বাল্য বিবাহ ( নাটিকা)
চরিত্র পরিচিতি :
আশামনি - ( বয়স ১৩)
আমজাদ - আশামনির বাবা ( বয়স ৪৫)
আনোয়ার - আশামনির শ্বশুর( বয়স ৪০)
সানু - আশামনির বর ( বয়স ৩০)
রাজু - আশামনির ভাই ( বয়স ২৬)
স্বপন - আশামনির চাচাতো ভাই ( বয়স ২৩)
রানা - পুলিশ (বয়স ২৮)
রফিক - ঐ
বুড়ি - ( বয়স ৮০)
জমির - ( বয়স ৪২)
এবং বিয়ের বরযাত্রী
[ দৃশ্য পরিকল্পনা : করতোয়া নদীর খেয়াঘাট। ঘাটে একটা নৌকা ভিড়ানো আছে। সব বরযাত্রী সে নৌকায় বসে আছে। বেলা ডুবু ডুবু ভাব। ]
আমজাদ : আর কত দেরি করাবি? নে এখন তাড়াতাড়ি নৌকায় উঠ। এখনই রাত হয়ে যাবে। ( আশামনি কোন কথা বলছে না)
আনোয়ার : আপনি সরেন। আমি দেখছি। ( তারপর আশামনির হাত ধরে) উঠো মা। এ ভাবে আর কত দেরি করাবে? অনেক দূরের পথ। এমন করলে মানসে খারাব বলবে তো। উঠো উঠো।
আমজাদ : উঠ মা। যেতে তো হবেই। দেরি করে আর কি লাভ? ( মন ভার করে) যা মা। আমি কালকেই তো তোকে আনতে যাবো। মন খারাব করিস না। এখন যা।
বুড়ি : তোর আব্বা তো ঠিক কথাই বলছে। তুই তো কালকেই আবার ফিরে আসবি। আর ওরা তো তোর পর নয়। সব মেয়েকেই তো এভাবে একদিন যেতে হয়। দেখবি দু'দিন পরেই আমাদের সবাইকে ভুলে যাবি। স্বামীর বাড়িই মেয়েদের আসল বাড়ি - বুঝলি? উঠ এখন।
আমজাদ : না। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেল না। কারো কথা তো শুনছে না। কি করা যায় এখন?
রাজু : আব্বা এভাবে উঠানো যাবে না। বোঝা হয়ে গেছে। ( ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিল) যা এখন উঠ। ( আশামনি কান্না করতে করতে নৌকায় উঠল)
আনোয়ার : এখন কান্না বন্ধ করো মা। ঠিকই তো নৌকায় উঠলে। শুধু শুধু চড় খেলে। ভাল ভাবে বললাম শুনলে না তো ।
রাজু : এখন তাড়াতাড়ি নৌকা ছাড়ো। আর দেরি করো না। দূরের পথ। ( নৌকা ছাড়তে যাবে এমন সময় স্বপন চিৎকার করে আশামনিকে ডাক দেয়)
স্বপন : আশামনি। আমরা এসে গেছি। তোমার আর কোন ভয় নেই। আর কিছুই হবে না। এই দেখো পুলিশ নিয়ে এসেছি। ( সবাই থমকে গেল)
আমজাদ : ( স্বপনকে) তুই এটা কি করলি? ( ঘাটে একটি লাঠি খুঁজতে লাগল) দাঁড়া দেখ তোকে কি করি। মার তো কোন দিন খাস নাই। পুলিশ নিয়ে আসো বিয়ে ঠেকাতে।
রাজু : শালা তুই আমার বোনের বিয়ে আটকাবি। তোর সাহস তো কম নয়। ( মারতে গেলে, রানা থাপা দিয়ে ধরে)
রানা : আমাদের দেখে ভয় খাস না। থানায় নিয়ে পেঁদানি দিলেই বুঝবি। ভয় কাকে বলে?
রাজু : (কিছুটা ভয় পেয়ে) ভয় পাবো কেনো? আমরা কি চুরি করেছি নাকি? নাকি কোন দোষ করেছি।
রানা : এই শালা তোর বোনের বয়স কত? এখনই বিয়ে দ্যাস।
রাজু : কেন? তেরো বৎসর হয়ছে। এ বয়সে অনেক মেয়ে বিয়ে হয়েছে। শুধু তাই নয় ও পাড়া সালুর বোন বারো বছরের। সেটাও ভাল ভাবে বিয়ে হয়ে গেল। আর আমাদের বোন হবে না?
