মিতুর নিঃসঙ্গতা (সিরিজ পর্ব দুই)
এই হচ্ছে তার শিক্ষক। যথেষ্ট জ্ঞানী। তবে সবকিছু কেই বইয়ের জ্ঞান দিয়ে বিবেচনা করেন। ছোট শিশুদের যে একটা নরম মন থাকে। আর তার পরিচর্যা কিভাবে নিতে হয় তা তার কাছে অজানা।
বিকেলে মিতুর বাবা ফিরেই মেয়ের খবর নেন। কেমন কাটলো দিন। সবকিছু ঠিকমতো চলছে কিনা। খাওয়া, পড়া, স্কুল, টিউটর এইসব। সবকিছুই তার গদবাধা। রুটিন ওয়ার্ক। আর প্রতি দিন ই থাকবে মেয়ের জন্য এটা সেটা। যেন মেয়েকে এইসব দিলে ই সব দ্বায়িত্ব শেষ।
বিকেলে কিছুক্ষণ পাশের বাড়ির কয়েকজনের সাথে বের হয় মিতু। ওরা ওর খুবই ভালো বন্ধু। ওদের সাথে ই ওর সময় গুলো খুব ভালো কাটে। ওর সবসময়ের চাওয়া যেন কারো সাথে তার সারাটি দিন কাটাতে পারে। হেসে খেলে যেন দিন চলে যায়। কিন্তু সেটা হবার নয়। কারণ সে একা। সেই প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবন। প্রতি রাত্রে ঘুমানোর সময় সে প্রার্থনা করে ঈশ্বরের কাছে যেন সে একজন সঙ্গী পায়। তার মায়ের কাছে আবদার করে, মা তুমি বলোনা ঈশ্বর কে তিনি যেন আমার ইচ্ছা পূরণ করেন। প্রতি দিন মিতুর সন্ধ্যা কাটে ঐ মায়ের পানে চেয়ে থেকে। আর রাত্রি কাটে তার প্রার্থনায়। এইভাবেই যখন নিঃসঙ্গ মিতুর জীবন চলছিল।
তখন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে দেখতে পায়, ঘরের দরজার বাইরে একটি ছোট্ট খুব সুন্দর কুকুর ছানা। আর মিতুকে দেখেই ছানা টি এক লাফে তার ছোট্ট কোলে চলে আসে। ছানাটি পেয়ে মিতুতো খুবই খুশি। তাড়াতাড়ি ছানাটি কে কোলে নিয়ে সে তার ঘরে চলে যায়। এদিকে মজিদ এটা দেখতে পেয়েই ছে ছে করতে থাকে।
-এইডা তুমি কি নিয়া আইছো আফামনি? হায়রে হায় ঘরদোর তো তছনছ কইরা ফেলাইবো। ছিঃছিঃ ওয়াক! ওয়াক! কুত্তার বাচ্চা নিয়া আইছো কিয়ের লাইগ্গা।
-ছিঃ তুমি এভাবে বলছ কেন মজিদ ভাই? দেখ দেখ কি সুন্দর একটা ছানা!
-আরে রাখ তুমার সুন্দর আর বান্দর। এইডা কুত্তার বাচ্চা। আর মানুষ আর কুত্তা এক লগে থাকতে পারে না। এখন তুমার বাবা দেখলেই আমারে শেষ কইরা ফেলাইবো।
-আরে না না, বাবা কিছুতেই জানতে পারবে না। আমি এটাকে সুন্দর করে পরিস্কার করে লুকিয়ে রাখব। বাবা টেরই পাবে না। তুমি না বললেই হলো।
-আমার আর কওয়ার কি? হেই যহন টের পাইবো না, তহন বুঝবা ঠেলা কারে কয়।
-হয়েছে হয়েছে অনেক পচা কথা বলেছ। এবার এখান থেকে যাও। আমি ওকে এখন পরিস্কার করব। আর তুমি ভুলেও ওকে বিরক্ত করবে না।
-আমি কি আর বিরক্ত করমু। যা দেখতাছি হেই আমারে বিরক্ত কইরা ছারবো।আমি যাইতেছি তুমি জলদি হাত মুখ ধুইয়া তৈরি হও। আরে তুমারে দুইতে পাঁচ জন লাগে, তুমি ধুইবা কুত্তা!
