স্বপ্ন অধরা -পর্ব এক
আমি খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। বাবার ব্যবসা পুরোটাই এখন আমাকে সামলাতে হচ্ছে। সেই কারণে একদম শ্বাস নেওয়ার অবস্থা আমার নেই। পড়াশোনা শেষ করেছি বছর দুই হলো। বেশকিছুদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে কাটালাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা কাঁধে জোয়াল তুলে দিলেন। কি আর করা। সেই ব্যবসার কাজে আজ আসলাম এক প্রেসে। খুব অল্প দামে একটি একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান কিনলাম আমি। আমি কিনেছি বললে ভুল হবে। আসলে আমার ই ব্যবসায়িক এক বন্ধু প্রেসটি কিনছে। কিন্তু তার নগদ অর্থের যোগান না থাকায় আমাকেই এগিয়ে আসতে হলো। সমস্ত ব্যস্ততার শেষে যখন অফিস রুমে বসলাম তখন টেবিলের সামনে একটা বই পড়ে থাকতে দেখলাম। কেন জানি আনমনে বইটি হাতে নিলাম। যদিও সাহিত্যের প্রতি আমার ঝোঁক কোন কালেই ছিলো না। বইটির নাম "স্বপ্ন অধরা "।মূলত নামটি আমাকে কাছে টানল। কয়েকটি পাতা উল্টালাম। কবিতার বই। লিখেছেন কবি শিউলী ইউসুফ। আনমনে কয়েকটি পাতা উল্টিয়ে দেখতে লাগলাম। কবিতা গুলো খুবই সুন্দর। আর কবিতা গুলো আমাকে কেন জানি খুব কাছে টানছিল। এক ধরনের নষ্টালজিক। লিখেছেন মহিলা অথচ কবিতার আকুতি গুলো কবিতার প্রকৃতি সবই একটা ছেলের আকুতির মতো। অর্থাৎ মেয়ে হলেও কবিতা গুলো দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কোন ছেলের লেখা। যদিও মেয়েলী কবিতা ও আছে। তবে সেগুলো একটু আলাদা। আমি সাহিত্য না বুঝলেও কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করি। যাক পাতা উল্টানোর এক পর্যায়ে এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো। একটি কবিতা। কবিতাটি আমার খুব পরিচিত। তবে অনেক আগের। আমার এক বন্ধুর লেখা। কবিতাটি লিখে ও জেলা পুরস্কার পেয়েছিল। কিন্তু এই কবিতা এইখানে কিভাবে? আমি হঠাৎই ফিরে গেলাম অতীতে। আমার বন্ধু টির নাম সুমন।
ব্যক্তিগত ভাবে সুমনের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। ও খুব ভালো একটা ছেলে। খুবই অমায়িক। তবে খুব বেশিই উদাসী। ছোট বেলা থেকেই যেহেতু পরিচয় ছিলো তাই ওর খুটিনাটি সবই আমি জানতাম। সংসারে বেশ টানাটানি ছিলো। কিন্তু কখনোই সে আমাদের বুঝতে দিতো না তার অবস্থা। বলতে গেলে তার ব্যপারে আমরা অন্ধকারেই ছিলাম।সে চাইতো কেউ তার ব্যক্তিগত বিষয় জানুক। পড়াশোনায় ছিল মোটামুটি মাথা। কিন্তু কখনোই খারাপ ছাত্র নয়। মধ্যম মানের আরকি। তবে বেশী পরিমাণ ভাবুক টাইপ। সাহিত্যের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক। বাংলা সাহিত্য তার কাছে একেবারেই সাধারণ বিষয়। এতো পড়তে পারত তা বলার বাইরে। শুধু কি পড়া, সব খুটিনাটি। এমন ও হয়েছে যে বাংলা স্যার প্রায়ই ওর কাছ থেকে রেফারেন্স নিতো। যাক যে বিষয় টা বলা সবচেয়ে জরুরি তা হলো, ওর সাহিত্য প্রতিভা। ও খুব অল্প বয়স থেকেই সাহিত্য নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে। যে বয়সে আমরা রবীন্দ্র নাথের আমাদের ছোট নদী পড়ছি, ও তখন নিজেই লিখছে আমার ছোট মিনি। ওদের বাসায় ছোট বিড়াল ছানা নিয়ে লেখা ছড়া। ও আসলে স্বভাব কবি। যখন যেখানে যাই দেখত তা নিয়ে ই কবিতা ছড়া লিখে ফেলত। আমাদের এলাকার সকল সাহিত্য আয়োজন ও ছাড়া ছিলো অসম্পূর্ণ। আয়োজনের নয় পুরুস্কার নেওয়ার জন্য। ছোট থেকে এতো সব পুরুস্কার পেয়েছে যে ওদের ছোট্ট সোকেসে ঘরের কিছু রাখার জায়গায় ই থাকল না। ওর মা এসব মোটেই পছন্দ করতেন না। টানাটানির সংসারে কিভাবে তিনি এ সব পছন্দ করতে পারেন। কোন স্কলারশিপ পেলে না হয় কিছু পয়সা পাওয়া যেত। এইসব মেডেল সারটিফিকেট ক্রেস্ট দিয়ে কি হবে।
