www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে মাহে রমজান

❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। আর এই ১২ মাসের  মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদার মাস হলো মাহে রমজান। এটা ফযিলাতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস। মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জন করার এই অনন্য মৌসুম।

মাহে রমজান প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলাম নরনারীর ওপর ফরজ করা হয়েছে। রোজা ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’।

আরবিতে বলা হয় সিয়াম, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ও বিধান দেওয়া হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।

(সূরা বাকারা:১৮৩)

রমজান মাস আসে মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে। তাইতো রাসুল (সা:) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।

আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন এই মাস মুমিনের অতীতের গুনাহ সমূহকে মুছে দেন। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারী ও মুসলিম)


রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা:) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) লোকদের মধ্যে অতিদানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমজান মাস এলে তার দানশীলতা অনেক বেড়ে যেত। (বুখারী ও মুসলিম)

রমজানে কোন রোজাদারকে ইফতার করানোর কারণে অনেক নেকি লাভ হয়। রাসুল (সা:) বলেন, যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে, তবে রোজাদারের নেকি একটুও কমবে না। (তিরমিজি)

রমজান মাসে নফলের বিনিময় ফরজ সমতুল্য এবং একটি ফরজের বিনিময় সত্তরটা ফরজের নেকি দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, রোজা আমার জন্য আর উহার প্রতিদান আমিই দিব। (বুখারী)

ফযিলতের মাস এই মাহে রমজানেই সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য হেদায়েতের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা:১৮৫)

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলেন। কাজেই নিজেই নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ফলে তিনি আত্মশুদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।  

হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সা:) ঘোষণা করেছেন; যে লোক ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানের রোজা পালন করবে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ)।

এই মাসেই লাইলাতুল কদর অর্থাৎ কদরের রাত, যে রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। (সূরা কদর:২) তাইতো এই মাস অন্য সকল মাস থেকে ফজিলত পূর্ণ।

প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন হলো রহমত;  দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত; এবং শেষ ১০ দিন হলো নাজাত। সাধারণ ভাবে বলা হয়ে থাকে, প্রথম ১০ দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বণ্টন ও বিতরণ করতে থাকবেন। দ্বিতীয় ১০ দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকবেন। এবং শেষ ১০ দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি দিতে থাকবেন। এখানে অনুধাবনের বিষয় হলো; আল্লাহ যদি রহমত বা করুণা করতে চান, ক্ষমা করতে চান, মুক্তি দিতে চান; তা তো এক মুহূর্তেই করতে পারেন, তা যতসংখ্যক মানুষের জন্যই হোক না কেন এবং যে পরিমাণেই হোক না কেন; এতে ১০ দিন–১০ দিন সময় লাগবে কেন?

আসলে রমজান হলো প্রশিক্ষণের মাস।  আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর গুণাবলি অর্জন করে সেই গুণে গুণান্বিত হোক। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও।’

আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যারা এগুলো আত্মস্থ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)

মহান আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ করার বা ধারণ করার ও গ্রহণ করার অর্থ হলো  সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করে তার প্রতিফলন ঘটানো তথা সেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজ-কর্মে, আচার-আচরণে প্রকাশ করা, অর্থাৎ নিজেকে সেসব গুণের আধারে পরিণত করা বা সেসব গুণের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা।

রমজান মাসের প্রথম ১০ ​দিন যেহেতু রহমতের বা দয়ার, সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হলো আল্লাহ পাকের দয়া-মায়াসংক্রান্ত নামসমূহ হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব ও প্রভাব এবং বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক ও বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা, তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

আল্লাহ তাআলার দয়া, করুণা ও রহমতসুলভ নামগুলো হলো: আর রাহমানু (অসীম দয়ালু), আর রাহিমু (পরম করুণাময়), আল ওয়াদুদু (প্রেমময়), আর রউফু (স্নেহশীল), আল আজিজু (মমতাময়), আল কারিমু (অনুগ্রহকারী), আস সালামু (শান্তিদাতা), আল মুমিনু (নিরাপত্তাদাতা), আল মুহাইমিনু (রক্ষাকর্তা), আল বাসিতু (করুণা বিস্তারকারী), আল মুইজজু (সম্মানদাতা), আল লাতিফু (করুণাকারী), আল মুজিবু (প্রার্থনা কবুলকারী), আর রাজ্জাকু (রিজিক দানকারী), আল ওয়াসিউ (দয়া প্রসারকারী), আল ওয়ালিয়্যু (পরম বন্ধু), আন নাফিউ (কল্যাণকারী), আল হাদিউ (পথের দিশারি), আন নাসিরু (সাহায্যকারী), আল হান্নানু (করুণাশীল), আল মান্নানু (দয়ার্দ্র) ইত্যাদি।

