জয়নাল (সিরিজ পর্ব দুই)
মাথাটা যেন চক্রাকারে ঘুরছে জয়নালের। চোখ দুটো ঢুলুঢুলু। কোন মতে হাটতে হাটতে চলে এসেছে এক রেলস্টেশনের কাছে। ধপাস করে পড়ে গেল। তার সমস্ত শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। আজ কদিন হলো হিসাব নেই তার। তবে সে ক্ষুধার্ত হয়েছে আজ কম করে হলেও দুই দিন। গত দুই দিন যাবত সে সিটি কর্পোরেশনের সাপ্লাইর পানি খেয়ে বেঁচে আছে। তা তে কি এই বয়সের ছেলের ক্ষুধা মেটে।প্রচন্ড দুঃখ বেদনা দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে সে পালিয়ে আসে সেই চায়ের দোকান থেকে। তার সেই দাদার আবদার এতো বেড়ে গিয়েছিল যে সে তা সহ্য করতে পারছিলো না। তাই শেষমেষ ঐ হোটেলের এক জনের সহায়তায় সে পালিয়ে যায়। পালিয়ে আসার সময় কিছু টাকা দেয় ঐ লোকটি। যা এই কদিনে শেষ হয়েছে। সে বেশ কিছু দিন চাকরি করলেও তার সেই দাদা তাকে টাকা পয়সা দিতো না। কারণ মানুষের শক্তি হলো টাকা। যদি এই ছেলের টাকা হাতে পায় তবে সে এখানে থাকবে কেন। কিন্তু আর সবকিছুই বরাবর দিতো। ভালো ভালো খাবার দিত। কাপড় চোপড় সব কিছু ঠিক। তাকে দেখে বুঝাই যেত না সে কোন চায়ের দোকানে চাকরি করতে পারে। কিন্তু তার সেই কুৎসিত সুখ পছন্দ হলো না। নিজের ইজ্জতের বিনিময় কিছুই হতে পারে না। তার শরীরে এখনো সেই ভালো ভালো পোশাক রয়েছে। সেই পোশাকের কারণেও বিপদ। অনেক জায়গায় গেছে কাজ চাইতে। কিন্তু তার চেহারা সুরত দেখে কেউ চাকরিতে রাখতে চাইলো না। সবাই ধরে নিচ্ছে যে কোন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে রাগ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে। তাই একে কাজ দিয়ে বিপদে পড়ার দরকার নেই। যাক তার শরীর প্রচন্ড অবসাদ হয়ে আসছে। মিট মিট চোখে দেখতে পেলো স্টেশনেরই একপাশে কিছু তার ই বয়সী ছেলে মেয়ে গোল করে বসে কি যেন খাচ্ছে বা কিছু একটা করছে। সে তাদের কাছে যেতে চাইল কিছু একটা পাবার আশায়। কিন্তু দূর্বলতার কারণে শরীরে শক্তি পাচ্ছে না। তার এইদিকে উৎসুক দৃষ্টির কারণে ঐদলের একজনের চোখ পড়ল তার উপর। সে অবশ্য এই দলটির স্বঘোষিত লিডার। তার নাম কালা মারুফ। নামটা আধুনিক। তার আসল নাম ছিলো মফিজ। তবে এই স্টেশনে আসার আগের নাম। ঐ নাম টা নেতা গিরির জন্য সুবিধার না। তাই নিজেই নাম পরিবর্তন করে। মারুফ রাখে। তার অবশ্য কারণে আছে আরেক টা। সে বেশ কটি নায়ক মারুফের ছবি দেখে। সেই ছবিগুলো তাকে আকৃষ্ট করে মারুফের চরিত্র নিতে। সেই থেকে মারুফ। কিন্তু কালা টা যোগ হয়েছে কালো বলে।
ঐ তুই কেডা? জয়নালের দিকে নিবদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে মারুফের প্রশ্ন।
আমি ....আমি ....ক্ষুধার তীব্রতায় কথা বেরোতে চায় না জয়নালের। খুব দ্রুতই একটি মেয়ে কাছে চলে আসে তাদের ই দলের। বয়স দশ এগার। নাম তার সামি। খুবই আধুনিক। কিন্তু আসল নাম সালমা। নিজেকে খুবই রূপবতী মনে করে সে ফর্সা হওয়ার কারণে। তাই একটু ভাব নিয়ে চলে।