-হয়েছে মজিদ ভাই, অনেক হয়েছে। এবার তুমি যাও। আমি আসছি তৈরি হয়ে।
মিতু খুব দ্রুতই ছানাটিকে একটা ঝুড়িতে ভরলো। এবার সে নিজে হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিল। সে চিন্তা করল এখন ছানাটি কে পরিস্কার করার সময় নেই। তার স্কুলের গাড়ি চলে আসবে। তাই দুপুরে ওর সাথে ই ওকে গোসল করাবে। ও মনে মনে ওর মাকে আর ঈশ্বর কে খুব খুব ধন্যবাদ দিতে লাগলো। ও সত্যিই খুব খুশি আজ। ওর মনের ইচ্ছা আজ পূর্ণ হলো। ঈশ্বর ওর জন্য একটি সঙ্গী পাঠালো। ও খুব চটপটে আজ নাস্তার টেবিলে চলে আসলো। যদিও প্রতিদিন সকালে মজিদকে বিরক্ত হতে হয়। এতে অবশ্য মজিদের লচ নেই। যাক টেবিলে মেয়েকে দেখে ওর বাবা কিছুটা অবাক, যদিও তিনি প্রকাশ করলেন না।
-কি খবর আম্মু? সব ঠিক তো? আস নাস্তা কর।
এই বলে তিনি পত্রিকায় চোখ দিলেন। মজিদ মিতুকে নাস্তা দিল। মিতুও সুবোধ বালিকার মতো চুপ করে খেয়ে ফেললো। শুধু তাই নয় কিছু খাবার সাথে নিয়ে তার রুমে চলে আসল। বাবা সেটা একটু খেয়াল করলেন তবে মাথা ঘামালেন না।
মিতু ছানাটি কে খাবার দিয়ে নিজে স্কুলের জন্য তৈরী হতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মজিদ এসে অবাক! আজ ও নিজে নিজেই এতো তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। মজিদ যাক ভালোই হয়েছে, ঝামেলা কমেছে। মিতু স্কুলের জন্য প্রস্তুত।
-দেখ মজিদ ভাই তুমি আমার ঘরে সারাদিন আর আসবে না। আমি না থাকলে ঘরে ঢুকবে না। মনে থাকবে।
-এইডা কি কন আফা? আফনের ঘরে না গেলে ঘরদোর গুছাইমু কেমনে? যা অবস্থা কইরা রাহেন। আমি না আইলে হইবো এইসব?
-আমি বলছি তাই তুমি আসবে। আর আমার ঘরদোর আমি ই গুছিয়ে রাখবো। এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না।
-কিযে কন আফা আফনে কি আর ঘর গুছাইতে পাইরবেন? আফনে যদি ঘর গুছান তই আমি আছি কিয়ের লালইগগা?
-আমি তোমার সাথে এতো কথা বলতে চাই না। সেটা শুধু যেটা বলেছি
সেটাই মাথায় রাখ।
-আইচ্ছা, তাই অইবো।
মজিদ মনে মনে ভাবল মিতু স্কুলে গেলেই ওর ঘরদোর গোছাবে। কিন্তু মিতু সেই সুযোগ রাখল না। ও ঘরের দরজা তালা দিয়ে স্কুলে চলে গেল। আজ ওর স্কুলে এক অন্য রকম অনুভূতি হতে লাগল। খুব খুশি খুশি ভাব। সাধারণত ও স্কুলে তেমন হইহুল্লোড় করে না। আজ করল। আর এতো উত্তেজিত যে বলার বাইরে। ওর অস্থিরতা কখন স্কুল ছুটি হবে। কখন বাসায় গিয়ে কুকুর ছানার সাথে খেলবে। ও মনে মনে ছানাটির জন্য নাম ও ঠিক করে ফেলেছে। ওর নাম দিবে সে "টাইগার "। ওর স্কুলের উপরের ক্লাসের কয়েকজনের অনেক পেট আছে। তবে ওর ক্লাসের কারো নেই। তাই সে ভিতরে ভিতরে খুবই খুশি আর গর্বিত। তবে ও কাউকে এখনো কিছু জানায় নি। ওর মনে মনে ভয় বাবাকে নিয়ে। বাবা কুকুর বিড়াল একদমই পছন্দ করেন না। মিতু ওর বাবাকে কষ্ট দিতে চায় না। তাই ও খুব চিন্তিত। কি ভাবে টাইগার কে রাখবে বাবা থেকে লুকিয়ে। এখন এটাই তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। পারবে কি মিতু তার চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে ? তা দেখুন পরবর্তী অংশে
