একটি অপ্রত্যাশিত সন্ধ্যা
বিকেলের রোদ আস্তে আস্তে মরে আসছে। আজাদ সাহেব হাটতে হাটতে চলে এলেন সংসদ এলাকায়। চারদিক কেমন নিরব নিরব মনে হচ্ছে। প্রচুর হাঁটার ফলে একটু দূর্বল হলেন। তাই তিনি বসতে চাইলেন লেকের ধারে। কিন্তু কোথাও তেমন জায়গা পেলেন না। আর পাবেনই বা কি করে। প্রায় সবখানেই তো জুটি নিয়ে বসে আছে যুবকরা। তিনি তো আর এখন যুবক নন। তাই এখন এইসব দেখতেও ভালো লাগে না। আর পাশেই বা বসবেন কিভাবে। একটা সময় ছিলো এইসব ভালো লাগতো। এখন আর এইসবে তেমন আগ্রহ নেই। যদিও আজাদ সাহেবের চেহারা দেখে বুঝার উপায় নেই এখন তার বয়স কত?
আর বুঝার উপায় থাকবেই বা কেন? নিয়মিত শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রচুর খাটুনি করেন। পরিমিত খাবার। সকাল বিকাল হাটাহাটি, সেই সাথে টেনশন ফ্রী। তেমন কোন টেনশন তিনি নিতে চান না। তাছাড়া চেহারায় লাবন্য ধরে রাখার জন্য অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি। যা তার স্ত্রী ও জানে না তিনি কি প্রসাধনী ব্যবহার করেন। আর চুলে তো কলপ প্রতি সপ্তাহে আছেই। সেই সাথে নিয়মিত ক্লীন সেভ।
যাক, খুব ফুরফুরে মেজাজে থাকতে পছন্দ করেন আজাদ সাহেব। তাই নিয়মিত এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। এদিক ওদিক ঘুরতে ফিরতে লেকের একপাশে চলে এলেন। আর সেখানেই দেখতে পেলেন এক যুবক বসে আছে এক পাশে বিরস মনে। আজাদ সাহেব প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু আবার কি মনে করে জানি কাছে গেলেন যুবকের। তিনি ভেবেছেন কিছুক্ষণ বসি গল্প গুজব করি। কিন্তু আজাদ সাহেব লক্ষ্য করলেন ছেলেটি খুব মুডে আছে।
এমন হতে পারে হয়তো প্রেমিকার সাথে গন্ডগোল। এই বয়সের ছেলেদের তো এই এক কমন বিষয়। যাক, বয়সটা কত আর হবে এই চব্বিশ পচিঁশ। হ্যাঁ সেই রকম ই হবে। আজাদ সাহেব পাশে গিয়ে বসতে চাইলেন।
: আমি কি বসতে পারি?
ছেলেটি এক পলক তাকালো। খুবই গম্ভীর। এমন একটা মুডে আছে যেন আজাদ সাহেব বসার অনুমতি চেয়ে মস্ত অন্যায় করে ফেলেছেন।
: এইখানে কোন জায়গায়ই কারও নিজস্ব নয়। আপনার ইচ্ছে হলে যেকোন কোথাও বসতে পারেন। অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আজাদ সাহেব ভাবলেন বাপরে কি মুড ছেলেটার। এমন কাঠখোট্টা ছেলের সাথে তিনি কি গল্প করবেন? চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু বসার অনুমতি চেয়ে আবার চলে গেলে ব্যপারটা মোটেই সুন্দর দেখায় না। যাক বসি না কিছুক্ষণ।এই চিন্তা করেই বসলেন তিনি।
নিজে থেকেই কথা শুরু করলেন তিনি।
: আমার নাম আজাদুর রহমান।
বললেন আজাদ সাহেব। কিন্তু ছেলেটির কোন উত্তর নেই।
: আমি মনে হয় এখানে বসে আপনার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালাম। আমি উঠি। বলেই আজাদ সাহেব উঠতে চাইলেন। তিনি খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। বোধহয় ব্যপারটা ছেলেটা বুঝতে পেরেছে। তাই বলল,
: দেখুন আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন।
ছেলেটি তার চেহারা স্বাভাবিক করে একটু হাসলো। যদিও ভিতরে ভিতরে মোটেই পছন্দ হচ্ছে না আজাদ সাহেবকে। কিন্তু তা প্রকাশ করলো না ছেলেটি। ছেলেটি যে কিছু একটা নিয়ে ভাবছে না তা কিন্তু নয়। তবে এ এক অন্য ভাবনা। যেটা মোটেই প্রকাশ যাবে না। তবে কিছু তো একটা বলতেই হবে।
: আসলে বসে বসে জীবনের মানে নিয়েই ভাবছিলাম। খুবই গভীর ভাবনা।
: ও আচ্ছা তাই নাকি। এই বলে আজাদ সাহেব আবার বসে পড়লেন। এবার তিনি খুশি হলেন। তা কি ভেবে বের করলে। যাক কিছু মনে কর না তোমাকে তুমি করেই বলছি।
: না না মনে করার কি আছে। আপনি তো আমার বয়সে বড়। তাই তুমি করে বলতেই পারেন। তা ভাইজান আপনি কি এখানে নিয়মিত আসেন।
: হা হা হা তুমি আমাকে ভাইজান বলছ। আরে তোমার চেয়ে বড় আমার বড় ছেলে।
: আরে আংকেল তাই নাকি?
: আরে হ্যাঁ হ্যাঁ।
:কিন্তু আপনাকে দেখে মোটেই মনে হচ্ছে না আপনার বয়স হয়েছে।ছেলেটি খুবই চতুর অভিনয় শুরু করে দিল। সেই সাথে তোষামোদ।
আজাদ সাহেব মনে মনে খুবই উচ্ছ্বসিত হলো। এমন তোষামোদ পেয়ে তিনি খুশিতে একেবারে গদগদ হয়ে গেলেন।
: হে হে হে আরে ব্যাটা তুই না সবাই এমন মনে করে। আরে সরি সরি তুই বলে ফেললাম।
: না না আংকেল আমি আপনার ছেলের সমান। তুই করেই তো বলবেন। এখানে সরি বলার কিছু নেই।
আজাদ সাহেবের খুব ভালো লাগছে এই দেখে যে ছেলেটা খুব সহজ সরল। মনে মনে নিজেকে গালি দিলেন। কেন যে ছেলেটির সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেছিলেন।
আজাদ সাহেব প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন।
: তা বাবা তুমি কি কর?
: আপাতত তেমন কিছু করি না।
: তা পড়াশোনা নিশ্চয়ই করেছো?
: তা তো করতেই হবে। এখন যে দিনকাল পড়েছে তা তে পড়াশোনা ছাড়া কোন গতি আছে?
: তা তো অবশ্যই ঠিক।
: কিন্তু আংকেল কি জানেন? আমার না মোটেই পড়াশোনাতে মন ছিলো না।
: কেন বাবা?
: আরে আংকেল, যার বাবার কোটি কোটি টাকার ধন সম্পত্তি তার কি কখনো পড়াশোনায় মন থাকবে?
