বখাটে ছেলেটি
গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে নিলুদের বাড়ি। নিলু সূম্পুরণ বখাটে। আসুলে সে বখাটে কি না জানা নেই। তবে তাকে সবাই বখাটে বলেই ডাকে। এ বাড়ি ও বাড়ির গাছ থেকে পাকা আম জাম চুরি করে খায়। এই কারণে গাছের মালিকের কত গালি তাকে সইতে হয়। সে কিছু মনে করে না। কিন্তু তার মায়ের বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যায়। কি করবে অভাবের সংসার। ছেলেকে ঠিক মত খাওয়াতে পড়াতে পারে না। তাই সে মুখ বুঝে বুক ফাটিয়ে বসে রয় চুপটি করে।
এখন আম জামের সময় নয়। চলছে হেমন্তকাল। তাই সে ঠিক মত ফল খেতে পারে না। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সব দেশেও ফলতো গ্রীষ্মকালে পাকে। তাই সে হা করে গাছের দিকে তাকিয়ে রয়। আবার কবে গাছ ভরে ফল ধরবে। চুপটি করে পেরে এনে খাবে?
ও বাড়ির জাবেদের বোন আপেল খেতে খেতে যাচ্ছে। সাথে তার আব্বুও যাচ্ছে। জাবেদ দৌড়ে এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, আব্বু আব্বু আমাকে কেক কিনে দাও। নিকটেই দোকান ছিল। কেক নেওয়ার পর বলল, আব্বু এটাতে হবে না। আমার সন্দেশ চাই। আব্বু পকেট থেকে মানি ব্যাকটা বের করতে করতে বলল, আচ্ছা নিয়ে নাও।
বখাটে ছেলেটি সে দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর তারা যখন চলে যেতে লাগল, বখাটে ছেলেটি মন ভার করে একটা মাটির ঢিলা নিয়ে ঢিল ছুড়ে মারল। কোথায় গেল সে জানে না। পাশের বাড়ির বুড়ি এসে দমক দিয়ে বলল, তুই আবার এসেছিস? ভরদুপুরে চালে ঢিল মারিস কেন? যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। ও তোদের তো বাড়িও নাই। থাকিস রহিমের বাঁশঝাড়ে ঘর তুলে। যা সেখানে যা। এত জালাস কেনো? ভাল ভাবে থাকতে মন চায় না। নাকি?
বখাটে ছেলেটি কিছু বলল না। কারণ সে জানে, একটা কথার জবাব দিলে হাজারটা শুনতে হবে। তাই সে চুপচাপ চলে গেল অন্য পথে।
তার ঠিক মত খাবার জোটে না। এক দু'মুঠো খেতে পারলেই খুশি। এক মুঠো ভাতের আশায় অন্যের ধানের বস্তা ধরে রাখে। অথচ বস্তা ধানে ভরা হলে- লোকে বলে তোর তো নোংরা অভ্যাস। সারা শরীরে মাটি। এখান থেকে যা আরো ধূলা লাগবে। তখন সে বুঝতে পারে -এখানে কাজ হবে না। চলে যায় অন্য খানে।
কারো ধানে পা দেয়। লোকে বলে তোর পা দেয়া হচ্ছে না। যা এখান থেকে। বখাটে ছেলেটি করুন চাহনী নিয়ে বলে, না আমি পারি তো। এই দেখেন আমি পারি তো?
আসুলে কেউ বুঝতে চায় না, ছেলেটি কেনো কাজ করতে আগ্রহী।
সেখান থেকে চলে যায় নদীর ঘাটে। জেলেরা জাল টেনে ডাঙায় তুলল। প্রচুর মাছ উঠেছে। জংগল ফেলে দিচ্ছে শুকনায়, সেখানে দু'একটা মাছ যাচ্ছে। বখাটে ছেলেটি একটা ঠোংগা নিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট মাছ ধরতে লাগল। কোন এক জেলের ছেলে এসে মাছের ঠোংগা কেড়ে নিয়ে বলল, যা এখান থেকে। এগুলো আমাদের মাছ না? তুই নিস কেনো?
বখটে ছেলেটি তখন সাহস করে বলে উঠল - এগুলো তো তোমরা ফেলে দিয়েছো। আমি জংগল থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে নিচ্ছি। তখন জেলের ছেলেটি বলল, আমরা ভাল করে এগুলো আবার দেখবো। তারপর ফেলে দিলে তখন নিস। যা- সর এখন।
বেলা প্রায় দুপুর। বখাটে ছেলেটি গোসল করে ভাবতে লাগল, এখন কোথায় গেলে এক মুঠো ভাত পাওয়া যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে তার মায়ের কথা মনে হল। মায়েও তো না খেয়ে আছে। এতদিন মা এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে কিছু যোগাড় করত। কিন্তু এখনতো তাও পারে না। আমি কি করব। আমি ছোট বলে আমার কাজের মূল্য কেউ দিতে চায় না। আমি এখন কোথায় গেলে দু'জনের দু'মুঠো ভাত পেতে পারি?