রানা : বিয়ে খিলাচ্ছি দাঁড়া। ( রাজুর মাছায় দুটো ভারি দিল)
রাজু : ওরে মা রে, ওরে বাবারে...(চিৎকার করতে লাগল)।
( ও দিকে রফিক বর এবং বরের বাবা কে ধরে ফেলেছে। স্বপন রাজুকে ধরলে, রানা আমজাদকে ধরে )
আমজাদ : ( স্বপনকে) তুই হলি আমাদের বংশের প্রথম শিক্ষিত ছেলে। আর তুই এতো গুলো মানুষের মধ্যে আমাদের মুখে চুলকানি দিলি। তোর কি একটুও শরীর কাঁপল না। গ্রামের মানুষ এখন কি বলবে?
স্বপন : কি বলবে শুনি। এতো ছোট মানুষ এখন বিয়ে দাও কেন? আর আশামনি কি বিয়েতে রাজি আছে?
আমজাদ : ভাল পাত্র পেলে বিয়ে দিবো না। আর আশার কথায় কি আসে যায়? ও কি ভাল মন্দ বোঝে?
স্বপন : ভালমন্দ বোঝার বয়স না হলে বিয়ে দাও কেন?
আমজাদ : হারামি। তোর সাথে আর কোন কথা নাই। তুই আমাদের বংশের কুলাংগার।
রফিক : ওকে গালি দিচ্ছেন কেন? আপনারা ভুল করছেন। আমি বুঝিয়ে বলছি। মন দিয়ে শুনুন। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স ধরা হয়েছে আঠারো বৎসর। এর নিচে বিয়ে দেয়া নিষেধ। এর নিচে বিয়ে হলে সেটা বাল্য বিবাহ। আপনারা বড় রকম ভুল করেছেন। বাল্য বিবাহের কেস তো কোন দিন খান নাই। চলুন থানায় গিয়ে বুঝিয়ে দিবো। ( আমজাদ অনেক ভয় পেয়ে গেল)
স্বপন : কাকা শুধু শুধু আমায় গালি দিবে না। আমি শিক্ষিত তোমরা তো জানো। অনেক কিছুই আমি জেনেছি, অনেক কিছুই আমি শিখেছি। তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো তাহলে তোমরাও বুঝতে পারবে। ( এবার সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল) তোমাদের বুঝাতে না পেরেই তো পুলিশ আনতে গেলাম। যদি বুঝতে তাহলে তো আনতাম না। দেখো আশামনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো। ওর মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে না? কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। আর এখনই তোমরা বিয়ে দিচ্ছো। ওকে শিক্ষিত করবে না? এখন ও সংসারের কিছুই জানে না। কিছুই বোঝে না। ওকে সব কিছু জানতে হবে। সব কিছু বুঝতে হবে। তারপরে তো বিয়ে। তাছাড়া এত ছোট বয়সে বিয়ে দিলে সংসারের বোঝা বইতে পারবে ও?
বুড়ি : এটা তুই কি কস? আমার থেকে তোর বয়স বেশি হয়ছে নাকি? আরে দাদা ভাই আশি বৎসর বয়স হইছে আমার। কোনো বিষয়ে আর বোঝা বাকি নাই। সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি, মেয়েদের এই তেরো চৌদ্দ বছর বয়সেই বেশি বিয়ে হয়। আর এখন কি আইন আনছিস তুই।
রফিক : আগের কথা বাদ দেন। যুগ পাল্টে গেছে না? মানুষ এখন সব কিছু শিখতে পারছে। কি করলে কি হয় সব বুঝতে পারছে। কিন্তু এই গ্রাম অঞ্চলে এখনও সমস্যাই রয়ে গেছে।
বুড়ি : সমস্যা তো হবেই। এই যে এখানে কি ঘটল। এতক্ষণে বিয়ের নৌকা বরের বাড়ি পৌঁছানোর কথা। কিন্তু তোমরা এসেই তো সমস্যা বাঁধালে। তাতে কি লাভ হল। আমার বারো বৎসর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তাতে আমি সংসার করতে পারি নাই?