আজাদ সাহেব একটু চিন্তিত হলেন। কি বলে ছেলেটা। পয়সা অলার ছেলের মতো মনে না হলেও ভাবটা খুবই ভালো।তবে পোশাক আশাক তেমন আহামরি কিছু নয়। সাধারণ ছেলেদের মতোই। নাকি আমার সাথে গুল মারছে কে জানে। যাকগে আমার অতো চিন্তা কেন। একটু সময় পার করতে এসেছি দু চারটে কথা বলেই চলে যাব। তার হাড়ির খবরের সত্য মিথ্যা আমার দরকার নেই।
আজাদ সাহেব স্বাভাবিক চিন্তায় ফিরে এলেন। আর খুব আন্তরিকতার সাথেই বললেন।
: হ্যাঁ, তা তো ঠিক আছে। তবে কি বাবা আজকাল টাকা পয়সা থাকলেও পড়াশোনার বিষয় টা আলাদা। টাকা পয়সা কদিন থাকবে? তুমি তাদের সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে না পারলে তা ধীরে ধীরে তোমার থেকে দূরে সরে যাবে না?
: আরে আংকেল আপনি একেবারেই আমার বাবার মতোই বলছেন। আমার বাবাও বলেন যে, দেখ ছেলে আমি কষ্ট করে সম্পদ করেছি। আর তোরা যদি সেই সম্পদ আগলে রাখতে না পারিস। তাহলে তো আমার জীবন টাই বৃথা। ছেলেটি এমন সব বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে শুরু করল যে, নিজের কাছেই অবাক লাগছে তার।
: ঠিকই তো বলেছেন তিনি।
: হ্যাঁ ঠিকই বলেন তিনি। তাইতো মন না চাইলেও পড়াশোনা করতে হয়। এইতো গতবছর এম এ কমপ্লিট করলাম।
: বাহ খুব ভালো খুব ভালো।বললেন আজাদ সাহেব খুবই খুশির সাথে।
এবার ছেলেটি একটু গম্ভীর হলো। চেহারায় যথেষ্ট গাম্ভীর্যতা নিয়ে আসলো সে। সেই সাথে খুবই গভীর ভাবে বলল,
: কিন্তু কি জানেন আংকেল?
: কি বাবা? আগ্রহ নিয়েই জবাব দিলেন আজাদ সাহেব।
: মানুষের এতো টাকা পয়সার দরকারই বা কেন? যার কাছে টাকা আছে সে যেমন বেঁচে আছে যার কাছে নেই সেও কিন্তু বেঁচে আছে। আর আছে সে শুধু আরোও আরোও চাইছে। যার নেই তার কথা একবারও ভাবছে না। এবার আজাদ সাহেব খুব উৎসাহের সাথে ছেলেটির পিঠে মৃদু বাহবা দিয়ে বললেন,
: আরে ব্যাটা, তুমি তো খুবই দার্শনিকের মতো কথা বলছ। হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ আমাদের সমাজ জীবন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমগ্র অর্থনীতি সবকিছুই এখন খাই খাই চাই চাই অবস্থা।
: তাই তো আমার এইসবের মাঝে মন একেবারেই টানে না। আমি এমন কিছু করতে চাই যেখানে সবাই কিছু না কিছু পায়। কথাটি বলেই ছেলেটি খুব গভীর হতাশার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করল চেহারায়।
আজাদ সাহেব একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,
: নারে ব্যাটা আমাদের এই বর্তমান সভ্যতায় এটা খুবই অতি উচ্চাশা। সমাজতন্ত্রীদের অনেক চেষ্টা ছিলো। কিন্তু তারাও তেমন সফল নয়। আজ কয়টা দেশে সমাজতন্ত্র দেখতে পাও বলো।
: হ্যাঁ তা ঠিক বলেছেন। তাই চিন্তা করছি যা করতে হবে নিজেকেই করতে হবে। যাক আপনি কিন্তু আংকেল খুবই সৌখিন একজন মানুষ। কৌশলে প্রসঙ্গ পাল্টালো ছেলেটি। আর এমন তোষামোদ পেয়ে তো আজাদ সাহেব খুশিতে টইটম্বুর।
: হে হে হে না তা আর কই। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন তেমন সৌখিনতা করতে পারি কই। তোমার আন্টিতো একদমইই পছন্দ করে না। পাছে আবার কেউ প্রেমে পড়ে যায়।
: যাই বলেন আপনি সত্যিই খুবই স্মার্ট।
: হে হে হে এভাবে বলো না এভাবে বলো না। খুবই লজ্জা পাচ্ছি।
: না না লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তা আপনার ঘড়িটাতো খুব সুন্দর। কোন ব্রান্ডের?
: আরে বলো না। আমার ছেলের কান্ড। গত সপ্তাহে দুবাই গিয়েছিল ব্যবসার কাজে। তখন নাকি খুব পছন্দ হলো ঘড়িটা। তাই নিয়ে এলো। হেব্বী ব্রান্ড "Rado"
: সত্যিই খুব সুন্দর। যাই বলেন আপনাকে খুব মানিয়েছে।
: ধন্যবাদ।
: তা দাম কত পড়ল?
: কত আর মাত্র দের লাখ। কত করে বলি ছেলেকে আমার এসব ভালো লাগে না। এতো দামী দামী আমার একদম পছন্দ নয়। আমি ভাই সাধারণ মানুষ। সাধারণ থাকতেই বেশ লাগে।
: তারপরও আংকেল যেহেতু ছেলের আবদার তাতো আপনাকে রাখতেই হবে।
: হ্যাঁ, ঐযে বললে আবদার। সেই আবদারই সবসময় রক্ষা করতে হয়।
দেখ না গত মাসে গিয়েছিল ইউরোপে। আর সেখানে পছন্দ হলো মোবাইল। আর সেটাই বাবার জন্য নিয়ে এলো।
এই বলে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখাতে লাগলো যুবকটিকে।
: আরে সত্যি চমৎকার! এযে নিউ ব্রান্ড "আইফোন "খুবই দামি কিন্তু।
: সে আমি জানি। তাইতো সবাই কে দেখায় না তোমাকে ভালো লাগলো তাই দেখালাম। (চুপিচুপি বলল আজাদ সাহেব)। আজকাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। রাস্তা ঘাটের যে পরিস্থিতি। কোথাও কোন নিরাপত্তা আছে?
: তা ঠিকই বলেছেন আংকেল। তাই তো সাদাসিধে অবস্থায় রাস্তায় বের হই। বলা তো যায় না কখন কোন দিক থেকে বিপদ আসে।
: তা তুমি ঠিকই বলেছ।
আজাদ সাহেব খুবই পছন্দ করে ফেললেন ছেলেটিকে। আস্তে আস্তে বিকেল শেষ হয়ে আসছে। চারদিকে একধরনের নিরবতা কাজ করছে। সূর্য ডুবে গেছে। তারপরও হালকা আলো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সন্ধ্যার একটা মোহনীয় আভাস পরিবেশে। আশেপাশে ধীরে ধীরে লোকজন ফিরতে শুরু করেছে নিজ্বস্ব নীড়ে । সেই সাথে একই গতিতে আসতে শুরু করেছে নিশি অথিতি। এই পরিবেশে আজাদ সাহেব নিজেকে বেমানান মনে করছেন। তাই গল্প শেষ করেই উঠে পড়তে চাইলেন।
: তা বাবা সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি তাহলে উঠি।
: আরে আংকেল, এতো তাড়া কিসের? আরোও কিছুক্ষণ বসুন না।
: না না বাবা। তুমি বুঝতে পারছ না তোমার আন্টি সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকা পছন্দ করেন না।
: আরে আংকেল আপনি এভাবে আমাকে একলা ফেলে চলে যাবেন?
