www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

টেলিভিশন

বাংলা চলচ্চিত্র দেখা হয়না সেভাবে অনেক দিন। যদিও ভালো চলচ্চিত্র হলে না দেখে পারি না। সেই বাসনা নিয়ে ই মুস্তাফা সরওয়ার ফারুকী র "টেলিভিশন "ছবিটি দেখলাম। খুবই আগ্রহ ছিলো ছবিটির প্রতি। কিন্তু ছবিটি দেখার পর কেন জানি হতাশ হলাম। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রথমত." টেলিভিশন " চলচ্চিত্র হলেও এর সব কলাকুশলীই ছিলো  টেলিভিশনের। যদিও তাদের প্রত্যেকের অভিনয় জ্ঞান চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী থেকে অনেক বেশী। তারপরও চলচ্চিত্র বলে কথা। যাক ছবিটি একটা থিমের উপর চিত্রায়িত। তা হলো একটি দ্বীপ বিশিষ্ট এলাকায় টেলিভিশন নিষিদ্ধ নিয়ে। ঐ এলাকার চেয়ারম্যান খুবই দ্বীন দার মানুষ। অর্থাৎ রক্ষনশীল ইসলামী মনোভাব সম্পন্ন। যা পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন। চলচ্চিত্রে একটি প্রেমের কাহিনী সন্নিবেশ করেছেন পরিচালক। যা আমার কাছে খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে। কেননা পরিচালক এখানে একটি ত্রিভুজ প্রেম দেখাতে চেয়েছেন। প্রেম হয় এখানে চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে গ্রামের একটা মেয়ের। চেয়ারম্যানের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী। তার সাথে সবসময় ছায়ার মতো লেগে থেকে কাজ কর্ম বুদ্ধি পরামর্শ দেয় মোশারফ করিম। ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন তিশা। চঞ্চল যদিও প্রেমিক কিন্তু সব কাজ ই করে মোশারফ। এদিকে মোশারফ করিম ও মনে তিশা কে ভালবাসে। এবং প্রকাশও করে। তবে সে এর বিনিময় চায় না। শুধুমাত্র এক তরফা ভালবেসে যায় সে। কিন্তু সুযোগ পেলেই তার ভালবাসার কথা ভালো লাগার কথা দ্বিধা করে না। মোটামুটি একেবারে সস্তা কাহিনী। ঐ গ্রামে যুবক ছেলে মোবাইল ব্যবহার করতে পারে না। মেয়েরা তো অবশ্যই না। কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। কারণ চেয়ারম্যান সাহেব মনে করে যে কম্পিউটার শুধু ছাপা মেশিন। যাক বাংলাদেশে কোন কুটিল চরিত্রের মা ছাড়া কোন মা ই মেয়েকে প্রকাশ্যে প্রেম করতে দিবে না আমি মনে করি। কিন্তু এই ছবিতে দেখানো হয়েছে মা মেয়েকে সর্বাত্মক ভাবে সাহায্য করছে চেয়ারম্যানের পয়সা অলা ছেলের সাথে প্রেম করতে। যদিও প্রথম দিকে দেখানো হয়েছে তারা দুজনই চুরি করে স্টিডিওতে দেখা করছে যেখানে সাথে মা ও ছিলো। আর পরবর্তীতে দেখানো হয়েছে মেয়ের প্রেমিক মেয়ের জন্য এটা সেটা পাঠাচ্ছে।কিন্তু প্রেমিকার জন্য মোবাইল পাঠিয়েছে গোপনে। এমনকি কথা ও হচ্ছে গোপনে। যাক প্রেম যখন গভীর হয় তখন প্রচুর টাকা খরচ করে মেয়ে ল্যাপটপ কিনে স্কাইপিতে কথা বলার জন্য। কাহিনীতে কত অসংগতি। মেয়ে রাত জেগে জেগে তার প্রেমিকের সাথে কথা বলছে আর মা জেনে শুনে কিছুই বলছে না এমনটা কি হয়। আমাদের দেশে এমন মা আশা করি জন্ম নেয় নাই। কিন্তু পরিচালক তা আমাদের দেখিয়েছেন। এমনকি এক পর্যায়ে যখন তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয় তখনো মা বলছে কান্না কাটি না করে তাকে ভুলে যা। এটা কি ধরনের মায়ের চরিত্র পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন তিনি ই ভালো বলতে পারবেন।