অভিযোগ (ছোট গল্প)
(প্রিয় বন্ধুগণ আঞ্চলিক ভাষায় লেখা গল্প টি। ভুল ভ্রান্তিগুলো নিজগুণে সংশোধন করে পড়ার অনুরোধ রইলো)
আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে কছোর। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বউকে বলে , জমিলা হইলো তোর'? অসুস্থ ছেলের কপালে চুমু এঁকে বলে 'বাজান আমি কাজে গিলাম। মা’র কথা শুনো কিন্তু। মা’র শরিলডাও তো ভালো না, মারে বেশি বিরাক্ত এরবানা ঠিক আছে'। 'ঠিক আছে আব্বা'।' বাজান বোয়েমে বিস্কুট আছে, মাথার কাছে ঠুংয়ায় আপেল আর কয়ডা অঙুর ফল আছে খায়েনে তুমি।
ছেলে তার, রুগ্ন কণ্ঠে ছেলে বলে 'আব্বা গরুর গোস্ত আনিলে ? আমি তো ঘুমোয়ে পড়িলাম'...। টেনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে 'না বাজান, টাহা ছিলো না। তয় তুমি চিন্তা এরে না। এই তো কয় টাহা জমাইছি আর কয়ডা জমলিই তোমার জন্যি গরুর গোস্ত কিনে আনবানে'। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু। হায়রে টাহা, হায়রে অভাব, অসুস্থ ছেলে গরুর গোস্ত খাতি চাচ্ছে কয়েকদিন ধরে, কিন্তু তা জোগাড় করার সামর্থ নেই। তার উপর, আর একজন আসতে চলেছে । কোনো কূল-কিনারা ভেবে পায়না। বারান্দায় ভাতের পুটলা বাঁধা, ওটা নিয়েই দে দৌড়।
বউ বলে 'কি হলো অমন হনহন এরে ছুটতিছাও যে, খাইলে না'? 'না, তুই খায়ে নিই। বাজানেরে খাতি দিই আর ওষোধ কয়ডা ঠিকঠাক মত খাওয়াস। তোর ওষোধ ও ঠিক করে খাইস । জানিস জমিলা মাঝে মাঝে মনে চাই গলায় দড়ি দিয়ে মরি। 'এ সব তুমি কি কচ্ছাও, কি কবো আর 'ক'। ছাওয়ালডার ছোট্ট এটটা আবদার রাহার মত ক্ষমতা আমার নেই। তোরে একখান কাপড় দিতি পারিনে। শাড়িখান সিলাই করতি করতি আর সিলাই করার জাগা নেই'। 'আমি কি তোমার কাছে শাড়ি চাইছি? তোর চাওয়া লাগবে ক্যান আমি কি বুঝিনে? এই শীতি এটটা শীতির কাপড়ও নেই। কত কষ্টই না হচ্ছে তোর। সেই সাথে কষ্ট পাচ্ছে তোর সাথে যে আছে সেও।'না আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। আর ওর কথা কচ্ছাও, ওতো আমার শরিলির তাপে বেশ ভালোই আছে । দুঃখ এরতিছাও কেন। মানুষির দিন কি সব সময় এক যায়। আল্লাহ চায় তো আমাগেরও অবস্থা ফেরবেনে। আইসো ভাত বাড়া আছে একমুট খায়ে বারোও।' না আমি খাবো না, আমি গিলাম।
কিছুটা পথ এসে গলা হাকে 'ইলিয়াস ও ইলিয়াস কই তুই? ভেতর থেকে সাড়া দেই 'এই তো কছোর ভাই তোমার অপেক্ষাই তো এরতিছি। আয় আয় বেলা যে বাড়ে যায়'।
আধা ঘণ্ঠা পথ হেঁটে বিলে গিয়ে পৌঁছয়। ভাতের পুটলা আলের উপর রেখে, সাঁইসাঁই করে কাটতে থাকে ধান। শীতের বেলা তাড়াতাড়ি বয়ে যায়। দেখতে দেখতে দ্বিপ্রহর। ইলিয়াস বলে 'কছোর ভাই চলো চারটে খাইয়ে নি।'কছোর বলে 'খাতি যাবি, এই এক ফালি কাটে থুয়ে না হয় খাই কি কস? 'তাই, তো তুমি যহন কচ্ছাও তালি তাই। কছোর ভাই যা কও তা কও এবার ধান কিন্তু বাম্ফার ফল ফলেছে। পরানডা জুড়ে যাচ্ছে ফলন দেহে'।
- ধমকের সুরে কছোর বলে, এই অত পরান জুড়োস নে। বাম্ফার ফলন ফলেছে তাতে তোর আমার কি। সারাদিন কাজ করে পাই পাঁচশ টাহা। চাল কিনতি হয় ষাট সত্তশ টাহা কেজি দরে। এই ভরা শীতির মৌসুমি ফুলকপি কিনা লাগদেছে আশি টাহা কেজি দরে। পাতাকপি চল্লিশ টাহা, সীম ষাট টাহা, ডেঁড়শ চল্লিশ টাহা, এক কেজি পেঁজ কিনতি লাগে আড়াইশ তিনশ টাহা। গরুর গোস্তের কেজি পাঁচশ টাহা। আর এক মন ধান বিচতি এ্যায় পাঁচশ টাহায়।
- 'তা যা কইছাও'।
-'ঘরে অশুক্ষে ছাওয়াল কয়দিন ধরে গরুর গোস্ত খাতি চাচ্ছে। টাহার অভাবে এই ছোট্ট এটটা আবদার রাখতি পারতিছি নে'।
- 'হুম একদিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের টাহায় হয় না এককেজি গোস্তের দাম, হায়রে কপাল।
- -'যা পাই তাও চাল, ডাল,নুন, তেল, ঝাল কিনতি আর হাতে কিছু থাহে না কিছু।
সারা বছর মুখ চাইয়ে থাহি এই ধান কয়ডার দিরি।
- - কি দাম দিয়ে না সার কিনতি এ্যায়। অথচ ধান বেচতি এ্যায় পানির দামে।
- -মাথায় ঢুকলো তালি এইবার?
-কছোর ভাই কথা যা কইছাও এ্যাহেবারে খাটি কথা কইচাও।
টেনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কছোর বলে। 'অভাবের তাড়োনায় বাপ-মার দেয়া নাম কওছার থেয়ে কবে কি ভাবে যে কছোর হলাম ভাবে পাইনে।
-কছোর ভাই...
-বুঝদি পারিছি আর প্যাট মানতি চাচ্ছে না । চল খাইয়ে নি এইবার। আমাগে দুঃখ তো শেষ হবে না। শুধুশুধু বিলাপ করে লাভ কি।'
-তাই চলো দুঃখ করলি কি আর আমরা আমাগে ভাগ্য ফিরেতি পারবো। তার চায়ে চলো ঝাল আর নুন ডলে গিলি এক থাল।
-হায় খোদা জন্মই যহন দিলে তহন প্রিয় মানুষের শখ পূরণের সামর্থ কেন দিলে না? আমাগের মত গরিবগের জন্য কেন এত দুঃখ-কষ্ট লিহে রাহিছায়াও?
-কছোর ভাই বোঝনা ক্যান, উপরে যে বসে আছে সে আমাগে সাথে খেলে খুব শান্তি পায়।
-এই চুপকর ও কথা কতি নেই।
-সমাজের উঁচু তলার মানুষের সাথে তো খেলতি পারে না সে!!!