: আরে এটা একটা কথা হলো? চলো দুজনই এক সাথে উঠি।
: না আংকেল আমার আরোও কিছু কাজ বাকি আছে।
: কাজ বাকী আছে? অবাক হলেন আজাদ সাহেব। কই আমি তো কোন কাজ করতে দেখলাম না। ও বুঝেছি তুমি হয়তো কারও জন্য অপেক্ষা করছ।
: হ্যাঁ ..আবার না ও।
: কি বলছ বাবা আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
: বুঝতে পারবেন আংকেল। একটু পরেই সব বুঝতে পারবেন।
: হে হে হে কি বল বাবা আগা মাথা কিছু বুঝি না।
: কিছু মনে করবেন না আংকেল। আপনার কয়টা ঘড়ি আছে?
: ঘড়ি? কেন একটা!
: আরে একটা তো হাতেই আছে। আমি জানতে চাইছি আপনার কালেকশন কেমন। একটু হাসি হাসি মুখে জানতে চাইলো ছেলেটি।
: ওও কালেকশন। তা তো বাবা বেশ ভালোই হবে।
: এতো কালেকশন থাকলে তো এই ঘড়িটা না পড়লেও চলে, কি বলেন?
: বুঝলাম না বাবা তুমি কি বলতে চাইছ?
: আরে আংকেল তেমন কঠিন কিছুই না। আমি এটাই বলতে চাইছি আপনার ঘড়িটা আমার পছন্দ হয়েছে। তাই ঘড়িটি আপনি খুশি হয়েই আমাকে দিবেন। হাসিখুশি মুখ করেই ছেলেটি বলল।
আজাদ সাহেব খুবই অবাক হলেন। এক পলকে চেয়ে রইলেন ছেলেটির দিকে।যেন মুহূর্তেই অপরিচিত লাগছে ছেলেটিকে। তিনি চোখ বোলাতে লাগলেন আশেপাশে। সন্ধ্যা ইতিমধ্যে গত হয়ে গেছে। আবছা আবছা মনে হচ্ছে চারদিক। কেমন একটা মোহময় পরিবেশ। গা ছমছম ছমছম করা অবস্থা আজাদ সাহেবের। কিন্তু তিনি সহজে মনের জোর হারাতে চান না। তবুও এক ধরনের চাপা ভয় ভিতরে ভিতরে কাজ করছে। সেই ভয়ের কারণে তিনি একটু একটু অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলেন। সেই সাথে অনুভব করতে পারছেন যে তার ভিপি বেড়ে যাচ্ছে। তিনি একটু একটু করে ঘামতে শুরু করলেন। ব্যপারটি যুবকটি বুঝতে পারল। তাই সে চেষ্টা করল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে। খুবই হাসিখুশি ভাব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করল সে।
: আরে আংকেল আমি আপনার ছেলের বয়সী তাই না। তাই ছেলে হিসেবে আবদার করলাম আর কি। মানে আমার না খুবই পছন্দ হয়েছে আপনার ঘড়িটি।
: তা তো বাবা পছন্দ হতেই পারে.
..কিন্তু ...মানে ...
: আরে ..আংকেল আপনি ঘাবড়াচ্ছেন কেন? আপনি ছেলেকে এই ঘড়িটি গিফট দিচ্ছেন। এটাতো সামান্য ব্যপার। তাই না।
ছেলেটির সহজ কথায় আজাদ সাহেব কিছুটা সাহস সঞ্চার করতে লাগলেন। তিনি বিশ্বাস করতে চেষ্টা করতে চাইলেন যে এখানে তেমন কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু ছেলেটি সে সুযোগ দিতে চাইলো না। সে খুব সহজ ভাবেই ঘড়িটি খুলে নিতে চাইলো। কিন্তু আজাদ সাহেব তা হতে দিলেন না। বললেন,
:দাঁড়াও, আমিই খুলে দিচ্ছি। তিনি নিজেই ঘড়ি খুলতে লাগলেন। আর বললেন, তুমি ছোকরা খুবই ভুল করছ। আমি কে তুমি এখনো টের পাওনি।
: ছিঃ আংকেল ছিঃ! আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই? এটি কি যে বলেন। বলতে বলতে ছেলেটি আজাদ সাহেবের হাত থেকে ঘড়িটি নিয়ে নিল।
: তোমার লজ্জা থাকা উচিত। তুমি একজন বাপের বয়সী মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাই করছ। তুমি এতটাই নীচ।
ছেলেটি হালকা হাসতে চেষ্টা করল। আর বলল,
: আংকেল আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। মাত্র তো শুরু। এবার লক্ষী ছেলের মতো মোবাইল টা বের করুন। আজাদ সাহেব একেবারেই হতচকিত হয়ে গেলেন। ছেলেটা কি সত্যি সত্যিই সব নিয়ে যাবে? তিনি ভাবতে লাগলেন এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম। এই অন্ধকারে এখন তো কিছু করার নাই। আচ্ছা একবার লড়ে দেখব নাকি? কি এমন বয়স হয়েছে তার। চাইলে এই ছেলের সাথে সহজেই টাক্কা দিতে পারেন। কিন্তু ছেলেটার সাথে অন্য কেউ আছে নাকি? তিনি আশেপাশে আবার তাকাতে লাগলেন। কিন্তু কাউকে তেমন দেখলেন না। তাহলে তো একবার ছেলেটার সাথে বাজি রাখা যায়। মনে মনে এইসব চিন্তাই ঘুরপাক খেতে লাগলো আজাদ সাহেবের।
আজাদ সাহেবের নির্লিপ্ততা দেখে ছেলেটির সন্দেহ হলো। সে বুঝতে পারল আজাদ সাহেব একটি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। না তাকে কোন প্রকার সুযোগ দেওয়া তো দূরের কথা। তাকে কিছু ভাবতেই দিবে না। এই চিন্তা করেই আস্তে করে ছুরি বের করল ছেলেটি। ছুরি বের করেই বলল,
: কই আংকেল, মোবাইল টা এখনো দিলেন না যে। বলে একটু হাসলো ছেলেটি। যেন মোবাইল দেওয়া টাই খুশির ব্যাপার।
