একজন জয়নালের গল্প
খুবই উসখুস চুলের বিবর্ণ চেহারার একটা ছেলে। যদিও চেহারায় যথেষ্ট মায়া রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ উপবাস ছিন্ন বস্ত্রে তার সেই মায়াবী ভাব টা উবে গেছে। বয়স আর কতই হবে, এই বার তের। যার এই বয়সে থাকার কথা কাধে স্কুলব্যাগ সেই বয়সে তাকে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় নামতে হয়েছে পথে। কোথাও কোন ঠিকানা জানা নেই তার ঠাঁইয়ের। তাই নিয়তি কে সাথে নিয়েই রাস্তায় আজ। বেশ ক জায়গায় চেয়েছে কিছু কাজ করে খেতে। কিন্তু তার জীর্ণ অবস্থা দেখে কেউ কোন কাজ দিতে চায়নি। আর করবেও কি সে। যাক পথ চলতে চলতে সে এসে থেমেছে একটা হোটেলের সামনে। প্রচন্ড পিপাসায় সে গেল পানি খেতে। পানি খেল। একটু চেয়ারে বসে জিরোতে চাইল মন। মন খুবই ভারাক্রান্ত সেই সাথে ক্ষুধার্ত। হঠাৎই একটি হাত পড়ল তার কাঁধে
- কিরে করছ কি? থাকছ কোনায়?
-জ্বী! কোথাও থাকি না।
-কোথাও থাকছ না মানে কি? তরে তো সন্দ হইতাছে। বাড়ি কই?
-জ্বী, বাড়ি ছিলো এহন নাই। গাঙগে ভাইসা গেছে।
-ও তইলে গাঙগে সব নিয়া গেছে। যাউক এহন কি করছ এইহানে? কিয়ের লাইগ্গা ঘুরছ.?
-জ্বী...কি করমু। কামের লাইইগ্গা আইছি। কিন্তু কোন কাম পাইনা।
এতোক্ষনে লোকটির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। চোখে এক ধরনের নেশার ছোঁয়া লেগে গেলো। লোকটির পরিচয় তিনি এই হোটেলের মালিক। খুবই আন্তরিক ভাবে এখন ছেলেটির সাথে কথা বলছে। খুব হাসি হাসি ভাব। হোটেল মালিকের হাসি হাসি ভাব দেখে হোটেলের অন্য কর্মচারীরা একটু হতাশ হলো বটে। তারা জানে এই হাসির রহস্য। কিন্তু নতুন আগুন্তক তো তা জানে না।
-তই তুর নাম কি?
-জে আমার নাম জয়নাল।
-বাহ্ বরই সোন্দর নাম। তই এহন কাম দিলে কাম করবি?
-কি যে কন চাচা, কাম খুইজা কাম পাইনা। আফনে কাম দিলে ক্যান করুমনা।
-তইলে তো হইয়া গেছে। তয় তুই আমারে চাচা ডাকবি না দাদা ডাকবি। এইবার যা ভিতরে গিয়া গোসল কর হের পর খানা খা। রেষ্ট ল। ঐ মজিদত্যা এই পোলারে কাফর দে।
মজিদ এই হোটেলে অনেক দিন যাবত আছে। অনেক কে দেখেছে এই হোটেলে আসতে যেতে। সে,খুবই বিষন্ন। কিন্তু কেন?
