www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মিতুর নিঃসঙ্গতা

পৃথিবীড়া যে একটি সন্তানের বেঁচে থাকা কত যে কষ্টকর তা মিতুকে না দেখলে বুঝাই যাবে না। খুব অল্প বয়সে সে মাতৃহারা হয় এই ধরনীতে।এরপর থেকেই ও বড় হতে থাকে ওর বাবার কাছে। খুবই ভালো একজন মানুষ ওর বাবা। স্ত্রী বিয়োগের পর সন্তানের কথা ভেবে আর বিয়েই করেননি তিনি। উনি একজন আইনজীবী। খুব অল্প সময়ে তিনি নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। তাই নিজ পেশার কথা চিন্তা করে তিনি, মেয়ের জন্য একজনকে রাখলেন দেখা শুনার জন্য। মধ্যবয়সী ঐ লোকটির নাম মজিদ। অবশ্য মিতু ওনাকে ডাকে পেটুক মজিদ। কেননা মিতুর জন্য বরাদ্দ কৃত সব খাবার  ঐ ই বেশিরভাগ চেটে শেষ করে ফেলে। এটা নিয়ে অবশ্য মিতুর কোন সমস্যা নেই অভিযোগ ও নেই। এক দিক থেকে ভালোই হয়েছে, এতো এতো গাদা গাদা খাবার ফল মূল দুধ ডিম তার মোটেই পছন্দ নয়। তবে ওযে খাবার খেয়ে ফেলে সেটাকে মিতু তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। মিতুর সব আবদার তার অনিইচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হয়। ছোট্ট মেয়ে মিতুকে তার বাবা প্রচন্ড ভালবাসে। তার কোন আবদার ই ফেলে দেননা তিনি। মোটামুটি মেয়ের জন্য কোন অভাবই তিনি রাখেননি। যখন যা চাই তাই ই দিতে চেষ্টা করেছেন। মিতু এবার ক্লাস থ্রি তে উঠেছে। পড়াশোনায় মোটামুটি। অতিরিক্ত ভালো না আবার অতিরিক্ত খারাপ ও না। এককথায় মধ্যম মানের। তবে সবার কাছে প্রিয়। তারপর ও কিছু সমস্যা তো আছেই। যেমন ঘরদোর অগোছালো রাখা। ঠিকমতো না খাওয়া, না ঘুমানো। মোটামুটি একধরনের উদাসী একটা ভাব তার চরিত্রে রয়েছে। আর সবকিছুই মোটামুটি চলনসই।  তার আচার ব্যবহার খুবই ভালো অন্য দের চাইতে।   এতো সব কিছুর পরেও মিতুর সমসময় এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে। আর সেটা হলো হৃদয়ের গহিন থেকে কোন ভালবাসা। একেবারে নীবিড় এক ভালবাসা, মায়া, প্রেম। যা সে প্রতিনিয়ত অনুভব করে। এমন এক ভালবাসা  যা উভয়কে এক বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখবে। প্রতি দিন সকালে স্কুল দুপুরে ঘুমানো বিকেলে শিক্ষকের কাছে পড়া, এই তার এক মায়াহীন জীবনে পরিনত হয়েছে। সকলের নাস্তায় প্রায়ই মিতু জিজ্ঞেস করে মজিদকে -

আচ্ছা পেটুক মজিদ বলোতো,  মানুষ মারা যাওয়ার পর কোথায় যায়?

পেটুক মজিদ মিতুর জন্য আনা ডিম পোস্ট আর পাউরুটি খেতে খেতে বলে
- আরে আফা মানুষ মইরা গেলে হে ভুত অইয়া যায়।

- ছিঃ তোমাকে কে বলেছে মানুষ মরলে ভুত হয়। তুমি কিছুই জান না। জান শুধু খেতে আর পচা কথা বলতে।
আমার স্কুলের আপা বলেছে যে,,মানুষ মারা গেলে ঐ আকাশের তাঁরা হয়ে যায়। যে তাকে বেশী ভালবাসে সে তার কাছাকাছি এসে দেখা দেয়। তুমি দেখ না সন্ধ্যায় কত তাঁরা জ্বলে উঠে আকাশে।

মজিদ ডিম আর পাউরুটির টুকরো মিতুর মুখে পুরে দিয়ে বলে

-হহইছে হইছে এইবার ল খাও। পরে তো কইবা সব আমি ই খাইছি। হারা বছর হুনচি মানুষ মইরা ভুত অয় আর এই পিচকি কয় কিনা তাঁরা অয়। যতসব ফাউল কথা।

- এই শুনো, আজেবাজে কথা বলবা না। তুমি কি জান? তুমি কি লেখাপড়া করছ? আমার ম্যাডাম বলে যে যারা মারা যায় তারা সৃষ্টি কর্তার কাছাকাছি চলে যায়। আর সন্ধ্যায় উনারা তাঁরা হয়ে তাদের আপনজনদের কাছে দেখা দেয়।

এবার মজিদ নাস্তার  কিছুটা মিতুর মুখে আর কিছুটা নিজের মুখে দিয়েই বলে

- ওরে আমার বহুত জ্ঞানী বেটি। তই তোমার মরা মাইনষেরা রাইতকা আয়া কি করে? হেগো কাম কি?

মিতু এক ঢোক পানি খেয়ে বলে

- আমার ম্যাডাম বলেছে যে, যদি কারো মা বাবা সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যায়। আর তারা যদি তাদের সন্তানকে খুব ভালবাসে তবে সন্তানের মঙলের জন্য তারা সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে।  যেন তাদের সন্তানদের ভালো ইচ্ছা গুলো যেন পূরণ হয়।

-আরে কি হাগলের মতো কথা।  মরা মাইনষে কি এইসব পাইরবো?

এবার খুবই নিচু গলায় মজিদ জিজ্ঞেস করে
- আইচ্ছা  তুমি কি মনে মনে কোন ইচ্ছা করছ যা তোমার মায়ে পূরণ করতে পাইরবো।

-হ্যাঁ আমিও মনে মনে একটা ইচ্ছা করেছি, তবে তোমাকে বলব না।

-না কইলে কইবা না। আমার কি লাভ তুমার কতা হুইন্যা।

এবার মজিদ তাড়াহুড়ো করে মিতুকে স্কুলে তৈরি করার জন্য
- হইছে হইছে বহুত পাকনা পাকনা কথা কইছো। এইবার আমারে শান্তি দেও। সবকিছু গোছাইয়া লও স্কুলের টাইম হইগেছে।

এটাই হচ্ছে মিতুর নিয়মিত জীবন। একজন গৃহভৃত্যের কাছে বড় হওয়া। তার কাছে সবকিছু বলা। এভাবেই চলে তার জীবন। যদিও বাবা ওকে ভালবাসে। খোঁজখবর নেয়। তবুও তো বাবা সবকিছু বলা যায় না। কেন জানি একধরনের অস্বস্তি লাগে। যেন তাদের একে অপরের দূরত্ব অনেক।

স্কুল থেকে ফিরেই গদগদ করে খাবার খেতে হয় মজিদকে সাথে নিয়ে। দুপুরে বাবা বাসায় থাকে না উনি আসেন বিকেলে। দুপুরের খাবার খেয়েই জোর করে ঘুমাতে হয় তাকে। এরপর যথাসময়ে উঠা। টিউটর আসেন। পড়ান চলে যান। মাষ্টার টা একেবারেই কাঠখোট্টা। কেমন জানি। পড়া বাদে যেন কিছুই জানেন না। একবার পড়ার ফাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল
-আচ্ছা স্যার মানুষের মৃত্যুর পর কি হয়?

স্যার চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলে
-এতো ছোট বাচ্চা, এই সব আজেবাজে চিন্তা মাথায় কেন আসে? এসব কখনো জিজ্ঞেস করবে না। পড়তে বসেছ পড়া নিয়ে ভাব। কে মরে কোথায় গেলো ঐসব চিন্তা আমাদের নয় রাইট।

-ইয়েস স্যার রাইট।

বাকি
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৭১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আসলেই অনেকের জীবনই এরকম নীরসভাবে চলে যায় আইডিয়াটা দারুন। ভাল হয়েছে আপনার গল্প বাকীটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে প্রতি পর্বে আরো বেশি কৌতুহল রাখলে মনে হয় ভাল হয় আমি গল্প লিখিনা পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।
    • কিন্তু ভাইয়া আমি ভালো গল্প লিখতে পারি না।তারুণ্যেই আমার গল্পের হাতেখড়ি।জীবনে প্রথম গল্প লিখতে শুরু করলাম।বাকিটুকু আপনাদের উপর।ধন্যবাদ ভালবাসা অহর্নিশ।
      • আমার কাছে কিন্তু লেখা বেশ লেগেছে। আপনার লেখার হাত ভালো
  • אולי כולנו טועים ০৪/১১/২০১৩
    দারুন এগুচ্ছে, গল্পের হাতটি বেশ আপনার।
  • প্রবাসী পাঠক ০৪/১১/২০১৩
    পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম ...............
  • suman ০৪/১১/২০১৩
    খুব ভালো একটা story এগিয়ে চলেছে ...অপেক্ষায় রইলাম ...
    • অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য।আশাকরি এভাবেই সবসময় পাশে থাকবেন।অফুরন্ত ভালবাসা ও শুভকামনা আপনার জন্য।
  • সায়েম খান ০৪/১১/২০১৩
    এটা কি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে? শেষ দেখতে চাই।
    • ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।কিন্তু এটি অনেক বড়।মিতুর নিঃসঙ্গতা একটি পর্ব।কিন্তু পুরো পর্ব টি আসে নাই।তাই অর্ধেক দিতে হলো।এটি তিন পর্বের হবে আশাকরি।কিন্তু হয়তো করতে হবে ছয় পর্ব।খুবই খুবই খুশি হলাম আগ্রহ দেখে।ধন্যবাদ আশাকরি সবসময় সাথে থাকবেন।শুভকামনা রইল
  • Înšigniã Āvî ০৪/১১/২০১৩
    mon chuye gelo
    • এইরকম একটি সাধারণ লেখা যে আপনার পছন্দ হলো, এতেই আমি ধন্য।খুব ভালো লাগলো আপনার অভিমতে।শুভকামনা সবসময়।
      • Înšigniã Āvî ০৪/১১/২০১৩
        আমিও তো সাধারণ
 
Quantcast