুটা হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়। যা নিয়মিত চিত্রেরই অংশ। এই জায়গার আশেপাশে যারা নিয়মিত থাকে তাদের কাছে এটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার। তাদের একজন হচ্ছে জহির।

সবাই জানে দালাল জহির নামে। নামেই বুঝা যায় জহির মানুষটা কেমন হতে পারে।এখানকার সবাই তাকে অন্য চোখে দেখে।তার সাথে সবার যেমন খাতির তেমন অপছন্দ করার লোকও আছে।সে নাকি টাকার জন্য পারে না এমন কাজ নাই। এমনকি এইসব নোংরা কাজের জন্য নিজের স্ত্রী কন্যাকেও পরের হাতে তুলে দিতে পারে। এইসব কথা জানার পর থেকে বিউটি তাকে সবসময় এড়িয়ে চলে।

যাক জনি যা পেয়েছে নিয়েছে। কিছুটা হাতাহাতি করে বিউটি কিছু টাকা নিজের কাছে রাখতে পেরেছে। কিন্তু এভাবে আর কদিন? বিউটির খুব ইচ্ছে একটা সালোয়ার কামিজ কেনার। তাই সে কিছু টাকা জমাতে চাইছে। কিন্তু নেশাখোর জনির জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ধস্তাধস্তির পর নিজেকে সামলে নিলো বিউটি। আবার পা বাড়ালো রাস্তার গাড়ির দিকে। কিন্তু পা সামনে যাওয়ার আগেই দালাল জহিরের পা আটকে দাড়ালো বিউটিকে। প্রচুর জর্দা দিয়ে পান খাওয়া গালে চুন দিতে দিতে বলল,

আমার কথা তো কানে লচ না। এই বলে এক গাল পানের রস কুলি করল রাস্তার একপাশে। তোরে আগেও কইছি এহন ও কইতাছি। আমি যা কইছি তোর ভালার লাইগ্গাইই কইছি। এই বলে আবার চুন দিলো মুখে।

তোমারে তো বহুত আগেই কইছি আমি তুমার কামে যামু না। ক্যান খালি খালি ফ্যাসাদ বাড়াইতাছেন। বিউটির বিরক্তিকর উত্তর।
তা কইছস ঠিকই। কিন্তু মন বদলাইতে তো টাইম লাগে না।
আমার মন জীবনেও ওই কামে যাইবো না। সর হারামজাদা।
আরে আরে গোস্বা হস ক্যা। এইরাম রোডে ঘাটে ঘাটাঘাটির চাইতে আমার প্রস্তাব ভালা না?
ঐ তুই মুখ সামলাইয়া কতা ক। বহুত বাড়াবাড়ি করছ, কিন্তু আমি তরে কিছু কই নাই। আইজকার পর থেইকা আর কিছু কইলে আমি সোজা জনিরে কইয়া দিমু। হেরপর মজা টের পাবি।

আরে যা যা। আমার হাঁটুর বয়সের ছোড়ার ভয় আমারে দেহাছ। হে নিজেই দেখবি একদিন তুরে বাজারে বেইচ্চা দিব তুই টের ই পাইতি না।
জহিরের কথা বিউটি আর শোনে না। হন হন করে হেটে যায় রাস্তায় দাড়ানো গাড়ির দিকে। জহির তবুও বলতে থাকে।
আর কদিন থাকবি তুই? একদিন না একদিন আমার কাছেই আইতেই অইব।




চলমান ......
গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করছি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/১২/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Înšigniã Āvî ১৭/১২/২০১৩
    চলুক.......
  • ইসমাত ইয়াসমিন ১৫/১২/২০১৩
    আগের পর্ব ও পড়েছিলাম, ভাল লেগেছে, চলতে থাকুক, শুভকামনা রইল।
  • জি,মাওলা ১৫/১২/২০১৩
    চলুক ...............
 
Quantcast