পানি .....পানি.....অস্ফুট উচ্চারণে জয়নাল আবারো পানি চাইতে থাকে তাদের কাছে।
ঐ তুই কেডা হেইডা জিগায়ছি? কি খাবি হেইডা জিগায় নাই। রাগত স্বরে মারুফের উক্তি।
ঐ মারুফফা, পোলাডা পানি খাইতে চাইছে। আর তুই জিগাস নাম। আগে পানি খিলা হেরপর না অয় নাম জিগাবি। সামির ঝাঝালো উত্তর।
কি কছ, আমি হেরে পানি দিতাম। তুই আমারে কছ পানি দিবার লাইগ্গা। তোর সাবাশ তো কম না। মারুফের নেতৃত্ব সুলভ পাল্টা জবাব।
তুই লর এইহান্তে। আমি দিতাছি। সামি এগিয়ে আসে প্লাস্টিকের বোতলে রাখা পানি নিয়ে তার দিকে। জয়নাল কম্পিত শরীরে কিছু পানি পান করল। একটু স্থির হতে চাইল সে। এখন একটু একটু করে সে চোখ মেলে দেখতে চাইল তার আশপাশে কে কে আছে। সে এই দুইজন বাদেও আরো তিন জন দেখতে পেলো। তবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল এদের থেকে। মারুফের বয়স আন্দাজ করল জয়নাল। বেশী হলে পনের ষোল। একটু একটু মোচ উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে কিছু দাড়ি র আবির্ভাব। দীর্ঘ অপরিচ্ছন্ন চুল। চোখ মুখে সবসময় একটা রুষ্ট ভাব। নিজের বয়সের চাইতে নিজেকে আরোও বড় মনে করে সে। কিন্তু মেয়েটি অন্যরকম। খুব সহজে আপন মনে হয় তার চেহারায় দৃষ্টি দিলেই। যাক এদের সাহায্য নিয়েই চলতে হবে এখন। এটি জয়নালের ভাবনা।
কে তুই? এবার একটু কঠিন হয়েই প্রশ্ন করল সামি। এইখানে আইছছ কিয়ের লাইগ্গা?
আমি ..আমি জয়নাল। আমার বাড়ি ছিলো পদ্মা গাঙগের ধারে। গাঙগে আমার বাড়ি ঘর মা বাপ ভাই বইন হগ্গলেরে কাইড়্যা নিচে। এহন শহরে আইছি কিছু করমু। হেইডা চিন্তা কইরা। জয়নালের সহজ সরল উত্তর।
হা হা হা সিনেমা বানাছ। গাঙগে সব নিয়া গেছে কিছুই নাই। তই এত সুন্দর সুন্দর কাপরা পাইছত কই? লিডার মারুফের জিজ্ঞাসু সুলভ প্রশ্ন।
এখন জয়নাল কি উত্তর দিবে? সে কি বলবে সে একটা হোটেলে কাজ করত। সে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন সে পালিয়ে এসেছে তাকি বলতে পারবে? তারা কিভাবে নেবে? একটা মেয়ে আছে এখানে এই মেয়ের সামনে কিভাবে এইসব বিশ্রী কথা বলবে সে। সে খুব দ্রুতই চিন্তা করতে থাকে। তাকে এদের সাথে থাকতে হলে তাদের অন্তরে ঢুকতে হবে। কোন মিথ্যার আশ্রয় নিলে যদি ধরে ফেলে? কি বলবে সে কি বললে তারা তাকে আশ্রয় দিবে
ঐ তুই কেডা? জয়নালের দিকে নিবদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে মারুফের প্রশ্ন।
আমি ....আমি ....ক্ষুধার তীব্রতায় কথা বেরোতে চায় না জয়নালের। খুব দ্রুতই একটি মেয়ে কাছে চলে আসে তাদের ই দলের। বয়স দশ এগার। নাম তার সামি। খুবই আধুনিক। কিন্তু আসল নাম সালমা। নিজেকে খুবই রূপবতী মনে করে সে ফর্সা হওয়ার কারণে। তাই একটু ভাব নিয়ে চলে।
পানি .....পানি.....অস্ফুট উচ্চারণে জয়নাল আবারো পানি চাইতে থাকে তাদের কাছে।
ঐ তুই কেডা হেইডা জিগায়ছি? কি খাবি হেইডা জিগায় নাই। রাগত স্বরে মারুফের উক্তি।