- আবার সেই কথা! আমার ছাওয়ালডা অসুস্থ, বউটা পোয়াতি, আমি তো ও বিটারে কিছু কতিছিনে। ওহিনি বসে তার যা ভালো মন চাচ্ছে তাই এত্তেছে। শুনিছি ছবোরে নাহি মেওয়া ফলে । দেহি কি মেওয়া ফলতেছে আমাকের জন্যি।
- কছোর ভাই শুনিছি আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যি করে। এই মনে হয় আমাগে ভালো। শুধুশুধু কেন আর অভিযোগ এত্তিছি।
- -
- না অভিযোগ না, কার কাছে করবো অভিযোক ‘ক’
-কছোর ভাই এই আমারে দেহো না। এতোটুকু বয়েসে বাপ হারা হলাম। মানষির ঝেটা লাথি খায়ে বড় হলাম। আমার বিধবা মারে তো কম অপবাদ মানষি দিনি।
-জানিরে ভাই সব জানি। চাচির মত একজন মানুষির গায় কাদা লাগাতি বাদ রাহিনি কেউ। ওই সমাজধারিরা মাতব্বররা শেষ পর্যন্ত এক ঘরে করলো । কারণ চাচি মাতব্বরগের কুপ্রস্তাবে রাজি হইলো না।
- অভাগি মা আমার অভাব আর, আমারে বুহি নিয়ে মাটি খামটায়ে পড়ে থাকলো। আশা ছিলো মনে, আমি বড় হলি অভাব তার দূর হবে। হায়রে কপাল অভাব দূর এরা তো দূরি থাক দুডো ওষোধ কিনেও আমি দিতি পারিনে মারে।
- ইলিয়াস খাওয়া শেষ কর।
- কছোর ভাই এই জন্যিই কি আমার মা পথ চায়ে পাশানে বুক বান্দিলো কও? কি আমি এততি পাললাম আমার মার জন্যি। আমি কার কাছে করবো অভিযোগ? কিডা শোনবে আমাগের অভিযোগ!!!
-ইলিয়াস , ভাত নিবি চারডে, তুই তো আজ ভাই আনিসই নি।
-কছোর ভাই, এই ভাত কয়ডা তাই মা না খায়ে আমারে দেছে। মা যে কি তার আমরা বুঝদি চাইনে। না জানে না বুঝে কত কষ্টই না দি আ। মার ওষোধ কিন লাগবে মহজন টাহা নিয়ে কয়দিন খালি ঘুরোচ্ছে।
-জানিস ইলিয়াস কয়দিন ধরে জমায় জমায়ে তিনশ টাহা হাতে জমেছে । আজকে ফিরার পথে আধ কেজি গোস্ত নিয়ে যাবো ছাওয়ালডা আমার কি যে খুশি হবে। শোন রাত্তিরি চাচিরে নিয়ে তুই আমাকে বাড়ি খাস চারডে।
-না কছোর ভাই , আমরা আর না যাই। এমনি তোমাকের দিন চলেনা তার উপর আমরা পুত আর মা দুইজন মেহমান হবো এইডে ঠিক হবে না।
-এই গাধা, তুই কি আমার রিজিক খাবি নাহি? তোগের রিজিক তুরা খাবি।
-আচ্ছা যাবানে, তয়...
-আবার তয় কি?