এখন আজাদ সাহেব কি করবেন? কিছুই করার নেই। এমন অন্ধকার পরিবেশে ছেলেটি যদি তাকে কিছু করেও ফেলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। তার চেয়ে বরং যা চায় তা দিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলেন। এই চিন্তা করেই তিনি খুবই বিরস ভাবে পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইলটা বের করে আনলো। সাথে সাথেই ছেলেটি ছু মেরে মোবাইল টি নিয়ে নিল।
: বাহ খুবই সুবোধ বালকের কাজ করেছেন। আর চাইলেও আপনি এখানে তেমন কিছুই করতে পারবেন না। তো আংকেল আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম। আপনি কিছু মনে করেন নি তো? খুবই আন্তরিক ভাবে বলল ছেলেটি।
আজাদ সাহেব নিথর ভঙ্গিতে বসে আছেন। এখন আর যাওয়ার যেন তাড়া নেই।তার নিজস্ব পৃথিবীটা ক্রমান্বয়ে ঘুরছে। তিনি এতবড় বোকামি কিভাবে করলেন। কি দরকার ছিলো যেঁচে এখানে বসার। আর বসেছে ঠিক আছে। কিন্তু এতো উৎসাহী হয়ে কেন নিজের দামি জিনিস গুলো দেখালেন। কেন এই ছেলেটার তোষামোদে গলে গেলেন। রাগের কারণে আজাদ সাহেব চরম উত্তেজনা অনুভব করছেন। তিনি আবার কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলেন। এমন রাগ হতে লাগলো যে, যেন তার ইচ্ছে হচ্ছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
ছেলেটি কিছুটা সময় নিয়ে লক্ষ্য করল যে আজাদ সাহেব ঝিম মেরে গেছেন। আবার বেশী উত্তেজনা হয়ে গেলে হার্ট ফেল করতে পারে। সেই ভয় থেকে সে চাইল পরিবেশ হালকা করতে। বলাতো যায় না আবার কি হয়ে যায়।
: আরে আংকেল আপনি তো দেখি একদম ঝিম মেরে গেছেন? একটু হাসি হাসি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল ছেলেটি। কিন্তু আজাদ সাহেব এখনো অনড়। ভিতরে ভিতরে তিনি ফুঁসে উঠছেন। তিনি এমন অবস্থায় আছেন যে না কিছু করতে পারছেন না কিছু বলতে। এবার ছেলেটি উঠে দাড়ালো। আর হাত বাড়িয়ে আজাদ সাহেবকে বলল,
: কই আংকেল উঠুন? আমার কাজ শেষ। আশাকরি আপনারও এখন তেমন কাজ নেই। তাছাড়া আপনার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা দরকার। দেরী করলে আবার আন্টি চিন্তা করবেন। এমন ভাবে ছেলেটি বলছে যেন আজাদ সাহেবের জন্য ছেলেটির দরদ একেবারে উতলে উঠছে!
কিন্তু আজাদ সাহেব ছেলেটির হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিল। আর খুব উচ্চ স্বরেইই বলল
: সবই তো নিয়ে নিলে। আর কি চাই তোমার? যাও আমার সামনে থেকে যাও। আর দরদ দেখাতে হবেনা। এখান থেকে দূর হয়ে হলেও একটা উপকার কর আমার। প্লিজ আমাকে বিরক্ত কর না।
: ছিঃছিঃ আংকেল একি বলছেন। আপনার জন্য দরদ দেখাবোনা তো কার জন্য দেখাবো। আপনি আমাকে এতকিছু উপহার দিলেন। আপনার ঋন আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না। যাক উপকারের কথা যখন বললেন তখন আরেকটা উপকার আপনাকে করতেই হবে। প্লিজ আপনি না বলবেন না।
আজাদ সাহেব আবার দুঃচিন্তায় পড়লেন। আবার কি ঝামেলা। এই ছেলে দেখি তাকে দিগম্বর করে না ছেড়ে দেয়। হাবভাব তো সেই রকমই মনে হচ্ছে। আজ দিন টাই খারাপ। খুবই বিরক্ত হতে লাগলেন নিজের উপর তিনি। তারপরও তিনি গলায় কিছুটা জোর নিয়ে বললেন,
: দ্যাখো তুমি যথেষ্ট বিরক্ত করেছ আমায়। সেই সাথে নিঃস্ব। আর কি চাই।
: আমি খুবই দুঃখিত আংকেল! যদি ভুলে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে ক্ষমা করবেন। আর বেশি কিছু চাই না। ঐযে বললেন উপকারের কথা, সেটাই। যথেষ্ট বিরক্ত মাখা মুখে আজাদ সাহেব বললেন, মানে?
: মানে কিছুই না। মানে টা হলো আপনার ম্যানিব্যাগ।
: কি! এতো কিছুর পর ম্যানিব্যাগও চাই তোমার? তুমি তো শিক্ষিত ছিনতাইকারী।
: ছিঃ আংকেল ওভাবে বলবেন না লজ্জা লাগে। যাই হোক স্যার রাত হয়ে যাচ্ছে আশেপাশে আজেবাজে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে কচি কচি পরীরা এসে আপনার সম্মান নিয়ে টানাটানি করবে। এখনো তো মালের উপর যাচ্ছে তখন সম্মানের উপর যাবে। অনেক কথা বলে ফেলেছি। আর বাড়াতে চাইনা। দেখি জলদি টাকা পয়সা বের করুন। এইবলে ছেলেটি নিজেই ম্যানিব্যাগ কেড়ে নিলো। টাকা পয়সা যা পেলো তাই নিয়ে নিলো।
ঠিক এইসময় আরেকটি ছেলে সেখানে উপস্থিত। এসেই বলল,
: বস সব কিছু রেডি। আফনে আসেন। আগত ছেলেটি আজাদ সাহেবের দিকে লক্ষ্য করে বলল, কি ব্যাপার বস নতুন মক্কেল নাকি?