ঐ মারুফফা, পোলাডা পানি খাইতে চাইছে। আর তুই জিগাস নাম। আগে পানি খিলা হেরপর না অয় নাম জিগাবি। সামির ঝাঝালো উত্তর।
কি কছ, আমি হেরে পানি দিতাম। তুই আমারে কছ পানি দিবার লাইগ্গা। তোর সাবাশ তো কম না। মারুফের নেতৃত্ব সুলভ পাল্টা জবাব।
তুই লর এইহান্তে। আমি দিতাছি। সামি এগিয়ে আসে প্লাস্টিকের বোতলে রাখা পানি নিয়ে তার দিকে। জয়নাল কম্পিত শরীরে কিছু পানি পান করল। একটু স্থির হতে চাইল সে। এখন একটু একটু করে সে চোখ মেলে দেখতে চাইল তার আশপাশে কে কে আছে। সে এই দুইজন বাদেও আরো তিন জন দেখতে পেলো। তবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল এদের থেকে। মারুফের বয়স আন্দাজ করল জয়নাল। বেশী হলে পনের ষোল। একটু একটু মোচ উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে কিছু দাড়ি র আবির্ভাব। দীর্ঘ অপরিচ্ছন্ন চুল। চোখ মুখে সবসময় একটা রুষ্ট ভাব। নিজের বয়সের চাইতে নিজেকে আরোও বড় মনে করে সে। কিন্তু মেয়েটি অন্যরকম। খুব সহজে আপন মনে হয় তার চেহারায় দৃষ্টি দিলেই। যাক এদের সাহায্য নিয়েই চলতে হবে এখন। এটি জয়নালের ভাবনা।
কে তুই? এবার একটু কঠিন হয়েই প্রশ্ন করল সামি। এইখানে আইছছ কিয়ের লাইগ্গা?
আমি ..আমি জয়নাল। আমার বাড়ি ছিলো পদ্মা গাঙগের ধারে। গাঙগে আমার বাড়ি ঘর মা বাপ ভাই বইন হগ্গলেরে কাইড়্যা নিচে। এহন শহরে আইছি কিছু করমু। হেইডা চিন্তা কইরা। জয়নালের সহজ সরল উত্তর।
হা হা হা সিনেমা বানাছ। গাঙগে সব নিয়া গেছে কিছুই নাই। তই এত সুন্দর সুন্দর কাপরা পাইছত কই? লিডার মারুফের জিজ্ঞাসু সুলভ প্রশ্ন।
এখন জয়নাল কি উত্তর দিবে? সে কি বলবে সে একটা হোটেলে কাজ করত। সে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন সে পালিয়ে এসেছে তাকি বলতে পারবে? তারা কিভাবে নেবে? একটা মেয়ে আছে এখানে এই মেয়ের সামনে কিভাবে এইসব বিশ্রী কথা বলবে সে। সে খুব দ্রুতই চিন্তা করতে থাকে। তাকে এদের সাথে থাকতে হলে তাদের অন্তরে ঢুকতে হবে। কোন মিথ্যার আশ্রয় নিলে যদি ধরে ফেলে? কি বলবে সে কি বললে তারা তাকে আশ্রয় দিবে
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
suman ০৭/১১/২০১৩দারুণ লেখ আগাচ্ছে ।।বাস্তব ঘেঁসা একটি লেখা ...অপেক্ষায় আছি রহস্য জটের পরের অংশের ...
-
আরজু নাসরিন পনি ০৭/১১/২০১৩প্রিয় সাখাওয়াৎ , আপনার ব্লগে এসেতো চক্ষু ছানাবড়া ! দারুণ ব্লগিং চলছে, দেখেই খুব ভালো লাগছে ।
প্রচন্ড ক্লান্ত এখনও... একটু সুস্থির হয়েই আসবো আপনার সব লেখা পড়তে ।
অনেক শুভকামনা রইল ।। -
ইসমাত ইয়াসমিন ০৭/১১/২০১৩ভাল লাগল। আগের টা ও পড়েছি, অপেক্ষায় থাকলাম নতুন পর্বের জন্য।
-
সহিদুল হক ০৭/১১/২০১৩খুব সুন্দর হচ্ছে গল্প, বিশেষত, সংলাপগুলো দারুন হচ্ছে।আরও কি বাকি আছে? যদি থাকে তাহলে পাঠকদের সুবিধার জন্য পাদটীকা দিও।
-
মহিউদ্দিন হেলাল ০৭/১১/২০১৩আগের টুকু পড়িনি, আজকের টুকু দারুণ লেগেছে, পড়বো সব টুকুই।
শুভকামনা রইল, -
Înšigniã Āvî ০৭/১১/২০১৩অসাধারণ...