-আমি দুইশ টাহা দিবানে তুমি এক কেজি গোস্ত কিনবা।
-আচ্ছা সে দেহা যাবেনে।
নে হাত টানে কাজ কর বেলা গেলো বলে। কাজ শেষে মহাজনের কাছে যায় দুজন। মহাজন বলে আজ তোগের টাহা দিতি পারবো না, কাল নিস।
কছোর বলে , এইডে আপনি কি কন। সারাদিন কাজ এরে এহন টাহা দেবেন না, তা কিয়েরে হয়? এই টাহা দিয়ে বাজার করে নিয়ে গিলি না চুলো জ্বলবে। অশুকক্ষে ছাওয়াল ঘরে টাহা তো দিতিই হবে।
ইলিয়াস বলে,টাহা তো আজ দিতিই হবে। আমার আগের দুই দিনের টাহা আর আজকের টাহা মোট পুনারশ টাহা দিবেন, আমার মায়ের জন্য ওষোধ কিনতি হবে।
-আরে মা’র ওষুধ কাল কিনিস। একদিন ওষুধ না খালি কিছু হবে না।
কছোর বলে ওঠে এইডে আপনি কি কন? আমরা গরিব সারাদিন রোদি পুড়ে বর্ষায় ভিজে কাজ করি, আমাগের টাহা নিয়ে ছল্লিব্ললি এরবেন না।
এর মাঝে মহাজনের মেয়ে এসে বিশ হাজার টাকা চায় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে। ইলিয়াস বলে আপনার মাইয়া ফুরতি এরার জন্য কুড়ি হাজার টাহা চালো আর তা ওমনি দিয়ে দিলেন। অথচ আমাকে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের টাহা দিতি আপনার হাত কাঁপে ক্যান? , খালি ঘুরাতি থায়েন।। আমরা তো আর এমনি চাচ্ছি নে। আমাগে শ্রমের মুল্য চাচ্ছি ,টাহা দেন। ইলিয়াসের কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় মহাজনের সে ইলিয়াসের উপর চড়য়া হয়। কছোর ঠেকাতে গেলে কছোরে পিঠে বসিয়ে দেয় দু ঘা। দুহাতে মার ঠেকায় ইলিয়াস। দুজনের মুখের উপর দুটি পাঁচশ টাকার নোট ছিড়ে মারে। নিজের পরিশ্রমের পাওনা চাই্তে গিয়েও বাঁচে না পিঠ কোন দিকে শক্তি নেই বলে শ্রমও দিবে আবার মার ও খাবে, উপর ওয়ালাদের এত অনিয়ম অত্যাচারের অভিযোগ কোথায় জানাবে?
আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে কছোর। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বউকে বলে , জমিলা হইলো তোর'? অসুস্থ ছেলের কপালে চুমু এঁকে বলে 'বাজান আমি কাজে গিলাম। মা’র কথা শুনো কিন্তু। মা’র শরিলডাও তো ভালো না, মারে বেশি বিরাক্ত এরবানা ঠিক আছে'। 'ঠিক আছে আব্বা'।' বাজান বোয়েমে বিস্কুট আছে, মাথার কাছে ঠুংয়ায় আপেল আর কয়ডা অঙুর ফল আছে খায়েনে তুমি।
ছেলে তার, রুগ্ন কণ্ঠে ছেলে বলে 'আব্বা গরুর গোস্ত আনিলে ? আমি তো ঘুমোয়ে পড়িলাম'...। টেনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে 'না বাজান, টাহা ছিলো না। তয় তুমি চিন্তা এরে না। এই তো কয় টাহা জমাইছি আর কয়ডা জমলিই তোমার জন্যি গরুর গোস্ত কিনে আনবানে'। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু। হায়রে টাহা, হায়রে অভাব, অসুস্থ ছেলে গরুর গোস্ত খাতি চাচ্ছে কয়েকদিন ধরে, কিন্তু তা জোগাড় করার সামর্থ নেই। তার উপর, আর একজন আসতে চলেছে । কোনো কূল-কিনারা ভেবে পায়না। বারান্দায় ভাতের পুটলা বাঁধা, ওটা নিয়েই দে দৌড়।