: আরে না। নতুন বেআক্কেল।
: কি কন বস কিছুই বুঝি না।
: হইছে তোর বুঝনের কাম নাই। ল চল.। ছেলেটি দুটি আস্তে আস্তে সামনের দিকে পা বাড়িয়ে চলে যেতে লাগলো। আজাদ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবে বসে রইল। যেন তার আজ যাওয়ার কোন গন্তব্য নাই। যেন সময় এখানে এখন স্থির। নিরব পরিবেশ। সন্ধ্যা ইতিমধ্যেই গত হয়েছে। এখন রাত্রি আগত। বিমর্ষ বদনে নিষ্পলক চেয়ে থাকা। সব কিছু নিঃস্ব করে অন্যের চলে যাওয়া। হায়রে নিয়তি।
হঠাৎ কিছুটা দূর থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো। স্বর যদিও পরিচিত। অন্তত এতক্ষন পরিচিত ছিলো ।সেই ছেলেটি বলছে,
: আংকেল ...চিন্তার কোন কারণ নাই। এখনো বেশ কিছু টাকা আছে ম্যানিব্যাগে। আপনি নিশ্চিন্তে বাসায় যেতে পারবেন ঐ টাকা দিয়ে। আর আজকের কথা কখনোই মনে রাখবেন না।কন্ঠস্বরটি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগলো।আজাদ সাহেবের কোন ভাবান্তর নেই। আশেপাশের লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে অনেক আগেই। তার ক্ষীণ আলোর রশ্মিতে আলোকিত হচ্ছে লেকের চারপাশ। এভাবে সময় গুলো বয়ে যেতে লাগলো। একটা অন্যরকম সন্ধ্যার স্বাদ নিলেন আজাদ সাহেব। যে সন্ধ্যার কথা তিনি কখনো ভুলবেন না। একেবারেই অপ্রত্যাশিত একটি সন্ধ্যা।
1/12/13
আর বুঝার উপায় থাকবেই বা কেন? নিয়মিত শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রচুর খাটুনি করেন। পরিমিত খাবার। সকাল বিকাল হাটাহাটি, সেই সাথে টেনশন ফ্রী। তেমন কোন টেনশন তিনি নিতে চান না। তাছাড়া চেহারায় লাবন্য ধরে রাখার জন্য অনেক কিছুই ব্যবহার করেন তিনি। যা তার স্ত্রী ও জানে না তিনি কি প্রসাধনী ব্যবহার করেন। আর চুলে তো কলপ প্রতি সপ্তাহে আছেই। সেই সাথে নিয়মিত ক্লীন সেভ।
যাক, খুব ফুরফুরে মেজাজে থাকতে পছন্দ করেন আজাদ সাহেব। তাই নিয়মিত এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। এদিক ওদিক ঘুরতে ফিরতে লেকের একপাশে চলে এলেন। আর সেখানেই দেখতে পেলেন এক যুবক বসে আছে এক পাশে বিরস মনে। আজাদ সাহেব প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু আবার কি মনে করে জানি কাছে গেলেন যুবকের। তিনি ভেবেছেন কিছুক্ষণ বসি গল্প গুজব করি। কিন্তু আজাদ সাহেব লক্ষ্য করলেন ছেলেটি খুব মুডে আছে।
এমন হতে পারে হয়তো প্রেমিকার সাথে গন্ডগোল। এই বয়সের ছেলেদের তো এই এক কমন বিষয়। যাক, বয়সটা কত আর হবে এই চব্বিশ পচিঁশ। হ্যাঁ সেই রকম ই হবে। আজাদ সাহেব পাশে গিয়ে বসতে চাইলেন।
: আমি কি বসতে পারি?
ছেলেটি এক পলক তাকালো। খুবই গম্ভীর। এমন একটা মুডে আছে যেন আজাদ সাহেব বসার অনুমতি চেয়ে মস্ত অন্যায় করে ফেলেছেন।
: এইখানে কোন জায়গায়ই কারও নিজস্ব নয়। আপনার ইচ্ছে হলে যেকোন কোথাও বসতে পারেন। অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আজাদ সাহেব ভাবলেন বাপরে কি মুড ছেলেটার। এমন কাঠখোট্টা ছেলের সাথে তিনি কি গল্প করবেন? চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু বসার অনুমতি চেয়ে আবার চলে গেলে ব্যপারটা মোটেই সুন্দর দেখায় না। যাক বসি না কিছুক্ষণ।এই চিন্তা করেই বসলেন তিনি।
নিজে থেকেই কথা শুরু করলেন তিনি।
: আমার নাম আজাদুর রহমান।
বললেন আজাদ সাহেব। কিন্তু ছেলেটির কোন উত্তর নেই।
: আমি মনে হয় এখানে বসে আপনার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালাম। আমি উঠি। বলেই আজাদ সাহেব উঠতে চাইলেন। তিনি খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। বোধহয় ব্যপারটা ছেলেটা বুঝতে পেরেছে। তাই বলল,
: দেখুন আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন।
ছেলেটি তার চেহারা স্বাভাবিক করে একটু হাসলো। যদিও ভিতরে ভিতরে মোটেই পছন্দ হচ্ছে না আজাদ সাহেবকে। কিন্তু তা প্রকাশ করলো না ছেলেটি। ছেলেটি যে কিছু একটা নিয়ে ভাবছে না তা কিন্তু নয়। তবে এ এক অন্য ভাবনা। যেটা মোটেই প্রকাশ যাবে না। তবে কিছু তো একটা বলতেই হবে।
: আসলে বসে বসে জীবনের মানে নিয়েই ভাবছিলাম। খুবই গভীর ভাবনা।
: ও আচ্ছা তাই নাকি। এই বলে আজাদ সাহেব আবার বসে পড়লেন। এবার তিনি খুশি হলেন। তা কি ভেবে বের করলে। যাক কিছু মনে কর না তোমাকে তুমি করেই বলছি।
: না না মনে করার কি আছে। আপনি তো আমার বয়সে বড়। তাই তুমি করে বলতেই পারেন। তা ভাইজান আপনি কি এখানে নিয়মিত আসেন।
: হা হা হা তুমি আমাকে ভাইজান বলছ। আরে তোমার চেয়ে বড় আমার বড় ছেলে।
: আরে আংকেল তাই নাকি?
: আরে হ্যাঁ হ্যাঁ।
:কিন্তু আপনাকে দেখে মোটেই মনে হচ্ছে না আপনার বয়স হয়েছে।ছেলেটি খুবই চতুর অভিনয় শুরু করে দিল। সেই সাথে তোষামোদ।
আজাদ সাহেব মনে মনে খুবই উচ্ছ্বসিত হলো। এমন তোষামোদ পেয়ে তিনি খুশিতে একেবারে গদগদ হয়ে গেলেন।
: হে হে হে আরে ব্যাটা তুই না সবাই এমন মনে করে। আরে সরি সরি তুই বলে ফেললাম।
: না না আংকেল আমি আপনার ছেলের সমান। তুই করেই তো বলবেন। এখানে সরি বলার কিছু নেই।
আজাদ সাহেবের খুব ভালো লাগছে এই দেখে যে ছেলেটা খুব সহজ সরল। মনে মনে নিজেকে গালি দিলেন। কেন যে ছেলেটির সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেছিলেন।
আজাদ সাহেব প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন।
: তা বাবা তুমি কি কর?
: আপাতত তেমন কিছু করি না।
: তা পড়াশোনা নিশ্চয়ই করেছো?
: তা তো করতেই হবে। এখন যে দিনকাল পড়েছে তা তে পড়াশোনা ছাড়া কোন গতি আছে?
: তা তো অবশ্যই ঠিক।
: কিন্তু আংকেল কি জানেন? আমার না মোটেই পড়াশোনাতে মন ছিলো না।
: কেন বাবা?
: আরে আংকেল, যার বাবার কোটি কোটি টাকার ধন সম্পত্তি তার কি কখনো পড়াশোনায় মন থাকবে?
আজাদ সাহেব একটু চিন্তিত হলেন। কি বলে ছেলেটা। পয়সা অলার ছেলের মতো মনে না হলেও ভাবটা খুবই ভালো।তবে পোশাক আশাক তেমন আহামরি কিছু নয়। সাধারণ ছেলেদের মতোই। নাকি আমার সাথে গুল মারছে কে জানে। যাকগে আমার অতো চিন্তা কেন। একটু সময় পার করতে এসেছি দু চারটে কথা বলেই চলে যাব। তার হাড়ির খবরের সত্য মিথ্যা আমার দরকার নেই।
আজাদ সাহেব স্বাভাবিক চিন্তায় ফিরে এলেন। আর খুব আন্তরিকতার সাথেই বললেন।
: হ্যাঁ, তা তো ঠিক আছে। তবে কি বাবা আজকাল টাকা পয়সা থাকলেও পড়াশোনার বিষয় টা আলাদা। টাকা পয়সা কদিন থাকবে? তুমি তাদের সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে না পারলে তা ধীরে ধীরে তোমার থেকে দূরে সরে যাবে না?