তুহিনদের বাড়িতে গেলে কপালে ভাত মিলতে পারে। এখন বোধ হয় তারা সবাই খেতে খেতে বসেছে। যাই যদি এক মুঠো ভাত পাই।
তুহিনরা সবাই বারান্দায় পাটি পেরে খেতে বসেছে। বখাটে ছেলেটি বারান্দার খাম ধরে দাঁড়িয়ে রইল। কেহ তার দিকে খেয়াল করল না। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর চলে গেল অন্য দুয়ারে। সেখানে যাওয়া মাত্রই শুনতে পেল, ওই যে বখাটি টি আসছে। এই ভরদুপুরে খাবার সময় এসে দাঁড়াবে। ওরা কি জানে খাবারের সময় কারও দুয়ারে দাঁড়াতে নেই। আরেকজন বলল, কে শিখাবে ওকে এসব। জীবনে কোন দিন স্কুলের বারান্দায় যেতে পারবে?
তবু বখাটে ছেলেটি না শোনার মত করে দাঁড়িয়ে রইল। তখন বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি তার ভাতের বাটি টি নিয়ে এগিয়ে এল। বলল, ভাত খাবে? বখাটে ছেলেটি ছলছল নয়নে চুপটি করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। ছোট্ট ছেলেটি বলল, ভাত খেতে বললাম, খেলে না। তাহলে আমাদের খাওয়ার সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকছো কেন? বখাটি ছেলেটি কিছু বলতে যাবে - ঠিক তখনই কে একজন বলল, এদিকে আয় খোকা। আর একবার বললে কিন্তু ও সত্যি খাবে। তারপর সবাই হাসতে লাগল।
বখাটে ছেলেটি খুবই লজ্জা পেল। তাই চুপটি করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এল।
মন ভার করে বখাটে ছেলেটি অনেক গুলো সিগারেটের মুতা নিয়ে চলে যায় আড়ালে। মানুষের ধারে ধারে গিয়ে সে জানতে পেরেছে, খুব কষ্ট হলে নাকি সিগারেট খেতে হয়। তাহলে সব কষ্ট গুলো সিগারেটের ধোয়ায় মিশে উড়ে যায়। তাই সে মানুষের ফেলে দেয়া সিগারেটের মুতা গুলোয় আগুন লাগিয়ে জোড়া জোড়ে টানতে লাগল। ধোয়া গুলো উড়িয়ে দিতে লাগল আকাশে। আর মনে মনে বলতে লাগল - যাক কষ্ট গুলো দূরে যাক। কিছুক্ষ্ণ পর ক্লান্ত হয়ে পড়ল। শরীরটা ভার ভার লাগল। তারপর সেথায় ঘুমিয়ে পড়ল।
এখন আম জামের সময় নয়। চলছে হেমন্তকাল। তাই সে ঠিক মত ফল খেতে পারে না। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সব দেশেও ফলতো গ্রীষ্মকালে পাকে। তাই সে হা করে গাছের দিকে তাকিয়ে রয়। আবার কবে গাছ ভরে ফল ধরবে। চুপটি করে পেরে এনে খাবে?
ও বাড়ির জাবেদের বোন আপেল খেতে খেতে যাচ্ছে। সাথে তার আব্বুও যাচ্ছে। জাবেদ দৌড়ে এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, আব্বু আব্বু আমাকে কেক কিনে দাও। নিকটেই দোকান ছিল। কেক নেওয়ার পর বলল, আব্বু এটাতে হবে না। আমার সন্দেশ চাই। আব্বু পকেট থেকে মানি ব্যাকটা বের করতে করতে বলল, আচ্ছা নিয়ে নাও।
বখাটে ছেলেটি সে দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর তারা যখন চলে যেতে লাগল, বখাটে ছেলেটি মন ভার করে একটা মাটির ঢিলা নিয়ে ঢিল ছুড়ে মারল। কোথায় গেল সে জানে না। পাশের বাড়ির বুড়ি এসে দমক দিয়ে বলল, তুই আবার এসেছিস? ভরদুপুরে চালে ঢিল মারিস কেন? যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। ও তোদের তো বাড়িও নাই। থাকিস রহিমের বাঁশঝাড়ে ঘর তুলে। যা সেখানে যা। এত জালাস কেনো? ভাল ভাবে থাকতে মন চায় না। নাকি?
বখাটে ছেলেটি কিছু বলল না। কারণ সে জানে, একটা কথার জবাব দিলে হাজারটা শুনতে হবে। তাই সে চুপচাপ চলে গেল অন্য পথে।
তার ঠিক মত খাবার জোটে না। এক দু'মুঠো খেতে পারলেই খুশি। এক মুঠো ভাতের আশায় অন্যের ধানের বস্তা ধরে রাখে। অথচ বস্তা ধানে ভরা হলে- লোকে বলে তোর তো নোংরা অভ্যাস। সারা শরীরে মাটি। এখান থেকে যা আরো ধূলা লাগবে। তখন সে বুঝতে পারে -এখানে কাজ হবে না। চলে যায় অন্য খানে।
কারো ধানে পা দেয়। লোকে বলে তোর পা দেয়া হচ্ছে না। যা এখান থেকে। বখাটে ছেলেটি করুন চাহনী নিয়ে বলে, না আমি পারি তো। এই দেখেন আমি পারি তো?