তিশা সবকিছুই জানেন কিন্তু এটা জানেন না যে টিভি র যেকোন অনুষ্ঠান নেটে অনায়াসে দেখা যায়। কেননা  ঐ এলাকায় মুসলমানদের টিভি দেখা নিষিদ্ধ। কিন্তু এক হিন্দু মাষ্টার টিভি নিয়ে এসেছে। ঐ হিন্দু মাষ্টারকে বলা হয়েছে কোন মুসলমান যেন তোমার এখানে টিভি দেখতে না পারে। দেখলে উভয়েরই কঠিন শাস্তি। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে তিশা সপ্তাহে একদিন যায় একটি অনুষ্ঠান দেখার জন্য। এবং একদিন ধরা খায়। যার ঘরে পুরো বিশ্ব সে কিনা টিভি দেখতে যায় অন্যের ঘরে। আমার কাছে এই প্রেম কাহিনী সমৃদ্ধ ছবিটি একটি টেলিফ্লিম হতে পারত। কিন্তু ফ্লিম হিসেবে মানা যায় না। যাক পরিচালক আসলে যে বিষয় টা উপজীব্য করে ছবিটি বানিয়েছেন তা হলো ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি কে কটাক্ষ করে। তিনি চেয়ারম্যান চরিত্রের মাধ্যমে তথাকথিত ইসলামী রক্ষনশীলতা তুলে আনতে চেয়েছেন। টেলিভিশন বর্তমান যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া। ইসলাম গান বাজনা বেহায়াপনা উলঙ্গপনা সমর্থন করে না। তাই ইসলামে এইসব সম্পূর্ণ  হারাম। যাক পরিচালক শুধু টেলিভিশনের একটি ভালো দিক দেখিয়েছেন। তা হলো টেলিভিশনে হজ্বের অনুষ্ঠানাদি দেখা। চেয়ারম্যান সাহেব দালালদের খপ্পরে পরে হজ্বে যেতে পারেনি। তাই তিনি হোটেলে পরে ছিলেন ঢাকায়। যেদিন হজ্ব ঐদিন দেখেন পাশের রুমে টিভিতে হজ্ব দেখাচ্ছে। তিনি ও টিভি জোগাড় করে হজ্ব দেখছেন। এবং সেই সাথে কান্না করছেন। শুধু এই একটি কারণে টিভি বৈধ হয়ে যাবে না। টেলিভিশন বৈধ হওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে তা পরিচালক এড়িয়ে গেছেন। এখানে কোন সমাধান দেখানো হয়নি। তবে ছবিটি পশ্চিমা বিশ্বে ব্যপক জনপ্রিয়তা পাবে। কেননা এটা ইসলামকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পরিচালক ছবিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই পরিচালকের আর অন্য ছবির মতো এটি দেশে জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করি না
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পল্লব ০৭/১১/২০১৩
    ছবিটি দেখিনি, তাই এসম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে মজার ব্যপার হলো যেই পশ্চিমা সমাজ ধর্মের নিরপেক্ষতার (কিংবা উপেক্ষতার) জোর প্রচার চালিয়ে যায়, তাদের মধ্যেও ধর্মীয় রক্ষণশীল অনেকেই আছে। আর সেজন্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও, যেখানে নারী স্বাধীনতার নামে নারীরা চাইলেই অর্ধ উলঙ্গ হয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারে, সেখানে এতো শত বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়নি।
    • সেটাই।ওরা নারী স্বাধীনতা বলতে উলঙ্গপনা বুঝে।নারীদের রাস্তায় ঠেলে দেয়।আর এর সুযোগ গ্রহণ করে পুরুষ গুলো।বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হবে।ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণ পূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