স্বপন : দাদি আগের কথা বাদ দাও। এখন যুগ বদলে গেছে। বাল্য বিবাহ খুবই ক্ষতিকর। মেয়েদের শিক্ষার অভাব থাকে। ফলে সংসারে ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে। তাছাড়া এই বয়সে বিয়ে হওয়ার পর দেখা যায় এক দুই বৎসর যেতে না যেতেই সন্তান হয় । বিশ বছরের আগে কেউ যদি সন্তান নেয় তাহলে সে এবং সন্তান উভয়েরই অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। বুঝছো কি বলছি?
বুড়ি : অত বুঝার দরকার নাই। পুলিশ সাথে এনে আজে বাজে অনেক কথাই শুনালি। নইলে এতক্ষণে তোর লাশ পড়ে যেত। তোর চাচাকে তো চেনোস না। বিয়ে ভাঙতে আসো তাও আবার তার মেয়ের বিয়ে। আগে শুনতাম বেশি পড়াশোনা করলে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়। তোর মাথা বোধ হয় ঠিক নাই। তাই এই বিয়ে ভাঙতে এসেছিস। এখনও সময় আছে। বাড়িতে যা দাদা ভাই। ভাল হবে। আল্লায়ও কিন্তু সইবে না। বিয়ে ভাঙা কিন্তু ভাল না।
স্বপন : থামো দাদি। অনেক বলেছো। বিয়ে হলে তো বিয়ে ভাঙবো। এ বিয়ে কিছুতেই হয় নি। আর হবেও না। পাত্রি রাজি না থাকলে কখনও বিয়ে হয়? আপনারা এসব কি করেছেন।
রাজু : এই শালা খুব লেকচার দিচ্ছিস তাই না। (পুলিশের হাত থেকে ছুটতে চেস্টা করে)
রানা : আরে স্বপন ভাই। এভাবে আর রাখাও সম্ভব না আর ওদের বুঝানোও যাবে না। অনেকতো দেখলেন। এখন আমাদের কাজ করতে দেন। আমরা থানায় নিয়ে গেলাম।
স্বপন : কি আর করা। অনেক তো বুঝালাম। কাউকে তো বুঝ মানানো যাচ্ছে না। নিয়ে যান। কি আর করার আছে। ( এমন সময় জমির চিৎকার করে কান্না করতে করতে ঘাটে এলো)
জমির : আমার কি সর্বনাশ হয়ে গেলো রে। আমি এ কি ভুল করলাম। ( কপাল থাপড়াতে লাগল আর সেখানে নৌকার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগল)
স্বপন : কি হয়েছে জমির চাচা। এমন করছো কেনো?
জমির : আমার এতো সুন্দর মেয়ে কি হয়ে গেলো রে। আমি এখন কি করবো?
স্বপন : কি হয়েছে চাচা। এভাবে কোথায় যাবে?
জমির : হাসপাতালে যাবো। তোমরা সবাই হাসপাতেলে নিয়ে যাও। আমার মেয়েকে দেখবো। ( পাগলের মত ছোটাছুটি করতে লাগল)
আমজাদ : তোর মেয়ের কি হয়েছে রে জমির।
জমির : ডেলিভারি হওয়ার সময় বলে মারা গেছে। আমার এতো ছোট মেয়ে। কি হয়ে গেল রে। ( কান্না করতে লাগল)
স্বপন : এখন আর কি করবেন। আপনার মেয়ের বিয়ে তো ঠেকাতে গেছিলাম। কি বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, মনে আছে আপনার। নিজের চরকায় তেল দাও। এখন কি হল। এবার বুঝতে পেরেছেন, বাল্য বিবাহের কি ফল?
জমির : আমি এখন সব বুঝতে পারছি। তখন বুঝতে পারি নাই। ভাল ঘর ভাল ছেলে পেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। তারা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।
স্বপন : আরো দুই তিন বৎসর পরে বিয়ে দিলে কি ভাল ছেলে ফুরিয়ে যেত?