আসুলে কেউ বুঝতে চায় না, ছেলেটি কেনো কাজ করতে আগ্রহী।
সেখান থেকে চলে যায় নদীর ঘাটে। জেলেরা জাল টেনে ডাঙায় তুলল। প্রচুর মাছ উঠেছে। জংগল ফেলে দিচ্ছে শুকনায়, সেখানে দু'একটা মাছ যাচ্ছে। বখাটে ছেলেটি একটা ঠোংগা নিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট মাছ ধরতে লাগল। কোন এক জেলের ছেলে এসে মাছের ঠোংগা কেড়ে নিয়ে বলল, যা এখান থেকে। এগুলো আমাদের মাছ না? তুই নিস কেনো?
বখটে ছেলেটি তখন সাহস করে বলে উঠল - এগুলো তো তোমরা ফেলে দিয়েছো। আমি জংগল থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে নিচ্ছি। তখন জেলের ছেলেটি বলল, আমরা ভাল করে এগুলো আবার দেখবো। তারপর ফেলে দিলে তখন নিস। যা- সর এখন।
বেলা প্রায় দুপুর। বখাটে ছেলেটি গোসল করে ভাবতে লাগল, এখন কোথায় গেলে এক মুঠো ভাত পাওয়া যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে তার মায়ের কথা মনে হল। মায়েও তো না খেয়ে আছে। এতদিন মা এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে কিছু যোগাড় করত। কিন্তু এখনতো তাও পারে না। আমি কি করব। আমি ছোট বলে আমার কাজের মূল্য কেউ দিতে চায় না। আমি এখন কোথায় গেলে দু'জনের দু'মুঠো ভাত পেতে পারি?
তুহিনদের বাড়িতে গেলে কপালে ভাত মিলতে পারে। এখন বোধ হয় তারা সবাই খেতে খেতে বসেছে। যাই যদি এক মুঠো ভাত পাই।
তুহিনরা সবাই বারান্দায় পাটি পেরে খেতে বসেছে। বখাটে ছেলেটি বারান্দার খাম ধরে দাঁড়িয়ে রইল। কেহ তার দিকে খেয়াল করল না। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর চলে গেল অন্য দুয়ারে। সেখানে যাওয়া মাত্রই শুনতে পেল, ওই যে বখাটি টি আসছে। এই ভরদুপুরে খাবার সময় এসে দাঁড়াবে। ওরা কি জানে খাবারের সময় কারও দুয়ারে দাঁড়াতে নেই। আরেকজন বলল, কে শিখাবে ওকে এসব। জীবনে কোন দিন স্কুলের বারান্দায় যেতে পারবে?
তবু বখাটে ছেলেটি না শোনার মত করে দাঁড়িয়ে রইল। তখন বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি তার ভাতের বাটি টি নিয়ে এগিয়ে এল। বলল, ভাত খাবে? বখাটে ছেলেটি ছলছল নয়নে চুপটি করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। ছোট্ট ছেলেটি বলল, ভাত খেতে বললাম, খেলে না। তাহলে আমাদের খাওয়ার সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকছো কেন? বখাটি ছেলেটি কিছু বলতে যাবে - ঠিক তখনই কে একজন বলল, এদিকে আয় খোকা। আর একবার বললে কিন্তু ও সত্যি খাবে। তারপর সবাই হাসতে লাগল।
বখাটে ছেলেটি খুবই লজ্জা পেল। তাই চুপটি করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এল।
মন ভার করে বখাটে ছেলেটি অনেক গুলো সিগারেটের মুতা নিয়ে চলে যায় আড়ালে। মানুষের ধারে ধারে গিয়ে সে জানতে পেরেছে, খুব কষ্ট হলে নাকি সিগারেট খেতে হয়। তাহলে সব কষ্ট গুলো সিগারেটের ধোয়ায় মিশে উড়ে যায়। তাই সে মানুষের ফেলে দেয়া সিগারেটের মুতা গুলোয় আগুন লাগিয়ে জোড়া জোড়ে টানতে লাগল। ধোয়া গুলো উড়িয়ে দিতে লাগল আকাশে। আর মনে মনে বলতে লাগল - যাক কষ্ট গুলো দূরে যাক। কিছুক্ষ্ণ পর ক্লান্ত হয়ে পড়ল। শরীরটা ভার ভার লাগল। তারপর সেথায় ঘুমিয়ে পড়ল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ০২/১১/২০১৭নিপুণ হাতের চৌকশ লিখনী
-
jdnf ০১/১১/২০১৭সুন্দর
-
সাঁঝের তারা ৩১/১০/২০১৭সুন্দর কল্পনা...
-
শাহজাদা আল হাবীব ৩১/১০/২০১৭ভালো।
-
মধু মঙ্গল সিনহা ৩১/১০/২০১৭ভাল লাগল।
-
সোলাইমান ৩১/১০/২০১৭সুন্দর প্রকাশ
-
আজাদ আলী ৩১/১০/২০১৭Valo galpo