বিকেলে মিতুর বাবা ফিরেই মেয়ের খবর নেন। কেমন কাটলো দিন। সবকিছু ঠিকমতো চলছে কিনা। খাওয়া, পড়া, স্কুল, টিউটর এইসব। সবকিছুই তার গদবাধা। রুটিন ওয়ার্ক। আর প্রতি দিন ই থাকবে মেয়ের জন্য এটা সেটা। যেন মেয়েকে এইসব দিলে ই সব দ্বায়িত্ব শেষ।
বিকেলে কিছুক্ষণ পাশের বাড়ির কয়েকজনের সাথে বের হয় মিতু। ওরা ওর খুবই ভালো বন্ধু। ওদের সাথে ই ওর সময় গুলো খুব ভালো কাটে। ওর সবসময়ের চাওয়া যেন কারো সাথে তার সারাটি দিন কাটাতে পারে। হেসে খেলে যেন দিন চলে যায়। কিন্তু সেটা হবার নয়। কারণ সে একা। সেই প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবন। প্রতি রাত্রে ঘুমানোর সময় সে প্রার্থনা করে ঈশ্বরের কাছে যেন সে একজন সঙ্গী পায়। তার মায়ের কাছে আবদার করে, মা তুমি বলোনা ঈশ্বর কে তিনি যেন আমার ইচ্ছা পূরণ করেন। প্রতি দিন মিতুর সন্ধ্যা কাটে ঐ মায়ের পানে চেয়ে থেকে। আর রাত্রি কাটে তার প্রার্থনায়। এইভাবেই যখন নিঃসঙ্গ মিতুর জীবন চলছিল।
তখন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে দেখতে পায়, ঘরের দরজার বাইরে একটি ছোট্ট খুব সুন্দর কুকুর ছানা। আর মিতুকে দেখেই ছানা টি এক লাফে তার ছোট্ট কোলে চলে আসে। ছানাটি পেয়ে মিতুতো খুবই খুশি। তাড়াতাড়ি ছানাটি কে কোলে নিয়ে সে তার ঘরে চলে যায়। এদিকে মজিদ এটা দেখতে পেয়েই ছে ছে করতে থাকে।
-এইডা তুমি কি নিয়া আইছো আফামনি? হায়রে হায় ঘরদোর তো তছনছ কইরা ফেলাইবো। ছিঃছিঃ ওয়াক! ওয়াক! কুত্তার বাচ্চা নিয়া আইছো কিয়ের লাইগ্গা।
-ছিঃ তুমি এভাবে বলছ কেন মজিদ ভাই? দেখ দেখ কি সুন্দর একটা ছানা!
-আরে রাখ তুমার সুন্দর আর বান্দর। এইডা কুত্তার বাচ্চা। আর মানুষ আর কুত্তা এক লগে থাকতে পারে না। এখন তুমার বাবা দেখলেই আমারে শেষ কইরা ফেলাইবো।
-আরে না না, বাবা কিছুতেই জানতে পারবে না। আমি এটাকে সুন্দর করে পরিস্কার করে লুকিয়ে রাখব। বাবা টেরই পাবে না। তুমি না বললেই হলো।
-আমার আর কওয়ার কি? হেই যহন টের পাইবো না, তহন বুঝবা ঠেলা কারে কয়।
-হয়েছে হয়েছে অনেক পচা কথা বলেছ। এবার এখান থেকে যাও। আমি ওকে এখন পরিস্কার করব। আর তুমি ভুলেও ওকে বিরক্ত করবে না।
-আমি কি আর বিরক্ত করমু। যা দেখতাছি হেই আমারে বিরক্ত কইরা ছারবো।আমি যাইতেছি তুমি জলদি হাত মুখ ধুইয়া তৈরি হও। আরে তুমারে দুইতে পাঁচ জন লাগে, তুমি ধুইবা কুত্তা!