: আরে আংকেল আপনি একেবারেই আমার বাবার মতোই বলছেন। আমার বাবাও বলেন যে, দেখ ছেলে আমি কষ্ট করে সম্পদ করেছি। আর তোরা যদি সেই সম্পদ আগলে রাখতে না পারিস। তাহলে তো আমার জীবন টাই বৃথা। ছেলেটি এমন সব বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে শুরু করল যে, নিজের কাছেই অবাক লাগছে তার।
: ঠিকই তো বলেছেন তিনি।
: হ্যাঁ ঠিকই বলেন তিনি। তাইতো মন না চাইলেও পড়াশোনা করতে হয়। এইতো গতবছর এম এ কমপ্লিট করলাম।
: বাহ খুব ভালো খুব ভালো।বললেন আজাদ সাহেব খুবই খুশির সাথে।
এবার ছেলেটি একটু গম্ভীর হলো। চেহারায় যথেষ্ট গাম্ভীর্যতা নিয়ে আসলো সে। সেই সাথে খুবই গভীর ভাবে বলল,
: কিন্তু কি জানেন আংকেল?
: কি বাবা? আগ্রহ নিয়েই জবাব দিলেন আজাদ সাহেব।
: মানুষের এতো টাকা পয়সার দরকারই বা কেন? যার কাছে টাকা আছে সে যেমন বেঁচে আছে যার কাছে নেই সেও কিন্তু বেঁচে আছে। আর আছে সে শুধু আরোও আরোও চাইছে। যার নেই তার কথা একবারও ভাবছে না। এবার আজাদ সাহেব খুব উৎসাহের সাথে ছেলেটির পিঠে মৃদু বাহবা দিয়ে বললেন,
: আরে ব্যাটা, তুমি তো খুবই দার্শনিকের মতো কথা বলছ। হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ আমাদের সমাজ জীবন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমগ্র অর্থনীতি সবকিছুই এখন খাই খাই চাই চাই অবস্থা।
: তাই তো আমার এইসবের মাঝে মন একেবারেই টানে না। আমি এমন কিছু করতে চাই যেখানে সবাই কিছু না কিছু পায়। কথাটি বলেই ছেলেটি খুব গভীর হতাশার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করল চেহারায়।
আজাদ সাহেব একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,
: নারে ব্যাটা আমাদের এই বর্তমান সভ্যতায় এটা খুবই অতি উচ্চাশা। সমাজতন্ত্রীদের অনেক চেষ্টা ছিলো। কিন্তু তারাও তেমন সফল নয়। আজ কয়টা দেশে সমাজতন্ত্র দেখতে পাও বলো।
: হ্যাঁ তা ঠিক বলেছেন। তাই চিন্তা করছি যা করতে হবে নিজেকেই করতে হবে। যাক আপনি কিন্তু আংকেল খুবই সৌখিন একজন মানুষ। কৌশলে প্রসঙ্গ পাল্টালো ছেলেটি। আর এমন তোষামোদ পেয়ে তো আজাদ সাহেব খুশিতে টইটম্বুর।
: হে হে হে না তা আর কই। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন তেমন সৌখিনতা করতে পারি কই। তোমার আন্টিতো একদমইই পছন্দ করে না। পাছে আবার কেউ প্রেমে পড়ে যায়।
: যাই বলেন আপনি সত্যিই খুবই স্মার্ট।
: হে হে হে এভাবে বলো না এভাবে বলো না। খুবই লজ্জা পাচ্ছি।
: না না লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তা আপনার ঘড়িটাতো খুব সুন্দর। কোন ব্রান্ডের?
: আরে বলো না। আমার ছেলের কান্ড। গত সপ্তাহে দুবাই গিয়েছিল ব্যবসার কাজে। তখন নাকি খুব পছন্দ হলো ঘড়িটা। তাই নিয়ে এলো। হেব্বী ব্রান্ড "Rado"
: সত্যিই খুব সুন্দর। যাই বলেন আপনাকে খুব মানিয়েছে।
: ধন্যবাদ।
: তা দাম কত পড়ল?
: কত আর মাত্র দের লাখ। কত করে বলি ছেলেকে আমার এসব ভালো লাগে না। এতো দামী দামী আমার একদম পছন্দ নয়। আমি ভাই সাধারণ মানুষ। সাধারণ থাকতেই বেশ লাগে।
: তারপরও আংকেল যেহেতু ছেলের আবদার তাতো আপনাকে রাখতেই হবে।
: হ্যাঁ, ঐযে বললে আবদার। সেই আবদারই সবসময় রক্ষা করতে হয়।
দেখ না গত মাসে গিয়েছিল ইউরোপে। আর সেখানে পছন্দ হলো মোবাইল। আর সেটাই বাবার জন্য নিয়ে এলো।
এই বলে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখাতে লাগলো যুবকটিকে।
: আরে সত্যি চমৎকার! এযে নিউ ব্রান্ড "আইফোন "খুবই দামি কিন্তু।
: সে আমি জানি। তাইতো সবাই কে দেখায় না তোমাকে ভালো লাগলো তাই দেখালাম। (চুপিচুপি বলল আজাদ সাহেব)। আজকাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। রাস্তা ঘাটের যে পরিস্থিতি। কোথাও কোন নিরাপত্তা আছে?
: তা ঠিকই বলেছেন আংকেল। তাই তো সাদাসিধে অবস্থায় রাস্তায় বের হই। বলা তো যায় না কখন কোন দিক থেকে বিপদ আসে।
: তা তুমি ঠিকই বলেছ।
আজাদ সাহেব খুবই পছন্দ করে ফেললেন ছেলেটিকে। আস্তে আস্তে বিকেল শেষ হয়ে আসছে। চারদিকে একধরনের নিরবতা কাজ করছে। সূর্য ডুবে গেছে। তারপরও হালকা আলো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সন্ধ্যার একটা মোহনীয় আভাস পরিবেশে। আশেপাশে ধীরে ধীরে লোকজন ফিরতে শুরু করেছে নিজ্বস্ব নীড়ে । সেই সাথে একই গতিতে আসতে শুরু করেছে নিশি অথিতি। এই পরিবেশে আজাদ সাহেব নিজেকে বেমানান মনে করছেন। তাই গল্প শেষ করেই উঠে পড়তে চাইলেন।
: তা বাবা সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমি তাহলে উঠি।
: আরে আংকেল, এতো তাড়া কিসের? আরোও কিছুক্ষণ বসুন না।
: না না বাবা। তুমি বুঝতে পারছ না তোমার আন্টি সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকা পছন্দ করেন না।
: আরে আংকেল আপনি এভাবে আমাকে একলা ফেলে চলে যাবেন?