জমির : আমি আর কিছু বুঝতে চাই না। আমার মেয়েকে চাই। ওখানে নিয়ে চলো। ( আবার পাগলামি করতে লাগল। দৌড়ে গিয়ে এক মাঝির ঘাড় ধরে তাকে পানিতে ফেলে দিল। তার পর নিজে বৈঠা বেয়ে চলে যেতে যেতে বলল, কেউ বাল্য বিবাহ দিও না... কেউ বাল্য বিবাহ দিও না। )
আশামনি - ( বয়স ১৩)
আমজাদ - আশামনির বাবা ( বয়স ৪৫)
আনোয়ার - আশামনির শ্বশুর( বয়স ৪০)
সানু - আশামনির বর ( বয়স ৩০)
রাজু - আশামনির ভাই ( বয়স ২৬)
স্বপন - আশামনির চাচাতো ভাই ( বয়স ২৩)
রানা - পুলিশ (বয়স ২৮)
রফিক - ঐ
বুড়ি - ( বয়স ৮০)
জমির - ( বয়স ৪২)
এবং বিয়ের বরযাত্রী
[ দৃশ্য পরিকল্পনা : করতোয়া নদীর খেয়াঘাট। ঘাটে একটা নৌকা ভিড়ানো আছে। সব বরযাত্রী সে নৌকায় বসে আছে। বেলা ডুবু ডুবু ভাব। ]
আমজাদ : আর কত দেরি করাবি? নে এখন তাড়াতাড়ি নৌকায় উঠ। এখনই রাত হয়ে যাবে। ( আশামনি কোন কথা বলছে না)
আনোয়ার : আপনি সরেন। আমি দেখছি। ( তারপর আশামনির হাত ধরে) উঠো মা। এ ভাবে আর কত দেরি করাবে? অনেক দূরের পথ। এমন করলে মানসে খারাব বলবে তো। উঠো উঠো।
আমজাদ : উঠ মা। যেতে তো হবেই। দেরি করে আর কি লাভ? ( মন ভার করে) যা মা। আমি কালকেই তো তোকে আনতে যাবো। মন খারাব করিস না। এখন যা।
বুড়ি : তোর আব্বা তো ঠিক কথাই বলছে। তুই তো কালকেই আবার ফিরে আসবি। আর ওরা তো তোর পর নয়। সব মেয়েকেই তো এভাবে একদিন যেতে হয়। দেখবি দু'দিন পরেই আমাদের সবাইকে ভুলে যাবি। স্বামীর বাড়িই মেয়েদের আসল বাড়ি - বুঝলি? উঠ এখন।
আমজাদ : না। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেল না। কারো কথা তো শুনছে না। কি করা যায় এখন?
রাজু : আব্বা এভাবে উঠানো যাবে না। বোঝা হয়ে গেছে। ( ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিল) যা এখন উঠ। ( আশামনি কান্না করতে করতে নৌকায় উঠল)
আনোয়ার : এখন কান্না বন্ধ করো মা। ঠিকই তো নৌকায় উঠলে। শুধু শুধু চড় খেলে। ভাল ভাবে বললাম শুনলে না তো ।
রাজু : এখন তাড়াতাড়ি নৌকা ছাড়ো। আর দেরি করো না। দূরের পথ। ( নৌকা ছাড়তে যাবে এমন সময় স্বপন চিৎকার করে আশামনিকে ডাক দেয়)
স্বপন : আশামনি। আমরা এসে গেছি। তোমার আর কোন ভয় নেই। আর কিছুই হবে না। এই দেখো পুলিশ নিয়ে এসেছি। ( সবাই থমকে গেল)
আমজাদ : ( স্বপনকে) তুই এটা কি করলি? ( ঘাটে একটি লাঠি খুঁজতে লাগল) দাঁড়া দেখ তোকে কি করি। মার তো কোন দিন খাস নাই। পুলিশ নিয়ে আসো বিয়ে ঠেকাতে।
রাজু : শালা তুই আমার বোনের বিয়ে আটকাবি। তোর সাহস তো কম নয়। ( মারতে গেলে, রানা থাপা দিয়ে ধরে)
রানা : আমাদের দেখে ভয় খাস না। থানায় নিয়ে পেঁদানি দিলেই বুঝবি। ভয় কাকে বলে?
রাজু : (কিছুটা ভয় পেয়ে) ভয় পাবো কেনো? আমরা কি চুরি করেছি নাকি? নাকি কোন দোষ করেছি।
রানা : এই শালা তোর বোনের বয়স কত? এখনই বিয়ে দ্যাস।
রাজু : কেন? তেরো বৎসর হয়ছে। এ বয়সে অনেক মেয়ে বিয়ে হয়েছে। শুধু তাই নয় ও পাড়া সালুর বোন বারো বছরের। সেটাও ভাল ভাবে বিয়ে হয়ে গেল। আর আমাদের বোন হবে না?