-হয়েছে মজিদ ভাই, অনেক হয়েছে। এবার তুমি যাও। আমি আসছি তৈরি হয়ে।
মিতু খুব দ্রুতই ছানাটিকে একটা ঝুড়িতে ভরলো। এবার সে নিজে হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিল। সে চিন্তা করল এখন ছানাটি কে পরিস্কার করার সময় নেই। তার স্কুলের গাড়ি চলে আসবে। তাই দুপুরে ওর সাথে ই ওকে গোসল করাবে। ও মনে মনে ওর মাকে আর ঈশ্বর কে খুব খুব ধন্যবাদ দিতে লাগলো। ও সত্যিই খুব খুশি আজ। ওর মনের ইচ্ছা আজ পূর্ণ হলো। ঈশ্বর ওর জন্য একটি সঙ্গী পাঠালো। ও খুব চটপটে আজ নাস্তার টেবিলে চলে আসলো। যদিও প্রতিদিন সকালে মজিদকে বিরক্ত হতে হয়। এতে অবশ্য মজিদের লচ নেই। যাক টেবিলে মেয়েকে দেখে ওর বাবা কিছুটা অবাক, যদিও তিনি প্রকাশ করলেন না।
-কি খবর আম্মু? সব ঠিক তো? আস নাস্তা কর।
এই বলে তিনি পত্রিকায় চোখ দিলেন। মজিদ মিতুকে নাস্তা দিল। মিতুও সুবোধ বালিকার মতো চুপ করে খেয়ে ফেললো। শুধু তাই নয় কিছু খাবার সাথে নিয়ে তার রুমে চলে আসল। বাবা সেটা একটু খেয়াল করলেন তবে মাথা ঘামালেন না।
মিতু ছানাটি কে খাবার দিয়ে নিজে স্কুলের জন্য তৈরী হতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মজিদ এসে অবাক! আজ ও নিজে নিজেই এতো তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। মজিদ যাক ভালোই হয়েছে, ঝামেলা কমেছে। মিতু স্কুলের জন্য প্রস্তুত।
-দেখ মজিদ ভাই তুমি আমার ঘরে সারাদিন আর আসবে না। আমি না থাকলে ঘরে ঢুকবে না। মনে থাকবে।
-এইডা কি কন আফা? আফনের ঘরে না গেলে ঘরদোর গুছাইমু কেমনে? যা অবস্থা কইরা রাহেন। আমি না আইলে হইবো এইসব?
-আমি বলছি তাই তুমি আসবে। আর আমার ঘরদোর আমি ই গুছিয়ে রাখবো। এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না।
-কিযে কন আফা আফনে কি আর ঘর গুছাইতে পাইরবেন? আফনে যদি ঘর গুছান তই আমি আছি কিয়ের লালইগগা?
-আমি তোমার সাথে এতো কথা বলতে চাই না। সেটা শুধু যেটা বলেছি
সেটাই মাথায় রাখ।
-আইচ্ছা, তাই অইবো।
মজিদ মনে মনে ভাবল মিতু স্কুলে গেলেই ওর ঘরদোর গোছাবে। কিন্তু মিতু সেই সুযোগ রাখল না। ও ঘরের দরজা তালা দিয়ে স্কুলে চলে গেল। আজ ওর স্কুলে এক অন্য রকম অনুভূতি হতে লাগল। খুব খুশি খুশি ভাব। সাধারণত ও স্কুলে তেমন হইহুল্লোড় করে না। আজ করল। আর এতো উত্তেজিত যে বলার বাইরে। ওর অস্থিরতা কখন স্কুল ছুটি হবে। কখন বাসায় গিয়ে কুকুর ছানার সাথে খেলবে। ও মনে মনে ছানাটির জন্য নাম ও ঠিক করে ফেলেছে। ওর নাম দিবে সে "টাইগার "। ওর স্কুলের উপরের ক্লাসের কয়েকজনের অনেক পেট আছে। তবে ওর ক্লাসের কারো নেই। তাই সে ভিতরে ভিতরে খুবই খুশি আর গর্বিত। তবে ও কাউকে এখনো কিছু জানায় নি। ওর মনে মনে ভয় বাবাকে নিয়ে। বাবা কুকুর বিড়াল একদমই পছন্দ করেন না। মিতু ওর বাবাকে কষ্ট দিতে চায় না। তাই ও খুব চিন্তিত। কি ভাবে টাইগার কে রাখবে বাবা থেকে লুকিয়ে। এখন এটাই তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। পারবে কি মিতু তার চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে ? তা দেখুন পরবর্তী অংশে
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ১০/১১/২০১৩চমৎকার উপস্থাপন। আসলেই চ্যালেঞ্জহীন জীবনই নিঃসংগ
-
সায়েম খান ০৮/১১/২০১৩চমৎকার একটি গল্প। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। সেইসাথে আমার বাড়িতে(ব্লগে) আপনার দাওয়াত রইলো।
-
জহির রহমান ০৮/১১/২০১৩...তা দেখুন পরবর্তী অংশে
ভালোলাগা লেখাগুলো কেন যে এভাবে ঝুলিয়ে রাখেন বুঝিনা।
ভালো লেগেছে।