: আরে এটা একটা কথা হলো? চলো দুজনই এক সাথে উঠি।
: না আংকেল আমার আরোও কিছু কাজ বাকি আছে।
: কাজ বাকী আছে? অবাক হলেন আজাদ সাহেব। কই আমি তো কোন কাজ করতে দেখলাম না। ও বুঝেছি তুমি হয়তো কারও জন্য অপেক্ষা করছ।
: হ্যাঁ ..আবার না ও।
: কি বলছ বাবা আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
: বুঝতে পারবেন আংকেল। একটু পরেই সব বুঝতে পারবেন।
: হে হে হে কি বল বাবা আগা মাথা কিছু বুঝি না।
: কিছু মনে করবেন না আংকেল। আপনার কয়টা ঘড়ি আছে?
: ঘড়ি? কেন একটা!
: আরে একটা তো হাতেই আছে। আমি জানতে চাইছি আপনার কালেকশন কেমন। একটু হাসি হাসি মুখে জানতে চাইলো ছেলেটি।
: ওও কালেকশন। তা তো বাবা বেশ ভালোই হবে।
: এতো কালেকশন থাকলে তো এই ঘড়িটা না পড়লেও চলে, কি বলেন?
: বুঝলাম না বাবা তুমি কি বলতে চাইছ?
: আরে আংকেল তেমন কঠিন কিছুই না। আমি এটাই বলতে চাইছি আপনার ঘড়িটা আমার পছন্দ হয়েছে। তাই ঘড়িটি আপনি খুশি হয়েই আমাকে দিবেন। হাসিখুশি মুখ করেই ছেলেটি বলল।
আজাদ সাহেব খুবই অবাক হলেন। এক পলকে চেয়ে রইলেন ছেলেটির দিকে।যেন মুহূর্তেই অপরিচিত লাগছে ছেলেটিকে। তিনি চোখ বোলাতে লাগলেন আশেপাশে। সন্ধ্যা ইতিমধ্যে গত হয়ে গেছে। আবছা আবছা মনে হচ্ছে চারদিক। কেমন একটা মোহময় পরিবেশ। গা ছমছম ছমছম করা অবস্থা আজাদ সাহেবের। কিন্তু তিনি সহজে মনের জোর হারাতে চান না। তবুও এক ধরনের চাপা ভয় ভিতরে ভিতরে কাজ করছে। সেই ভয়ের কারণে তিনি একটু একটু অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলেন। সেই সাথে অনুভব করতে পারছেন যে তার ভিপি বেড়ে যাচ্ছে। তিনি একটু একটু করে ঘামতে শুরু করলেন। ব্যপারটি যুবকটি বুঝতে পারল। তাই সে চেষ্টা করল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে। খুবই হাসিখুশি ভাব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করল সে।
: আরে আংকেল আমি আপনার ছেলের বয়সী তাই না। তাই ছেলে হিসেবে আবদার করলাম আর কি। মানে আমার না খুবই পছন্দ হয়েছে আপনার ঘড়িটি।
: তা তো বাবা পছন্দ হতেই পারে.
..কিন্তু ...মানে ...
: আরে ..আংকেল আপনি ঘাবড়াচ্ছেন কেন? আপনি ছেলেকে এই ঘড়িটি গিফট দিচ্ছেন। এটাতো সামান্য ব্যপার। তাই না।
ছেলেটির সহজ কথায় আজাদ সাহেব কিছুটা সাহস সঞ্চার করতে লাগলেন। তিনি বিশ্বাস করতে চেষ্টা করতে চাইলেন যে এখানে তেমন কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু ছেলেটি সে সুযোগ দিতে চাইলো না। সে খুব সহজ ভাবেই ঘড়িটি খুলে নিতে চাইলো। কিন্তু আজাদ সাহেব তা হতে দিলেন না। বললেন,
:দাঁড়াও, আমিই খুলে দিচ্ছি। তিনি নিজেই ঘড়ি খুলতে লাগলেন। আর বললেন, তুমি ছোকরা খুবই ভুল করছ। আমি কে তুমি এখনো টের পাওনি।
: ছিঃ আংকেল ছিঃ! আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই? এটি কি যে বলেন। বলতে বলতে ছেলেটি আজাদ সাহেবের হাত থেকে ঘড়িটি নিয়ে নিল।
: তোমার লজ্জা থাকা উচিত। তুমি একজন বাপের বয়সী মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাই করছ। তুমি এতটাই নীচ।
ছেলেটি হালকা হাসতে চেষ্টা করল। আর বলল,
: আংকেল আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। মাত্র তো শুরু। এবার লক্ষী ছেলের মতো মোবাইল টা বের করুন। আজাদ সাহেব একেবারেই হতচকিত হয়ে গেলেন। ছেলেটা কি সত্যি সত্যিই সব নিয়ে যাবে? তিনি ভাবতে লাগলেন এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম। এই অন্ধকারে এখন তো কিছু করার নাই। আচ্ছা একবার লড়ে দেখব নাকি? কি এমন বয়স হয়েছে তার। চাইলে এই ছেলের সাথে সহজেই টাক্কা দিতে পারেন। কিন্তু ছেলেটার সাথে অন্য কেউ আছে নাকি? তিনি আশেপাশে আবার তাকাতে লাগলেন। কিন্তু কাউকে তেমন দেখলেন না। তাহলে তো একবার ছেলেটার সাথে বাজি রাখা যায়। মনে মনে এইসব চিন্তাই ঘুরপাক খেতে লাগলো আজাদ সাহেবের।
আজাদ সাহেবের নির্লিপ্ততা দেখে ছেলেটির সন্দেহ হলো। সে বুঝতে পারল আজাদ সাহেব একটি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। না তাকে কোন প্রকার সুযোগ দেওয়া তো দূরের কথা। তাকে কিছু ভাবতেই দিবে না। এই চিন্তা করেই আস্তে করে ছুরি বের করল ছেলেটি। ছুরি বের করেই বলল,
: কই আংকেল, মোবাইল টা এখনো দিলেন না যে। বলে একটু হাসলো ছেলেটি। যেন মোবাইল দেওয়া টাই খুশির ব্যাপার।
এখন আজাদ সাহেব কি করবেন? কিছুই করার নেই। এমন অন্ধকার পরিবেশে ছেলেটি যদি তাকে কিছু করেও ফেলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। তার চেয়ে বরং যা চায় তা দিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলেন। এই চিন্তা করেই তিনি খুবই বিরস ভাবে পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইলটা বের করে আনলো। সাথে সাথেই ছেলেটি ছু মেরে মোবাইল টি নিয়ে নিল।
: বাহ খুবই সুবোধ বালকের কাজ করেছেন। আর চাইলেও আপনি এখানে তেমন কিছুই করতে পারবেন না। তো আংকেল আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম। আপনি কিছু মনে করেন নি তো? খুবই আন্তরিক ভাবে বলল ছেলেটি।
আজাদ সাহেব নিথর ভঙ্গিতে বসে আছেন। এখন আর যাওয়ার যেন তাড়া নেই।তার নিজস্ব পৃথিবীটা ক্রমান্বয়ে ঘুরছে। তিনি এতবড় বোকামি কিভাবে করলেন। কি দরকার ছিলো যেঁচে এখানে বসার। আর বসেছে ঠিক আছে। কিন্তু এতো উৎসাহী হয়ে কেন নিজের দামি জিনিস গুলো দেখালেন। কেন এই ছেলেটার তোষামোদে গলে গেলেন। রাগের কারণে আজাদ সাহেব চরম উত্তেজনা অনুভব করছেন। তিনি আবার কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলেন। এমন রাগ হতে লাগলো যে, যেন তার ইচ্ছে হচ্ছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
ছেলেটি কিছুটা সময় নিয়ে লক্ষ্য করল যে আজাদ সাহেব ঝিম মেরে গেছেন। আবার বেশী উত্তেজনা হয়ে গেলে হার্ট ফেল করতে পারে। সেই ভয় থেকে সে চাইল পরিবেশ হালকা করতে। বলাতো যায় না আবার কি হয়ে যায়।
: আরে আংকেল আপনি তো দেখি একদম ঝিম মেরে গেছেন? একটু হাসি হাসি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল ছেলেটি। কিন্তু আজাদ সাহেব এখনো অনড়। ভিতরে ভিতরে তিনি ফুঁসে উঠছেন। তিনি এমন অবস্থায় আছেন যে না কিছু করতে পারছেন না কিছু বলতে। এবার ছেলেটি উঠে দাড়ালো। আর হাত বাড়িয়ে আজাদ সাহেবকে বলল,
: কই আংকেল উঠুন? আমার কাজ শেষ। আশাকরি আপনারও এখন তেমন কাজ নেই। তাছাড়া আপনার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা দরকার। দেরী করলে আবার আন্টি চিন্তা করবেন। এমন ভাবে ছেলেটি বলছে যেন আজাদ সাহেবের জন্য ছেলেটির দরদ একেবারে উতলে উঠছে!