জয়নাল খুবই খুশি। তার খুবই ভালো লাগলো দাদার ব্যবহার। সে ভালো ভাবে গোসল করে কাপড় চোপড় গায়ে দিয়ে আচ্ছা মতো খেল। এরপর দিল ভালো একটা ঘুম। অবশ্য হোটেলে রুম থাকার কথা না। কারণ রাত্রে তো সবাই ফ্লোরেই ঘুমায়। কিন্তু এই হোটেলে আলাদা একটা রুম আছে। বেশিরভাগ সময়ই এটা বন্ধ থাকে। তবে মাঝে মাঝে থাকার মানুষ পাওয়া যায় বলে খোলা হয়। যাক ভালো ই ঘুম দিল জয়নাল। সকালে মজিদের কথায় ঘুম ভাঙলো। খুব ভোর তখন। মজিদ ওকে কাজ দেখিয়ে দিল। জয়নাল কাজে লেগে গেল। সারাদিন ভালো ই গেল জয়নালের। মালিক বেশ ক বার জিজ্ঞেস করেছে কেমন লাগছে। জয়নালের কাছ থেকে ভালো উত্তর পেয়ে তার খুবই ভালো লাগলো। সারাদিন কাজ শেষে সবাই ঘুমাতে যাচ্ছে। সবাই যার যার মতো বিছানা করে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ছে। জয়নাল কে ঘুমাতে বলল ঐ বিশেষ রুমে। জয়নাল কিছুই বুঝতে পারল না কেন তার এত কদর। যাক সে অত কিছু চিন্তার জন্য সময় নিলো না। সারাদিন প্রচন্ড পরিশ্রম হয়েছে। যদিও কাজ ভারী নয়। কিন্তু হঠাৎ করে করার কারণে কেন জানি শরীর ভার ভার লাগছে। তাই অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে সেই মজিদের ডাকে জয়নালের ঘুম ভাঙলো। সবাই খুব উৎসুক চোখে জয়নাল কে দেখছে। যে কিছু একটা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে কিছু একটার আভাস লক্ষ্য করল জয়নাল। কিন্তু সে তেমন পাত্তা দিল না। নিজের কাজে মন দিল। এদিকে মালিক ও দেখল জয়নাল ভালো ই কাজ করছে মন দিয়ে। তার মানে এখন পর্যন্ত সব ঠিক। এভাবে কয়েক দিন গেল। প্রতি দিন সকালে সবার মুখে যে কিছুর আভাস থাকতো তা জয়নালের স্বাভাবিক আচরণে ধীরে ধীরে তা মিশে গেল। প্রায় সপ্তাহ খানেক পর জয়নালের রুমে আবির্ভাব হলো তার মালিক। খুব স্বাভাবিকভাবেই মালিক তার সাথে এক বিছানায় চলে আসলো। এবং এর পরবর্তী কর্মকাণ্ডে জয়নালের বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন তার এই চাকরি। কেন ই বা তার এতো কদর। আর কেনইবা প্রতি সকালে অন্যদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। এবং এটাই একটি করুন বাস্তবতা আমাদের সমাজের। এভাবেই অনেক শিশু বালককে জীবন যাপন করতে হয়। আর সামলাতে না পারলে নিজেকে নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্যে পথ চলতে হয়। আর এভাবেই অনেকে হারিয়ে যায়। অনেকে নিজেকেই হারিয়ে ফেলে
- কিরে করছ কি? থাকছ কোনায়?
-জ্বী! কোথাও থাকি না।
-কোথাও থাকছ না মানে কি? তরে তো সন্দ হইতাছে। বাড়ি কই?
-জ্বী, বাড়ি ছিলো এহন নাই। গাঙগে ভাইসা গেছে।
-ও তইলে গাঙগে সব নিয়া গেছে। যাউক এহন কি করছ এইহানে? কিয়ের লাইগ্গা ঘুরছ.?
-জ্বী...কি করমু। কামের লাইইগ্গা আইছি। কিন্তু কোন কাম পাইনা।
এতোক্ষনে লোকটির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। চোখে এক ধরনের নেশার ছোঁয়া লেগে গেলো। লোকটির পরিচয় তিনি এই হোটেলের মালিক। খুবই আন্তরিক ভাবে এখন ছেলেটির সাথে কথা বলছে। খুব হাসি হাসি ভাব। হোটেল মালিকের হাসি হাসি ভাব দেখে হোটেলের অন্য কর্মচারীরা একটু হতাশ হলো বটে। তারা জানে এই হাসির রহস্য। কিন্তু নতুন আগুন্তক তো তা জানে না।
-তই তুর নাম কি?
-জে আমার নাম জয়নাল।
-বাহ্ বরই সোন্দর নাম। তই এহন কাম দিলে কাম করবি?
-কি যে কন চাচা, কাম খুইজা কাম পাইনা। আফনে কাম দিলে ক্যান করুমনা।
-তইলে তো হইয়া গেছে। তয় তুই আমারে চাচা ডাকবি না দাদা ডাকবি। এইবার যা ভিতরে গিয়া গোসল কর হের পর খানা খা। রেষ্ট ল। ঐ মজিদত্যা এই পোলারে কাফর দে।
মজিদ এই হোটেলে অনেক দিন যাবত আছে। অনেক কে দেখেছে এই হোটেলে আসতে যেতে। সে,খুবই বিষন্ন। কিন্তু কেন?