অবশ্য এসব নিয়ে সুমনের কখনোই দুঃখ ছিলো না। কোন মতে দিন পার করতে পারলেই হলো। তার মতে
সকল কবি রবীন্দ্র নাথের মতো কপাল নিয়ে জন্মায় না কেন? তাহলে আর চিন্তা ই থাকতো না। ইচ্ছা মত ভাব নিয়ে খেলা খেলতে পারতাম। আসলে জীবন টা নজরুলের হয়ে গেলো।
প্রচন্ড অভিমানের সুর তার কথায়। নিজের খরচ চালানোর মার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। ও নিজে চাইলে কিছু করতে পারে পড়ার ফাঁকে। কিন্তু ও করে না। তবে প্রত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি ছিলো। প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন প্রত্রিকায় তার কবিতা আসবেই। তবে ও নিজের নামে কবিতা পাঠাতো কম। ছদ্ম নামে পাঠাতো বেশী। ভালো কবিতা গুলো পাঠাতো ছদ্ম নামে। মাঝে মাঝে কিছু সম্মানীওও মিলতো। ওর ছদ্ম নাম ছিলো "স্বপ্ন অধরা "
তাই বলে তুই সবসময় এই কবিতা নিয়েই থাকবি? বলি আমি।
আচ্ছা দেখ, সবার দ্বারা সব কাজ হয়না। তোর দ্বারা যেমন কবিতা হবেনা আমার দ্বারা এ ছাড়া অন্য কিছু হবেনা।
এটা আমি মেনে নিলাম না।
কেন?
কারণ তুই চাইলেই টিউশনি করতে পারিস। এতে তোর হাত খরচ হয়, সেই সাথে পড়ার ও।
তুই কি মনে করিস আমি সে চেষ্টা করিনি?
তাহলে?
তাহলে কিছু না। তোদের বলিনি। আমি কয়েক টা টিউশনিতে গিয়েছিলাম।
তো?
তো ওদের আমাকে পছন্দ হয়নি।
কিন্তু কেন?
আচ্ছা কে পছন্দ করবে তার মেয়ের খাতায় ভালবাসার কবিতা।
কি বলছিস এসব?
ঠিকই বলছি। পড়াতে পড়াতে একসময় খুব ভাব চলে এলো। তখনই একটা কবিতা লিখে ফেললাম। আমি তো আর কাগজ নিয়ে যায়নি, তাই ছাত্রীর খাতায় লিখলাম। লেখার পর ভুলে গেলাম ওটা ছিঁড়ে নিতে। এদিকে এরপর থেকেই ছাত্রীর পরিবর্তন। আমি তো কিছু বুঝি না।
তারপর? ( চলবে)
ব্যক্তিগত ভাবে সুমনের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। ও খুব ভালো একটা ছেলে। খুবই অমায়িক। তবে খুব বেশিই উদাসী। ছোট বেলা থেকেই যেহেতু পরিচয় ছিলো তাই ওর খুটিনাটি সবই আমি জানতাম। সংসারে বেশ টানাটানি ছিলো। কিন্তু কখনোই সে আমাদের বুঝতে দিতো না তার অবস্থা। বলতে গেলে তার ব্যপারে আমরা অন্ধকারেই ছিলাম।সে চাইতো কেউ তার ব্যক্তিগত বিষয় জানুক। পড়াশোনায় ছিল মোটামুটি মাথা। কিন্তু কখনোই খারাপ ছাত্র নয়। মধ্যম মানের আরকি। তবে বেশী পরিমাণ ভাবুক টাইপ। সাহিত্যের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক। বাংলা সাহিত্য তার কাছে একেবারেই সাধারণ বিষয়। এতো পড়তে পারত তা বলার বাইরে। শুধু কি পড়া, সব খুটিনাটি। এমন ও হয়েছে যে বাংলা স্যার প্রায়ই ওর কাছ থেকে রেফারেন্স নিতো। যাক যে বিষয় টা বলা সবচেয়ে জরুরি তা হলো, ওর সাহিত্য প্রতিভা। ও খুব অল্প বয়স থেকেই সাহিত্য নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে। যে বয়সে আমরা রবীন্দ্র নাথের আমাদের ছোট নদী পড়ছি, ও তখন নিজেই লিখছে আমার ছোট মিনি। ওদের বাসায় ছোট বিড়াল ছানা নিয়ে লেখা ছড়া। ও আসলে স্বভাব কবি। যখন যেখানে যাই দেখত তা নিয়ে ই কবিতা ছড়া লিখে ফেলত। আমাদের এলাকার সকল সাহিত্য আয়োজন ও ছাড়া ছিলো অসম্পূর্ণ। আয়োজনের নয় পুরুস্কার নেওয়ার জন্য। ছোট থেকে এতো সব পুরুস্কার পেয়েছে যে ওদের ছোট্ট সোকেসে ঘরের কিছু রাখার জায়গায় ই থাকল না। ওর মা এসব মোটেই পছন্দ করতেন না। টানাটানির সংসারে কিভাবে তিনি এ সব পছন্দ করতে পারেন। কোন স্কলারশিপ পেলে না হয় কিছু পয়সা পাওয়া যেত। এইসব মেডেল সারটিফিকেট ক্রেস্ট দিয়ে কি হবে।
