www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্রাশ বনাম ভালবাসা

আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েরা এখন যেকোনো সময় ক্রাশ খাচ্ছে। রাস্তাঘাট, স্কুলকলেজ কিংবা যেকোনো স্থানে হঠাৎ করেই ক্রাশ খায়। আসলে ক্রাশ কি? বা ক্রাশই কি প্রকৃত ভালবাসা?? নাকি অন্য কিছু?? এসব বিষয় নিয়েই আসলে আজকে লিখতে বসেছি।

তো ক্রাশ সম্পর্কে প্রথমে জেনে নেওয়া দরকার। ইংরেজি Crush শব্দ যদি Dictionary-তে সার্চ করেন তাহলে বেশকিছু অর্থ দেখবেন। যেমন, ভাঙ্গা, প্রবল চাপ, সর্বনাশগ্রস্ত হওয়া, পিষা ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে অবশ্য কেউ কাউকে দেখে ভাল লাগলেই প্রতীকী অর্থে 'ক্রাশ' খেয়েছি এমটা বলে থাকেন। ভাল লাগার কথা জানান দেয়ার/প্রকাশের বিকল্প শব্দ হিসেবে ক্রাশ শব্দটা এখন বহুল প্রচলিত।
কাউকে প্রথম দেখার পর থেকে তার প্রতি অদ্ভুত একধরণের আকর্ষণবোধ করাকেই ক্রাশ বলে। এই সময়টাতে একধরণের বিশেষ ভালো লাগা কাজ করে। সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করে। যার ওপর এই ক্রাশ তাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে। এই সময়ে ক্রাশ খাওয়া ব্যক্তি অনেক অদ্ভুত কিছু কান্ড করতে থাকেন যেটা হয়তো বন্ধুবান্ধব এর নজরে পড়ে। কিন্তু মনের অজান্তেই সবাই এই কাজগুলো করেন। কারণ তিনি তখন আসলেই অন্য এক জগতে বসবাস করতে থাকেন। ব্যাপক অর্থে কারো প্রতি সেই রকমের আকর্ষণ,টান অনুভব করাই হলো ক্রাশ।

অন্যদিকে ভালবাসা হচ্ছে সেই সম্পর্ক যাকে সংঙ্গায়িত করা সম্ভব নয়। ভালবাসা হচ্ছে বিশেষ কারো জন্য মনের এক নিঃস্বার্থ সুন্দর অনুভূতি, কোন চোখের নেশা নয়, যা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে উপহার স্বরুপ এবং যার কখনো পরিবর্তন হয়না তাকে ভালবাসা বলা যায়।
আসলে ভালবাসা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। মা-বাবার ভালবাসা, ভাই-বোনের ভালবাসা, আত্বীয়-স্বজনের ভালবাসা, বন্ধুবান্ধবের ভালবাসা, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা ইত্যাদি। প্রতিটা ভালবাসার সম্পর্ক আলাদা হয়ে থাকে। এগুলো আসলে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে যে ভালবাসাটা কেমন হবে।

তো এখন আমার কাছে যেটা মনে হয়, ক্রাশ আসলে প্রকৃত ভালবাসা হতে পারে না। কারন বর্তমান সময়ে আমরা যে কথায় কথায় একজন আরেকজনকে দেখে ক্রাশিত হচ্ছি এটা শুধু চোখের ভালো লাগা। কারন আপনি যখন তাকে দেখেই বলছেন, কি সুন্দর, OMG বা My Crush ইত্যাদি বলছেন তাহলে সেটা আপনার তার চেহারা দেখেই হয়েছে। প্রকৃত ভালবাসা কখনো চেহারা বা সৌন্দর্য দেখে হয় না। ভালবাসা হয় মন থেকে, মনের অজান্তেই হয়ে যায়। দুজন দুজনকে চিনতে জানতে অনেকটা সময় লাগে।

একটা উদাহরণ দিলে হয়তো বিষয়টা আপনাদের কাছে আরো বেশি স্পষ্ট হবে। মনে করুন, আপনি যাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছেন সে একদিন হঠাৎ করে কোন দুর্ঘটনায় পড়ল এবং তার একটি পা কেটে ফেলতে হলো অথবা যেকোনো কারনে তার মুখের কিছু অংশ পুড়ে চেহারা নষ্ট হয়ে গেলো। তখন কি সে আপনার আর ক্রাশ থাকবে?? থাকবে না কারন আপনি তার চেহারার উপর ক্রাশ খেয়েছিলেন। সেটা যতদিন থাকবে আপনার ক্রাশও ততদিন থাকবে।
কিন্তু এমন দুর্ঘটনাজনিত কারনে যদি আপনার মা-বাবার কোন অঙ্গহানি হয়, তাহলে কি আপনার ভালবাসা মা-বাবার ওপর থেকে কমে যাবে?? মনে হয় না ভালবাসা কমবে বরঞ্চ বেড়ে যাবে। কারন আপনার মা-বাবা আপনার ক্রাশ না, তাদেরকে আমরা মন থেকেই ভালবাসি।

অনেকে হয়তো বলবেন, প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসার সাথে মা বাবার ভালবাসা তুলনা করছি কেনো? তাহলে মা-বাবার ভালবাসা বাদ দিলাম, এখন ধরুন আপনার প্রকৃত ভালবাসার মানুষের সাথে এমন দুর্ঘটনা ঘটল তখন আপনি কি করবেন? আপনি তাকে ঠিকই ভালোবেসে যাবেন যদি সেটা মনের ভালবাসা হয়ে থাকে। কারন বিয়ের পর কোন স্ত্রীর বা স্বামীর সাথে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে তারা নিশ্চয় তাদের ছেড়ে যাবে না। কারন তারা তাদের সেটা প্রকৃত ভালবাসা, কোন ক্রাশ নয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে।

আমার চিন্তাধারার সাথে হয়তো অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন। কিন্তু আমার কাছে ক্রাশ এবং ভালবাসা বলতে যেটা মনে হয়েছে তাই লিখলাম। ক্রাশ থেকে কখনও প্রকৃত ভালবাসা হতে পারে না। যেটা হয় সেটা খুবই সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী।

পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ আর আপনাদের মতামত জানিয়েন ক্রাশ এবং ভালবাসা সম্পর্কে।
(যদি ভালো লাগে শেয়ার করতে পারেন। কপি/পেষ্ট করলে লেখকের নামটা অবশ্যই মেনশন করবেন)
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৯০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সবকিছুতেই ক্রাশ খুঁজে পাওয়া রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
 
Quantcast