জয়নাল খুবই খুশি। তার খুবই ভালো লাগলো দাদার ব্যবহার। সে ভালো ভাবে গোসল করে কাপড় চোপড় গায়ে দিয়ে আচ্ছা মতো খেল। এরপর দিল ভালো একটা ঘুম। অবশ্য হোটেলে রুম থাকার কথা না। কারণ রাত্রে তো সবাই ফ্লোরেই ঘুমায়। কিন্তু এই হোটেলে আলাদা একটা রুম আছে। বেশিরভাগ সময়ই এটা বন্ধ থাকে। তবে মাঝে মাঝে থাকার মানুষ পাওয়া যায় বলে খোলা হয়। যাক ভালো ই ঘুম দিল জয়নাল। সকালে মজিদের কথায় ঘুম ভাঙলো। খুব ভোর তখন। মজিদ ওকে কাজ দেখিয়ে দিল। জয়নাল কাজে লেগে গেল। সারাদিন ভালো ই গেল জয়নালের। মালিক বেশ ক বার জিজ্ঞেস করেছে কেমন লাগছে। জয়নালের কাছ থেকে ভালো উত্তর পেয়ে তার খুবই ভালো লাগলো। সারাদিন কাজ শেষে সবাই ঘুমাতে যাচ্ছে। সবাই যার যার মতো বিছানা করে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ছে। জয়নাল কে ঘুমাতে বলল ঐ বিশেষ রুমে। জয়নাল কিছুই বুঝতে পারল না কেন তার এত কদর। যাক সে অত কিছু চিন্তার জন্য সময় নিলো না। সারাদিন প্রচন্ড পরিশ্রম হয়েছে। যদিও কাজ ভারী নয়। কিন্তু হঠাৎ করে করার কারণে কেন জানি শরীর ভার ভার লাগছে। তাই অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে সেই মজিদের ডাকে জয়নালের ঘুম ভাঙলো। সবাই খুব উৎসুক চোখে জয়নাল কে দেখছে। যে কিছু একটা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে কিছু একটার আভাস লক্ষ্য করল জয়নাল। কিন্তু সে তেমন পাত্তা দিল না। নিজের কাজে মন দিল। এদিকে মালিক ও দেখল জয়নাল ভালো ই কাজ করছে মন দিয়ে। তার মানে এখন পর্যন্ত সব ঠিক। এভাবে কয়েক দিন গেল। প্রতি দিন সকালে সবার মুখে যে কিছুর আভাস থাকতো তা জয়নালের স্বাভাবিক আচরণে ধীরে ধীরে তা মিশে গেল। প্রায় সপ্তাহ খানেক পর জয়নালের রুমে আবির্ভাব হলো তার মালিক। খুব স্বাভাবিকভাবেই মালিক তার সাথে এক বিছানায় চলে আসলো। এবং এর পরবর্তী কর্মকাণ্ডে জয়নালের বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন তার এই চাকরি। কেন ই বা তার এতো কদর। আর কেনইবা প্রতি সকালে অন্যদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। এবং এটাই একটি করুন বাস্তবতা আমাদের সমাজের। এভাবেই অনেক শিশু বালককে জীবন যাপন করতে হয়। আর সামলাতে না পারলে নিজেকে নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্যে পথ চলতে হয়। আর এভাবেই অনেকে হারিয়ে যায়। অনেকে নিজেকেই হারিয়ে ফেলে
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০২/১১/২০১৩আর এভাবেই তৈরী হয় আরো চাচা দাদারা, আর তারা তৈরী করে এরকম আরো জয়নাল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে না পারলে আমাদের সমাজ ও আস্তে আস্তে ধংস হয়ে যাবে।
-
জহির রহমান ০২/১১/২০১৩আপনার আজকের আয়োজনটা অসাধারণ। অসাধারণ একটা গল্প লিখছেন ভাইয়া।
-
মীর শওকত ০২/১১/২০১৩অসাধারণ লিখনী । সমাজকে কলুষমুক্ত করতে এরকম লিখনী আরও প্রয়োজন । আশা করি আপনার দক্ষ হাতের লিখনীতে এই সমাজটাকে গড়ে তুলবেন অসীম মমতায় । অনেক ভালবাসা জানবেন ।
-
ইসমাত ইয়াসমিন ০২/১১/২০১৩ভাল লাগল...।
-
אולי כולנו טועים ০২/১১/২০১৩kobitar por abar golpoteo aki
vabe futiye tullen bastober nongra dikti.
khub sundor likechen. suveccha roilo. -
সহিদুল হক ০২/১১/২০১৩বাস্তবের একটা কদর্য দিক খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে গল্পটিতে।আমাদের সমাজে বেশ কিছু মুখোশধারী পয়সা-ওয়ালা মানুষ আছে যারা অসহায় মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে নিজেদের বিকৃত কামনা পূরণ করে ছলেছে।তাদের মুখোশ খোলা একটা সামাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।তুমি সে দায়িত্বটা পালন করলে সার্থকভাবে। এজন্য তোমাকে আন্তরিক অভিনন্দন।