  • একদম ঠিক বলেছেন আপনি। আমার ও তাই মনে হয়েছে। আসলে ইদানিং আমি দেখেছি রাজনীতিতে ইসলামের কথা বললে ধর্ম ব্যাবসা বলে চিল্লাফাল্লা করে সবাই আর যারা এরকম চিল্লায় তারাই আসল ধর্ম ব্যাবসায়ী। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করা এখন খুবই ভাল ব্যাবসা হয়ে দাড়িয়েছে। আপনি ফেইস্‌বুক ব্লগ ইত্যাদিতে ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে যান সেলিব্রিটি হতে বড়জোড় একমাস লাগবে। এমনকি যদি চটি লেখক ও হয়।
    • একবারে সত্য বলেছেন আপনি দাদা ভাই।এখন আমাদের দেশে যা হচ্ছে সবই ধর্ম নিয়ে নিজের ফায়দা।ধর্ম কে ব্যবহার করে চলছে রাজনীতি থেকে শুরু করে পেট নীতি।
  • আহমাদ সাজিদ ০৫/১১/২০১৩
    ছবিটা দেখিছি, মোটামুটি লেগেছে নির্মাণশৈলির কারণে। কেননা বর্তমানে মুলস্রোতের সিনেমাগুলোর নির্মাণকরিগরের জোড়াতালির তুলনায় ভাল বলে। মেয়ের প্রেমে মায়ের সম্মতি বা মায়েদের সহযোগিতা বাস্তব সম্মত। আমার শুধু একটি বিষয়ে খটকা, তাহলো- কম্পিউটারে কথা বলা email eeekইমেইল বা স্কাইপি যা হোক না কেন?
    এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের সূবিধা পাওয়াই দূসাধ্য। তারউপর স্কাইপিতে কথা বলা। আমি ঢাকার অদূরে থেকেই টেলিফোন কোম্পানীর নেট দিয়ে ভাল নেট সেবা পাচ্ছি না। ইউটিউব তো দেখতেই পারি না।
    তাছাড়া ধার্মিকতা নিয়ে বিষয়গুলো আমার কাছে ভাল লাগে নি।
    আপনাকে ধন্যবাদ্
    যারা দেখন নি, তারা ইউটিউবে দেখতে পারেন-
    http://www.youtube.com/watch?v=LMILmfdoFuU
  • প্রবাসী পাঠক ০৫/১১/২০১৩
    এখন ছবিটা দেখিনি । আপনার রিভিউটা পরে ছবিটা সম্পর্কে জানতে পারলাম । দেখি সময় করে দেখতে হবে । লেখাটা ভাল লেগেছে ।
    আপনার লেখা পরে যতটুকু ধারনা হচ্ছে ফারুকি নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস উপহার দিয়েছেন ।
  • মীর শওকত ০৫/১১/২০১৩
    এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন যে ছবিটা দেখার আগ্রহ বেড়ে গেল ।
  • জহির রহমান ০৫/১১/২০১৩
    আমারো দেখার খুব শখ ছিলো। কিন্তু এখন সব উবে গেছে। মনে পড়ছে "থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার"র কথা।
    ধন্যবাদ "টেলিভিশন" রিভিউ লেখার জন্য।
    শুভ কামনা আপনার জন্য।
    • আপনাকে ও ধন্যবাদ।তবে আমার কথার উপর না দেখে থাকলে ভুল হবে।হয়তো আমার ও আপনার দৃষ্টি ভঙ্গি এক নাও হতে পারে।তাই বলছি সময় হলে দেখুন না।ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
      • জহির রহমান ০৫/১১/২০১৩
        যখন সময় থাকে তখন যদি হাতের কাছে থাকে তবে দেখবো...
  • ইসমাত ইয়াসমিন ০৫/১১/২০১৩
    ভাই ছবিটা এখন ও দেখিনি, কিন্তু আপনি এত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন যে দেখা হয়ে গেল। সময় করে এক সময় দেখব তার পরে ও । শুভকামনা রইল।
    • সত্যিই কি তাই? আমি তো ভেবেছিলাম খুবই বাজে একটা লেখা লিখলাম।কেননা এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছিল।আপনাদের ভালো লেগেছে শুনে সত্যিই খুব আনন্দ পাচ্ছি।খুবই খুশি হলাম।ধন্যবাদ।
 
Quantcast