অতএব, রমজানের প্রথম ১০ দিনে তথা  রহমতের ১০ দিনে আমাদের করণীয় হবে            ওই সব গুণ অর্জন করা এবং আচরণে ও ব্যবহারে এর সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি জগদ্বাসীর প্রতি দয়া করো, তবে আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি দয়া করবেন।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

রমজান মাসের মাঝের ১০ দিন যেহেতু মাগফিরাত বা ক্ষমার, সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহ পাকের ক্ষমাসংক্রান্ত নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ তাআলার ক্ষমাসুলভ নামগুলো হলো আল গফিরু (ক্ষমাশীল), আল গফুরু (ক্ষমাময়), আল গফফারু (সর্বাধিক ক্ষমাকারী), আল আফুউ (মার্জনাকারী), আল খফিদু (বিনয় পছন্দকারী), আশ শাকুরু (কৃতজ্ঞ), আল বাররু (সদাচারী), আল হালিমু (সহিষ্ণু), আস সবুরু (ধৈর্যশীল), আত তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)। আপনি ক্ষমা লাভ করেছেন বা ক্ষমার অধিকারী হয়েছেন, তা বোঝা যাবে আপনার আচরণে যদি ক্ষমা প্রকাশিত হয়; নয়তো নয়।

অতএব, রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন— মাগফিরাতের ১০ দিন করণীয় হলো সর্বোচ্চ ক্ষমা প্রদর্শন করা। মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘সকল মানুষ ভুলকারী; আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তওবাকারী।’ (বায়হাকি)। তিনি আরও
বলেন, ‘তুমি ক্ষমা করো; তোমাকেও ক্ষমা করা হবে।’ (তিরমিজি)

রমজান মাসের শেষ ১০ দিন নাজাত বা মুক্তির, সুতরাং এই সময়ে আমাদের করণীয় হলো দুনিয়ার সবকিছুর আকর্ষণ ও মোহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রেমে বিভোর হওয়া। গাড়ি, বাড়ি, নারী এবং সম্পদ, সন্তান, সম্মান এগুলোর মোহমায়া থেকে আপন মন ও মানসকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা এবং সে সবের আকর্ষণ থেকে পরিপূর্ণরূপে মোহমুক্ত থাকা। সর্বোপরি আল্লাহ পাকের স্বয়ম্ভরতা, স্বনির্ভরতা, মুক্ততা ও নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত নামসমূহ হৃদয়ঙ্গম করে এর প্রভাব লাভ করে এবং বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা, তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিরাজির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

আল্লাহ তাআলার স্বনির্ভরতা ও মুক্ততাসুলভ নামগুলো হলো: আল আহাদু (একক), আল ওয়াহিদু (এক), আস সামাদু (স্বনির্ভর, অমুখাপেক্ষী), আল আদলু (ন্যায়ানুগ), আল হাক্কু (সত্য), আল কাবিউ (সুদৃঢ়), আল মাতিনু (শক্তিমান), আল কদিরু (ক্ষমতাবান), আন নুরু (জ্যোতির অধিকারী, আলোক দানকারী), আর রশিদু (দিব্যজ্ঞানী), আল জামিলু (সুন্দর), আল বাররু (সৎকর্মশীল), আল মুহসিনু (সুকর্তা) ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার আকর্ষণ সকল পাপের মূল।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

মাগফিরত, রহমাত , ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে মাহে রমজান। পরিশেষে বলা যায়, আসুন সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, পরনিন্দা, অশ্লীলতা ও সকল খারাপ কাজ পরিহার করে তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মাহে রমজানের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমীন
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৩৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দারুণ...
  • সবাই রোজার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারলে জাতির মঙ্গল হতো।
  • ফয়জুল মহী ২০/০৪/২০২১
    Ramadan mubarek. ♥️♥️
  • মাহে রমজান আপনার জীবনে কল্যাণ বয়ে আনুক।
  • মাহতাব বাঙ্গালী ২০/০৪/২০২১
    মাহে রমজানের উপর সুন্দর প্রবন্ধ লিখেছেন
 
Quantcast