রানা : বিয়ে খিলাচ্ছি দাঁড়া। ( রাজুর মাছায় দুটো ভারি দিল)
রাজু : ওরে মা রে, ওরে বাবারে...(চিৎকার করতে লাগল)।
( ও দিকে রফিক বর এবং বরের বাবা কে ধরে ফেলেছে। স্বপন রাজুকে ধরলে, রানা আমজাদকে ধরে )
আমজাদ : ( স্বপনকে) তুই হলি আমাদের বংশের প্রথম শিক্ষিত ছেলে। আর তুই এতো গুলো মানুষের মধ্যে আমাদের মুখে চুলকানি দিলি। তোর কি একটুও শরীর কাঁপল না। গ্রামের মানুষ এখন কি বলবে?
স্বপন : কি বলবে শুনি। এতো ছোট মানুষ এখন বিয়ে দাও কেন? আর আশামনি কি বিয়েতে রাজি আছে?
আমজাদ : ভাল পাত্র পেলে বিয়ে দিবো না। আর আশার কথায় কি আসে যায়? ও কি ভাল মন্দ বোঝে?
স্বপন : ভালমন্দ বোঝার বয়স না হলে বিয়ে দাও কেন?
আমজাদ : হারামি। তোর সাথে আর কোন কথা নাই। তুই আমাদের বংশের কুলাংগার।
রফিক : ওকে গালি দিচ্ছেন কেন? আপনারা ভুল করছেন। আমি বুঝিয়ে বলছি। মন দিয়ে শুনুন। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স ধরা হয়েছে আঠারো বৎসর। এর নিচে বিয়ে দেয়া নিষেধ। এর নিচে বিয়ে হলে সেটা বাল্য বিবাহ। আপনারা বড় রকম ভুল করেছেন। বাল্য বিবাহের কেস তো কোন দিন খান নাই। চলুন থানায় গিয়ে বুঝিয়ে দিবো। ( আমজাদ অনেক ভয় পেয়ে গেল)
স্বপন : কাকা শুধু শুধু আমায় গালি দিবে না। আমি শিক্ষিত তোমরা তো জানো। অনেক কিছুই আমি জেনেছি, অনেক কিছুই আমি শিখেছি। তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো তাহলে তোমরাও বুঝতে পারবে। ( এবার সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল) তোমাদের বুঝাতে না পেরেই তো পুলিশ আনতে গেলাম। যদি বুঝতে তাহলে তো আনতাম না। দেখো আশামনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো। ওর মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে না? কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। আর এখনই তোমরা বিয়ে দিচ্ছো। ওকে শিক্ষিত করবে না? এখন ও সংসারের কিছুই জানে না। কিছুই বোঝে না। ওকে সব কিছু জানতে হবে। সব কিছু বুঝতে হবে। তারপরে তো বিয়ে। তাছাড়া এত ছোট বয়সে বিয়ে দিলে সংসারের বোঝা বইতে পারবে ও?
বুড়ি : এটা তুই কি কস? আমার থেকে তোর বয়স বেশি হয়ছে নাকি? আরে দাদা ভাই আশি বৎসর বয়স হইছে আমার। কোনো বিষয়ে আর বোঝা বাকি নাই। সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি, মেয়েদের এই তেরো চৌদ্দ বছর বয়সেই বেশি বিয়ে হয়। আর এখন কি আইন আনছিস তুই।
রফিক : আগের কথা বাদ দেন। যুগ পাল্টে গেছে না? মানুষ এখন সব কিছু শিখতে পারছে। কি করলে কি হয় সব বুঝতে পারছে। কিন্তু এই গ্রাম অঞ্চলে এখনও সমস্যাই রয়ে গেছে।
বুড়ি : সমস্যা তো হবেই। এই যে এখানে কি ঘটল। এতক্ষণে বিয়ের নৌকা বরের বাড়ি পৌঁছানোর কথা। কিন্তু তোমরা এসেই তো সমস্যা বাঁধালে। তাতে কি লাভ হল। আমার বারো বৎসর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তাতে আমি সংসার করতে পারি নাই?
স্বপন : দাদি আগের কথা বাদ দাও। এখন যুগ বদলে গেছে। বাল্য বিবাহ খুবই ক্ষতিকর। মেয়েদের শিক্ষার অভাব থাকে। ফলে সংসারে ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে। তাছাড়া এই বয়সে বিয়ে হওয়ার পর দেখা যায় এক দুই বৎসর যেতে না যেতেই সন্তান হয় । বিশ বছরের আগে কেউ যদি সন্তান নেয় তাহলে সে এবং সন্তান উভয়েরই অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। বুঝছো কি বলছি?
বুড়ি : অত বুঝার দরকার নাই। পুলিশ সাথে এনে আজে বাজে অনেক কথাই শুনালি। নইলে এতক্ষণে তোর লাশ পড়ে যেত। তোর চাচাকে তো চেনোস না। বিয়ে ভাঙতে আসো তাও আবার তার মেয়ের বিয়ে। আগে শুনতাম বেশি পড়াশোনা করলে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়। তোর মাথা বোধ হয় ঠিক নাই। তাই এই বিয়ে ভাঙতে এসেছিস। এখনও সময় আছে। বাড়িতে যা দাদা ভাই। ভাল হবে। আল্লায়ও কিন্তু সইবে না। বিয়ে ভাঙা কিন্তু ভাল না।
স্বপন : থামো দাদি। অনেক বলেছো। বিয়ে হলে তো বিয়ে ভাঙবো। এ বিয়ে কিছুতেই হয় নি। আর হবেও না। পাত্রি রাজি না থাকলে কখনও বিয়ে হয়? আপনারা এসব কি করেছেন।
রাজু : এই শালা খুব লেকচার দিচ্ছিস তাই না। (পুলিশের হাত থেকে ছুটতে চেস্টা করে)
রানা : আরে স্বপন ভাই। এভাবে আর রাখাও সম্ভব না আর ওদের বুঝানোও যাবে না। অনেকতো দেখলেন। এখন আমাদের কাজ করতে দেন। আমরা থানায় নিয়ে গেলাম।
স্বপন : কি আর করা। অনেক তো বুঝালাম। কাউকে তো বুঝ মানানো যাচ্ছে না। নিয়ে যান। কি আর করার আছে। ( এমন সময় জমির চিৎকার করে কান্না করতে করতে ঘাটে এলো)
জমির : আমার কি সর্বনাশ হয়ে গেলো রে। আমি এ কি ভুল করলাম। ( কপাল থাপড়াতে লাগল আর সেখানে নৌকার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগল)
স্বপন : কি হয়েছে জমির চাচা। এমন করছো কেনো?
জমির : আমার এতো সুন্দর মেয়ে কি হয়ে গেলো রে। আমি এখন কি করবো?
স্বপন : কি হয়েছে চাচা। এভাবে কোথায় যাবে?
জমির : হাসপাতালে যাবো। তোমরা সবাই হাসপাতেলে নিয়ে যাও। আমার মেয়েকে দেখবো। ( পাগলের মত ছোটাছুটি করতে লাগল)
আমজাদ : তোর মেয়ের কি হয়েছে রে জমির।
জমির : ডেলিভারি হওয়ার সময় বলে মারা গেছে। আমার এতো ছোট মেয়ে। কি হয়ে গেল রে। ( কান্না করতে লাগল)
স্বপন : এখন আর কি করবেন। আপনার মেয়ের বিয়ে তো ঠেকাতে গেছিলাম। কি বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, মনে আছে আপনার। নিজের চরকায় তেল দাও। এখন কি হল। এবার বুঝতে পেরেছেন, বাল্য বিবাহের কি ফল?
জমির : আমি এখন সব বুঝতে পারছি। তখন বুঝতে পারি নাই। ভাল ঘর ভাল ছেলে পেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। তারা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।
স্বপন : আরো দুই তিন বৎসর পরে বিয়ে দিলে কি ভাল ছেলে ফুরিয়ে যেত?
জমির : আমি আর কিছু বুঝতে চাই না। আমার মেয়েকে চাই। ওখানে নিয়ে চলো। ( আবার পাগলামি করতে লাগল। দৌড়ে গিয়ে এক মাঝির ঘাড় ধরে তাকে পানিতে ফেলে দিল। তার পর নিজে বৈঠা বেয়ে চলে যেতে যেতে বলল, কেউ বাল্য বিবাহ দিও না... কেউ বাল্য বিবাহ দিও না। )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১১/০৭/২০২৩সুন্দর নাটকীয় লেখা
-
সন্দীপন পাল ২৯/১০/২০১৭শুধু ভালো লাগা রেখে গেলাম।
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৯/১০/২০১৭নাটিকার মতোই লেগেছে
-
সোলাইমান ২৯/১০/২০১৭আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।
-
আজাদ আলী ২৯/১০/২০১৭Kobir sundar vabnake shraddha janai. Aro ei rakamer natk asa korbo kobir kache.