অবশ্য এসব নিয়ে সুমনের কখনোই দুঃখ ছিলো না। কোন মতে দিন পার করতে পারলেই হলো। তার মতে
সকল কবি রবীন্দ্র নাথের মতো কপাল নিয়ে জন্মায় না কেন? তাহলে আর চিন্তা ই থাকতো না। ইচ্ছা মত ভাব নিয়ে খেলা খেলতে পারতাম। আসলে জীবন টা নজরুলের হয়ে গেলো।
প্রচন্ড অভিমানের সুর তার কথায়। নিজের খরচ চালানোর মার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। ও নিজে চাইলে কিছু করতে পারে পড়ার ফাঁকে। কিন্তু ও করে না। তবে প্রত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি ছিলো। প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন প্রত্রিকায় তার কবিতা আসবেই। তবে ও নিজের নামে কবিতা পাঠাতো কম। ছদ্ম নামে পাঠাতো বেশী। ভালো কবিতা গুলো পাঠাতো ছদ্ম নামে। মাঝে মাঝে কিছু সম্মানীওও মিলতো। ওর ছদ্ম নাম ছিলো "স্বপ্ন অধরা "
তাই বলে তুই সবসময় এই কবিতা নিয়েই থাকবি? বলি আমি।
আচ্ছা দেখ, সবার দ্বারা সব কাজ হয়না। তোর দ্বারা যেমন কবিতা হবেনা আমার দ্বারা এ ছাড়া অন্য কিছু হবেনা।
এটা আমি মেনে নিলাম না।
কেন?
কারণ তুই চাইলেই টিউশনি করতে পারিস। এতে তোর হাত খরচ হয়, সেই সাথে পড়ার ও।
তুই কি মনে করিস আমি সে চেষ্টা করিনি?
তাহলে?
তাহলে কিছু না। তোদের বলিনি। আমি কয়েক টা টিউশনিতে গিয়েছিলাম।
তো?
তো ওদের আমাকে পছন্দ হয়নি।
কিন্তু কেন?
আচ্ছা কে পছন্দ করবে তার মেয়ের খাতায় ভালবাসার কবিতা।
কি বলছিস এসব?
ঠিকই বলছি। পড়াতে পড়াতে একসময় খুব ভাব চলে এলো। তখনই একটা কবিতা লিখে ফেললাম। আমি তো আর কাগজ নিয়ে যায়নি, তাই ছাত্রীর খাতায় লিখলাম। লেখার পর ভুলে গেলাম ওটা ছিঁড়ে নিতে। এদিকে এরপর থেকেই ছাত্রীর পরিবর্তন। আমি তো কিছু বুঝি না।
তারপর? ( চলবে)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ০৭/১১/২০১৩কবি হওয়ার সমস্যাগুলির একটি যত্র তত্র কবিতা লেখা। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান খুঁজতে হবে। বাস্তবতা প্রকট হয়ে উঠেছে। খুব ভালো
-
কবীর হুমায়ূন ০৭/১১/২০১৩খুবই ভালো গল্পের মোড় নিয়েছে।
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০৬/১১/২০১৩অসাধারন হয়েছে সাখাওয়াত ভাই। বাকীটা পড়ার তর সইছেনা। আর সাসপেন্স যা তৈরী করেছেন কী আর বলব, আমার মনে হয় যাঁরাই পড়ছেন তাদের ও তর সইছেনা
-
জহির রহমান ০৬/১১/২০১৩...চলবে।
তাই ভালো।
একত্রে বড় লেখা পড়তে পারতাম না। আর পড়তে না পারলে এই সুন্দর লেখাটা মিস করতে হতো। -
hamid hossain azzad ০৬/১১/২০১৩unkle pls amr jonno koster sms likhen na shudu lekbn j probas jibon onk kosto a ase se golo r kisu na
-
সহিদুল হক ০৬/১১/২০১৩ভাল লাগলো ১ম পর্ব, পরেরটার অপেক্ষায় রইলাম।
-
אולי כולנו טועים ০৬/১১/২০১৩প্রথম পর্বটি মন ছুয়ে গেল......
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। -
দীপঙ্কর বেরা ০৬/১১/২০১৩ধারাবাহিক গল্প । বেশ আন্তরিক ভাবনা । ভাল লাগল । তারপর ......।
-
suman ০৬/১১/২০১৩চমতকারভাবে এগিয়ে চলেছে ...অপেক্ষায় আছি দারুণ ঔত্সুক্য নিয়ে...
-
নাজমুন নাহার ০৬/১১/২০১৩চলুক ।ভাল লাগছে ।
-
Înšigniã Āvî ০৬/১১/২০১৩chomotkaar....
ovigyota bole mone holo