বউ বলে 'কি হলো অমন হনহন এরে ছুটতিছাও যে, খাইলে না'? 'না, তুই খায়ে নিই। বাজানেরে খাতি দিই আর ওষোধ কয়ডা ঠিকঠাক মত খাওয়াস। তোর ওষোধ ও ঠিক করে খাইস । জানিস জমিলা মাঝে মাঝে মনে চাই গলায় দড়ি দিয়ে মরি। 'এ সব তুমি কি কচ্ছাও, কি কবো আর 'ক'। ছাওয়ালডার ছোট্ট এটটা আবদার রাহার মত ক্ষমতা আমার নেই। তোরে একখান কাপড় দিতি পারিনে। শাড়িখান সিলাই করতি করতি আর সিলাই করার জাগা নেই'। 'আমি কি তোমার কাছে শাড়ি চাইছি? তোর চাওয়া লাগবে ক্যান আমি কি বুঝিনে? এই শীতি এটটা শীতির কাপড়ও নেই। কত কষ্টই না হচ্ছে তোর। সেই সাথে কষ্ট পাচ্ছে তোর সাথে যে আছে সেও।'না আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। আর ওর কথা কচ্ছাও, ওতো আমার শরিলির তাপে বেশ ভালোই আছে । দুঃখ এরতিছাও কেন। মানুষির দিন কি সব সময় এক যায়। আল্লাহ চায় তো আমাগেরও অবস্থা ফেরবেনে। আইসো ভাত বাড়া আছে একমুট খায়ে বারোও।' না আমি খাবো না, আমি গিলাম।
কিছুটা পথ এসে গলা হাকে 'ইলিয়াস ও ইলিয়াস কই তুই? ভেতর থেকে সাড়া দেই 'এই তো কছোর ভাই তোমার অপেক্ষাই তো এরতিছি। আয় আয় বেলা যে বাড়ে যায়'।
আধা ঘণ্ঠা পথ হেঁটে বিলে গিয়ে পৌঁছয়। ভাতের পুটলা আলের উপর রেখে, সাঁইসাঁই করে কাটতে থাকে ধান। শীতের বেলা তাড়াতাড়ি বয়ে যায়। দেখতে দেখতে দ্বিপ্রহর। ইলিয়াস বলে 'কছোর ভাই চলো চারটে খাইয়ে নি।'কছোর বলে 'খাতি যাবি, এই এক ফালি কাটে থুয়ে না হয় খাই কি কস? 'তাই, তো তুমি যহন কচ্ছাও তালি তাই। কছোর ভাই যা কও তা কও এবার ধান কিন্তু বাম্ফার ফল ফলেছে। পরানডা জুড়ে যাচ্ছে ফলন দেহে'।
- ধমকের সুরে কছোর বলে, এই অত পরান জুড়োস নে। বাম্ফার ফলন ফলেছে তাতে তোর আমার কি। সারাদিন কাজ করে পাই পাঁচশ টাহা। চাল কিনতি হয় ষাট সত্তশ টাহা কেজি দরে। এই ভরা শীতির মৌসুমি ফুলকপি কিনা লাগদেছে আশি টাহা কেজি দরে। পাতাকপি চল্লিশ টাহা, সীম ষাট টাহা, ডেঁড়শ চল্লিশ টাহা, এক কেজি পেঁজ কিনতি লাগে আড়াইশ তিনশ টাহা। গরুর গোস্তের কেজি পাঁচশ টাহা। আর এক মন ধান বিচতি এ্যায় পাঁচশ টাহায়।
- 'তা যা কইছাও'।
-'ঘরে অশুক্ষে ছাওয়াল কয়দিন ধরে গরুর গোস্ত খাতি চাচ্ছে। টাহার অভাবে এই ছোট্ট এটটা আবদার রাখতি পারতিছি নে'।
- 'হুম একদিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের টাহায় হয় না এককেজি গোস্তের দাম, হায়রে কপাল।
- -'যা পাই তাও চাল, ডাল,নুন, তেল, ঝাল কিনতি আর হাতে কিছু থাহে না কিছু।
সারা বছর মুখ চাইয়ে থাহি এই ধান কয়ডার দিরি।
- - কি দাম দিয়ে না সার কিনতি এ্যায়। অথচ ধান বেচতি এ্যায় পানির দামে।
- -মাথায় ঢুকলো তালি এইবার?
-কছোর ভাই কথা যা কইছাও এ্যাহেবারে খাটি কথা কইচাও।
টেনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কছোর বলে। 'অভাবের তাড়োনায় বাপ-মার দেয়া নাম কওছার থেয়ে কবে কি ভাবে যে কছোর হলাম ভাবে পাইনে।
-কছোর ভাই...
-বুঝদি পারিছি আর প্যাট মানতি চাচ্ছে না । চল খাইয়ে নি এইবার। আমাগে দুঃখ তো শেষ হবে না। শুধুশুধু বিলাপ করে লাভ কি।'
-তাই চলো দুঃখ করলি কি আর আমরা আমাগে ভাগ্য ফিরেতি পারবো। তার চায়ে চলো ঝাল আর নুন ডলে গিলি এক থাল।
-হায় খোদা জন্মই যহন দিলে তহন প্রিয় মানুষের শখ পূরণের সামর্থ কেন দিলে না? আমাগের মত গরিবগের জন্য কেন এত দুঃখ-কষ্ট লিহে রাহিছায়াও?
-কছোর ভাই বোঝনা ক্যান, উপরে যে বসে আছে সে আমাগে সাথে খেলে খুব শান্তি পায়।
-এই চুপকর ও কথা কতি নেই।
-সমাজের উঁচু তলার মানুষের সাথে তো খেলতি পারে না সে!!!
- আবার সেই কথা! আমার ছাওয়ালডা অসুস্থ, বউটা পোয়াতি, আমি তো ও বিটারে কিছু কতিছিনে। ওহিনি বসে তার যা ভালো মন চাচ্ছে তাই এত্তেছে। শুনিছি ছবোরে নাহি মেওয়া ফলে । দেহি কি মেওয়া ফলতেছে আমাকের জন্যি।
- কছোর ভাই শুনিছি আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যি করে। এই মনে হয় আমাগে ভালো। শুধুশুধু কেন আর অভিযোগ এত্তিছি।
- -
- না অভিযোগ না, কার কাছে করবো অভিযোক ‘ক’
-কছোর ভাই এই আমারে দেহো না। এতোটুকু বয়েসে বাপ হারা হলাম। মানষির ঝেটা লাথি খায়ে বড় হলাম। আমার বিধবা মারে তো কম অপবাদ মানষি দিনি।
-জানিরে ভাই সব জানি। চাচির মত একজন মানুষির গায় কাদা লাগাতি বাদ রাহিনি কেউ। ওই সমাজধারিরা মাতব্বররা শেষ পর্যন্ত এক ঘরে করলো । কারণ চাচি মাতব্বরগের কুপ্রস্তাবে রাজি হইলো না।
- অভাগি মা আমার অভাব আর, আমারে বুহি নিয়ে মাটি খামটায়ে পড়ে থাকলো। আশা ছিলো মনে, আমি বড় হলি অভাব তার দূর হবে। হায়রে কপাল অভাব দূর এরা তো দূরি থাক দুডো ওষোধ কিনেও আমি দিতি পারিনে মারে।
- ইলিয়াস খাওয়া শেষ কর।
- কছোর ভাই এই জন্যিই কি আমার মা পথ চায়ে পাশানে বুক বান্দিলো কও? কি আমি এততি পাললাম আমার মার জন্যি। আমি কার কাছে করবো অভিযোগ? কিডা শোনবে আমাগের অভিযোগ!!!
-ইলিয়াস , ভাত নিবি চারডে, তুই তো আজ ভাই আনিসই নি।
-কছোর ভাই, এই ভাত কয়ডা তাই মা না খায়ে আমারে দেছে। মা যে কি তার আমরা বুঝদি চাইনে। না জানে না বুঝে কত কষ্টই না দি আ। মার ওষোধ কিন লাগবে মহজন টাহা নিয়ে কয়দিন খালি ঘুরোচ্ছে।
-জানিস ইলিয়াস কয়দিন ধরে জমায় জমায়ে তিনশ টাহা হাতে জমেছে । আজকে ফিরার পথে আধ কেজি গোস্ত নিয়ে যাবো ছাওয়ালডা আমার কি যে খুশি হবে। শোন রাত্তিরি চাচিরে নিয়ে তুই আমাকে বাড়ি খাস চারডে।
-না কছোর ভাই , আমরা আর না যাই। এমনি তোমাকের দিন চলেনা তার উপর আমরা পুত আর মা দুইজন মেহমান হবো এইডে ঠিক হবে না।
-এই গাধা, তুই কি আমার রিজিক খাবি নাহি? তোগের রিজিক তুরা খাবি।
-আচ্ছা যাবানে, তয়...
-আবার তয় কি?
-আমি দুইশ টাহা দিবানে তুমি এক কেজি গোস্ত কিনবা।
-আচ্ছা সে দেহা যাবেনে।
নে হাত টানে কাজ কর বেলা গেলো বলে। কাজ শেষে মহাজনের কাছে যায় দুজন। মহাজন বলে আজ তোগের টাহা দিতি পারবো না, কাল নিস।
কছোর বলে , এইডে আপনি কি কন। সারাদিন কাজ এরে এহন টাহা দেবেন না, তা কিয়েরে হয়? এই টাহা দিয়ে বাজার করে নিয়ে গিলি না চুলো জ্বলবে। অশুকক্ষে ছাওয়াল ঘরে টাহা তো দিতিই হবে।
ইলিয়াস বলে,টাহা তো আজ দিতিই হবে। আমার আগের দুই দিনের টাহা আর আজকের টাহা মোট পুনারশ টাহা দিবেন, আমার মায়ের জন্য ওষোধ কিনতি হবে।
-আরে মা’র ওষুধ কাল কিনিস। একদিন ওষুধ না খালি কিছু হবে না।
কছোর বলে ওঠে এইডে আপনি কি কন? আমরা গরিব সারাদিন রোদি পুড়ে বর্ষায় ভিজে কাজ করি, আমাগের টাহা নিয়ে ছল্লিব্ললি এরবেন না।
এর মাঝে মহাজনের মেয়ে এসে বিশ হাজার টাকা চায় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে। ইলিয়াস বলে আপনার মাইয়া ফুরতি এরার জন্য কুড়ি হাজার টাহা চালো আর তা ওমনি দিয়ে দিলেন। অথচ আমাকে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের টাহা দিতি আপনার হাত কাঁপে ক্যান? , খালি ঘুরাতি থায়েন।। আমরা তো আর এমনি চাচ্ছি নে। আমাগে শ্রমের মুল্য চাচ্ছি ,টাহা দেন। ইলিয়াসের কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় মহাজনের সে ইলিয়াসের উপর চড়য়া হয়। কছোর ঠেকাতে গেলে কছোরে পিঠে বসিয়ে দেয় দু ঘা। দুহাতে মার ঠেকায় ইলিয়াস। দুজনের মুখের উপর দুটি পাঁচশ টাকার নোট ছিড়ে মারে। নিজের পরিশ্রমের পাওনা চাই্তে গিয়েও বাঁচে না পিঠ কোন দিকে শক্তি নেই বলে শ্রমও দিবে আবার মার ও খাবে, উপর ওয়ালাদের এত অনিয়ম অত্যাচারের অভিযোগ কোথায় জানাবে?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
sudipta chowdhury ২৮/১২/২০১৯In relationship to raise complain towards loving person most of the times may hamper that relationship.
-
নুর হোসেন ০৪/১২/২০১৯চমৎকার লিখেছেন,
লিখতে থাকুন আর ও লিখুন! -
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৪/১২/২০১৯দারুণ লগলো পড়ে। আরও লিখুন। আমরা পড়ে শান্তি পাই।