কিন্তু আজাদ সাহেব ছেলেটির হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিল। আর খুব উচ্চ স্বরেইই বলল
: সবই তো নিয়ে নিলে। আর কি চাই তোমার? যাও আমার সামনে থেকে যাও। আর দরদ দেখাতে হবেনা। এখান থেকে দূর হয়ে হলেও একটা উপকার কর আমার। প্লিজ আমাকে বিরক্ত কর না।
: ছিঃছিঃ আংকেল একি বলছেন। আপনার জন্য দরদ দেখাবোনা তো কার জন্য দেখাবো। আপনি আমাকে এতকিছু উপহার দিলেন। আপনার ঋন আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না। যাক উপকারের কথা যখন বললেন তখন আরেকটা উপকার আপনাকে করতেই হবে। প্লিজ আপনি না বলবেন না।
আজাদ সাহেব আবার দুঃচিন্তায় পড়লেন। আবার কি ঝামেলা। এই ছেলে দেখি তাকে দিগম্বর করে না ছেড়ে দেয়। হাবভাব তো সেই রকমই মনে হচ্ছে। আজ দিন টাই খারাপ। খুবই বিরক্ত হতে লাগলেন নিজের উপর তিনি। তারপরও তিনি গলায় কিছুটা জোর নিয়ে বললেন,
: দ্যাখো তুমি যথেষ্ট বিরক্ত করেছ আমায়। সেই সাথে নিঃস্ব। আর কি চাই।
: আমি খুবই দুঃখিত আংকেল! যদি ভুলে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে ক্ষমা করবেন। আর বেশি কিছু চাই না। ঐযে বললেন উপকারের কথা, সেটাই। যথেষ্ট বিরক্ত মাখা মুখে আজাদ সাহেব বললেন, মানে?
: মানে কিছুই না। মানে টা হলো আপনার ম্যানিব্যাগ।
: কি! এতো কিছুর পর ম্যানিব্যাগও চাই তোমার? তুমি তো শিক্ষিত ছিনতাইকারী।
: ছিঃ আংকেল ওভাবে বলবেন না লজ্জা লাগে। যাই হোক স্যার রাত হয়ে যাচ্ছে আশেপাশে আজেবাজে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে কচি কচি পরীরা এসে আপনার সম্মান নিয়ে টানাটানি করবে। এখনো তো মালের উপর যাচ্ছে তখন সম্মানের উপর যাবে। অনেক কথা বলে ফেলেছি। আর বাড়াতে চাইনা। দেখি জলদি টাকা পয়সা বের করুন। এইবলে ছেলেটি নিজেই ম্যানিব্যাগ কেড়ে নিলো। টাকা পয়সা যা পেলো তাই নিয়ে নিলো।
ঠিক এইসময় আরেকটি ছেলে সেখানে উপস্থিত। এসেই বলল,
: বস সব কিছু রেডি। আফনে আসেন। আগত ছেলেটি আজাদ সাহেবের দিকে লক্ষ্য করে বলল, কি ব্যাপার বস নতুন মক্কেল নাকি?
: আরে না। নতুন বেআক্কেল।
: কি কন বস কিছুই বুঝি না।
: হইছে তোর বুঝনের কাম নাই। ল চল.। ছেলেটি দুটি আস্তে আস্তে সামনের দিকে পা বাড়িয়ে চলে যেতে লাগলো। আজাদ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবে বসে রইল। যেন তার আজ যাওয়ার কোন গন্তব্য নাই। যেন সময় এখানে এখন স্থির। নিরব পরিবেশ। সন্ধ্যা ইতিমধ্যেই গত হয়েছে। এখন রাত্রি আগত। বিমর্ষ বদনে নিষ্পলক চেয়ে থাকা। সব কিছু নিঃস্ব করে অন্যের চলে যাওয়া। হায়রে নিয়তি।
হঠাৎ কিছুটা দূর থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো। স্বর যদিও পরিচিত। অন্তত এতক্ষন পরিচিত ছিলো ।সেই ছেলেটি বলছে,
: আংকেল ...চিন্তার কোন কারণ নাই। এখনো বেশ কিছু টাকা আছে ম্যানিব্যাগে। আপনি নিশ্চিন্তে বাসায় যেতে পারবেন ঐ টাকা দিয়ে। আর আজকের কথা কখনোই মনে রাখবেন না।কন্ঠস্বরটি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগলো।আজাদ সাহেবের কোন ভাবান্তর নেই। আশেপাশের লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে অনেক আগেই। তার ক্ষীণ আলোর রশ্মিতে আলোকিত হচ্ছে লেকের চারপাশ। এভাবে সময় গুলো বয়ে যেতে লাগলো। একটা অন্যরকম সন্ধ্যার স্বাদ নিলেন আজাদ সাহেব। যে সন্ধ্যার কথা তিনি কখনো ভুলবেন না। একেবারেই অপ্রত্যাশিত একটি সন্ধ্যা।
1/12/13
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সায়েম খান ০৯/১২/২০১৩চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন। আমার ব্লগে দাওয়াত রইলো।
-
ফাহমিদা ফাম্মী ০৮/১২/২০১৩ভাই এক নিঃশ্বাসে পড়লাম গল্পটা ... এক কথায় অসাধারণ
-
אולי כולנו טועים ০৮/১২/২০১৩welcome back.
oadharon akti golper jonno dhonnobad.