www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি বিশুদ্ধ কবিতার অপেক্ষায়

আজ ১৪ ডিসেম্বর,
বাঙালির সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন আজ,
আজ বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন।
আজ আমাদের একচোখ শোকে বিহ্বল-
আরেক চোখে ঝলমল সোনা রোদ্দুর।
পাক-হায়নারা এইদিনে
বেছে বেছে হত্যা করেছিল সূর্য সন্তানদের।
প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী-
ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বুঝে গিয়েছিলো
তাদের পরাজয় নিশ্চিত।
বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা যদি বেঁচে থাকে
তবে এ মাটিতে ওরা বসত করতে পারবে না।
তাই পরিকল্পিত ভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে-
হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক,
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক ও কবি- সাহিত্যিকদের
বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে
পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়
এবং তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন,
তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ-উঃ কি বীভৎস যন্ত্রণাময়।

ওরা ধারণাও করতে পারেনি রক্তিম ঊষার কোমল রাগে
ওদেরই অত্যচারে এখানে সবুজ বনে
ফুটবে ভালোবাসার বিশুদ্ধ কুসুম।
মধুকর প্রভাতের ধবল মেঘের ভেলায়
নবান্নের ঝরা পাতার মরমরে
রাখালের উদাসী বাঁশির সুরে,
ভোরের শিশির জমা দূর্বাঘাসে, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ,
ঝাউবনের শুনসানে নিরবতার পর্দা ছিঁড়ে
গগনবিদারী চিৎকারে ধ্বনিত হবে একটি প্রাজ্ঞ কন্ঠ ।
শব্দহীন শব্দের আর্তনাদে গর্জে ওঠে লেখনী-
শিরায় শিরায় বেজে উঠে সূর্যোদয়ের ধ্রুপদী মূর্ছানা ।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড
ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা,
যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে করেছিল স্তম্ভিত।
পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক
হত্যাযজ্ঞের পর রায়েরবাজার,
শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থান মিরপুর ১,
চামড়ার গুদাম চাক্তাই খাল পাড়,
আগ্রাবাদ বিদ্যুৎ সাব স্টেশন,
গল্লামারী, নদী পাড়,কলসকাঠি, আটঘর, কুরিয়ানা,
আলমডাঙ্গা, রাজবাড়ীর,স্বরুপকাঠি,খুনিয়া দীঘি,
ফয়েজাবাদ হিল,পাঁচগাঁও , রাজনগর,সহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে বুদ্ধিজীবীদের লাশের পাহাড়।

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই
এইসব স্থানে নিকট আত্মীয়রা স্বজনের লাশ খুঁজে পায়।
পৃথিবীর উদয়-অস্ত বুদ্ধি মাথায় নিয়ে
বর্বর পাক বাহিনরা তাদের দোসদের সাথে নিয়ে
এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপর
পৈশাচিক ভাবে নির্যাতন করেছিল।
বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন,
কারো চোখ, হাত-পা বাঁধা ,কারো শরীরে একাধিক গুলি,
কাউকে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে।

লাশের বীভৎস ক্ষত চিহ্নের কারণে
অনেকেই প্রিয়জনের শব শনাক্ত করতে পারেননি।
অতন্ত্র প্রহরী হয়ে তাঁরা পড়ে আছে বধ্যভূমিতে।
ওরা ভাবতে পারেনি স্নিগ্ধ ভালবাসায়,
সবুজ বৃক্ষের সমারোহ চন্দ্রস্নান আর নদীর কুলুধ্বনিতে
বাংলা মাতা মুক্ত হবে জঠর যন্ত্রণা।
মানবতার জাগর স্বপ্ন শাড়ির আঁচলে নিয়ে
অতীতের ঘ্রাণ,
অলৌকিক কলরবে জেগে উঠবে সোনালী সূর্য।
কান্তিমান কথকের গাঢ় কন্ঠস্বরে-
একটি বিরিশুদ্ধ প্রাজ্ঞ কবিতার শব্দ ছন্দ
স্বোপার্জিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ,
এই দিনেই এনে দেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ২৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১২/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast